ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ – ধর্ষিতার আত্মজীবনী – Story Against
Rape
জানতাম না, কোনটা অশ্লীলতা। জানতাম না, কাকে বলে ধর্ষণ। তারপর যখন
খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়, তখন বুঝলাম ধর্ষণ মানে, একদল পুরুষের
বিনোদন। কলেজ জীবনে পা দিয়ে, বাসে, ট্রেনে, ট্রামে একদল পুরুষ যখন
চোখ দিয়ে অথবা কুনুই দিয়ে আমার বুকের উচ্চতা থেকে কোমরের ব্যাসার্ধ নিপুণ
ভাবে মাপতো, তখন বুঝলাম, ধর্ষণের বিভিন্ন প্রকারভেদও হয়।
আমার বয়স যখন সাতাশ, তখন আমি আবার ধর্ষিত হই। না, আমি কোন শরীর দেখানো পোশাক
পরিনি। শাড়ি পরেছিলাম, তাও আবার মোটা তাঁতের শাড়ি। না, শাড়িতেও দেখা যায় নি
আমার নাভি কিংবা বুকের প্রথমভাগ। না,আমি কোন অন্ধকার গলিতে যাই নি। ভর দুপুরে
নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। ঢাক বাজছিল দূরে, দিনটা ছিল অষ্টমির
সকাল। হিংস্র বাঘের থাবা বসলো আমার প্রতিটি গোপন অঙ্গে। দু- একটা কুকুর
ঘেউ ঘেউ করেছিল কিন্তু দু- একটা মানুষ উপভোগ করেছিল দূর থেকে।
নবমির সকালে আমি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাই। ধর্ষিতার নগ্ন শরীর ভাইরাল হ’লে
একদল পুরুষ জুম করে করে নারী শরীরের প্রতিটি গোপন ভাঁজ গিলতে থাকে হরমোন জনিত
খিদের কারণে। ধর্ষিতার নগ্ন শরীর ভাইরাল হ’লে একদল পুরুষ তাকে আরো ভাইরাল
করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। ওয়ালে ওয়ালে ওইসব ছবি ঘুরে বেড়ালে কিছু পৌরুষত্ব
জাগ্রত হয় মাঝরাতে।
মানুষেরা হয়তো বিজয়াতেই ভুলে যায় কারণ এক খাবার খেতে রোজ কার ভালোলাগে?
চাই রোজ নিত্য – নতুন স্বাদ, চাই নতুন আহ্লাদ, কিন্তু যে নারী ভাইরাল হয়, সে
সহজে ভুলতে পারে না। ভুলতে চাইলেও সমাজ তাকে ভুলতে দেয় না। সমাজ ‘
বেশ্যা’, ‘ মাগী ‘- এইসব ডাকনামে তাকে ডাকতে থাকে। আমিও ভুলতে পারি নি।
আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। যে নারী ভাইরাল হয়, তারা দাদা হয়তো অনির্দিষ্ট
সময়ের জন্য গৃহবন্দী হয়, যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। যে নারী ভাইরাল হয়, তার
মা হয়তো চুলের মুঠি ধরে আহত শরীরে রক্ত বন্যা বইয়ে দেয় , যেমনটা
আমার ক্ষেত্রে হয়েছে।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
অপমানিত হতে হতে অনেকসময় ধর্ষিতারাও প্রতিবাদের ঝড় তুলে। অপমানিত হতে হতে
অনেকসময় ধর্ষিতারাও কাপুরুষ/ কাপুরুষদেরকে কাঠগড়ায় তুলে আট্টহাসি
হাসে, যেমনটা আমি হেসেছি। লড়াইটা তবে সহজ নয়, লড়াইয়ের ময়দানে নামলে
ধর্ষণ, গণধর্ষণে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে, লড়াইয়ের ময়দানে
নামলে, মুখ পুড়ে যেতে পারে অ্যাসিডে, যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে, তবে
সবাই লড়াইয়ের ময়দানে নামতে পারে না। অহেতুক লজ্জায় বেশিরভাগ সময়ই
ধর্ষিতার মা-বাবা মুখ বন্ধ রাখার জন্য ধর্ষিতাকে শাসন করে। মুখ ঢাকার জন্য ওড়না
নয় তুলে দেন মেয়ের হাতে, কিন্তু ওড়না নয়, ধর্ষিতার মা- বাবার মেয়ের হাতে
ত্রিশূল তুলে দেওয়া উচিত। ধর্ষিতারা লক্ষ্মী নয়, কালীর রূপ ধরুক। কথাগুলো বলা
যতটা সহজ, বাস্তবায়িত করা ততোটাই কঠিন। অনেক ধর্ষিতা এযুগেও তাই, সিলিং থেকে
ঝুলে লাশ হয়ে যায় ভোররাতে।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে কিছু কথা
দেখেও যাদের শরীরে হরমোন খেলা করে। ধর্ষিতাকে নয়, ভাইরাল করুন তাদের, যারা আশি
বছরের বৃদ্ধার যোনিতেও দুরন্ত নদী খোঁজে। ধর্ষিতাকে নয়, ভাইরাল করুন
তাদের, যারা মাতৃস্তন পান করেও গর্ভবতী নারীকে “মা”- হওয়া থেকে বঞ্চিত করে।