Premer Golpo (বেলাশেষের প্রেম) Govir Premer Golpo
ধরেছে,একটু পরিশ্রম করলেই হাঁফিয়ে পড়েন আজকাল।তবুও ওনাকে সকাল বেলায় দেখা
যায় স্বামীর সাথে মর্নিং ওয়াকে বেরোতে,কখনো দেখা যায় ভিক্টোরিয়ার
সামনে টক ঝাল ফুচকা খেতে,পাশে থাকেন স্বামী শেখর বাবু। রাস্তা পেরোনোর সময়
মালবিকা দেবীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে থাকেন শেখর বাবু।কখনো বা হাঁটতে হাঁটতে
থমকে দাঁড়িয়ে শেখর বাবু কিনে ফেলেন এক গুচ্ছ লাল গোলাপ।হাতে দিতেই লজ্জা মাখা
মুখ করে মালবিকা দেবী বলেন-“এসব কি হচ্ছে ছেলেমানুষী লোকে কি বলবে বলো তো এই
বয়সে?”
Premer Golpo Bangla
এখন প্রায়ই রান্নাঘরে ঢুকে বিভিন্ন রান্না করেন শেখর বাবু।স্ত্রীকে বলেন-“এবার
একটু বিশ্রাম নাও।সারা জীবন ধরে অনেক তো করলে এই সংসারের জন্য।”
হাত দিয়ে বসে গল্প করেন।মাঝে মাঝে কেউ কেউ বলে-“বুড়ো বয়সে ভীমরতি।প্রেম
যেনো একেবারে উথলে পড়ছে।”
স্ত্রী’র হাতে হাতে কাজ করে দিতে দেখে মুখ টিপে হাসে।কেউ কেউ বলে যায়-“শেষ
বয়সে বরটাকে কাজের লোক বানিয়েই ছাড়লে দেখছি!”
শুনিয়ে যায় আমার।”
দুটো ধরে বলেন-“ওরা তোমায় হিংসে করে ওইজন্য তো ওসব বলে।তুমি বোঝো না কেনো?”
জন্য।বিয়ের আগে যেবার প্রথম দেখতে গেছিলেন লজ্জায় তো মুখই তোলেননি মালবিকা
দেবী।শেখর বাবু মালবিকা দেবীর বাড়ি থেকে দেওয়া একটা ছবি নিয়েই ফিরে গেছিলেন
কর্মস্থলে।শেখর বাবু ছিলেন একজন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্ণেল।ছবি দেখে দেখে শেখর
বাবু কল্পনা করতেন মালবিকা দেবীকে নিজের স্ত্রী হিসাবে।মালবিকা দেবীও ঠিক
তাই।সেজন্য বাড়ির কিছু মানুষের অমত উপেক্ষা করেই মালবিকা দেবী বিয়েতে সম্মতি
দেন।
দেবী।কিন্ত তারপর যখন ওই রাগী মানুষটার শিশু সুলভ মনের সন্ধান পেলেন,তখন সব ভয়
কেটে গেলো। এরপরের সময়টা খুব কষ্টে কেটেছে মালবিকা দেবীর।স্বামী চলে যাওয়ার
সময় চোখ থেকে জলের ধারা নেমেছে।কতো রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন তিনি।সদ্য
বিবাহিতা স্ত্রীর বালিশ ভিজেছে চোখের জলে।চিন্তায় চিন্তায় কখনো ভালো ভাবে
হাসতে পারেননি তিনি।ফোন বাজতেই ছুটেছেন বসার ঘরে,একবার স্বামীর গলার আওয়াজটা
যদি শুনতে পান তিনি সেই আশায়।বোন দিদিরা যখন স্বামীর হাত ধরে বাপের বাড়ি
এসেছে মালবিকা দেবী একাই গিয়েছেন সেখানে।
কি খাবার বানাবে তার লিষ্ট করতে বসে যেতেন।যে কদিন থাকতেন আত্মীয়রা আসতেন দেখা
করতে।স্বামীর হাত ধরে ঘুরতে যাওয়া আর হতো না।কিছু বছর পর যখন শেখর বাবু খবর
পেলেন তার স্ত্রী মা হতে চলেছে খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি।কিন্ত ওই সময়টাতেও
স্ত্রী’র পাশে থাকতে পারেননি তিনি।।অনেক কষ্ট সহ্য করে মা হলেন মালবিকা
দেবী।সদ্যজাত সন্তানকেও দেখতে আসতে পারেনি বাবা।যখন বাড়ি ফিরলেন তখন ছেলে
সায়নের বয়স ছয় মাস। ছেলেকে কোলে নিয়ে আর নামাননি শেখর বাবু সেদিন।
Bangla Premer Golpo Love Story
সংসার সামলেছেন,
করেছেন।সায়ন মেধাবী ছাত্র তাই বড় হয়ে সুযোগ পেয়েছে বিদেশে পড়ার,এটাই ছিল
তার স্বপ্ন।কিন্ত মাকে একা রেখে যেতে মন চায়নি তার।কিন্তু মালবিকা দেবী
ছেলেকে আটকাননি।বলেছেন-“তোর স্বপ্ন পূরণ করে তুই বড় হ তাতেই আমি খুশি হবো
খুব।”
শাশুড়ির মৃত্যুর পর,কয়েক বছর মালবিকা দেবী একাই কাটিয়েছেন।তারপর একদিন যখন
শেখর বাবু ফিরে এসে বললেন-” রিটায়ার হয়ে গেলাম বুঝলে মালবিকা?
শুধু আমি আর তুমি।তোমার প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতেই শেষ বেলাটা কাটিয়ে দেবো।”
দেশের জন্য,এবার না হয় প্রেমই করি এটাই তো প্রেম করার আদর্শ সময়।”
কাটিয়েছেন।লেখাপড়া শেষে সায়ন এসে জানিয়েছে যে সে বিদেশে ভালো চাকরীর সুযোগ
পেয়েছে।মালবিকা দেবী বলেছেন-” তোমার স্বপ্ন তুমি পূরণ করো,আমরা বাধা দেবো না।”
বিয়ে দিয়ে দিলেন ধুমধাম করে।ছেলে ফিরে গেলো বিদেশে স্ত্রীকে নিয়ে।বাড়িতে
থেকে গেলেন দুজন মানুষ। যাওয়ার সময় ছেলে বারবার করে বলেছে বাবা মাকে সাথে
নিয়ে যেতে চায় সে।কিন্ত রাজি হননি শেখর বাবু।বলেছেন-“তোমরা ওখানে গিয়ে সব
মানিয়ে নিয়ে সংসার করো।আমরা গিয়ে মাঝে মাঝে থেকে আসবো তোমাদের কাছে।কিন্তু
এই দেশের জন্য সারা জীবন ধরে লড়াই করেছি এই দেশ ছেড়ে কোথাও গিয়ে শান্তি পাবো
না আমি।”
একদিন শেখর বাবু বললেন-“মালবিকা সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও আমরা এ বাড়ি ছেড়ে
চলে যাবো।”
যেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলে তুমি।”
বাবু।-“তোমার স্বপ্ন কি?”
ফুলের গাছ।সকালে উঠেই বারান্দায় বসে দেখবো সূর্যদয়।”
চললেন পাহাড়ের কোলে সেই ছোট্ট বাংলোতে।পাশেই বয়ে গেছে একটা ছোট্ট
ঝর্না।চারিদিকে ফুলের মেলা,প্রজাপতির রঙের খেলা।মনে হল যেনো স্বর্গ।এখন
প্রতিদিন মালবিকা দেবির ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে।উঠতেই হাতে চায়ের কাপ ধরান শেখর
বাবু। প্রতিদিন ছেলে বৌমা নিয়ম করে খোঁজ নেয়।পাহাড়ী বস্তির ছোট ছোট গরিব
ছেলেমেয়েদের সকাল বিকাল পড়ান শেখর বাবু।প্রায়ই বিভিন্ন খাবার রেঁধে খাওয়ান
তাদের মালবিকা দেবী।তারা ভীষণ ভালোবাসে এই দুজনকে।যে কোনো সমস্যায় তাদের পাশে
দাঁড়ান শেখর বাবু।
heart touching love story in bengali
থেকে।ছেলে বৌমা দুবার এসে বেশ কিছুদিন থেকে গেছে তাদের কাছে।এখনও সন্ধ্যায়
হাতে হাত রেখে ঘুরতে বেরোন মালবিকা দেবী স্বামীর সাথে।হঠাৎ কোনো বাঙালি
ট্যুরিস্টের সাথে দেখা হলে বাড়ি নিয়ে এসে আপ্যায়ন করেন শেখর বাবু।কেউ দুঃখ
করে যখন বলে-“এই বয়সে ছেলের উচিত ছিল বাবা মাকে দেখার।”
চাই না।”
এবার নিজেদের মতোই থাকুক। আমরা তো বেশ আছি।রোজ ছেলে বৌমা ফোন করে খোঁজ
নেয়,ছয় মাসে একবার এসে দেখে যায়।সারা জীবন তো অনেক হল সংসার এবার আমরা দুজন
জীবনটা উপভোগ করতে চাই।অসুস্থ হলেও সে ব্যবস্থা করাই আছে।পাশেই থাকেন একজন
ডাক্তার আমার ভালো বন্ধু তিনি। একবার ফোন করলে চলে আসবেন।খুব অসুস্থ হলে
অ্যাম্বুলেন্সকেও জানানো আছে ফোন করলেই চলে আসবে।ছেলের কাছে থাকলে কি এর থেকে
বেশী কিছু পেতাম?”
উচিত।দায়িত্ব দায়িত্ব করে আমরা ভুলে যাই নিজেদের স্বপ্ন,ভালো লাগা
গুলো।সবাইকে ভালো রাখার পাশাপাশি নিজেদের ইচ্ছা আর ভালো লাগার গুরুত্ব কিন্তু
আমাদেরকেই দিতে হবে।মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার নাম জীবন নয় শুধু,নিজের
মতো করেও বাঁচাটাই জীবনের আসল মানে।