Jiboner Golpo – জীবনের গল্প – Bengali Story
Jiboner Golpo Bangla
অর্ণার “সন্ধ্যাদিয়া” বৃদ্ধাশ্রমে আসা বেশি দিন হয়নি।আজও একা বসলে তুলতুলির
ডাক কানে ভেসে আসে। এইটুকু বাদ দিলে ভালই কাটছে এখানে। বাড়ীর জন্য মন খারাপ তো
করবেই। স্মৃতির ঝাঁপি যখন খুলে বসে,তখন একের পর এক ছবিগুলো যেন সরে সরে যায়।
সেই ছোট্টবেলা থেকেই খুব মিশুকে ছিল অর্ণা। শ্বশুরবাড়িতে এসেও মানাতে কোন
অসুবিধা হয় নি।মা বাবাকে ছেড়ে, চেনা পরিবেশ ছেড়ে এসে প্রথম প্রথম খুব ভয়
পেয়েছিল। কিন্তু মামণি খুব আদর করে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। বিয়ের পর কলেজ শেষ
করেছে। তাই শ্বশুরবাড়ী থেকেও কলেজ গেছে মামণির হাতে রান্না খেয়ে। তারপরে পড়া
শেষ করার পর যখন টুকাই এল, তখন সারাবাড়ি জুড়ে আনন্দের হিল্লোল।দিনগুলো ঝড়ের
মত কেটে গেল। টুকাই এর একটু একটু করে বড় হওয়া দেখতে দেখতে নিজে যেন কোথায়
হারিয়ে যেত। তারপরে অর্ণার মা বাবা কিছুদিনের ব্যবধানে চলে গেলেন।এক বিরাট
শূণ্যতা গ্রাস করল। খুব অন্যমনস্ক হয়ে যেত।
দিতেন। তারপর একদিন ঘুমের মধ্যেই মামণি চলে গেলেন ঘুমের দেশে। সেদিন বাপিও বড়
একা হয়ে গেছিলেন। মামণির না থাকাটা বাপি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। টুকাই
ও এর মধ্যে একটা চাকরি পেল।বাপি বললেন,”দাদাভাই এর বিয়ে দাও।” টুকাই এর বাবাও
উঠে পড়ে লাগলেন। উনি সবসময় নিজের মধ্যেই থাকতে ভালবাসতেন। তবে মামণির চলে
যাওয়া টা ওনাকেও অনেক টা পাল্টে দিয়েছিল। সবার সহযোগিতায় টুকাই এর বউ এল।
এরপর একদিন বাপিও চলে গেলেন। মামণি যেমন একটুও সময় দেননি,বাপি দিন সাতেক
বিছানায় ছিলেন। সংসার টা কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।
অর্ণা নতুন করে সংসারে জড়িয়ে পড়ল।
Jiboner Golpo 2020
কাছেই একটা ফ্ল্যাট দিচ্ছে। কিন্তু তোমাকে একা বাড়ীতে রেখে যাব কি করে? তাই
ভাবছিলাম। তখন সৃজা এই আইডিয়াটা দিল।”
জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প
এক মুহুর্তেই অর্ণার কাছে সব জলের মত পরিস্কার।এক বুক অভিমান বুকে জমা রেখে
সঙ্গে সঙ্গে রাজী।পরের দিনই জিনিসপত্র গুছিয়ে এখানে চলে এল।
কথা দিয়েছিলেন, অর্ণার সাথে সবসময় থাকবেন। কিন্তু একটা অ্যাক্সিডেন্টে যেদিন
চলে গেলেন, সেদিন অর্ণার পাশে কেউ ছিল না। টুকাই সৃজাকে নিয়ে ঘুরতে গেছিল। ওরা
ফিরে আসতে আসতে সব শেষ। টুকাই আজও এই নিয়ে খুব মনখারাপ করে। কিন্তু অর্ণা
,তুলতুলিকে যেদিন কোলে তুলল, সেদিন থেকেই জীবনটা আবার গতি পেল।
বিভিন্ন জনের জীবনের গল্প বিভিন্ন। নাটকের মত। টুকাই ছুটি পেলেই দেখা করতে
আসে।আজ আবার সবাই মিলে আসবে।ঐ তো ওরা চলে এসেছে।তুলতুলির জন্য নিজে বানানো কিছু
জিনিস নিয়ে অর্ণা ওদের কাছে গেল। প্রথম কথা বলল তুলতুলি-“ঠাম্মা, আমার সাথে
খেলবে চলো না।কেউ আমার সাথে খেলে না।”
কাছেই আছে। অর্ণা,তুলতুলিকে বুকে জড়িয়ে ধরল।
বলল,”আজ এখানে তোমরা দুপুরে খাবে।এখন তো অনেক টা সময়।চলো, আমার সাথে খেলবে।”
কেমন করছে।তাও তো জীবনে এই প্রথম একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারল।।