বড়দের গল্প – Boroder Golpo (আধুনিকা)
Loading...
|
করেও চুপ রইলো।অফিস বেরোনোর সময় এই নিয়ে কথা না বলাই ভালো।আসলে কয়েকদিন ধরেই
ওদের সম্পর্কে একটা শীতলতার উদ্ভব ঘটেছে।ছয়মাসের বিবাহিত জীবনের মধ্যে এমন সময়
চলে আসবে তা হয়তো কেউ আগে ভাবেনি।রাখী রণিতের ওপর দিন দিন কেমন বীতশ্রদ্ধ হয়ে
উঠছে।ছেলে হিসেবে রণিতের তুলনা বড় একটা মেলেনা।সে একটা মাল্টিন্যাশনাল আই.টি
কোম্পানিতে কর্মরত।পরের বছর রণিতের আমেরিকা যাওয়া মোটামুটি পাকা।তাই এতো ভালো
একটা সম্বন্ধ আসতেই রাখীর বাবা অসিত বাবু রাজী হতে দ্বিধা করেননি।রণিত তার
বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে।কলকাতার বালিগঞ্জে বিশাল বাড়ি তাদের।এতো বড় বাড়িতে
কোনোদিন মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন এ যেন অসিত বাবুর কল্পনার অতীত ছিল।যদিও রাখী
যথেষ্ট ভদ্র,নম্র,শিক্ষিতা ও সুন্দরী একজন মেয়ে।বিয়ের আগে একটা কিন্ডার গার্টেন
স্কুলে পড়াতো সে।তার পাশাপাশি স্কুল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য তৈরী হচ্ছিল।তবে
বিয়ের পর রণিতের কথায় তাকে সেই চাকরি ছাড়তে হয়।রণিত বলেছিল এক বছর পরে তো সেই
আমেরিকা যেতে হবে।তাই চাকরি করে কোনো লাভ নেই।তার চেয়ে সে বরং সংসারের কাজকর্ম
ভালো করে শিখুক।বিদেশ-বিভুইয়ে কখন কি করতে হয় তার তো ঠিক নেই।সত্যি বলতে বাপের
বাড়িতে রাখী আদরের দুলালি হিসেবে বড় হয়েছে।তার মা রিতা দেবী মেয়েকে সমস্ত
কাজকর্ম শেখাতে চাইলেও অসিত বাবু বাধ সাধতেন।তিনি বলতেন ওসব কিছু করতে হবে না
এখন।পরে দরকার পড়লে সব নিজে নিজে শিখে নেবে।পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে নিজেকে
দ্রুত অভিযোজিত করতে পেরেছিল বলেই না মানুষ আজ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব।রিতা দেবী
তার স্বামীর কথায় খুব রেগে গেলেও মুখে কিছু বলতেন না।অতঃপর রাখী সেরকম কাজকর্ম
তেমন কিছুই শেখে নি।
বড়দের রোমান্টিক গল্প
শ্বশুর বাড়ি এসে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি রাখীর।তার
শ্বশুর-শাশুড়ি যথেষ্ট ভালো মানুষ।তারা ওর সাথে বৌমা কম নিজেদের মেয়ের মতো
ব্যবহার করে।এই কয়েকদিনের মধ্যে রাখী গৃহস্থালির অনেক কাজকর্ম বেশ আয়ত্ত করে
ফেলেছে।তবে শ্বশুর বাড়িতে যে মানুষটি ওর সবচেয়ে প্রিয় সে হলো রণিতের ঠাম্মা
শিখা দেবী।ভদ্রমহিলার বয়স সত্তর পেরিয়েছে তবে চেহারায় এখনো এক অদ্ভুত সৌন্দর্য
ভাব স্পষ্ট ফুটে বেরোয়।শিখা দেবী ওনার বয়সী মহিলাদের থেকে অনেকটা আলাদা
মানুষ।তিনি তার সময়কার ইতিহাসে এম.এ পাশ ছাত্রী।কলকাতার নামী একটা গার্লস
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার চাকরি করেছেন।নাতবৌয়ের চাকরি ছাড়ানোর ঘটনায় তিনি
আপত্তি জানিয়েছিলেন তবে নাতির সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধীতা করেননি।শিখা দেবী
একজন বিধবা মহিলা তবে অত আচার-বিচার,ধর্মকর্মে মন নেই ওনার।একজন অতি
বাস্তববাদী,আধুনিকমনস্কা মহিলা তিনি।রাখী কাজ শেষ করে তার ঘরে গিয়ে তার সাথে
সময় কাটায়।এই মানুষটির সাথে সব কিছু যেন খুব সহজে আলোচনা করা যায়।এই মহিলাটির
ব্যপ্তি যে বিশাল সে বিষয়ে রাখী নিশ্চিত।মাঝে মাঝে রাখী শিখা দেবীকে বলে-‘সব
মহিলারা যদি তোমার মতো হত গো ঠাম্মি তাহলে মেয়েদের দুঃখ আরো অনেক ঘুচতো।’
রেখা ফুটে ওঠে।এই শিখা দেবীও কয়েকদিন ধরে অনুমান করেছেন রাখীর মনের উদ্বেগের
কথা।তবে এখনো জিজ্ঞেস করে ওঠেননি।
পুরোপুরি তৃপ্তি পাচ্ছে না।রণিত রতিক্রিয়ায় বেশীক্ষন টিকে থাকতে অক্ষম।রাখী
প্রথম প্রথম কিছু না বললেও দিন যত এগোলো রাখীর মনের অতৃপ্তি একদিন ওর মুখ ফুটে
বেরিয়ে এলো।সেদিন রাতে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত কাটাবার পর রণিত যখন তার বালিশ খুঁজছে
হঠাৎ রাখী বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে-‘রণিত শুধু নিজেরটুকু নিয়ে তুমি সন্তুষ্ট তাই
না।আমার দিকটা তো এবার ভাবো।’
রাখীর হঠাৎ এই কথায় রণিত বেজায় অবাক হয়ে যায়।রাখীর শরীরটা নিয়ে খেলা করে সে
অবসন্ন হয়ে পড়েছিল ঠিক তখনই রাখী এই বোমা ফাটালো।রণিত বলে ওঠে-‘হোয়াট ডু ইউ
ওয়ান্ট টু মিন বাই ইট রাখী?’
গোন আউট ওফ ইয়োর মাইন্ড?’
চাহিদা থাকতে পারে না?’
জল হয়ে ঝরে পড়ে।রণিত তার খেয়াল রাখে না।শুধুমাত্র রাখীর মাথার নীচে বালিশ তার
এই কষ্টের সাক্ষী হয়ে থাকে।
রাখীর যৌবনাপূর্ণ শরীরকে সে কাছে টেনে নয়।উদ্দাম আদর পাওয়ার আশায় রাখী ফের
নিজেকে সঁপে দেয়।কিন্তু কোথায় কি।পূর্বের মতো আবারো কয়েক মুহুর্তের মধ্যে
রণিতের পুরুষ রসের স্খলন ঘটে।সে ক্লান্ত শরীরে নিজের বালিশে মাথা এলিয়ে
দেয়।রাখীর সমগ্র শরীরে তখনো আগুন জ্বলছে।তার শিরা উপশিরার মধ্যে দিয়ে যৌবনসুধা
ছোটাছুটি করছে।স্বামীর ছোয়া,তার সোহাগ পাবার আশায় সে অস্থির।তার নারীত্বের চরম
অনুভূতি আনন্দের শিখরে যেতে চাইছে কিন্তু বারেবারে তা পাদদেশে এসে আছাড় খেয়ে
পড়ছে।পরদিন সকালে রাখী আবারো সরাসরি কথাটা বলে রণিতকে-‘রণিত আমি অর্গ্যাজমে
পৌছাতে পারছি না।তুমি এবার আমার কথাও ভাবো প্লিজ।’
রণিত চরম বিরক্ত হয়ে বলে-‘তুমি আবারো শুরু করলে।সকাল সকাল এসব নিয়ে কথা বলছো।’
বলার আছে টা কি।আর তাছাড়া এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।রোজ তুমি তোমার আনন্দ
পুরোমাত্রায় অনুভব করছ অথচ আমি কেন বঞ্চিত হব বলো।এই কথা আমি আমার স্বামী ছাড়া
আর কাকে বলব?’
বলশালী।বহু বছর ধরে জিম করে বানানো মজবুত শরীর তার।অথচ সে কিনা তার স্ত্রীকে
যৌনক্রিয়ায় পরম সুখ দিতে অসমর্থ হচ্ছে।এই চরম সত্যি মেনে নেওয়ার উপযুক্ত শক্তি
ও সাহস কোনোটাই রণিতের পুরুষ চিত্তের নেই।নিজের শারীরিক খামতি ঢাকতে সে এবার
রাখীকে অশ্লীল ভাবে আক্রমণ করে-‘তোমার তো দেখছি প্রচুর খিদে।একজনের পক্ষে তোমার
শরীরের এই খিদে মেটানো সম্ভব নয় দেখছি।তোমায় দেখে তো তা মনেহয় না।বাইরে তো
কোমল,নরম একটা মেয়ের প্রতিমূর্তি ধরে রাখো।তার ভিতরে যে কামনার কুয়ো এতো গভীর
তা বোঝার উপায় নেই।’
আমায় কু-ইঙ্গিত করছো।ছি! ছি!’
বড়দের জন্য গল্প
জানাই।তুমি যদি আমার সাথে সুখী না থাকো তো আমরা ডিভোর্স করতে পারি।’
রাখীর চেহারায় বিষন্নতা ফুটে ওঠে।রণিতের কথাগুলো বিষাক্ত তীরের মতো তার
অন্তরকে ছিন্ন করে দেয়।সে রণিতের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে।রণিত একবার সেই চোখের
দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।রাখীর ঐ প্রখর দৃষ্টির দিকে তাকাতে তার পুরুষ সিংহ
বাধ সাধে।সেদিন থেকে রাখী তার শারীরিক চাহিদার কথা গলা টিপে মেরে ফেলে।রণিত ওকে
চুপ করে যেতে দেখে পুনরায় রোজ রাতে তার স্ত্রীয়ের শরীরের সুধা পান করতে
থাকে।কিন্তু রণিত ধীরে ধীরে এবার লক্ষ্য করে রাখী যৌনক্রিয়ায় কোনো সাড়া দিচ্ছে
না।সে যেন একটা পুতুলের সাথে রতি খেলা করছে।আস্তে আস্তে রণিত রাখীকে ছোয়া বন্ধ
করে দেয়।একই বিছানায় দুজনের মধ্যে সহস্র ক্রোশ দূরত্ব গড়ে ওঠে।
বাবা শেখর মিত্র তাদের বেয়ানকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান।শেখর বাবু বলেন-‘আপনি
একলা এলেন যে বড়।বেয়াই মশাই কি আসতে চাইলেন না?’
এসেছেন।শিখা দেবী রিতাকে প্রশ্ন করে-‘এতদিনে আসা হলো তোমার।মেয়েটাকে দেখতে কি
ইচ্ছে হয়না বুঝি।’
জানি এই বাড়িতে ওর কোনো অযত্ন হবে না।’
দেখে রিতা দেবী বুঝতে পারেন তার মন ভালো নেই।জলখাবার খেয়ে শিখা বলেন-‘যাও মা
মেয়ের কাছে যাও।শোনোতো নাতবৌয়ের কাছে ওর এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা।আমাকে
জানিও কেমন।’
হয়েছে।প্রথমে বলতে না চাইলেও মায়ের বারংবার প্রশ্নের সমুখে মুখ খোলে
রাখী।সবকিছু তাকে জানায়।মেয়ের মুখে এইকথা শুনে রিতা দেবী আকাশ থেকে পড়ে।
একমাত্র ধর্ম হলো তার স্বামীকে দেখাশোনা করা।তার সমস্ত চাহিদা পূরণ করা।এটাই
আমাদের সংস্কৃতি,এটাই আমাদের সংস্কার।তোকে লেখাপড়া শিখিয়েছি কি এসব শোনার
জন্য।’
কথাগুলো জানিয়েছে সে, কিন্তু পরিবর্তে ওর মা যে ওকে ভুল বুঝছে।রাখীর প্রতিবাদী
সত্তা তার মাকে বলে-‘আচ্ছ মা স্বামীর কাছে এই আশা করাটা কি পাপ?’
অনুপ্রবেশ ঘটেছে।অপর্ণা ও শেখর বাবু ধীরে ধীরে তা বুঝতে পারে।একদিন রাখী রণিতকে
খুব শান্তভাবে বলে-‘রণিত একটা কথা বলি রাগ করোনা।তুমি একবার ডাক্তারের সাথে কথা
বলে দেখোনা।আজকাল তো কতরকম চিকিৎসা বেরিয়েছে।সব সমস্যার সমাধান আছে।’
পারেনা।মুহূর্তের উত্তেজনায় ফেটে পড়ে রণিত।
-‘রাখী আমার পক্ষে আর তোমার সাথে থাকা সম্ভব না।তুমি কোন সাহসে এতো বড় কথা বললে
আমায়।হাউ ডেয়ার ইউ টু টক মি দিস বুল সিট?’
একটা নম্বর।
বলো।কেমন আছো বাবা তোমরা?সব ঠিক আছে তো?’
আপনাদের জানাতে চাই।’
তার বাবা-মা সবাই তাকে ভুল বুঝবে।মা তো কদিন আগেই কত কথা শুনিয়ে গেছে।কেউ তার
মনের কথা জানতে চাইবে না।সে তো কোনো দোষ করে নি।শুধুমাত্র নিজের একটা চাহিদার
কথা তার স্বামীকে জানিয়েছিল।সেটা যে জীবনে এত বড় আকার ধারণ করবে তা সে
ভাবেনি।কি করবে রাখী ভেবে পায়না।একবার ভাবে জীবনটা শেষ করে ফেলবে।কিন্তু সেই
সাহস তার নেই।নিজেকে বড্ড একা,অসহায় মনে হয় ওর।কেউ কি বুঝবে না ওর মনের কথা?এই
বিশ্বসংসারে এমন কেউ কি নেই যে ওকে বুঝবে?
গুরুতর আলোচনার সভা বসেছে।রণিত এসে উপস্থিত হয়।তার চেহারায় বিরক্তি ও রাগের
ভাব স্পষ্ট।রাখী ঘরের এককোণায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।আজ তার বিচার সভা
বসেছে।অভিভাবকদের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনার স্রোত বইছে।শুধু একটি মানুষ
নির্লিপ্তভাবে সোফায় গা এলিয়ে বসে আছেন।তিনি হলেন রণিতের ঠাম্মি শিখা দেবী।মনের
মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই।রাখীকে ডেকে নিজের পাশে বসালেন
তিনি।অসিত বাবু জিজ্ঞাসা করলেন-‘তা কি ব্যাপার একটু খুলে বলোতো।পরিস্থিতি বিচার
করে তো মনে হচ্ছে গুরুতর কিছু।’
বলেছে এ নিশ্চয়ই তার জের।মনে মনে প্রমাদ গুনছেন তিনি।রণিতের বাবা শেখর এতোক্ষনে
মুখ খুলল।তিনি বললেন-‘কি বলবি বল।ওনাদের হঠাৎ ডেকে পাঠালি।আমাদেরও অন্ধকারে
রেখেছিস।এনিথিং সিরিয়াস?’
আর থাকতে পারব না।ঐরকম ঘৃণ্য প্রকৃতির মেয়ের সাথে আমার থাকা অসম্ভব।’
যেমন চমকে যায়,রণিতের অভাবনীয় এই কথায় সকলের তাই অবস্থা।শুধু সত্তরোর্দ্ধ একজন
মহিলা এখনো অবিচল।অসিত বাবু বললেন-‘কি বলছো তুমি বাবা।এই কয়েকমাসের মধ্যে এমন
কি ঘটল যার জন্য তুমি এতো বড় একটা কথা বললে।’
ওর তা আগে বুঝিনি আমি।’
না মা।আমায় আগে সব শুনতে দে।’
সাথে শুয়ে পরিতৃপ্তি পাচ্ছে না।আমি ওকে সম্পূর্ণ আনন্দ দিতে পারছি না।’
আচমকা এমন মন্তব্যে সকলে হতবাক।রাখী শিখার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে নেয়।অসিত বাবু মাথা
নীচু করে বসে।রণিত বলে চলে-‘তোমার বৌমা আমায় বলছে ডাক্তার দেখাতে।আমি নাকি
নপুংসক।’
রাখীর চুলের মুঠি টেনে ধরে।তিনি প্রচন্ড রাগ ও অপমানে তাকে একটা চড় মারতে উদ্যত
হন।ঠিক এইসময় গর্জে ওঠেন শিখা।রিতাকে থামিয়ে বলেন-‘এ কি করছ বৌমা।মা হয়ে মেয়ের
পাশে না দাঁড়িয়ে ওকে মারতে এসেছ।’
হতে হল বলুন তো।’
স্ত্রীকে যথেষ্ট সম্মান করতে পারেনা তার কথা ধরছো তুমি।’
এতোগুলো বাজে কথা বলে গেল তখন পারলি না ওকে ধমকে চুপ করাতে।এখন আমায় চুপ
করাচ্ছিস।’
হয়ে তিনি কথা বলবেন ভেবে পেলেন না।রণিত তার ঠাম্মিকে বলল-‘তুমি এসব কি বলছো
ঠাম্মি।সব জেনে শুনে….’
বোঝো?বুঝলে নিজের বৌয়ের নামে এতোগুলো নোংরা কথা বলতে না।স্বামী স্ত্রীর
সম্পর্কের সূক্ষ্ম রসায়ন অত সহজ নয় রণিত।এ সম্পর্ক জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক।’
বড়দের অনুবাদ গল্প
মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের মনের কষ্ট বুঝলে না।তোমরা কেমন মা।’
নিজের অন্তরের কথা জানিয়েছে।এতে দোষ কি?ও তো বাইরের কাউকে বলেনি বা এটা নিয়ে
রণিতকে কটাক্ষ করেনি।স্বামীরও এটা কর্তব্য তার স্ত্রীয়ের ইচ্ছা,আকাঙ্খাকে
মর্যাদা দেওয়া।তা না করে তোমার ছেলে নিজেদের একান্ত ব্যক্তিগত কথাকে সকলের
সামনে এনে তাকে কলুষিত করেছে।আজ রাখী যদি অন্য কোনো অসদুপায় অবলম্বন করত তখন
তাকে দোষ দিলে আমি ওকে সমর্থন করতাম না।’
থাকে।সকলের সেই সাহস থাকে না যে তার অপরিপূর্ণতায় তা ব্যক্ত করার।কিন্তু
নাতবৌয়ের সেই সাহস আছে।সে নির্দ্বিধায় তার স্বামীকে জানিয়েছে এ কথা।এটা নিয়ে
রণিতের এতো রাগ করার আছে কি?’
তোমার শ্বশুর মশাইকে আমার অতৃপ্তির কথা জানিয়েছিলাম।কিন্তু এক মুহুর্তের জন্য
উনি রাগ করেননি।আমার কথাকে সম্মান দেখিয়ে সেই সময় কলকাতার এক বড় ডাক্তার
দেখান।তারপর চিকিৎসার ফলে তার সেই সমস্যা দূর হয়।তারপর খোকা আমার গর্ভে আসে।আর
রণিতের পুরুষ সিংহের এতো গুমোর যে স্ত্রীর ঐ কথায় তার আঁতে ঘা লাগল।এতো ঘা লাগল
যে রাখীর সঙ্গে থাকবে না জানিয়ে দিল।’
রা নেই।রাখী চোখের জল মুছে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে তার এই উদ্ধারকারীনীর
দিকে।পৃথিবীতে তাহলে একজন মানুষ আছে যে তাকে বুঝল।মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ
জানায় রাখী।শিখা দেবীর প্রতি তার শ্রদ্ধা বহুগুণে বেড়ে যায়।ওদিকে শিখা দেবীর
প্রতিবাদী নারীসত্তা তখনও গর্জে চলেছে।রাখীর একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে
শিখা বলে-‘রাখী এখান থেকে কোথাও যাবেনা।দাদুভাই তুমি ভুলে যেয়োনা এই বাড়ি
আমার।আমার নাতবৌ আমার ঘরে আমার সাথে থাকবে।আমি ধন্য এমন সাহসিনী নাতবৌ পেয়ে।’
ওর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।রণিত রাগ করে নিজের ঘরে চলে যায়।সেই দিন থেকে রাখী শিখা
দেবীর সাথে থাকতে শুরু করে।রাখী একদিন তাকে জিজ্ঞাসা করে-‘ঠাম্মি এভাবে কি
সমস্যার সমাধান হবে বলো।আমি বরং চলে যাই।’
ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে।অর্ক সেটা বুঝতে পারছে।অর্ক রণিতের সহকর্মী।শুধু সহকর্মী
বললে কম বলা হবে,অর্ক রণিতের খুব ভালো বন্ধু।অথচ রণিত এই ব্যাপারটা তাকে বলে
উঠতে পারেনি।রণিত ভিতর ভিতর হয়তো নিজের এই দুর্বলতার ব্যাপারে অবগত ছিল।সেদিন
লাঞ্চ টাইমে অর্ক ওকে জিজ্ঞাসা করে-‘রণিত তোর কি হয়েছে বলতো?কদিন ধরে দেখছি
কাজে মন নেই তোর।কাজে এত ভুল হচ্ছে আজকাল।এরকম তোর তো হয়না।’
অর্ককে জানায় অফিস থেকে বেরিয়ে সব বলবে।অফিস থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে কফি
সপে যায় ওরা।রণিত গড়গড় করে সব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেয় অর্ককে।কিছুক্ষন
সব শুনে অর্ক চুপ থাকে।তারপর ও মুখ খোলে।ও বলে-‘তোর ঠাম্মিকে খুব দেখতে ইচ্ছে
করছে রে।এরকম মহিলাও আছেন।আমি তো ভেবে পাচ্ছি না।’
যা করা উচিত তাই করেছে।তোর ঠাম্মি এটা বুঝে গেল আর তুই এটা বুঝলি না।’
চলে-‘তুই ভালো কোনো ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট কর।আমি বলছি সব ঠিক হয়ে যাবে।রাখীকে
দূরে সরিয়ে দিস না ভাই।’
খায়না রণিত।রাখী শিখার ঘর থেকে সব খেয়াল করে।কিন্তু শিখা দেবীর নির্দেশে কাছে
আসে না।সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেনা রণিত।এই চরম সত্য মেনে নিতে খুব
কষ্ট হয় তার।শেষ রাতে চোখটা একটু লেগে আসে ওর।ঘুম ভেঙে ব্রেকফাষ্ট না করে অফিস
চলে যায় সে।
ছুটে যায় তার কাছে।রণিত বলে-‘একটা উপকার করবি ভাই?’
যাবি আমার সাথে?’
তুই রাখীকে সঙ্গে নিয়ে যা।ও ভীষন খুশী হবে।’
চাইবে।’
জানায়।রাখীর মুখের ভাষা আটকে গেছে।সে ঝরঝর করে কাঁদতে থাকে।শিখা ওর কান্না দেখে
কারণ জানতে চাইলে রাখী সব জানায়।শিখার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে।দুপুরে
সানন্দে রাখী রণিতের সাথে ডাক্তারের চেম্বারে যায়।
বরফ গলে গিয়ে নতুন উত্তাপের আঁচে ওরা একে ওপরের অনেক কাছে এসে গেছে।এমন সময়
রাখী একদিন বুঝতে পারে তার শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটছে।তার শরীরের অন্তঃস্থলে
নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।প্রচন্ড খুশীতে নাচতে নাচতে রাখী প্রথমেই ছুটে যায়
শিখার কাছে।
ভালো থাকিস।’
আধুনিক মনস্ক মানুষের সংখ্যা খুব কম।কিন্তু তুমি হলে একজন সর্বার্থে আধুনিকা।’