প্রাপ্তবয়স্কদের গল্প (সম্পর্কের চোরাবালি) – Praptoboyeshkoder
Golpo
সরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে গিয়ে ধড়াম করে দরজাটা আটকে দিলো আর তার সাথে
উচ্চ স্বরে কান্নার আওয়াজ বেরোতে শুরু করলো ওই ঘর থেকে। সূর্য আর মনামী প্রথমে
হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর সম্বিত ফিরে পেয়ে মনামী মেয়ের ঘরের দিকে
দৌড়ালো।
সূর্যও যোগ দিলো। এক সাথে,
লাগলো,
ভালোবাসা চাই শুধু!”
এতো আওয়াজ শুনে সিমির ঠাকুমা, সৌদামিনী দেবী আস্তে আস্তে পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে
এলেন। মনামী তাকে দেখেই কেঁদে ফেললো।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প
“দিদিয়া” বলে ডাকে, তিনি আস্তে আস্তে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে উঠলেন,
কাউকে বলতে হবে না।”
খাটে বসিয়ে আবার হাউ মাউ করে সিমি শুরু করলো কান্না। মনামী আর সূর্য ঘরে ঢুকতেই
সৌদামিনী দেবী ইশারা করলেন ওনাদের বাইরে যেতে। তারপর অশীতিপর হাত দিয়ে সিমির
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন,
নিয়েও খুট খুট করে সারাক্ষণ যতক্ষন ঘরে থাকে। ও দিদিয়া গো….এ যে আমার কি
হলো…ওই হাড়ে বজ্জাত ছেলে যে অন্য কারোর সাথে প্রেম করছে। আমার সাধের সংসার আর
করা হলো না গো!”
যেতে দিন!”
ফেসবুক করতে তাই একটু জেলাস ফিল করানোর জন্য এরকম করেছি! তাই বলে বাড়ি ছেড়ে
দেবে গো তুমি!”
মনামী-সূর্যের জামাই আর সৌদামিনী দেবীর নাতজামাই।
ঠিকঠাক বলবে নাহলে আমার মেয়েকে কাঁদানোর ফল টের পাবে এই আমি বলে দিলাম।”
লাগলো। অনির্বাণ বোমকে যাওয়া মুখ নিয়ে একটা ঢোক গিলে মিন মিন করে তোতলাতে
তোতলাতে বলে উঠলো,
জানিনা। আমি সীমন্তিনীকে খুব ভালোবাসি। ও সবসময় ফোনে সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকতো
তাই আমি ওকে আমার দিকে ফেরানোর জন্য একটু নাটক করেছি কিন্তু ও ভুল বুঝেছে
আমাকে! আমি নির্দোষ ইওর অনার! এই না ইওর বাবা না মানে শুধুই বাবা! এই আপনার,
মায়ের, বড় গিন্নির দিব্বি। আমি ওকেই শুধু ভালবাসি খুব! মা কালি!”
দেখবোও না গো…”
পড়লো। মনামী আর সূর্যও নিশ্চিন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে জামাই আর মেয়েকে কি
কি খাওয়াবে দুপুরে সেই হিসেব করতে লাগলো।
প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমের গল্প
গিন্নি বলে) পাশে বসলো আর সিমিকে একচোখ মেরে হাত ধরে টেনে ওর পাশে বসিয়ে দিলো।
সৌদামিনী দেবী হাসতে হাসতে উঠতে যেতেই অনির্বাণ ওনার হাত ধরে বলে উঠলো,
হেসে বলে উঠলেন,
হয়নি, পুজো হয়নি, এখন ছাড়ো কত্তামশাই দুপুর বেলায় খেয়ে দেয়ে অনেক গল্প করবো
তোমাদের সাথে। কেমন?”
ফোকলা মুখে হেসে সৌদামিনী দেবী মাথা নাড়িয়ে তার সম্মতি জানালেন আর আস্তে আস্তে
উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
বসে টিভিতে খেলা দেখছে আর তিন কর্তা-গিন্নি তাদের ঘরে দ্বিপ্রাহরিক বৈঠকে
মশগুল। হটাৎ অনির্বাণ তার বড় গিন্নিকে জিজ্ঞেস করলো,
নিঃশ্বাস ফেলে বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
আমার এক সই মানে এক বন্ধুর গল্প বলি শোনো….১৮ বছর বয়েসে তোদের দাদানের সাথে
বিয়ে হয় আমার। বিয়ের পর কলকাতায় চলে আসি। সেখানে পাশের বাড়িতে আমার সমবয়সী এক
বউ থাকতো। তার কথাই বলবো আজ। ধরা যাক তার নাম বিদ্যুৎলতা। আমি তাকে ভালোবেসে
বিদ্যুৎ বলে ডাকতাম। ওর বরের বয়েস তোদের দাদানের মতোই। একই জায়গায় চাকরি করতেন
দুজনেই। শ্বশুরবাড়িতে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ী, চাকর বাকর এছাড়াও এক দেবর, ওই ধর
আশ্রিত মতন, সে থাকতো। বিদ্যুতের বর শান্ত ব্যক্তি ছিলেন, ঠিক তোদের দাদানের
মতন একটু বেশি রকমেরই শান্ত!”
আবার বলতে শুরু করলেন,
বলবো সব। তো হ্যাঁঁ যেটা বলছিলাম, বিদ্যুতের বর বড়ই শান্ত, এতটাই শান্ত যে
বিছানাতেও সে ঠান্ডা। ওর আর আমার বিয়ে কয়েকদিনের এদিক ওদিকে হয়েছিল।দুজনের
আড্ডা দেয়ার জায়গা ছিল ছাদের কোনে। লুকিয়ে লুকিয়ে ছাদের কোনায় বসে আচার খেতে
খেতে সে এগুলো বলতো আমার কাছে। তার বন্ধুদের কাছে বিবাহিত জীবনের রঙ্গীন গল্প
শুনে সেও আশায় ছিল যে তার জীবনেও এরকম রঙ্গীন রাত অনেক আসবে। কিন্তু স্বপ্ন
ভঙ্গের জ্বালায় পাশে শীতল স্বামী নিয়ে সারারাত ছটফট করতাম। ভোরের দিকে স্নানঘরে
গিয়ে বালতি বালতি জল ঢেলে নিজেকে ঠান্ডা করতাম!”
শুনতাম, আর কিই বা করতে পারি..এরপর কিছুদিন হলো বিদ্যুৎ আসা বন্ধ করে দেয়।
কথাটা আমার শাশুড়ি মাকে বলতে উনি বলেন যে ওর শ্বশুর, শাশুড়ি নাকি দেশের বাড়ি
গেছে কি একটা কাজে। তাই ও আসতে পারছে না। আর কিছুদিন পরেই ওনারা এসে গেলেই
বিদ্যুৎ আসতে পারবে আবার। দিনকুড়ি পর আবার হাজির সে। তবে এইবার বিদ্যুতের মুখ
চোখ চকচক করছে যেন কিছু একটা নিষিদ্ধ জিনিস পাওয়ার আনন্দে। আবার আমাদের গল্প
করার জায়গায় পৌঁছাতেই সে আবেগে বলে ওঠে —
গন্ধ…’
— “তপন আমাকে প্রকৃত নারী করে তুলেছিল। ওই কদিন রোজ দুবেলা আমরা মিলিত হতাম।
তপনের হাতের ছোঁয়াতে আমার সারা শরীর জেগে উঠতো যেন, ব্যথার তীব্র আবেশে চোখ
ফেটে জল বেরিয়ে আসতো..তবুও কি চরম সুখ এই ব্যথায়….
দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। নয়মাস পর আমি একটি ফুটফুটে ছেলের জন্ম দিই। বাবুর যখন
দশবছর বয়েস তখন তপন মারা যায়। বাবুকে দিয়েই শেষকৃত্য করানো হয় তার আসল পিতার।”
কথাগুলো শুনে। সিমি অবাক ভাবে বলে উঠলো,
— “বাবু!! ওনার ছেলের নামও বাবু? আর তুমি তো শেষটা পুরোটাই আমি,আমার করে গেলে!
ওহ্ অ্যাই অ্যাম কনফিউজড! তুমি আগের মতন আর গল্প বানাতে পারো না দিদিয়া!”
নাড়িয়ে ইশারায় সিমিকে থামিয়ে দিয়ে কাশতে কাশতে নিজের ঘরের দিকে যেতে গেলে বাইরে
বসে থাকা সূর্য, যে খেলা বন্ধ করে মায়ের গল্প শুনতে শুরু করেছিলেন, সে লাফ দিয়ে
উঠে আসে আর ওনাকে ধরে ঘরের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলেন,
জিজ্ঞেস করলেন তার মাকে,
একটু জল খেয়ে ধাতস্থ হয়ে সোজা গিয়ে আলমারি খুলে একদম কোনায় লুকিয়ে রাখা একটা
বিবর্ণ হয়ে যাওয়া সাদাকালো ছবি বের করে আনলেন। তার সন্তানের পিতার ছবি সেটি। এক
ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো তোবড়ানো গাল বেয়ে। অস্ফুটে বলে উঠলেন,
কেঁদে ফেললেন।
মেসেজটা ডিলিট করে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।