সরস্বতী পূজো আর কেউ প্রেমে পড়েনি এমনটা বোধহয় হয়না | বাঙালীর ভ্যালেন্টাইন বলে
কথা | তেমনি একটি ছোট্ট মিষ্টি প্রেমের গল্প, যা হয়তো আমাদের সবার পরিচত |
ধড়মড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো ঋতম | সূর্যের আলোয় গোটা ঘরটা আলোকিত হয়ে উঠেছে |
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো আটটা বাজে | ইশশ অনেকটা বেলা হয়ে গেল | আজ সরস্বতী পূজো |
ভেবেছিল সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবে | তা আর হলো কই ! কাল অনেক রাত পর্যন্ত পাড়ার
পূজোর প্যান্ডেলের তদারকি করতে হয়েছে | সকালে ওঠবার জন্য ঘড়িতে সাড়ে ছয়টায়
অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলো | কিন্তু ঘুমের ঘোরে কখন যে সেটা বন্ধ করে দিয়েছে, তা
আর মনে পড়ছে না | হাতে একদম সময় নেই |
সেরা ভালোবাসার গল্প
বিছানা থেকে বেরিয়ে বাথরুমে যাবার জন্য দরজা ঠেলতেই বুঝতেই পারলো দরজা ভিতর
থেকে বন্ধ | ভিতর থেকে গুনগুন করে গান ভেসে আসছে | তার মানে ভিতরে দিদিভাই
স্নান করছে | মানে আধঘণ্টা আগে বেরোবে না | ডেকেও কোন লাভ নেই |
আজকেই এমন দেরী হতে হলো | কতদিন ধরে কতকিছু ভেবে রেখেছিলো | পুরোটাই মাটি হবে
মনে হচ্ছে | রণিতা বোধহয় এতক্ষণে পুষ্পাঞ্জলি দিতে চলে এসেছে | না হাল ছাড়লে
চলবে না | একটা চেষ্টা করে দেখতে হবে |
দাঁত ব্রাশ করে দ্রুত স্নান করার জন্য বাইরের কলতলার দিকে অগ্রসর হল সে |
সুজাতা পাউরুটিতে মাখন লাগাতে লাগাতে ছেলের কার্যকলাপ লক্ষ্য করছিলো |
– কিরে ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?
– কলতলায়…স্নান করতে |
– একটু অপেক্ষা কর | দিদিভাই বেরোলে স্নান করিস |
– না মা… দেরী হয়ে গেছে |
– দাঁড়া, একটু গরম জল বসিয়ে দিই | ঠান্ডা জলে স্নান করিস না | ঠান্ডা লেগে যাবে
|
– মা আজকে সরস্বতী পূজো | ঠান্ডা জলে স্নান করলে কিছু হবে না | তুমিই তো বসন্ত
পঞ্চমী তে সকালে স্নান করলে শ্রী ফেরে |
সুজাতা মনে মনে বেশ অবাক হলেন | যে ছেলে জীবনে শীতকালে কোনদিন গরম জল ছাড়া
স্নান করে না, সে হঠাৎ ঠান্ডা জলে স্নান করছে | তিনি কোনো কারণ খুঁজে পেলেন না
|
– এত তাড়াহুড়ো করছিস কেনো বলতো?
– মা, পুষ্পাঞ্জলী শেষ হয়ে যাবে তো?
– তুইতো লাইব্রেরীতে যাবি পুষ্পাঞ্জলী দিতে | ওখানে তো দশটা পর্যন্ত
পুষ্পাঞ্জলী হবে | আমি গতকালই জেনে এসেছি | সবে তো আটটা বাজে |
ঋতম আর কথা না বাড়িয়ে স্নান করার জন্য অগ্রসর হলো |
*****************************
লাইব্রেরীতে এসে ঋতম দেখলো থিক থিক করছে ভিড় | তার চোখদুটো কোন এক জায়গায় আবদ্ধ
নেই | চারিদিকে যেন কাউকে খুঁজছে | বেশ কিছুক্ষণ দেখার পরে বেশ হতাশ হলো |
সায়কের ঠেলায় সম্বিৎ ফিরে পেল সে |
– কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? কাকে খুঁজছিস?
– নারে কেউ নয় |
– কেউ নয় বললে হবে ভাই | আজ বাঙালির ভ্যালেন্টাইন বলে কথা | আসেপাশে এত
সুন্দরীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে… আর তুই বলছিস কেউ নয় |
সায়কের কথায় ঋতম বেশ একটু লজ্জা পেয়ে গেল | ওর হাতটা টেনে নিয়ে বলল, চল এখন |
পুষ্পাঞ্জলি দিতে দেরী হয়ে যাচ্ছে |
রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প
********************
কলেজে যাবার পথে বাইকটা বামাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড় করলো ঋতম |
পিছন থেকে সায়ক বলল, কিরে এখানে দাঁড় করালি কেন?
– চল ঠাকুরটা দেখে আসি |
– তোর কেসটা কি বলতো | নিশ্চয়ই কোন মামনির প্রেমে পড়েছিস |
– কি সব বলছিস?
– সব বুঝেছি ভাই | আর আমাকে বোঝাতে হবে না | সকাল থেকে তো একেই খুঁজে
বেড়াচ্ছিস |
– আসলে আমরা আগে থেকে চিনি একে অন্যকে |
– কি বলছিস ভাই ! এতদিন ধরে কথা বলছিস, আর আমাকে তো আগে বলিসনি |
– কয়েকমাস আগে ফেসবুকে আলাপ | টুকটাক চ্যাট হয়েছে | আজই সামনাসামনি প্রথমবার
দেখা করছি |
সায়ক ঋতমকে ভালো করে চেনে | ছোটবেলার বন্ধু | ঋতমের চোখমুখ দেখে ভালোই
বুঝতে পেরেছে এই সম্পর্কের ব্যাপারে সে কতটা সিরিয়াস |
ঋতম বাইকটা রাস্তার একধারে দাঁড় করিয়ে গেট পেরিয়ে স্কুলের ভেতরে ঢুকলো | সায়কও
তাকে অনুসরণ করলো |
সরস্বতী ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়ে ঘুরতেই ঋতমের চোখে পড়লো রণিতা ওর বন্ধুদের সঙ্গে
কথা বলছে |
রণিতার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঋতমের বন্ধুত্ব প্রায় ছয় মাসের | এতো কাছাকাছি
থাকলেও কোনদিন কেউ কারোর সঙ্গে দেখা করেনি | ঠিক হয়েছিল আজ সকালে পুষ্পাঞ্জলির
সময়ে দুজনে লাইব্রেরিতে দেখা করবে | ঋতমের দেরীর কারণে সেটা আর হয়নি | ও জানতো
রণিতা এই স্কুলে পড়ে | তাই একটা চেষ্টা করলো দেখা করার |
শাড়িতে রণিতাকে আজ দারুন লাগছে | বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুটো অসম্ভব সুন্দর | সেইসঙ্গে
সর্বদা হাসিমাখানো মুখে দেবীপ্রতিমার মতো লাগছে | পুরো সম্মোহিতের মতো দেখতে
থাকলো সে |
রণিতার চোখে পড়তেই এগিয়ে এলো ঋতমের দিকে |
কাছে এসে চাপাগলায় বললো, তুমি এখানে কি করছ? লাইব্রেরীতে এলেনা কেন?
এখানে কথা বলা যাবেনা | কেউ দেখে ফেললে মুশকিল হবে | তুমি স্কুলের পিছনে যাও
আমি আসছি |
সায়ককে অপেক্ষা করতে বলে ঋতম একাই স্কুলের পিছনে এলো | আর যেভাবেই হোক রণিতাকে
ওর মনের কথা বলতে হবে | এতদিন ধরে ওকে ঘিরে কত স্বপ্নই না বুনেছে |
কিছুক্ষণ পরে রণিতা হন্তদন্ত হয়ে এলো | ভিতরে ভিতরে বেশ উত্তেজিত |
এসেই অনুযোগের সুরে বলল, তুমি লাইব্রেরীতে এলেনা কেন? জানো আমি তোমার
জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করেছি |
– আসলে কাল শুতে দেরী হয়ে গিয়েছিল | তাই সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারিনি | প্লিজ,
কিছু মনে কোরো না |
– না না ঠিক আছে | তোমার জন্য দুটো জিনিস এনেছি | বলেই ব্যাগ থেকে একটা চকলেট
আর গ্রিটিংস কার্ড বের করলো | প্ৰিয় মানুষের হাতে উপহারদুটো তুলে দিতে পেরে
কিশোরী রণিতার মুখে তৃপ্তির হাসি |
ঋতম উপহারদুটো হাতে নিয়েই বুঝতে পারল কি ভুল করেছে | রণিতার জন্য তো কোন উপহারই
আনা হয়নি | ইশশ…জীবনে এমন অবস্থায় কোনদিন পড়তে হয়নি | কি করবে এখন ! মনে মনে
নিজেকেই দোষারোপ দিতে লাগলো |
ঋতমের মুখ দেখে রনিতা বুঝতে পারল কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে |
– কি হয়েছে?
– না আসলে তোমার জন্য……
এই ধর….ফুল আর চকলেট | পিছনে ফিরতে ঋতম দেখলো, একগোছা লাল গোলাপ আর চকলেটের
বড় প্যাকেট নিয়ে সায়ক দাঁড়িয়ে |
-হাঁ করে দেখছিস কি….ধর | আমাকে আনতে দিয়ে এদিকে চলে এসেছিস | আর আমি
চারিদিকে তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছি |
ফুল আর চকলেটটা ঋতম নিতেই সায়ক বলল, তুই কথা বল….আমি অপেক্ষা করছি |
রণিতার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে | সলজ্জ দৃষ্টিতে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে সে |
ঋতম মনে মনে সায়ককে ধন্যবাদ জানালো | প্ৰিয় বন্ধুই বোধহয় পারে এমনি করে মনের
কথা জেনে নিতে |
সায়ক চলে যেতে ঋতম রণিতার হাতে উপহারগুলো তুলে দিল | তখনো রণিতা মাথা নীচু করে
দাঁড়িয়ে |
তারপরে রণিতার হাত ধরে নীচু স্বরে বললো, তোমার হাতটা কি এভাবেই সারাজীবন ধরে
রাখতে পারি?
ঋতম অনুভব করল রণিতাও ওর হাতটা আরো শক্ত করে ধরেছে | হাত ছাড়ার বিন্দুমাত্র কোন
লক্ষণ নেই |
শুধু মুখে বলল, জানিনা যাও |
রণিতার মিষ্টি হাসিতেই ঋতম বুঝে নিয়েছে, তার ভালোবাসা আজ পরিপূর্ণতা লাভ করেছে
| বাকী জীবনের সুখ দুঃখের সঙ্গীকে আজ খুঁজে পেয়েছে সে | দেবী মৃন্ময়ীর
আশীর্বাদে সমস্ত সংশয় কাটিয়ে চিন্ময়ীরূপী রণিতাকে নিয়ে আগামীর পথে চলার
জন্য সে প্রস্তুত |
প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…