সফলতার গল্প – Success Story In Bengali
জ্যাক মা
পৃথিবীবিখ্যাত একজন ইন্টারনেট এন্টারপ্রেনিউর হিসেবে জ্যাক মা (Jack Ma) বড্ড
বেমানান। একটা বয়স পর্যন্ত কম্পিউটার কী জিনিস তিনি চোখে দেখেননি, কোন নামকরা
স্কুলের বারান্দাতেও যাননি কখনো, আর তার বাড়ি সিলিকন ভ্যালি থেকে অর্ধ পৃথিবী
দূরে। অথচ জ্যাক আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী
লোকগুলোর একজন! আসলে তিনি ব্যর্থতাকে কিভাবে সফলতায় রুপ দিতে হয় তার একটি
জ্বলন্ত উদাহরন!!
মা’র জন্ম ১৯৬৪ সালে, কৈশোর ছিল দারিদ্রে ভরা। তার বাবা-মা ছিলেন পালাগায়ক এবং
মাও সেতং-এর সাংস্কৃতিক পালাবদল কর্মসূচীর শিকার। সময়টা তখন এমন যখন বাইরের
পৃথিবী থেকে চীন নিজেকে আলাদা করে ফেলছে। কিন্তু জ্যাক মা ছিলেন এই ধারনার
বিপক্ষে। সরকার আর স্কুল যখন ম্যাথস শেখানোর জন্যে পাগল, জ্যাকের মাথায় ম্যাথস
ঢুকে না; তার আগ্রহ যখন বাইরের পৃথিবী নিয়ে তখন কেউ তাকে সেটা শেখাবে না!
ব্যবসায় সফলতার গল্প
এই অচলবস্থার সমাধান করতে মা শহরের সবচেয়ে বড় হোটেল এলাকাগুলোতে ঢুঁ মারতে
থাকলেন, উদ্দেশ্য বিদেশিদের সাথে ইংলিশে কথা বলার সুযোগ খোঁজা। ১২ বছর বয়েস
থেকে ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে মা এই কাজ করেছেন যাতে শুধু তার ভাষাগত উন্নতিই
হয়নি বাকি পৃথিবীর সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল সম্পর্কেও ধারনাও দিয়েছে।
ওদিকে বাবার টাকা নেই তাই জ্যাক জানতেন লেখাপড়ায় ভাল করা ছাড়া তার আর কোন গতি
নাই। কিন্তু কলেজে ঢোকার সুযোগ পেতে তাকে একটা এন্ট্রান্স এক্সামের মধ্য দিয়ে
যেতে হবে যা পাশ করার ক্ষমতা তার নেই। প্রথমবার জ্যাক ম্যাথসে ১২০ এর মধ্যে ১
পেয়েছিলেন, দ্বিতীয়-তৃতীয়বারও ফেইল আর ফেইল। নিম্ন মানের Hangzhou Teacher’s
Institute ভর্তি হওয়া ছাড়া আর কোন সুযোগ থাকলো না।
ব্যর্থ মানুষের সফলতার গল্প
পাশ করে বের হয়েও আরেক ব্যর্থতার গল্প, কোথাও জব পান না। এক ডজনেরও বেশি
জায়গায় চেষ্টা করে ব্যর্থ তারমধ্যে সবচেয়ে এপিক ছিল KFC তে। ২৫ জন চাকুরীর
ইন্টারভিউ দিয়েছিল, ২৪ জন সিলেক্টেড হয় আর একজন বাদ পড়েন তার নাম হলো জ্যাক
মা!
যাই হোক, অনেক চেষ্টার পর একটা জব পেলেন, একটা লোকাল ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশ
পড়ানোর যেটা তিনি অনেকদিন কন্টিনিউ করেছিলেন।
মা নিজেকে আবিষ্কার করলেন ১৯৯৫ সালে যখন তিনি অ্যামেরিকা বেড়াতে গেছেন এবং
জীবনে প্রথম একটা ইন্টারনেট যুক্ত পিসি দেখার সুযোগ পান। কাঁপা কাঁপা হাতে
Yahoo পোর্টালে তিনি সার্চ করেন “beer” এবং “China” কিন্তু পেলেন না কিছুই।
এখান থেকেই মা এর মাথায় বিজনেস আইডিয়া চলে আসলো যা শুধু চীনকে নয় সারা পৃথিবীর
বিজনেস মডেলই পালটে দিয়েছে।
আপনার আমার সাথে জ্যাক মা’দের পার্থক্য এই জায়গাতেই। আমরা ইন্টারনেট প্রথম
হাতে পেলে যা সার্চ করি তাতে জন্ম নেয় টেরা প্যাট্রিকের মত তারকারা আর জ্যাক মা
জন্ম দেয় আলিবাবা গ্রুপের।
যাই হোক, মা চুপচাপ বসে থাকলেন না, সঞ্চয়ের কয়েক হাজার ডলার নিয়েই নেমে পড়লেন
চাইনিজ কোম্পানিগুলোর অনলাইন লিষ্ট বানাতে, সরকারের নজরে পড়লেন খুব সহজেই এবং
তাকে দায়িত্ব দেয়া হলো সরকারের অনলাইন প্রেজেন্স বাড়ানোর। কয়েক বছর করেই মা এই
সরকারি চাকুরী ছেড়ে দেন কারন তিনি জানতেন তিনি যা শুরু করেছেন তা আরো অনেক অনেক
বড়।
একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষের সফলতার গল্প
১৯৯৯ সালে তিনি কয়েকজন বন্ধুকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালেন আর তার চাইনিজ
ইকমার্সের আইডিয়া পিচ করলেন। বন্ধুরা খাওয়া দাওয়া করলো , ৬০০০০ ডলার উঠলো আর সে
রাতেই জন্ম নিল Alibaba।
ভাগ্য জ্যাক মা’র জন্যে সত্যি সত্যি খুলে গেল, আমরা পেলাম দুনিয়া কাঁপানো এক
কোম্পানি। কদাকার চেহারা আর সাধারন মাথার যে লোককে কেউ গোনায় ধরেনি কোনদিন সে
হয়ে গেল ইকমার্সের বাবা।
জ্যাক মা’র ইন্সপিরিশনের নাম Forest Gump। সাধারন কিন্তু খোলা, মেধাবী নয়
কিন্তু যখন যা করে মন-প্রান উজাড় দিয়ে করে, পজিটিভ এবং সৎ। তিনি Forest Gump-র
মত হতে চান!
জ্যাকের ওয়াইফ তার সম্পর্কে বলেন, “Ma is not a handsome man, but I fell for
him because he can do a lot of things handsome men cannot do.” বাই দ্য ওয়ে
উনি এখানে টাকার কথা বলেননি ।
Alibaba’র গল্প সবার জন্যে এক ইন্সপিরেশন। শুরুটা অনেক সিম্পল, একটা সাইট
যেখানে এক্সপোর্টাররা তাদের প্রডাক্ট পোষ্ট করতে পারবে বিদেশি বায়ারদের জন্যে।
তারপরেই জ্যাক শুরু করেন 1688.com, ডোমেস্টিক প্রডাক্ট কেনা-বেচার সাইট। ২০০৩ এ
এসে শুরু করেন Taobao যেটা ছিল eBay-র ডিরেক্ট কম্পিটিটর। এরপর আসে পেমেন্ট
প্রসেসিং সিস্টেম, একটা ব্যাংক, ক্লাউড কম্পিউটিং, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম এবং
আরো অনেকগুলো বিজনেস! আর তাই Alibaba-র ভ্যালু এখন ১৮০ বিলিয়ন ডলারের
উপরে!!
কিন্তু জ্যাক মা Alibaba কে বলেন ‘1,001 mistakes’। তার মতে এত দ্রুত
এক্সপানশন একটা বড় ভুল ছিল যা অনেক রিস্কি ছিল। এবং শুধুমাত্র একটা কারনেই
সারভাইভ করা গেছে, আর সে কারন হলো সবসময় পজেটিভ থাকা। জ্যাকের মতে, যতক্ষন না
আপনি হাল ছাড়ছেন, চান্স আছে! সবাই যতই ‘না’ বলুক, আপনি লেগে থাকুন। আর তাই সবাই
যখন জ্যাক মা কে ‘পাগলা জ্যাক’ ডাকে তাতে বরং তিনি খুশিই হন আর বলেন ‘প্রার্থনা
করবেন যেন আরো ৩০ বছর পাগলাই থাকতে পারি।‘
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…
Bengali Story,
Success Story