সফলতার গল্প – Steve Jobs – Powerful Motivational Story
স্টিভ জবসঃ যিনি স্বপ্ন বিলিয়ে বেড়ান
অ্যাপল কোম্পানি চেনেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। অ্যাপল না
চিনলেও আইফোন প্রায় সবাই ই চেনেন। এই অ্যাপল তথা আইফোন যার হাত ধরে
এতোদুর এসেছেন, যিনি হয়ে আছেন লাখো মানুষের নিশ্চুপ প্রেরণা
হিসেবে,তিনিই স্টিভ জবস। স্টিভ জবস কখন কলেজের গন্ডি পেরুতে পারেন নি।
শুধুমাত্র কারিগরী শিক্ষা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন অ্যাপল ,পিক্সারস ও
নেক্সটের মতো বড় বড় কোম্পানি। আমাদের আজকের গল্প এই কিংবদন্তিকে নিয়েই।
=>বেড়ে ওঠার গল্প
১৯৫৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি সান ফ্রান্সিস্কোতে জোয়ানা ক্যারোল ও
আবদুল্লাহ ফাতাই গাদ্দালি এর ঘরে জন্ম নেন স্টিভ জবস। জন্মের কিছুদিন
পরই পল জবস ও ক্লারা জবস দম্পত্তি স্টিভকে দত্তক নেন। তারা তার নাম দেন
স্টিভেন পল জবস। “জবস” উপাধিটি স্টিভের পালক পিতা পল জবস থেকেই পাওয়া।
২৭ বছর বয়সের আগে জবস জানতেনই না তার জন্মদাতা পিতা মাতা কে ছিলেন। ১৯৬১ সালে
জবসের পালক পিতা মাতা তাকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান। স্টিভের বাবা
একজন মেকানিক ছিলেন এবং সেই সুত্র ধরেই তার ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতি
আগ্রহ জন্মায়। তাছাড়া তখনকার ক্যালিফোর্নিয়া ইলেক্ট্রনিক্সের স্বর্গরাজ্য হয়ে
ওঠে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি ও ম্যানুফেকচারিং এর কেন্দ্রস্থল হিসেবে
সুপরিচিত ছিলো ক্যালিফোর্নিয়া।
তাই ছোটবেলা থেকেই জবসের কাছে ইলেক্ট্রনিক্স এর প্রয়োজনীয় উপকরন বেশ
সহজলভ্য ছিলো। তাই ছোটবেলাতেই প্রতিবেশীর গ্যারেজ জবসের ছোট ল্যাবরেটরি
হয়ে ওঠে।
=>একাডেমীক জীবনের শুরু ও শেষ
স্টিভ জবসের জীবনের পড়াশোনা শুরু ও ছেড়ে দেয়ার গল্পটা কিছুটা অদ্ভুত।
জবসের জন্মদাতা বাবা মা চাচ্ছিলো জবসকে এমন কেউ দত্তক নিক যারা খুব
উচ্চশিক্ষিত এবং তাকে কলেজ গ্রাজুয়েট করতে পারবে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে
জবসকে দত্তক নেন পল ও ক্লারা দম্পত্তি। তারা কেউই উচ্চশিক্ষিত ছিলেন না
এবং তাদের পরিবারে কোনো কলেজ গ্রাজুয়েট ছিলোনা।
স্টিভ জবস স্কুলের পাট চুকিয়ে ভর্তি হন “রিড কলেজে” ।তখনকার
সময়ে রিড খুব বিখ্যাত ও ব্যায়বহুল কলেজ ছিলো। কিছুদিন সেখানে পড়াশোনা
করার পর জবস বুঝতে পারলো যে তার পড়াশোনার খরচ চালানো তার পরিবারের জন্য
কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া কলেজের পড়াশোনায় ও মন টিকছিলোনা তার। তার
সকল আগ্রহ ছিলো ঐ ছোট গ্যারেজ নিয়ে। তাই ভর্তির ছ মাস পরই কলেজ থেকে ড্রপ আউট
হয়ে যান জবস ।কিন্তু ড্রপ আউট হওয়ার পরও টাইপোগ্রাফির প্রতি ভালবাসা থাকায়
ক্যালিওগ্রাফির কোর্স করতে নিয়মিত কলেজ যেতেন তিনি। এ সম্বন্ধে জবস
বলেন,
“ যেহেতু আমি আর সেখানকার স্টুডেন্ট ছিলাম না,তাই রুম পেলাম না।
সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে রাতে বন্ধুদের রুমের মেঝেতে ঘুমাতাম। পকেটে টাকা
ছিলোনা। ক্ষিদায় দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যেতো। রাস্তায় কোকের বোতল কুড়িয়ে সেগুলো
ফেরত দিয়ে ১০ সেন্ট পেতাম। তা দিয়ে রাতের খাবার কিনতাম। প্রতি রবিবার
সাত মেইল হেটে কৃষ্ণমন্দির যেতাম পাছে কিছু ভালো খাবার পাই।সেদিন এতো কষ্ট
করে ক্যালিওগ্রাফি না শিখলে ম্যাকের ডিজাইন উইন্ডোজের মতো খটমটেই থাকতো।
“
কষ্টের জীবনে সফলতার গল্প
=>যেভাবে শুরু হয় আজকের অ্যাপল
কলেজ থেকে ড্রপ আউট হওয়ার পর স্টিভ জবস ১৯৭৪ সালে যোগ দেন ভিডিও গেইম
ডিজাইনার একটি কোম্পানিতে। বেশ কিছুদিন চাকরী করার পর চাকরী ছেড়ে দিয়ে
জবস আধধাত্মিক জ্ঞান অর্জন ও ভ্রমনের উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়া পাড়ি
জমান।
ভ্রমন শেষে যখন ফিরে আসেন,তখন জবসের সাথে ওজনিয়াকের পরিচয়
হয়। ওজনিয়াক তখন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে চাকরী করতেন। জবস
ওজনিয়াক দুজনেরই নেশা ছিলো ইলেকট্রনিক্স। অফিসের গদবাধা চাকরী কখনই
টানে নি তাদের। ১৯৭৬ সালে হঠাত করেই দুজনে একসাথে একটি ঝুকিপূর্ন পদক্ষেপ
নিয়ে ফেললো। মাত্র ২০ বছর বয়সে জীবনের সকল সম্বল বিনিয়োগ করে জবসের ঐ
ছোট্ট গ্যারেজে দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করে ফেললেন অ্যাপল
কম্পিউটার।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে
অ্যাপল। কম দাম ও ছোট আকারের কারনেই মুলত বাজার ধরতে শুরু করে আস্তে
আস্তে। মাত্র তিন বছরে অ্যাপল কোম্পানির মুল্য প্রায় ১৩৯ মিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
এবং প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর ঐ ছোট্ট গ্যারেজের ঘুপচিতে জন্ম নেয়া
কোম্পানিটি প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ও চার হাজার কর্মির একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে
ওঠে।
=>অ্যাপল ছেড়ে চলে যাওয়া
যার হাত ধরে অ্যাপল উন্নতির শীর্ষে চলে গিয়েছিলো, সেই স্টিভ জবসকেই
হঠাত অ্যাপল থেকে বের করে দেওয়া হলো। শোনা যায় তৎকালীন সময়ে অ্যাপলের
বাড়তি কাজের চাপ সামাল দেয়ার জন্য চৌকস একজন লোক নিয়োগ দেয়া হয়।
বিপত্তি শুরু হলো তখনই। অ্যাপলের ভবিষ্যৎ নিয়ে জবস যেসব স্বপ্ন দেখেছিলেন তার
সাথে কোনোভাবেই ঐ নতুন লোকটির কর্মপরিকল্পনার সাথে মিলছিলোনা।
আশ্চর্যজনক ভাবে অ্যাপলের পরিচালনা পর্ষদ ও ঐ নতুন লোকটিকেই সমর্থন দিতে
লাগলো। এবং এর সুত্র ধরেই অ্যাপল থেকে বের করে দেওয়া হলো স্টিভ জবসকে।
=>নতুন উদ্যমে নেক্সট ও পিক্সারস প্রতিষ্ঠা
নিজের হাতে গড়ে তোলা কোম্পানি থেকে তাকেই এইভাবে বের করে দেওয়া
হবে,এইটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না স্টিভ জবস। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে
ব্যার্থ মানুষটি বলে মনে হতে লাগলো। খবরটি প্রচার হতে সময় লাগলোনা। চারদিকে
সবাই হাসি তামাশা করতে লাগলো। কিন্তু এসব দমিয়ে রাখতে পারেনি তার
পথচলা। কষ্টের সকল পাথর সরিয়ে নতুন কিছু করার ইচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
পরবর্তী ৫ বছরে জবস “নেক্সট” নামে একটি সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার
কোম্পানি খুলে বসলেন। প্রায় সাথে সাথেই ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন পিক্সারস
নামের একটি এনিমেশন স্টুডিও।
জবস তার জীবনের প্রায় অর্ধেক উপার্জন এই “পিক্সারস” এর পেছনে বিনিয়োগ
করেন। প্রতিষ্ঠার খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পিক্সারসে উত্তরোত্তর
সাফল্য আসতে লাগলো। ৩-৪ বছরের মধ্যেই ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে খোলা
এই কোম্পানিটি ৪ বিলিয়ন ডলার মুল্যের হয়ে উঠলো।
একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষের সফলতার গল্প
=>ভালবাসার জায়গায় প্রত্যাবর্তন
পিক্সারসের পাশাপাশি স্টিভ জবসের প্রতিষ্ঠা করা নেক্সট কোম্পানিটিও
বেশ সফলতা পেতে লাগলো। সুপার মেমরি স্পিড ও অসাধারন গ্রাফিক্সের কারনে
নেক্সট এর কম্পিউটারগুলো বাজার দখল করা শুরু করলো। নেক্সট এর এই সফলতা
দেখে তখনকার সময়ের প্রযুক্তি দানব অ্যাপল ১৯৯৬ সালে নেক্সটকে প্রায় ৪০০
মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। জবস আবার ফিরে আসে তার প্রানের কোম্পানি
অ্যাপলে।
=>জবস ও অ্যাপলের পথচলার গল্প
নেক্সটকে অ্যাপল কিনে নেওয়ার পর স্টিভ জবস ফিরে এলেন অ্যাপলে। যোগ
দিলেন অ্যাপলের সিইওর উপদেষ্টা হিসেবে। ১৯৯৭ সালে জবস ঘোষনা দিলেন এখন
থেকে আরো সুলভ মুল্যে অ্যাপলের সব পন্য ইন্টারনেট ও টেলিফোনের মাধ্যমে অর্ডার
করতে পারবেন ক্রেতারা। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে পাওয়ারফুল ছোট ও
সস্তা কম্পিউটার আইম্যাক রিলিজ করলো অ্যাপল। এরপর আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে
হয়নি অ্যাপল ও স্টিভ জবসকে। একের পর এক কালজয়ী উদ্ভাবন দিয়ে আজকের
প্রযুক্তি দানব অ্যাপলের সফলতা আমরা সবাই জানি
=>ক্যান্সারের সাথে বসবাস
সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছিলো। অ্যাপলকে নিয়ে জব এগিয়ে চলছিলো তার পূর্ন
গতিতে। কিন্তু ২০০৩ সালে জবসের ক্যান্সার ধরা পড়লো। ডাক্তার বললো এ রোগ
সারার নয়। সবকিছু গুছিয়ে নিতে। আবার হতাশ হয়ে পড়লেন জবস। নিজের পরিবার ও
বাচ্চাদের কথা মনে করতে করতে শেষ পরীক্ষাটির রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের
কাছে গেলেন। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার হতবাক হয়ে বললেন,
“এটি একটি দুর্লভ ক্যান্সার। অস্ত্রপচার করলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা
প্রবল।“
অস্ত্রপচারের পর আবার সুস্থ হয়ে অ্যাপলে ফিরলেন জবস।
২০১২ সালে জবসের আগের রোগটি আবার দেখা দিলো। এইবার ডাক্তার সকল
আশা ছেড়ে দিলেন। এইবার স্বেচ্ছায় অ্যাপল ছেড়ে দিলেন জবস। ২০১২ সালের ৫
নভেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান এই কিংবদন্তী। তার
স্বরনে অ্যাপল ক্যালিফোর্নিয়ায় তৈরি করে স্টিভ জবস থিয়েটার।
চেষ্টা,সুযোগ ও লেগে থাকা,এই তিনটি বিষয় দিয়ে যে যেকোনো কিছু জয় করা যায়,তা
দেখিয়ে গিয়েছেন স্টিভেন পল জবস। অনুপ্রেরণা ও স্বপ্নের কারিগর হয়ে আছেন
এবং থাকবেন সবসময়।
প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…
Tags –
Bengali Story,
Bangla Golpo,
Motivational Golpo