মহামায়ার মহালয়া – Mahalaya Special Story
“মহামায়ার মহালয়া”
টিংটিং করে ডোরবেল টা অনেকক্ষণ বাজলেও মহামায়া দেবী আগের মতন আর সবদিক সামলে উঠতে পারেন না। চুলের ধূসর রং-এর ছাপ টা শরীরেও এখন হানা দেয় মাঝে মাঝে, কিছু দিন ধরে হাঁটুর ব্যথাটাও যেন এবার বলছে একটু ছুটির ভীষন দরকার, তাই দরজা টা খুলতে বেশ সময় লাগলো তার। কিন্তু দরজা খুলে যে মিষ্টি মুখ টা দেখলেন; সে যে তার জীবনের ব্যথার ওষুধ।😊
ছটফটে আরুশি মুখ গোমরা করে বলে উঠলো এই যে সুপার ওম্যান এত লেট দরজা খুলতে!
হালকা কোচকানো চামড়ার ভিতর থেকে স্মৃত হাসি টা যেন এক নিমিষে আরুশির অভিমান টা কে ভুলিয়ে দিলো। মহামায়া দেবী বললেন তোর সুপার ওম্যান যে আর আগের মত নেই রে দিদিভাই,শরীরে যে এবার জং ধরছে রে। হাঁটু নিয়ে ক-দিন হলো খুব ভুগছি রে মা। বড়-বড় চোখ পাকিয়ে আরুশি বললো নিশ্চয় আবার ওষুধ খেতে ভুলেছো তাই না, এ মাসের ডাঃ ভিজিট টাও ডুব মেরেছো বোধহয় না? মহামায়া দেবী বললেন তা একটু ভুল হয়েছে, তবে এখন তুই এসেছিস যখন আমার সব ব্যথা এইবার সেরে যাবে রে দিদিভাই।😨😊👩❤️👩
বেশ তাহলে বল তো ঠাম্মি তোমার “মহামায়া”র জন্মদিনে এবার নতুন কি আইটেম থাকছে?🏩🍛 মহামায়া দেবী বললেন এবার তো ভাবছি “রাজনন্দিনী” করবো। সেটা কি রকম গো ঠাম্মি?🥘 অনেকটা পোলাও এর মতন দেখতে তবে এ জিনিষ ওই রকম নয়, সাবু দিয়ে তৈরি করতে হয়। আরুশি বলে আমার বন্ধুদের কিন্তু ফ্রি-ট্রিট চাই ঠাম্মি। ঠাম্মি বলে সে আর বলতে!👭👫🍽️🥘
আরুশি ঠাম্মির কাছে আবদার করে বলে ও ঠাম্মি তোমার “মহামায়া”-র জন্মদিনের গল্প টা বল না।ঠাম্মি বলেন শুনেছিস তো কতবার তাও শুনবি?আরুশি বলে হ্যাঁ আবার শুনবো। তোমার ছোট বেলার গল্প দিয়ে শুরু কর।👧👵
মহামায়া দেবী বলেন, বেশ শোন,
Mahalaya Story In Bengali
আমার তখন ১৬_১৭ বছর বয়স, একান্নবর্তী পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা, তখন তো সে ভাবে নারীশিক্ষার চল ছিল না;তাও বাবার কাছে আবদার করে স্কুলের কিছু টা গন্ডী পার হয়েছিলাম, পড়াশোনা তে খুব খারাপ ছিলাম না,তাই বাবা ও পড়াশোনা তে আপত্তি করেন নি খুব একটা কোনদিন। কিন্তু হঠাৎ আমার ছোট কাকা ভালো ঘর-বর দেখে আমার সম্মন্ধ আনেন,বাবাও রাজি হয়ে যান সেই বিয়ে তে। খুব কেঁদেছিলাম জানিস দিদি,যে দিন শুনলাম আমার স্কুল যাওয়া নাকি বন্ধ, সামনের মাসে আমার বিয়ে। কিন্তু কেঁদেও শেষ রক্ষা হয়নি আমার, বিয়ে টা সেই হয়ে গেল।👩🏫😭👰
তোর দাদু একটু লেখাপড়া জানা মেয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু বিয়ের পর দেখি বাড়ির সামান্য দৈনিক পেপার টাও আমার নাগালের বাইরে রাখার চেষ্টা হতো। এরকম অনেক ঘটনাই ঘটতো নিত্যদিন। এই ভাবেই চলছিলাম সংসার আর তোর বাবার মুখ তাকিয়ে। একদিন তোর দাদুর এক বন্ধু তার সাথে দেখা করতে আসে, একটা মাসিক পত্রিকা ছিল তার সাথে। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার সময় উনি পত্রিকা টি নিয়ে যেতে ভুলে যান। পরদিন ফেরত নিতে এসে দেখেন আমি সেটা পড়ছি, তখন উনি বললেন আপনি যখন ওটা পড়ছেন তখন ও আর আমি নেবো না বৌঠান; আমাদের বাড়ির মেয়েরা তো এসব ছুঁয়েও দেখে না; আপনি পড়ছেন দেখে ভালো লাগলো।📖😊
তোর দাদু সবটা তার বন্ধুর কাছে শুনে আমার ওপর হাত তুললো, ছিনিয়ে নিয়ে গেল পত্রিকা টা।📖👊😭
সেদিন আর নিজেকে সামলাতে পারিনি,প্রচন্ড আত্মসম্মানে লেগেছিল রে দিদিভাই।একটা সামান্য পত্রিকা পড়ার অপরাধে এতবড়ো শাস্তি মেনে নিতে পারিনি রে।সে দিন ঠিক করি ও বাড়ি তে আমি আর থাকব না। 🏡
পরদিন ই আমার এক মাসির বাড়ি ঘুরতে আসার নাম করে আমার জমানো সঞ্চয় নিয়ে বেরিয়ে আসি, তোর বাবা কে সঙ্গে আনতে চাইলেও আনতে পারবোনা জানতাম,ও আমার শ্বশুরবাড়ির সকলের ভীষন আদরের ছিল,তাই সে রাস্তায় আর যাইনি।💑😭
Mahalaya Bangla
মাসিদের একটা ছোট হোটেল ছিল,তবে বেশ নাম-ডাক ছিল তার, মাসি কে এসে সব জানালাম, একান্নবর্তী পরিবারে মেয়ে হওয়ার সুবাদে অনেক রকম রান্না জানতাম আমি,মাসি প্রথম-প্রথম আপত্তি করলেও একদিন প্রায় জোর করেই একটা লাউ এর পদ রান্না করে হোটেলর কাস্টমার দের খাওয়াতে বললাম।🥘🍽️ব্যাস সকলের ভীষন পচ্ছন্দ হয়ে গেল সেই রান্না, এভাবেই বিভিন্ন দিন বিভিন্ন পদ পরিবেশনে হোটেল ও চলতে লাগল রমরমিয়ে। 🏩তারপর তোর দাদু অবশ্য বহুবার বহুরকম ভাবে চেষ্টা করেছিলেন আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার, কিন্তু আমি জানতাম ওখানে ফিরলে আমার পরিনতি কি।তাই আর ফিরিনি কখনো,😔
জানিস দিদি,বড়ো ঘরের বৌ-হওয়ার অনেক জ্বালা,এরা ঘরের বৌএর সম্মান কে ছোট করবে,তাতে এদের মান যাবেনা, কিন্তু বৌ বাড়ির বাইরে পা-রাখলেই এদের সম্মানের নাকি টানাটানি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু পরের অনুগ্ৰহে, সংসার, সন্তান, স্বামীর,সমাজের মুখ তাকিয়ে আমরা সংসার ই বল বা সমাজের ই বল অনেক অন্যায় কে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলি, কিন্তু আদতে সেই অন্যায় ভরা সংসার টা কি প্রকৃত সংসার হয়?!🤔 সবকিছু কে মানতে গিয়ে, মানিয়ে নিতে-নিতে একটা সময় পর ভীষন ক্লান্ত লাগে, অনেক সময় সংসারে নিজের জন্য ও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়, বিশেষ করে আর্থিক সাবলম্বী হওয়ার যোগ্যতা।💰👩💻 এই যোগ্যতার প্রমাণ যে দিন নিজের মধ্যে দেখতে পেলাম, সে দিন আমার আমি টা কে জগতের কাছে তুলে ধরার একটা আলাদা স্বার্থকতা পেলাম এই জীবনটার।🤷😊
আজকের এই “মহামায়া হোটেল এন্ড রিসোর্ট” কে দাঁড় করাতে আমাকে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা সহ্য করতে হয়েছে, এক এক সময় মা হয়ে ছেলের জন্য স্ত্রী হয়ে তোর দাদুর জন্য কষ্ট হয়েছে ভীষন, 😭💑
সকল কে একটা সময় পর ক্ষমা করতেও শিখে গেছি, কিন্তু ও বাড়ির অতীতের স্মৃতি আমার আজকের “মহামায়া”র ভবিষ্যত গড়তে সাহায্য করেছে। 🏩এক সময় মাসি অসুস্থ হলেন, মারা যাওয়ার আগে উনি হোটেলের সমস্ত দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে গেলেন , নতুন করে সব কিছু শুরু করতে বললেন হোটেলের নাম ও উনি আমার নামেই করে গেলেন। আস্তে আস্তে ব্যাবসা বাড়লো, দেশ-বিদেশে আমার অনেক নতুন শাখা হলো আমার “মহামায়া”র, নিজেকে নতুন করে গড়তে শিখলাম আবার।🤷 যে দিন ওই বাড়ি আমি ছেড়ে ছিলাম সে দিন ছিল মহালয়া , দেবীপক্ষের সূচনায় নিজের মধ্যে অন্য নারী সত্ত্বা কে খুঁজে পেয়েছিলাম।😊তাই ওই দিনটার স্মরণে মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত আমার হোটেল রিসোর্টে নতুন কোন রান্নার পদ তৈরি করি আমি প্রতিবছর, আর হোটেলের যে কোন খাবার অর্ডারের সাথে ফ্রি দেওয়া হয় ওই নতুন পদ।আর পুজোর সেই উপার্জনের সবটুকু যায় আমার “মহামায়া ফাউন্ডেশন”-এ, এবার ও তাই হবে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলা দের স্বনির্ভর করতে সবসময় পাশে থাকবে আমার এই প্রকল্প,আমি এভাবেই সব মহামায়া দের গড়ে তুলতে চাই, দুঃস্থ মেধাবী বাচ্চাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে আমার এই ফাউন্ডেশন,এবারেও মহালয়ার দিন আসিস দিদি, ফাউন্ডেশন- এর বাচ্চাদের আতসবাজি আর পুজোর জামাকাপড় দিতে যাবো তোকে নিয়ে।🎆👗👕👩❤️👩
আরো পড়ুন, Mahalaya Chandi Path Lyrics
হঠাৎ আরুশি বলে ওঠে,আমিও তো এখন তোমার মতো অতো বড়ো মহামায়া না হলেও ছোট মহামায়া বটে ঠাম্মি, তাই এবারের বাচ্চাদের গিফটের দায়িত্ব টা আমি নিতে চাই ঠাম্মি, তুমি কিন্ত না করতে পারবে না।🤷 মহামায়া নাতনি কে জরিয়ে ধরে আদর করে বলেন, এ যে সত্যিই সত্যিই অনেক বড়ো মহামায়ার মতো কথা বললি দিদি, তুই আমার “মহামায়া” র যোগ্য ভবিষ্যত রে দিদিভাই।👵👩❤️👩👍আরুশি বলে,ভাগ্যিস বাবার আলমারি তে পুরোনো আ্যালবামে তোমার ছবিটা খুঁজে পেয়েছিলাম,না হলে এই সুপার ওম্যান টাই যে আমার ঠাম্মি সেটা তো জানতেই পারতাম না!📒🖼️
বাড়িতে তোমায় বড্ড মিস করি জানো ঠাম্মি,😔 জানি বাবা-মা আমাদের কারোর অনুরোধে ই তুমি আর ফিরবে না ওখানে; কিন্তু তোমাকে সবসময় যদি কাছে পেতাম?! 👵😊👩❤️👩
মহামায়া বলেন, না রে দিদিভাই, সংসারের মায়া বড়ো বাজে রোগ রে দিদি,তার থেকে আমার এই মহামায়ার জগৎজোড়া খ্যাতির মায়া অনেক শান্তির, সামান্য একক সংসারের মহামায়া হওয়ার থেকে বিশ্বসংসারের মহামায়া হওয়ায় অনেক সুখ রে দিদিভাই,এই সুখেই আমার মহামায়া দর্শন,”মা” মহামায়ার মতোই এই “মহামায়া”পরিবারের মঙ্গল কামনায় জগতের আনন্দ আছে; বাঁচার তৃপ্তি আছে রে দিদিভাই।।🏩🤷😊👍
নিয়মিত আপনার পছন্দের লেখা পড়তে ভিজিট করুন
আমাদের ওয়েবসাইট ।