___ বাসর রাতের গল্প____
দ্বিতীয় পর্ব
,
আমি মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম। মেয়াটা সত্যি তাড়াহুড়ো করে সিড়ি বেয়ে
নিচে নামছে। আমি বলে উঠলাম,
– এই পড়ে যাবেন তো! আস্তে আস্তে যান।
ও পাশ থেকে উত্তর আসলো,
— আরে পড়ে গেলে সমস্যা নাই আপনি আছেন তো আমাকে ধরার জন্য।
,
পুরানো গল্প মনে করে যেখানে আমার মন খারাপ করার কথা, সেখানে আমি মেয়েটার হাব
ভাব দেখে বার বার হেসে উঠছি। আসলেই মেয়েটা খুব মজার মানুষ। আমার মনে
হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে অসুখী মানুষটাও যদি ওর সাথে এসে ২মিনিট কথা বলে, সেও
নিজেকে আর দুখী মনে করবে না। সুখী ভাবতে থাকবে নিজেকে। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে
দেখলাম ১টা বেজে ৩৭ মিনিট। প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গেলো। এ কি! এখনো আসছে না কেন?
এতক্ষনে তো চলে আসার কথা। একটু চিন্তিত লাগছিলো তাই উঠে দাঁড়ালাম। দেখি মেয়েটা
এর মধ্যেই হাজির।দেখলাম হাতে এবার দু কাপ কফি। ভাবলাম এবার বুঝি রোমান্টিক মুড
কেটে গিয়েছে। কিন্তু আমার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল।
— সরি একটু লেট হয়ে গেলো।
— ইটস ওকে।
— এই যে শুনুন। দু কাপ কফি এনেছি বলে ভাববেন না আলাদা আলাদা খাবো।
মাঝে মাঝে কিন্তু এক্সচেঞ্জ করে নিবো।
আমি আবারো মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।
— হ্যাঁ এবার বলেন, চিঠিতে কি লেখা ছিলো?
— হুম বলছি।
— তাড়াতাড়ি বলেন!
— তাতে লেখা ছিলো,
“আমি জানি আপনি আমার উপর খুব রেগে আছেন।
বিশ্বাস করেন আমি শুধু আপনাকে ভয় দেখাতে চেয়েছি তাই ওইভাবে চিঠির উত্তর দিয়েছি।
কিন্তু আপনি যে এভাবে ৭ দিন স্কুলে আসবেন না ভাবি নি। আমার জন্যই সব হয়েছে।
সত্যিই আমি বুঝতে পারি নি।
জানেন ওই ৭ দিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি? ঠিক মতো ঘুমাতে পর্যন্ত পারি নি। খুব
খুঁজেছি আপনাকে। প্রতিদিন গেটের সামনে একটু অপেক্ষা করতাম আপনার চিঠির উত্তরের
জন্য কিন্তু আপনি আসতেন না। না পেরে আপনার বন্ধুর কাছে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য
হয়েছি! আর সেদিন যখন আমার জন্য সবার সামনে কান ধরলেন, তার পর থেকে এতটা খারাপ
লেগেছে যে আমি শুধু ছটফট করছিলাম। তাই চিঠি লিখলাম। আমাকে পারলে ক্ষমা করে
দিয়েন। যদি চিঠির উত্তর পাই তবে ভেবে নিবো আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
,
— বাহ! অসাধারণ। মেয়েটা তার ভুল বুঝতে পেরেছে। তারপর আপনি কি চিঠির উত্তর
দিয়েছিলেন?
— হুঁ। প্রথমে ভেবেছিলাম দিবো না কিন্তু চোখের সামনে ওর চেহারা ভাসলেই আমি যেন
সব ভুলে যায়। আমিও চিঠির উত্তরটা দিই তবে খুব অল্প কথায়।
— কেন? আপনার তো এমন উত্তর পেয়ে ৪-৫ পৃষ্ঠা লিখে ফেলার কথা।
,– হুম ভেবেছিলাম আজ আমার নয়া প্রেমের ইতিহাস লিখেই ফেলবো কিন্তু অভিমান বলে
তো একটা ব্যাপার আছে। সেটা তো দেখাতে হবে তাই না? আমি আবার বড্ড অভিমানী।
তাই ছোট্ট করে লিখেছিলাম,
” ভালো থেকো প্রিয়া, আর কোনদিন বিরক্ত করবো না।”
— বাব্বা এত অভিমান? এরপর মেয়েটা পরে এই চিঠি পেয়ে কি উত্তর দিয়েছিলো?
— শুনলে আপনি হাসবেন।
— তাই নাকি? আচ্ছা বলেন তো আগে।
— “ওই কি বললি তুই? আমাকে বিরক্ত না করলে ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরায় দিবো। আর তর
বাপের কাছে গিয়া তোর নামে নালিশ দিবো যে তুই আমার লগে প্রেম করস। কাল স্কুল
ছুটির পর আমবাগানে আসবি নাইলে খবর আছে।”
বিয়ের প্রথম রাতের রোমান্টিক গল্প
,
অজান্তা এবার হো হো করে হাসছে আর বলছে,
— এটা কি প্রেমপত্র নাকি হুমকি পত্র? হাহাহাহা।
— আগেই বলেছিলাম। আরে আমার যে সেদিন কি অবস্থা হয়েছিলো কি আর বলবো, আমি হাসবো
না কান্না করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার বন্ধুদের দেখানোর পর ওরা প্রায়
আধ ঘন্টা যাবৎ হেসেছে। তাহলেই বুঝেন। কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা! আমি ভেবেই
পাচ্ছিলাম না, চিঠিটা আসলে ওই লিখেছে নাকি অন্য কেউ?
— শুনুন যারা খুব শান্ত টাইপের তারা রাগলে খুব ভয়ংকর হয় বুঝলেন?.
— কি জানি, জানি না।
— হুম এটাই হয়। তারপর কি গিয়েছিলেন আম বাগানে?
— যে হুমকি দিয়েছে না গিয়ে কি আর পারি?
— হুঁ তা অবশ্য ঠিক। আপনি তো আবার ভীতুর ডিম।
হাহাহাহা।
— হুঁ! অল্পতেই খুব ভয় পেয়ে যায়।
— ইউ আর নট অনলি প্যারানয়েড বাট অলসো ফুল।
বলেই ৩২টা দাঁত বের করে হাসছে। মানে হাসি আর থামছেই না।
— আই এম যাস্ট জোকিং প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।
— নাহ আমি যে ভীতু হওয়ার সাথে সাথে বোকা এটা সবাই জানে। কিছু মনে করি নি।
— সত্যি তো?
— হুঁ।
— তবে তারপর কি হলো বলেন।
— বিকাল ৪টা বাজার সাথে সাথেই ছুটির ঘন্টা পড়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভিতর
ধুক করে উঠেছিলো। ওর
সামনে যেতে হবে এই কথা ভাবতেই ভয় আর লজ্জা দুটোই করছিলো। আবার না গেলে যদি
সত্যি সত্যি বাবাকে বলে দেয়, তাইলে যে কি হবে। কি আর করা বন্ধুদের কাছ থেকে
সাহস নিয়ে গেলাম গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে। দেখলাম সব থেকে বড় আমগাছটার তলায় ওদিকে
ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে যেতেই হার্টবিট দ্বিগুন বেড়ে গেলো। সাথে পা দুটোও
কাঁপছিলো।
— বাপ রে! সামন্য যেতেই এমন? হিহিহিহি
— হুঁ আমার যে যখন কি অবস্থা হয়েছিলো শুধু আমিই জানি।
আসলে কখনো কোন মেয়ের সাথে কথা তো দূরে থাক চোখ চুলে তাকানোর সাহস পেতাম না।
— কিন্তু আড়চোখে ঠিকিই তাকাতেন।
এই বলে সে কি হাসি। আমিও না হেসে পারছি না। দু জনে একই সাথেই হাসছি আর কফির কাপ
এক্সচেঞ্জ করে কফিতে চুমুক দিচ্ছি৷ একটা জিনিস প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছি। সেটা
হলো আমি ঠিক যেখানটাই চুমুক দিচ্ছি এক্সচেঞ্জ করার পর ও ঠিক সেখানটাই চুমুক
দিচ্ছে। আর চুমুক দেওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। তারপর বলে
উঠলো,
,
— এই যে শুনুন আপনি কিন্তু সেই তখন থেকে চিটিং করে যাচ্ছেন।
— চিটিং মানে? বুঝলাম না।
— আপনি যেখানটাই চুমুক দিয়েছেন আমি কিন্তু ঠিক সেখানটাই চুমুক দিয়ে খাচ্ছি আর
আপনি আপনার বেলায় আমার চুমুক দেওয়া স্থানের বিপরীতে দিকে চুকুম দিচ্ছেন। এটা
কিন্তু ভালো না মশাই।
বাসর রাতের প্রেমের কাহিনী
,
আমি ঠোঁটের কোনে সামান্য হাসির রেখা টেনে দিয়ে বললাম,
— আসলে আপনি আবার কি ভাববেন তাই আর কি।
— কিইইই? ওই আমি কি ভাববো? আপনি এত বোকা কেন হ্যাঁ?
আমি আপনার বিয়ে করা বউ। আমার সাথে যা খুশি তা করার অধিকার আপনার আছে বুঝেছেন?
আমি এবার লজ্জা লজ্জা মুখ করে হেসে উঠি। কত রোমান্টি! আমি আর কি বলবো ভেবেই
পাচ্ছি না। লজ্জাতে মাথা নিচু করে রেখেছি। যেখানে মেয়েটার লজ্জা পাওয়ার কথা
সেখানে কি না আমি নেজেই লজ্জা পাচ্ছি। আমার লজ্জা দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা এই
বুঝি বলে উঠবে “লজ্জা নারীর ভূষণ না হয়ে পূরুষের ভূষণ হওয়া উচিত ছিলো”। ও কি
মুখের কথা মুখেই রইলো।
— আপনার লজ্জা পাওয়া দেখে মনে হচ্ছে ” লজ্জা নারীর ভূষণ না হয়ে, পুরুষের ভূষণ
হওয়া উচিত ছিলো”।
আমি আবারো বলার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু চুপচাপ শুনছি আর হাসছি।
— আপনার হাসিটা খুব সুন্দর।
— তাই নাকি?
— কেন আমি কি মিথ্যা বলছি?
— কেউ এভাবে বলে নাই তো তাই বললাম।
— আহারে তাই নাকি? মিথ্যুক।
— আমি মিথ্যুক?
— তা নয়তো কি? আপনার হাসি যে মেয়ে দেখবে ১০০% গ্যারান্টি সেই মেয়েই প্রেমে পরে
যাবে।
— তাহলে তো এতদিনে সেঞ্চুরি করতাম।
— থাক হইছে আর বলতে হবে না। এখন পরের টুকু বলেন।
— আমি তো ওর পিছনেই দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ডাকার সাহস পাচ্ছি না। নাম ধরে ডাকব যে
তাতেও ভয় হচ্ছিলো। শেষ মেস অনেক ভেবে সাহস করে একটা কাঁশি দিয়েই ফেললাম।
কাঁশির শব্দ এতটাই আস্তে ছিলো যে মেয়েটা বুঝতেই পারে নি যে একটা ভীতু ছেলে
বোকার মত তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। তাই ২য় বার আমার কাঁশির শব্দের ভলিউম আর একটু
বাড়িয়ে দিলাম। এতেও কাজ হলো না। এবার না পেরে গরুর মত জোরে কাঁশি দিয়ে ফেললাম।
মেয়েটা ভয় পেয়ে, বুকে থু থু দিতে দিতে আমার দিকে ঘুরে তাকালো,
তারপর,
রোমান্টিক ফুলশয্যার গল্প
,
এবার না পেরে গরুর মত জোরে কাঁশি দিয়ে ফেললাম। মেয়েটা ভয় পেয়ে, বুকে থু থু
দিতে দিতে আমার দিকে ঘুরে তাকালো। আমি মাথা নিচু করেই রইলাম। তখনই চোখ পড়লো
ওর পায়ের দিকে। আলতা শুকানো পায়ে নূপুর পড়েছে। মেয়েদের অলঙ্কারের মধ্যে নূপুর
আমার খুব পছন্দের। আমি মেয়ে হলে সব সময় নূপুর পড়েই থাকতাম😎। তাই মনে মনে
ভেবে রেখেছি তেমন মেয়েকেই বিয়ে করবো যে মেয়ে সারাক্ষন নূপুর পড়ে থাকে।
আমার মাথা নিচু দেখে তিশা ধমুকের সুরে বললো,
,
“এই যে ভীতুরাম মাথা নিচু করে আছেন কেন? আমার দিকে তাকান।”
আমি তখনো মাথা নিচু করে আছি। কিছুতেই ওর চোখের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছিলাম
না।
,
“এই ছেলে তাকাবেন নাকি চলে যাবো?”
“না ইয়ে মানে….!”
“ইয়ে মানে কি তাকান বলছি। এত্ত লজ্জা পাও কোথা থেকে হু? স্কুল গেইটে বের হলেই
তো দূর থেকে তাকিয়ে ঠিকিই দেখতেন।”
আমি এবার মাথা উচুঁ না করে পারলাম না।
ওর চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন একটা অনুভূতি চলে আসলো। হঠাৎ ওর
চোখ পড়লো আমার হাতের ফোলা আঙ্গুলে দিকে। আমি সঙ্গে সঙ্গে হাতটা পেছনে লুকিয়ে
ফেললাম।
,
“এই আপনার হাতের আঙ্গুলে কি হয়েছে? ফোলা কেন?”
“কই কিছু নাহ তো!”
“তাহলে হাত লুকাচ্ছেন কেন?”
“এমনিই।”
“এমনিই যখন তাহলে আমাকে আমাকে হাত দেখান।”
আমি আর কোন উপায় না পেয়ে হাত বের করে দেখালাম।
“ইশ! কতখানি ফুলে গেছে? কিভাবে হলো? আঘাত পেয়েছিলেন?”
আমি কিছুটা ঘাবরিয়ে বললাম,
“নাহ এমনিতেই।”
” আবার বলেএমনিতেই। এমনিতেই কি এভাবে ফুলে যায় নাকি? কি হয়েছে সত্যি করে
বলেন।”
“আসলে…!”
“আসলে কি?”
“না থাক।”
“থাক মানে? বলতে বলেছি আমি। “
“বলছি।”
“হুম বলেন নয়তো চলে যাবো কিন্তু।”
“ইয়ে মানে ওই যে সেদিন ৭ দিন স্কুলে আসি নি তাই বাবা কুনচি দিয়ে মেরেছিলেন।
একটা বারি একটু বেশি জোরে লেগে গেছে তাই ফুলে গেছে৷ সমস্যা নেই কমে যাবে।
,
আমার কথা শুনে তিশার চেহারাটা যেন চুপসে গেলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
করুন সুরে প্রশ্ন তুললো,
,
“খুব বেশি ব্যাথা পাইছো?”
— হাহাহাহাহা আপনি থেকে এখন সরাসরি তুমিতে? বাহ এখানেও বেশ ইন্টারেসটিং তো!
তারপর কি হলো?
আমি ঠোঁটের কোনে হাসি এনে বললাম,
“নাহ।”
“দেখি হাতটা!”
এই বলে আমার ডান হাতটা ওর হাতের তালুর উপর নিয়ে করুন দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থাকলো।
তার নরম হাতের উষ্ণতা পেয়ে আলতো করে চোখ বুজে ফেলললাম। আগে কখনো কোন দিন
এইভাবে কোন মেয়ে আমার হাত ধরে নি।
তখন মনে হচ্ছিলো আমারা সারা শরীরে যেন স্পর্শের এক বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে
দিচ্ছে।
কেউ দেখে ফেলতে পারে বলে হাতটা ওর হাত থেকে আমার আঘাত প্রাপ্ত হাতটা ছাড়িয়ে
নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না।
“এই দাড়াঁও দেখতে দাও। “
এই বলে আমার ক্ষত স্থানে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আবার বলে উঠলো,
“এই যে আমি হাত বুলিয়ে দিলাম, দেখবে এবার কমে যাবে।”
,
— ওয়াও হাও রোমান্টিক!
— জানেন আমি তো তখন পুরোটাই অবাক। মেয়েটা আমার প্রতি এত তাড়াতাড়ি কেয়ারফুল
হবে ভাবি নি।
— তারপর কি হলো? ব্যাথা কি সেরেছিলো মেয়েটার ছোঁয়াই? হিহিহিহি
আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম,
— হ্যাঁ!
— ম্যাজিক তাই না?
— ম্যাজিক কি না জানি না তবে ওর স্পর্শের পর থেকে আর কোন ব্যাথা অনুভব হয়
নি।
— এইতো এটাই তো ম্যাজিক। ভালোবাসার ম্যাজিক। হাহাহাহাহা
— হয়তো। ও ছুঁয়ে দেওয়ার দেওয়ার পর থেকে একটা অনুভূতি পেয়েছিলাম।
ওকে ঘিরে ওই অনুভূতিটা আমার লাইফের প্রথম অনুভূতি ছিলো।
— হুম বুঝলাম তারপর বলেন।
,
— তারপর আমি বললাম
“আমাদের এখান থেকে যাওয়া উচিত না হলে কেউ দেখে ফেলবে।”
ও ভ্রু কুঁচকিয়ে বললো,
“এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে?”
“হুম।”
“আচ্ছা। আর শুনো।”
“হুম বলেন।”
“এই আপনি করে বলছো কেন?”
“এমনি। মানে, প্রথমবার তো তাই আর কি।”
“আমরা সমবয়সী না?”
“হুম।”
“তবে প্রথম আর ২য় বার কি? তুমি করেই বলবা ঠিক আছে। “
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। পেছন থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছিলো। পিছনে ফিরে
দেখলাম আমার বন্ধু হাসান আর জয় আমাদের লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। তিশা খানিকটা
লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে বললো,
— কাল চিঠি দিও। এখন যায়।
— আচ্ছা।
,
তিশা চলে যাওয়া পর ওদের আগমন। “কিরে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করিস বাসায় জানে?”
হাহাহাহাহা।
“ওই তোরা এখানে কি করিস?”
“কেন রে ডির্স্টাব করলাম?” বলেই সে কি হাসি। হাসি আর যেন থামে না।
— আমারো তো হাসি পাচ্ছে।
— হুম আপনি শুধু খালি হাসেন।
— কেন আমার হাসি সুন্দর না?
— হ্যাঁ সুন্দর তো।
— তবে?
— না কিছু না। মন প্রান খুলে হাসেন।
আপনি হাসলে আপমার মুখে একটা টোল পরে যেটা আপনার হাসিকে আরো সুন্দর করে তোলে।
— ও মা তাই? 😊
– হুম ম্যাডাম। আমার গল্প শেষ হলে আপনার গল্পও বলবেন।
— আমার গল্প?
— হুম। প্রত্যেক টা মানুষের জীবনেই একটা করে গল্প থাকে।
— তা থাকে।
— তবে বলবেন।
— আচ্ছা বলবো। কিন্তু আমার গল্প শুনে আপনি হাসতে পারবেন না।
— কেন? খুব কষ্টের বুঝি?
— জানি না তবে আমার গল্পে আপনার মতো হাসার কোন কাহিনী নেই। আমার গল্প শুধুই
একটা দীর্ঘশ্বাস। যাই হোক বাকি টুকু বলেন।
আমিও কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে মেয়েটার কথা ভাবতে লাগলাম। আসলে মেয়েটার
গল্পটা কেমন হতে পারে।
মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে আরো একবার চোখ বুলালাম৷ রাত ২টা বেজে ২২ মিনিট।
চারপাশটা কেমন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। চাঁদের আবছা আলোতে অজান্তার মুখ স্পষ্ট
বোঝা যাচ্ছে। চেহারাতে কোথাও ক্লান্তির ছাপ নেই। গল্প বলার সময় আমার চোখের
দিকে তাকিয়ে বার বার হো হো করে হেসে উঠছে। আর কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করছে
“তারপর কি হলো বলেন না, এই থামলেন কেন, ভেরি ইন্টারেস্টিং তো।” ইত্যাদি
ইত্যাদি।
চেনা মানুষের সাথে বসে অনেক্ষন গল্প করা যায় না। কিন্তু অচেনা মানুষটার সামনে
বসে হাজারটা গল্প করা যায়। যে অচেনা মানুষটা আপনার গল্পটা শুনবে সে আপনাকে
জানার জন্য বা বোঝার জন্য একটা কৌতুহল মনোভাব থাকবে, যা চেনা মানুষটার মধ্যে
থাকে না।
বাসর ঘরে ভালোবাসা
,
গল্পটা আবারো শুরু করলাম,
— আমার ব্রেনের প্রতিটা নিউরনের সেলে যেন ওই দুটি অক্ষরের নাম ঘুরপাক
খাচ্ছিলো তখন। কোন কিছুতেই আমার মন বসে না। যখন পড়তে বসি, বইয়ের প্রতিটা
পৃষ্ঠায় যেন ওর নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারি না।
— এটাকেই প্রথম ভালোবাসা বলে।
— আপনি লাভ এট ফার্স্ট সাইট বিলিভ করেন?
— হুম করি।
— আপনার লাইফেও কি প্রথম ভালোবাসা ছিলো?
— হয়তো ছিলো।
— শুনতে খুব ইচ্ছা করছে।
— শোনাবো আগে আপনার টা শেষ করেন।
— হুম।
তারপর। চিঠি লিখা শুরু হলো আবার। ওর একটা চিঠিতে লিখেছিলো,
“সত্যিই কি ভালোবাসো আমায়?”
আমি কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। অনেক ভেবে লিখলাম,
” ভালোবাসি কি না জানি না, তবে তোমাকে খুব ভালোলাগে। তোমার আশেপাশে থাকতে
ইচ্ছা করে। সারাক্ষন তোমার মায়া ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।
তোমার মুখে আমার নাম শুনতে ইচ্ছা করে।”
— বাহ! কি সুন্দর করে উপমা দিলেন।
তারপর মেয়েটা কি বলেছিলো?
,
“এগুলোকে কি বলে? এটাকে কি ভালোবাসা বলে না?”
“জানি না। আচ্ছা এখন তোমার দিকেও যদি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেই যে তুমি কি আমায়
ভালোবাসো? তখন কি বলবে?”
” আমিও জানি না আমিও ঠিক কি বলবো। তবে তোমার সব কিছুই যেন আমাকে টানে। তোমার
প্রতি একটা মায়া কাজ করে। দুপুর রোদে ঘাম ঝড়িয়ে আমার জন্য করা তোমার সেই
অপেক্ষাটা আমার গহীন হৃদয়ে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত অনুভূতির জম্ম দিয়েছে। যেই
অনুভূতিটা শুরু তোমার কথা আমাকে ভাবায়। এটাকে যদি কেউ ভালোবাসা বলে তবে আমি
মেনে নেবো।
” কখনো কাউকে ভালোবেসে দেখি নি। ভালোবাসার গভীরতা মাপার ক্ষমতা আমার নেই। তবে
একটা একটা বলতে পারি, তোমার প্রতি আমার, আর আমার প্রতি তোমার যে ভালোলাগা কাজ
করে সেটা কোন প্রেমিক প্রেমিকাদের ভালোবাসাকেও হার মানায়। জানো তোমার জন্য
মেলা থেকে সস্তায় এক জোড়া নূপুর কিনেছি। তুমি কি পরবে?”
,
,
পরের পর্ব শীঘ্রই। …
প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ভালো থাকুন।..
Thank You, Visit Again…