রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প | Romantic Valobashar Story
রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প
সাথে একজন নতুন বন্ধুও হয়ে গেল। আমার থেকে পাঁচ বছরের সিনিয়র রুদ্রপ্রতাপ
নন্দী। রুদ্রদা প্রথম থেকেই আমার স্কুলমেট হওয়া সত্ত্বেও কোনওদিন কোনও পরিচয়ই
হয়নি। এবার ক্লাস সেভেন সির ক্লাসরুমের ঠিক উল্টোদিকেই ক্লাস টুয়েলভ কমার্সের
ক্লাসরুম। সেই ক্লাসেই ছিল রুদ্রদা। আমি টিফিন পিরিয়ডে ক্লাস থেকে বেরিয়ে
করিডরে ঘোরাঘুরি করতাম। বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়াতাম। অন্যরা তখন নীচে মাঠে
প্রমত্ত লম্ফঝম্ফ করছে। আমি কোনওদিন যেতাম না। দাঁড়িয়ে সবার খেলা দেখতাম।
তেমনই একদিন গ্রিলে গাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, পিছনে জলদগম্ভীর পুরুষকন্ঠ “তুই
কখনও খেলতে যাসনা কেন? রোজ দেখি গোটা রিসেস পিরিয়ড এখানে দাঁড়িয়ে
থাকিস!”
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি একটি লম্বা, ফর্সা, পেটানো স্বাস্হ্যের ছেলে। বয়স
অনুপাতে অদ্ভুত ভারী ব্যক্তিত্বপূর্ণ কন্ঠঃস্বর। চোখ দুটোয় স্বচ্ছ দৃষ্টি।
ঠোঁটে হাসি। স্মিত হেসে বললাম “এমনিই। অত হুড়োহুড়ি ভাল না।” বলেই পাল্টা
প্রশ্ন জুড়লাম “তুমি খেলতে যাওনি?”
খেলতে গেলাম না।”
টুয়েলভ চলছে। এই ছোটখাটো কারণে স্কুল কামাই করলে চলবে?”
এভাবেই চলছিল। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন স্কুলে গিয়ে রুদ্রদাকে দেখতে পেলাম না।
টিফিন ব্রেকে মাঠে খুঁজে পেলাম না। ওদের ক্লাসরুমে উঁকি মেরে এলাম। ফাঁকা
ক্লাস। হঠাৎ আমার বুকটাও কেমন ফাঁকা ঠেকলো। চিনচিন করে উঠলো। চোখদুটো জ্বালা
করছে। আজ যে স্কুলে আসবেনা, কাল তো একবারও বলল না রুদ্রদা!!!!
করা শুরু করলাম নাকি!! আমি কোন হরিদাসী যে আমায় আগের থেকে নোটিশ দিতে হবে
স্কুলে না এলে!!!! ভারী তো দুদিনের আলাপ। না এলো তো ভারী বয়ে গেল। আমিও যদি
স্কুলে কোনওদিন না আসি, মোটেই জানাতে যাব না আগের থেকে।…….. কিন্তু কি
মুস্কিল! একটা চাপা অভিমান কেন ফিরে আসছে বার বার??
করা হল “কি ম্যাডাম, কি খবর?”
পড়ল। মুখ ঘুরিয়ে চলে আসছিলাম। পিছন থেকে কন্ঠঃস্বর ভেসে এলো “রাগ করিস না।
কাল একটা নেমন্তন্ন ছিল, তাই আসিনি।”
উৎকন্ঠা ছাপিয়ে কেন রাগ, অভিমানটাই এলো আমার মনে! ছি ছি রুদ্রদা কি ভাবলো আমার
সম্পর্কে!!!! সেদিন স্কুল থেকে ফিরে সারাদিন কথাটা নিয়েই ভাবতে থাকলাম, কিন্তু
হলে হবে কি, পরেরদিন কিছুতেই রুদ্রদার কাছে ক্ষমা চাইতে পারলাম না। রুদ্রদাকেও
একটু চুপচাপ মনে হল কি? ঠিক বুঝতে পারলাম না।
ইতিমধ্যে গরমের ছুটি এসে গেল। ভ্যাকেশনের দুদিন আগে ম্যাথস টিচার সুকণ্যা
ম্যাডাম ক্লাসে এসে হঠাৎ জানালেন যে আজ ম্যাথস ক্লাসে একটা শর্ট টেস্ট নেবেন
অ্যালজেব্রার উপর। টিফিনের পরই ম্যাথস পিরিয়ড। সেদিন ক্লাসের কেউই খেলতে
যায়নি। সবাই কোনওমতে দুটো নাকে মুখে গুঁজে অ্যালজেব্রার ফর্মূলাতে হাবুডুবু
খাচ্ছে। আমি আর পল্লবী করিডরে একটা বাতিল করা বেঞ্চের উপর বসে একটা অংক মেলানোর
চেষ্টা করছি। হচ্ছে না কিছুতেই। আমাদের দুজনেরই মুখ শুকিয়ে গেছে। ভাবছি কি
করব। এমন সময় হঠাৎ সামনে দেবদূত। রুদ্রদা। সেই একইরকম হাসি নিয়ে মায়ামাখা
গলায় বলল “কিরে, হচ্ছে না? দে, আমায় দে। আমি করে দিচ্ছি। ভালো করে বুঝে নে।”
রুদ্রদা অংকটা মিলিয়ে দিল। তারপর বলল “খবরদার শর্মিষ্ঠা, অংক মুখস্হ করতে
যাসনা। ঠকে যাবি কিন্তু।”
প্রাণঘাতি অংকটি তো এসেছিলই, আর অন্যান্য সব উত্তর সঠিক না হলেও এটি এক্কেবারে
ঠিক। পুরো ছয় নম্বরই মিলেছে। সেদিন টিফিন টাইমে ছুট্টে গিয়ে রুদ্রদাকে
পাকড়াও করে খাতা দেখালাম। রুদ্রদা আমার মাথায় একটা হাত রাখল। শ্রদ্ধায় এবং
প্রশান্তিতে শরীর যেন জুড়িয়ে গেল। রুদ্রদা বলল “তোর ফোন নম্বরটা দে। আজ থেকেই
তো ছুটি পড়ে যাচ্ছে।”
ক্লাস ছিল না। ছিল একটা ছোটখাটো ফাংশন। যেহেতু সেদিন শেষ স্কুল ভ্যাকেশনের আগে।
তো ফাংশন শেষে অডিটোরিয়ম ছেড়ে যখন বেরোচ্ছি দেখি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ব্যাগের
চেন আটকাচ্ছেন মূর্তিমান। চোখাচুখি হতেই সেই ভুবনভোলানো হাসি। কিন্তু হাসিতে
একটা চোরা বিষাদ লক্ষ্য করলাম যেন। একমাস স্কুল বন্ধ থাকবে বলে কি, নাকি
অন্যকিছু!!!!!
সেদিন আমি স্কুলে আসিনি বলে তুই অভিমান করলি, কিন্তু তোর একবারও মনে হল না যে
আমার হঠাৎ কোনও বিপদ হতে পারে!যদিও এক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি কিন্তু হতে তো
পারত!”
আটকালাম। ভাঙা গলায় বললাম “ভুল হয়ে গেছে রুদ্রদা। আই অ্যাম সরি।”
করলে সন্ধ্যাবেলার দিকে করবে। আমি তখন ড্রয়িংরুমে পড়তে বসি। ফোন ওই ঘরেই।”
হাত বাড়িয়ে রুদ্রদার গালটা টিপে দিলাম। গভীর পলকহীন দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রদা।
আমি সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে ভোঁ দৌড়।….. তারপর থেকে ঠিক সন্ধ্যা
সাতটায় রেগুলার ফোন আসত বলতে গেলে। যদিও আমি বারণই করতাম ফোন করতে।
Valobashar Romantic Premer Golpo Bangla
তার মধ্যেও অবশ্য রুদ্রদার সাথে দিব্যি বন্ধুত্ব বজায় থেকেছে। দেখা, সাক্ষাৎ,
হাসি…. মাঝেমধ্যে ফোন। পরীক্ষা শেষের পর পূজোর ছুটি। ছুটিতে যথারীতি রুদ্রদার
ফোন। আমায়ও জোর করে ওদের বাড়ির নম্বর দিয়েছিল। ভয়ে ভয়ে কালেভদ্রে ফোন
করতাম, যখন নিশ্চিত থাকতাম যে এই সময় রুদ্রদাই ফোন তুলবে।
এগিয়ে বড় কাপড়ের দোকানটার পিছনে আমার সাথে দেখা করবি।” বলেই সটান হাঁটা
লাগালো। আমায় আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। আমি একবার ভাবলাম পল্লবীকে বলি
ব্যাপারটা, বলি ওকে আমার সাথে যেতে। কিন্তু পরক্ষণেই মত বদলালাম। দেখিই না
গিয়ে, কি বলে। ছুটির পর স্কুলবাস কাকু কে অনুরোধ করলাম পাঁচ মিনিট দাঁড়াতে।
বললাম আমার খুব কাশি হচ্ছে, একটা কাশির লজেন্স্ কিনে নিয়েই আসছি। বলেই খকখক
করে কৃত্রিম কাশতে কাশতে দে দৌড়। গিয়ে দেখি রুদ্রদাও হন্তদন্ত হয়ে আসছে।
একমিনিটও বাড়তি সময় নষ্ট করা যাবেনা। রুদ্রদা ঝড়ের গতিতে একটা একটা
ক্যাডবেরি সেলিব্রেশনের প্যাকেট বার করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল “শুভ
বিজয়া।” প্যাকেটটা বুকে আঁকড়ে ঝুঁকে প্রণাম করলাম রুদ্রদাকে। চোখদুটো ভিজে
এলো আমার। রুদ্রদা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল “খাস কিন্তু।” আমার টিফিন বক্সে
একটা গোটা আপেল অবশিষ্ট ছিল। বার করে রুদ্রদার হাতে দিয়ে বললাম “এটা দিয়েই
মিষ্টিমুখ করো। সন্ধ্যেবেলা পারলে ফোন করো।”
এই প্রথম যেন বুকের ভিতরটা প্রচন্ডরকম তোলপাড় করছে। সন্ধ্যেবেলা পড়তে
বসব কি! ফোনের অপেক্ষায় ছটফট করছি। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। সাতটা, সাড়ে সাতটা,
পৌনে আটটা, আটটা, সাড়ে আটটা….ঠিক আটটা তেত্রিশে ফোন বাজলো। উত্তেজনার চোটে
জলের গ্লাসটা খাতায় উল্টে ফেলেছিলাম আর কি! তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোন তুললাম
“হ্যালো।”
স্টেজে পৌঁছো তারপর বুঝবি।”
শীতের ছুটি। স্কুল খোলার পর রুদ্রদা পরীক্ষা দিতে আসবে, তারপর আর দেখা হবেনা।
এটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিল আমার। বুকের ভিতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে প্রচন্ড
কষ্টে, তীব্র যন্ত্রণায় গলার কাছটা টনটন করছে। ভ্যাকেশন শুরুর দিন রুদ্রদার
সাথে কথা বলব কি! কান্নার দমকে কথা আটকে আসছে। রুদ্রদারও একই অবস্হা। শত
চেষ্টায় গলার স্বর স্বাভাবিক করে বলল “এত ভেঙে পড়িস না প্লিজ। ফোন নম্বরটা
হারাস না। মুখস্হ্য রাখিস। চলি রে, স্কুল খুললে আবার তো দেখা হবে।”……বলল
বটে রুদ্রদা, কিন্তু কদিন!! পরীক্ষা তো চলবে মাত্র পনেরো ষোলদিন, দেখতে দেখতে
কেটে যাবে, কিন্তু তারপর??
ধাক্কায় চমকে উঠলাম। চাপা গলায় রুমকি ধমকে উঠল “কি রে শর্মি? অমন ড্যাবড্যাব
করে আর.পি.এন কে দেখছিস কেন? উনি এখনও খেয়াল করেন নি। দেখলে কি ভাববেন
বলতো?”
হবে কি? বুকের ভিতর লাবডুব শব্দ শুনতে পাচ্ছি স্পষ্ট। অস্হির লাগছে। অবাধ্য চোখ
খালি চলে যাচ্ছে ব্ল্যাকবোর্ডে। তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন আর.পি.এন। আমার
চিনতে এতটুকু চিনতে ভুল হচ্ছে না। এই আমার রুদ্রদা। আমার হারিয়ে যাওয়া
রুদ্রদা।
আর পাঁচটা দিনের মত কলেজে এসেছিলাম। কিন্তু তখনও কি জানতাম…..!! নতুন নতুন
প্রফেসর তো হামেশাই জয়েন করছেন। এসে শুনলাম তেমনই একজন প্রফেসর জয়েন করেছেন।
ইকোনমিক্সেরই। আজ থেকে আমাদের ক্লাস নেবেন। সেই মত ভদ্রলোক ক্লাসে ঢুকলেন।
তাকানো মাত্রই আমার সমস্ত শরীর জুড়ে বৈদ্যুতিক শক। উত্তেজনায় হাতদুটো বরফের
চাঁইতে পরিণত হচ্ছে ক্রমশ। গলা শুকিয়ে কাঠ।
গেছি। অবাক হলাম রোল কলের সময়। আর পাঁচটা স্টুডেন্ট কে যেভাবে নাম ধরে ডাকলেন,
আমাকেও ঠিক সেই একইভাবে ডাকলেন। মুুখের দিকেও তাকালেন। কিন্তু কই, কোনও
ভাবান্তর তো চোখে পড়ল না। ক্লাসজোড়া ছাত্রছাত্রীর সামনে নিজের ব্যক্তিত্ব
বজায় রেখে যতটুকু বিচলিত হওয়া যায় ততটুকুও না। রোলকলের শেষে একসময় বেরিয়েও
গেলেন ক্লাস থেকে। রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে, অপমানে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছিল।
সেকেন্ড পিরিয়ড থেকে থার্ড পিরিয়ডের মাঝে গ্যাপটুকুতে আবার হারিয়ে গেলাম
অতীতে।
তখনও তবু ল্যান্ডফোন নম্বর ছিল। কিন্তু সেবছরই একসময় নম্বরটা ডেড হয়ে গেল। যে
আশঙ্কাটা এতদিন কুরে কুরে খেয়েছে সেটাই সত্যি হল। তখন সদ্য মোবাইলের উৎপত্তি
হয়েছে। আমাদের ল্যান্ডফোনটাও তার মাসখানেক পরই কেটে দেওয়া হল। কি জানি,
রুদ্রদা হয়ত পরে ফোন করেছিল, কিন্তু পাবে কি করে!! রুদ্রদা হারিয়ে গেল।
স্বয়ং রুদ্রদার দর্শন মিলবে!!
করিডরে, কলেজের মাঠে একাধিকবার দেখা হয়েছে, কিন্তু কোনও ভাবান্তর ঘটেনি।
রুদ্রদা আমায় চিনতে পারেনি এটা অসম্ভব। তাছাড়া রেজিস্টার খাতায় তো রোজ নাম
দেখতে পাচ্ছে। হয়ত চিনতে চাইছেনা। হয়ত কেন বলছি, চিনতে চাইছে নাই তো। কিন্তু
এমন কেন করছে রুদ্রদা!! ভদ্রতাবশত একটা কথা বললে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে!!
আমি নিশ্চিত রুদ্রদা বিয়ে করেছে, সংসার করছে সুখে কিন্তু তাই বলে কি আমার সাথে
একটাও কথা বলতে নেই!! মানুষ এত বদলে যায়? ভাবলেই কান্না পায়। কষ্টে, অভিমানে,
যন্ত্রণায় শরীর অবশ হয়ে আসে। আমিও কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাইনা। কিন্তু কি করব,
অবাধ্য চোখের জলের কাছে হার মানতেই হয়।
একশো নম্বরের পরীক্ষা। রাগের চোটে পুরো ক্লাসজোড়া ছাত্রীরা আর.পি.এন কে
গালিগালাজ করতে করতে সারারাত লেখাপড়া করে পরীক্ষায় বসল। দশ নম্বরের দশটা
কোয়েশ্চেন। তিন ঘন্টা ধরে লড়াই করে গলদঘর্ম হয়ে গেছি। উত্তরপত্রগুলো গোছ করে
নিয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে ওনাকে দিলাম। শান্তকন্ঠে বললাম “স্যার হয়ে গেছে।”
ভাবলেশহীনমুখে গোছাটা নিয়ে একটা পিত্তি জ্বালানো প্রশ্ন করে বসলেন আর.পি.এন
“তোমার নামটা যেন কি?” প্রচন্ড রাগে মাথাটা ফেটে বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড় হল
এবার। প্রায় বলে ফেলেছিলাম ‘ওই তো রেজিস্টারে আছে। দেখে নিন।’ কোনওমতে সামলে
নিয়ে বললাম “শর্মিষ্টা বাগচী।” বলেই সোজা ক্লাসে বাইরে চলে গেলাম। চোখের জল
উপচে পড়ছিল।
করছে। ইসসসস কি করেছি কে জানে! অবশ্যই কেনই বা ভাবছি। দুশো খাতার মধ্যে আমি কত
পেলাম না পেলাম তা আমাদের ইকোনমিক্সের ফ্যাকালটি রুদ্রপ্রতাপ নন্দী থোড়াই
খেয়াল রাখবে। রাখলেও বয়েই গেল।
থেকে অপ্রীতিকর চিন্তা দুর করতে আর পারছি কই!! অতীত, বর্তমান মিলেমিশে এক হয়ে
যাচ্ছে। কান্না, কষ্ট, অভিমান সব অনুভূতিই কেমন ভোঁতা হয়ে আসছে। দুহাতে কপাল
টিপে ধরলাম। ক্লান্তি আসছে। ডেস্কে মাথা গুঁজে দিলাম।
ডাকছেন তো। ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?” আমি অপ্রস্তুত হয়ে তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে
আন্সারশিট টা নিতে গেলাম। কঠোর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন শ্রী রুদ্রপ্রতাপ
নন্দী। রূঢ় গলায় বললেন “ক্লাসে এত আনমাইন্ডফুল থাকো কেন? কখন থেকে তোমার নাম
ধরে ডাকছি। নেক্সট টাইম এরকম হলে আই উইল কিক ইউ আউট অফ দ্য ক্লাস।”
মাই ক্লাস।” বলতে বলতে খাতাটা আমার হাতে দিয়ে বললেন “রোল কলের সময় এরকম হলে,
আই উইল মার্ক ইউ অ্যাবসেন্ট।” আর পারলাম না। ফুঁপিয়ে উঠে বললাম “কখনও কি এমন
হয়েছে স্যার? এইতো প্রথম!”
ক্যালকুলেট করায় ব্যস্ত। আমার শিট টা খুলতেই ইচ্ছা করছে না। যা হয়েছে থাক।
তবু অভ্যাসবশত খুললাম। প্রথম উত্তরে পেয়েছি নাইন। দ্বিতীয়তে এইট, তৃতীয়তে
সেভেন, তারপরের টায় ফোর, তারপরেরটায় অাশ্চর্য্যরকম কম, মাত্র দুই, তারপরে
আবার নাইন, তারপরের দুটো তে ফাইভ, তারপরেরটায় সিক্স, শেষেরটায় থ্রি। ভাবছি
পাঁচ আর দশ নম্বরটায় এত কম পেলাম কি করে!! ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছি, তক্ষুনই পিছনে
গমগমে গলা “শর্মি দাঁড়া।” চমকে পিছনে ফিরে দেখি রুদ্রদার ঠোঁটে সেই স্কুল
লাইফের বিখ্যাত হাসি। আশ্চর্য্য, সব দুঃখ, অভিমান মন্ত্রবলে দুর হয়ে যাচ্ছে কি
করে!! আর.পি.এন নন, এবার কথা বলল আমার রুদ্রদা “কিরে পাগলী, মুখটা তো ভাতের
হাঁড়ির মত করে রেখেছিস।” জবাব দিলাম না। রুদ্রদা ফের বলল “কিরে, রাগ করেছিস
তো?”
নম্বরগুলো দেখেছিস? দেখে কি বুঝলি শুনি?”
থাকিস তো কন্ট্যাক্ট করিস।”
9874295563….. খামচে ধরেছি খাতাটা। চারিপাশে হাজার ভোল্টের ঝাড়বাতি জ্বলছে
যেন। রুদ্রদা বলল “তুই যেভাবে কষ্ট পেয়েছিস, আমিও একইভাবে পেয়েছি রে। কিন্তু
দ্যাখ, ঠিক ফিরে পেলাম তোকে। এবার বল শর্মি, তুই রাজি তো?”
তুমি…..!!!!” শেষ করতে পারলাম না। মুখ লুকোলাম।
আমাদের।।
মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন।…
Thank You, Visit Again…