রোমান্টিক প্রেমের গল্প – সে আমার প্রিয়তমা – ভালোবাসার গল্প
আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে আমার বিয়ে হয়নি। যার সাথে হয়েছে তাকে ভালোবাসাতো
দূর ওর মুখ পর্যন্ত দেখতে ইচ্ছে করে না। কেমন যেন অদ্ভুত রকম দেখতে। মুখে
একবিন্দু হাঁসি নেই, কোন সাজগোজের বালাই নেই,এমন কি শাড়িটাও ঠিক মতো পরতে পারে
না। আমার বন্ধুরা বাড়িতে এলে সামনে পর্যন্ত আসে না। থাকেনা! কিছু মানুষকে দেখলেই
দিন খারাপ যায়। শ্রীলেখা ঠিক তেমনি।
আমি রুদ্রনীল,ইন্ডিয়ান আর্মিতে আছি,উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এন ডি এ ট্রেনিংএ চলে
যাই।এখন কাজের সূত্রে বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকতে হয়,বাড়িতে আসি বছরে এক কি
দুবার।তাই শ্রীলেখার সন্মুখীন হলে খুব ইতস্ততঃ বোধ হয়।আমি অবশ্য তার সাথে খুব
একটা কথা বলিনা। তবে আমার মা তাকে খুব ভালোবাসে, আদর করে শ্রী বলে ডাকে। কি যে
ভালো লাগে ওর মধ্যে, কে জানে।ও কিঞ্চিৎ মাএও অনন্যার মতো নয়।
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
“অনন্যা”…আমার অনু, আমার ভালোবাসা, আমার হৃদয়। কি সংজ্ঞা দেবো ওর! ও ঠিক ওর
নামের মতোই,অনন্য। রূপে গুণে সম্পূর্না। ওর মতো কেউ নেই,কেউ হতেও পারবে না। আর
শ্রীলেখাতো একদমই না।প্রায় বছর তিনেক হলো শ্রীলেখার সাথে বিয়ে।শুধু সংখ্যায়
তিন,তিন মিনিটও আমরা একত্রে থাকিনি।অনু চলে যাবার পর ঠিক করেই নিয়েছিলাম যে আর
কাউকেই এই মনের ঘরে জায়গা দেবো না।মা আমার এই একাকিত্বের কথা চিন্তা করে করে
নিজের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটাল।একমাত্ৰ মায়ের জন্যেই আমি শ্রীলেখার
সাথে বিয়ে করতে বাধ্য হলাম।মা ভেবেছিল যে বিয়ে হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।মা এটা জানে
না যে মন একটাই আর মনের মানুষও একজনই হয়।তবে শ্রীলেখাকে আমি বিয়ের আগেই অনুর কথা
সব বলে দিয়েছিলাম,আর এটাও বলেছিলাম যে আমায় বিয়ে করলে সে স্ত্রীসুখ পাবে না।এই
সমস্ত কথা জানার সত্ত্বেও সে কেন বিয়েতে রাজি হলো তা আমি জানি না আর জানতেও চাই
না।বিয়ের প্রথম রাতেই আমি স্পষ্ট করে তাকে বলে দিয়,আমার মনে আর আমার জিনিসে শুধু
আর শুধুমাত্র অনুর অধিকার আর কারো নেই।সুতরাং সে যেন অনু হবার চেষ্টা না
করে।শ্রীলেখা অবশ্য তাতে কোন অভিযোগ করেনি, ওর কোনো কিছুতেই কোনো অভিযোগ নেই।
আমার যখন দু’বছর,বাবা মারা যান। বাবার স্মৃতি বলতে শুধু দুই দিদির সঙ্গে আমায়
কোলে নেওয়া একটা ছবি আছে।আর কিছুই নেই। বাবার পেনশনের টাকা ছাড়া সংসারে আয়ের
কোন উৎস ছিল না, সুতরাং অভাব। খুব কষ্ট করেই মা আমাদের বড় করেছেন।
প্রায় ২২-২৩ বছর আগের কথা। সংসারে টাকা যোগানের জন্য বড়দি টিউশন পড়াতে শুরু
করল আর ছোড়দি নাচ শেখাতে। ছোড়দির কাছেই নাচ শিখতে আসতো আমার অনু। কোমর পর্যন্ত
লম্বা চুল, গায়ের রঙ যেন দূধে আলতা। ঘুঙরু পরে যখন নাচতো,ইস্ কি দারুন লাগতো।ওর
ঘুঙ্গুরের আওয়াজে আমার মনে যেন হাজার দ্বীপের আলো জ্বলে উঠতো। লুকিয়ে লুকিয়ে
ওকে দেখতাম। তখন নাতো মোবাইল ছিল না ফেসবুক।তাহলে হয়তো আমার মোবাইল আর প্রফাইল
দুটোই অনন্যার ফটোতে ভরে থাকতো। আমি তখন ক্লাস নাইনে,সুতরাং পড়ার খুব চাপ।
বাড়িতে দিদিদের শাসন আর স্কুলে টিচারদের। তবে বাড়ি আর ক্লাসের মাঝখানে অনুকে
দেখতে যাবার টাইম ঠিক করে বার করে নিতাম।অনু তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। স্কুল থেকে
বাড়ি ফেরের পথে বন্ধুদের সঙ্গে অনুকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। প্রায় এক বছর ওর
পেছনে ঘোরার পর বন্ধুরা খুব সাহস দিল ওকে প্রোপজ্ করার। চিঠিতে লিখে ফেললাম
একবছরের পুরো রাম কাহিনী। ঠিক করলাম সেদিনই প্রোপোজ্ করবো। স্কুল থেকে ফেরার পথে
হাতে চিঠি আর মনে প্রচন্ড সাহস নিয়ে অনুকে রাস্তায় দাঁড় করালাম।হাতে চিঠিটা
দিয়ে এক নিমিষে বলে ফেললাম মনের কথা। নাচের ম্যডামের ভাই বলে অনু আমায় চিনতো
তবে আমার এই অবস্থার কথা ওর এক্কেবারেই অজানা ছিল। লজ্জায় ভয়ে অনু লাল
হয়েগিয়েছিল। আমার এই কান্ডের কথা অনুর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেল।অনুর বাবা আমার
দিদিকে এসে সব জানাল। তার সাথে অনুর আমাদের বাড়িতে আসাও বন্ধ হয়ে গেল। এই
বোকামির জন্য দিদিদের কাছে দু-চারটে চড় ও খেয়েছিলাম।এখন অবশ্য মনে পড়লে হাসি
পায়।
তারপর আর অনুর নাচ দেখতে পেতাম না।শুধু স্কুল থেকে ফেরার পথে একবার দেখতে
পেতাম।দিনে ওই একবার দেখেই মনে যে কি শান্তি পেত। তখন অনুও চোখের আড়াল করে আমায়
দেখতো।হঠাৎই একদিন আমার এক বন্ধু অনুর টিঠি নিয়ে এল।টিঠিতে লেখা “কাল সকাল সাড়ে
ছয়টায় অনীক সারের প্রাইভেটের রাস্তায় এসো”।এই দেখে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে
এসছিলো। সারা রাত দুচোখের পাতা এক হয়নি।কি বলবে!কি বলবে!ভেবে কখন ভোর হয়ে গেল
বুঝতেও পারলাম না।অনুর দেওয়া টাইমের প্রায় এক ঘন্টা আগেই জায়গা মতো পৌঁছে
গেলছিলাম। ঠিক সাড়ে ছয়টায় অনু এল ওর এক বান্ধবীকে নিয়ে। আমার কাছে এসে বলল—
“মেয়েদের পেছনে ঘোরো লজ্জা করে না”?
অনুকে এতো কাছ থেকে কখনো দেখিনি। এতো সুন্দর লাগছিল দেখতে আর ততটাই মিষ্টি
তার গলার আওয়াজ।যেন ভগবান ওকে অনেক অনেক সময় নিয়ে বানিয়েছে।
বললাম–“মেয়েদের নয় অনু শুধু তোমার”।
–“অনু??? আমার নাম অনন্যা”।
–“জানি, তবে আমার কাছে তুমি আমার অনু।আর আমি তোমার নীল।”বলে দাঁত বের করে
হাসলাম।
অনু মাথা নামিয়ে একটু মুচকি হেসে বলল–
“এখন সামনে আমার মাধ্যমিক আর তোমার উচ্চমাধ্যমিক তাই সপ্তাহে শুধু তিনদিনেই দেখা
করবো। ঠিক আছে”??
“তুমি যা বলবে,তাই করবো অনু”।
Romantic Premer Golpo
ব্যস, আর কি চাই আমার!বহুদিন এমনই চললো। সপ্তাহে তিনদিন ওষুধের মতো তিনটে চিঠি
পেতাম কারণ সামনে এলে কারোরই কথা বের হতো না।তাই চিঠি ছিল মনের কথা ব্যাক্ত করার
উপযুক্ত পন্থা।লোকের নজর থেকে বাঁচতে আমরা একটা ব্রিজের নীচে দেখা করতে লাগলাম
।একদিন অনু আমায় জিগ্যেস করলো- “ আচ্ছা নীল,তুমি যে সবসময়ই বলো আমায় তুমি অনেক
অনেক বেশি ভালোবাস, তা কতটা ভালোবাসো শুনি?” তখন অনুকে কিছুই বলতে পারিনি তবে
সারাক্ষণই ভাবছিলাম কিভাবে আমি আমার ভালোবাসার প্রমান দেবো।আমি অনুকে এতটাই
ভালোবাসি যে, যেকোনো প্রমাণই আমার ভালোবাসার কাছে ছোট হয়ে যাবে।কিন্তু অনু যে
জানতে চাইছে,তাই কিছু একটাতো করতেই হয়।কম্পাস দিয়ে বুকের মধ্যে “অনন্যা” লিখে
ফেললাম।শুধু অনুর জন্য নয় নিজের জন্যেও আমিও চাই অনু আমার হৃদয়ে থাকুক। এবার সময়
এলো আমার এনডিএ ট্রেনিংএ যাবার।অনু শুনে খুব কাঁদতে লাগলো আর আমিও,আবার কবে অনুকে
দেখতে পারবো জানি না।দিদির নাচের ক্লাসে তোলা অনুর একটা গ্রুপ ফোটো ছিল সেটাকে
কেটে অনুর ফটোটা আমার মানিব্যাগে রেখেছিলাম,অনুকে দেখার সেটিই ছিল একমাত্র
সম্বল।যাবার দিন সেই ব্রিজের নীচে অনুর সাথে দেখা করলাম।অনু এসেই আমায় জরিয়ে ধরে
কাঁদতে লাগলো।
ভালোবাসার স্বীকারোক্তি
–“এত কেঁদোনা অনু আমি যেতে পারবো না।আচ্ছা তুমি জানতে চেয়েছিলেনা যে আমি তোমায়
কতটা ভালোবাসি? এই দেখ”। বলে আমি আমার বুকে তার নাম দেখলাম।অনু বিস্ময়কর চোখে
আমার দিকে তাকিয়ে বলল–“এ কি করেছ নীল?আমিতো এমনই বলেছিলাম”।অনুর চোখ থেকে অঝোরে
জল পড়তে লাগলো।ওর চোখের জল মুছতে মুছতে বললাম
–“অনু এই নাম যেমন কোনোদিনই মুছবে না আমার ভালোবাসাও তেমনই তোমার প্রতি কোনোদিনই
কমবে না।তুমি চিরকালই আমার হৃদয়ে থাকবে”।
— “অনু বললে না তো”।
— “কী ?”
— “ভালোবাস আমায় ?”
— “বাসি নীল অনেক অনেক ভালোবাসি। তোমারই হয়ে থাকব চিরকাল। এই কথা দিলাম”।
অনুর ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে চলে গেলাম ট্রেনিংএ।সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর রাতে
যখন বুকে অনুর নামে হাত রেখে শুতাম এক নিমিষেই যেন সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেতো।মনে
হতো অনুই আমার বুকে শুয়ে আছে।প্রত্যেক মাসে অনু আমায় একটি চিঠি পাঠাতো সেই চিঠি
আমার বুস্টারের মতো কাজ করতো।যখনই মন খারাপ হতো অনুর চিঠিগুলো পড়তাম,মন হালকা
হয়ে যেত।কিন্তু খুব শীঘ্রই সেই শান্তি ব্যাকুলতায় পরিণত হলো, অনুর চিঠি আসা
বন্ধ হয়ে গেল।মাস কেটে বছর হতে চলল তবুও অনুর চিঠি এলো না।এদিকে যে একদিনও অনুকে
ছেড়ে থাকা দায় হয়ে উঠেছিল।কি হলো,কেন অনুর চিঠি আসা বন্ধ হয়েগেল তা আমায় জানতেই
হতো।তাই ছুটি নিয়ে অনুর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।বাড়ি গিয়ে বন্ধুদের কাছে জানতে পেলাম
প্রায় দশ-এগারো মাস আগে এক বাস দুর্ঘটনায় অনুর বাবা মা দুজনেই মারা যায়।অনুর
বাবা-মা ছাড়া আর কেউ না থাকায় তার মামা তাকে নিজের কাছে বিদেশে নিয়ে যায়।কোথায়
যায় কেউ জানেনা।
এতো কিছু হয়ে গেছে আমি কিছুই জানতে পারিনি।আমি আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছিলাম।অনু
পৃথিবীর কোন প্রান্তে আছে তা আমার এক্কেবারেই অজানা।তবুও অনুর প্রতি,আমার
ভালোবাসার প্রতি প্রচন্ড বিশ্বাস ছিল যে অনু আমার ভালোবাসার টানে ঠিক ফিরে
আসবে,আসতে বাধ্য হবে।
(ক্রমশ)
মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন।…
Thank You, Visit Again…