বাইশে শ্রাবণ (22 শে শ্রাবণ) রবীন্দ্রনাথ
বাইশে শ্রাবণ,শব্দটাই আমার মনে এক অনির্বচনীয় বোধ সৃষ্টি করে৷ এই মানুষটিকে আমি পৃথিবীর
শ্রেষ্ঠ জিনিয়াস বলে মনে করি৷ এমন দানবীয় প্রতিভা বিশ্বইতিহাসে বিরল। এক জীবনে
একটা মানুষ এত লিখতে পারে! কবিতা, গান, উপন্যাস,ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ,
আত্মজীবনী, নৃত্যনাট্য, গীতিনাট্য, পত্রসাহিত্য,ভ্রমণকাহিনী!! শেষ জীবনে
চিত্রশিল্পী৷ সংসার করেছেন, জমিদারী করেছেন, কৃষি নিয়ে কাজ করেছেন, ক্ষুদ্র কুটীর
শিল্প গড়েছেন, গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে ব্যাপৃত ছিলেন!! ক্ষুদ্র ঋণের প্রবর্তন
করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভাষণ দিয়ে বেড়িয়েছেন সমগ্র পৃথিবীতে৷ সমাজ, রাষ্ট্র,
শিক্ষা নিয়ে তাঁর ভাবনা এত আধুনিক যে তা এক বিস্ময়৷ সেই যুগে তিনি জাতীয়তাবাদের
ভয়াল রূপের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন৷ শান্তিনিকেতন গড়েছেন৷ যা শেষে
বিশ্বভারতীতে উন্নীত করেছেন৷ প্রকৃতির সাথে নিবিড় যোগে আনন্দের মাধ্যমে পরিপূর্ণ
মানবিক মানুষ গড়ার স্বপ্ন থেকে এই প্রতিষ্ঠান গড়েন৷ নৃত্য নিয়ে কাজ করেছেন।
আরো পড়ুন, বাইশে শ্রাবণ কবিতা
নিজে প্রথম জীবনে গান গাইতেন, অভিনয় করেছেন তাঁর রচিত নাটকে।
এক জীবনে এমন প্রতিভার স্ফুরণ বিরল! বাইশে শ্রাবণে তাঁর নশ্বর দেহটাই বিলীন
হয়েছিল৷ কিন্তু রবীন্দ্রপ্রতিভা প্রতিদিনের সূর্যের মত! এর ক্ষয় নেই৷ এমন
বিশ্বমানবকে গ্রাস করার মত শক্তি নেই৷ তিনি নীলিমায় মিশে আছেন৷ যতদিন মানুষের
শ্রেয়বোধ থাকবে, অন্তরে সুর গুঞ্জরিত হবে, যতদিন প্রেম থাকবে, যতদিন নন্দন থাকবে,
যতদিন মানুষ কবিতাকে ভালবাসবে, যতদিন শব্দ-ধ্বনি এবং ভাষা থাকবে ততদিন
রবীন্দ্রপ্রতিভা ভাস্বর থাকবে। বাইশে শ্রাবণ তাঁর চলে যাবার দিন না! বাইশে শ্রাবণ
তাঁকে আরো গভীরভাবে পাবার দিন৷
তিনিই বলেছিলেন —
‘হারায় যা তা হারায় শুধু চোখে
অন্ধকারের পেরিয়ে দুয়ার যায় চলে আলোতে’
বাইশে শ্রাবণে উন্মত্ত জনতার উপর দিয়ে একটি ফুলেল নৌকা ভেসে যাচ্ছিল আর বেজে
উঠছিল —‘কে যায় অমৃতধাম যাত্রী’
মৃত্যু তো মূলত রূপান্তর৷ বারংবার সেটাই বলেছেন তাঁর সাহিত্যে। তাঁর সাহিত্য আর
তাঁর জীবন এক সুরে বাঁধা ছিল বলেই গান বেঁধেছিলেন —
‘সমুখে শান্তি পারাবার
ভাসাও তরণী হে কর্ণধার’…
Tags –
Rabindranath Tagore,
Baishe Srabon, বাইশে শ্রাবণ