গল্প প্রেমের কাহিনী – পারমিতার একদিন – Golpo Premer Kahini
আজ বিয়ের দশ বছর পূর্ণ হল। কিন্তু এই দিনটার আলাদা করে আর কোনো গুরুত্ব
নেই আজ। অমিত রোজকারের মত আজও অফিস গেছে। রিয়ার আগামী সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা তাই
পারমিতাকে রান্না শেষ করেই মেয়েকে নিয়ে বসতে হবে। রাতে অফিস থেকে ফেরার সময়
অমিত বিরিয়ানী নিয়ে ফিরবে..ব্যস্ দিন শেষ। এখন যেন এগুলোতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে
পারমিতা তাই আর মন খারাপ লাগেনা। দশ বছর পর আর কিই বা নতুনত্ব থাকে জীবনে !
তাছাড়া অমিত মানুষ টাও নিতান্তই সাধারন। চাকরি ভালো করলেও বউ মেয়েকে নিয়ে লং
ড্রাইভ বা বউয়ের সাথে ক্যাণ্ডেল লাইট ডিনার এসব অমিতের একদম না পসন্দ। অমিত মনে
করে এসব না করেও পরিবার কে ভালো রাখা যায় এবং সত্যিই অমিত সেখানে পুরোপুরি সফল
সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তুু পারমিতার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় যখন
ফেসবুকে বান্ধবীদের ছবিগুলো দেখে। বছরে দুবার অমিত পারমিতা এবং রিয়াকে নিয়ে
বেড়াতে যায় কিন্তু শর্ত একটাই সোশ্যাল সাইটে কোনো ছবি দেওয়া যাবেনা।
নিজের ব্যক্তিগত জীবন কে পাব্লিক করা একেবারেই পছন্দ নয় অমিতের। তবুও পারমিতাকে
সেভাবে বারণ করেনি কখনই, বরং পারমিতাই অমিতের ইচ্ছেকে মেনে নিয়েছে। মানুষ টা
সবার থেকে আলাদা হলেও বড্ড ভালো। মেয়েকে পড়ানো শেষ করে বিয়ের অ্যালবাম টা খুলে
বসল পারমিতা। ছবিগুলো দেখতে দেখতে ভাবছিল ইস্ যদি বয়স টা দশ বছর পিছিয়ে যেত কি
ভালো ই না হত। কয়েকটা বাছাই করা ছবি নিজের হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে দিল। অমিত
স্ট্যাটাস দেখে লিখল বিয়ের ছবি দেখছ? পারমিতা লিখল হুমম..তুমি কি করছ? অমিত
লিখল এই তো মিটিংয়ে ঢুকছি পরে কথা বলছি। পারমিতা মেসেজ টা পড়ে নিজের মনে মনেই
বলল পরে আর কথা কোথায় হয় আমাদের! স্ট্যাটাসে ছবি দেখে অনেকেই অভিনন্দন
জানাচ্ছিল। অভিনন্দন বার্তাগুলো পড়তে খুব মজা লাগছিল পারমিতার। পাশের ফ্ল্যাটের
রমিতা উইশ করে বলল কিরে আজ কি প্ল্যান? পারমিতা বলল ধুর দশ বছর হয়ে গেছে আর কি
প্ল্যান। রাতে একসাথে ডিনার করব এই আর কি ! রমিতা বলল তুই সত্যিই বুড়ি হয়ে
গেছিস। যা অমিতের সাথে কোথাও। পারমিতা হেসে বলল কি যে বলিস মেয়েকে একা রেখে
কোথায় যাব। রমিতা বলল উফ্ রিয়াকে আমার ফ্ল্যাটে রেখে যা আমার মেয়ের সাথে খেলবে।
তোরা দুজনে কোথাও ঘুরে আয়, আজ তোদের দুজনের দিন। রিয়াকে নিয়ে ভাবিস না আমি আছি
তো। যা সুন্দর করে সাজুগুজু করে বেড়িয়ে পড়। ছবি তুলিস মনে করে। পারমিতার
প্রস্তাব টা মন্দ লাগল না। সাথে সাথে অমিত কে ফোন করল। অমিত হ্যালো বলতেই
পারমিতা বলল তোমার মিটিং শেষ হল। অমিত বলল এইমাত্র। অমিত বলল আজ তাড়াতাড়ি ফিরব
তোমার পছন্দের চিকেন বিরিয়ানী নিয়ে আর তোমার জন্য একটা শাড়ি কিনেছি দেখো তো
পছন্দ হয় কিনা। পারমিতা চাপা গলায় চলো না আজ দুজনে কফিশপে যাই। আমি কোনোদিনও
কোল্ড কফি খাইনি। অাজ খুব খেতে ইচ্ছে করছে। অমিত দু সেকেন্ড চুপ থেকে বলল রিয়া
কে সাথে আনছো তো! পারমিতা বলল ওকে রমিতার কাছে রেখে আসব। অমিত বলল ঠিক আছে চলে
এস। অমিতের কলিগ রথীন পাশ থেকে বলল কি ব্যাপার ভাই বৌদি আসছে নাকি। অমিত হেসে
বলল আমার বৌ কোল্ড কফি খেতে আসছে। রথীন বলল বেশ করেছে। যা তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে
পর।
সুন্দর প্রেমের গল্প
খুব সুন্দর করে সাজলো পারমিতা তারপর কয়েকটা সেলফি তুলল। রিয়াকে বলল মা তুমি
একটু মামন দিদির সাথে খেলা কর আমি একটু পরেই চলে আসব ঠিক আছে। রমিতা বলল কি
লাগছিস পারো অমিত দা দেখে তো ফুল ফিদা হয়ে যাবে। পারমিতা দূর থেকে দেখতে পেল
অমিত কফিশপের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। একটু যেন ক্লান্ত দেখাচ্ছিল অমিত কে। পারমিতা
ভাবল ধুর বাড়ি গিয়ে কোথায় একটু বিশ্রাম নিত তা না আমার এই ছেলেমানুষির
জন্য অমিতের হেনস্থার শেষ নেই। নিজেকেই অপরাধী মনে হতে লাগল পারমিতার।
কাঁচুমাচু মুখ করে অমিতের কাছে গেল পারমিতা। পারমিতাকে দেখে অমিত একগাল
হেসে বলল আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো ! পারমিতা হেসে মাথা নাড়ল।
কফিশপের ভিতরের আবহ টা যেন আলো আঁধারির খেলা। বেশিরভাগ ই প্রেমিক প্রেমিকা। কেউ
হাতে হাত দিয়ে বসে আছে আবার কেউ ল্যাপটপ খুলে কাজে মগ্ন। পারমিতা চেয়ারে বসে
চারপাশ টা দেখছিল। কেমন যেন একটা আবছায়া ঘিরে রয়েছে চারপাশে। ব্যাকগ্রাউন্ডে
একটা ইংরেজি গান চলছিল। সবাই খুব সচেতনভাবে চাপা গলায় কথা বলছে। জোরে কথা বলা
মনে হয় বারণ। টেবিলে একটা পেপার দেওয়া ছিল। পারমিতা খুলে দেখল টেলিগ্রাফ।
পারমিতার মনে হল বিদেশ বিভুঁইয়ে পথ হারিয়ে বসে আছে। অমিত বলল বল কি খাবে।
পারমিতা বলল কোল্ড কফি উইথ আইসক্রীম। অমিত মুচকি হেসে বলল তোমার টনসিলের
প্রবলেম আছে সেটা মাথায় আছে তো। পারমিতা ছেলেমানুষের মত বলল একদিন খেলে
কিছুই হবেনা। অমিত মাথা নেড়ে বলল ঠিক আছে তাই হোক। পারমিতা বলল তুমি
কিছু খাবেনা আমি একা একা খাব নাকি। অমিত বলল আমি তো কফি খাইনা তুমি জানো।
একটা স্যান্ডউইচ অর্ডার করি বরং সেটাই ভালো হবে। পারমিতা বলল আমাকে কেমন লাগছে
বললে না তো! অমিত বলল আজ একটু বেশি ভালো লাগছে। পারমিতা লজ্জা পেল। কথাটা বলে
অমিত পারমিতার গালে হাত দিতে যেতেই পারমিতা বলল কি করছ এসব। অমিত হেসে বলল
তোমার বা গালে দাগ টা কিসের সেটাই দেখছিলাম রে বাবা। পারমিতা বলল আর বলো না
সকালে মাছ ভাজতে গিয়ে এই অবস্থা। অমিত বলল ইস তক্ষুণি টুথপেস্ট লাগাবে তো।
ওয়েটার কফি আর স্যান্ডউইচ দিয়ে গেল। কফি তে চুমুক দিয়েই ঠাণ্ডা লাগল
কিন্তু সেটা তো আর বলা যাবেনা অমিত কে। পারমিতা বলল তোমার তো এসব জায়গা
পছন্দ নয় তাহলে আমায় নিয়ে এলে যে। অমিত বলল তুমি তো কখনো কোনোকিছু আবদার করোনা
আর আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী বলে কথা তাই বৌ এর ইচ্ছে শিরোধার্য বুঝলে। পারমিতা
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল তুমি বাড়িতে আসার পর যখন একসাথে আমরা চা খাই আর
সারাদিনের গল্প করি ওটাই ভালো গো। এখানে কেমন যেন আমার দমবন্ধ লাগছে। আর এই
কফিটাও…. অমিত বলল পছন্দ হয়নি তাই তো! সে তো তোমার প্রথম চুমুক দেখেই বুঝতে
পেরেছি। এই স্যান্ডউইচ টা খাও নয়তো খালি পেটে থাকলে আবার গ্যাসের প্রবলেম দেখা
দেবে। পারমিতা বলল ফালতু ফালতু তোমার এতগুলো টাকা খরচ হল আমার জন্য। আসলে
একটা দিন একটু অন্যভাবে কাটাতে চেয়েছিলাম। অমিত বলল ধুর পাগলী, এতক্ষণ আমি
তোমার সবকথা শুনেছি এবার আমি যা বলব তোমাকে তাই শুনতে হবে ঠিক আছে।
কফিশপ থেকে বেড়িয়ে অটো ধরে সোজা বাঘাযতীন মোড়। পারমিতা বলল মাথাটা বড্ড ধরেছে
গো। অমিত বলল সব ঠিক করে দিচ্ছি ম্যাডাম নো টেনশন। প্রথমে আমরা যাব বলাইদার
চায়ের দোকানে। মাটির ভাঁড়ে আদা তেজপাতা দিয়ে গরম চা। চায়ের দোকানে গিয়ে অমিত
বলল বলাই দা দুটো চা, মাটির ভাঁড়ে দিও কিন্তু। বলাইদা হেসে বলল বৌদিও আছে
দেখছি। অমিত পকেট থেকে রুমাল বের করে পারমিতার হাতে দিয়ে বলল এটা হাতে নাও
তারপর চা টা দিচ্ছি নয়তো হাতে গরম লাগবে। চা টা হাতে নিয়ে পারমিতার চোখে জল এল।
অমিত ব্যস্ত হয়ে বলল শরীর খারাপ লাগছে নাকি তোমার। পারমিতা বলল না গো। আসলে
সবাই কে দেখি তো কত জায়গায় যায় আমি এতটাই বোকা যে ভেবে বসলাম আমাদের এই
সাদামাঠা জীবনে বুঝি ভালোবাসা টাই মরে গেছে। তোমার সাথে একান্তে সময় কাটাতে
গিয়ে বুঝলাম আমরা আমাদের এই ছোট্ট ঘরেই ভালো আছি। অমিত পারমিতার হাতদুটো ধরে
বলল দশবছর আগে কনের সাজে লাল বেনারসি পরা যাকে দেখেছিলাম আজও তাকেই দেখি আর
আজীবন তাকেই দেখব। ফেসবুকে ফিলিং ফ্যান্টাসটিক না লিখেও ফ্যান্টাসটিক থাকা যায়।
বৌকে ভালোবাসার কথা দুনিয়াকে না জানালেই নয়। আমি তো দারুণ আছি তোমার সাথে
কিন্তু আমাদের মতো করে আমরা ভালো আছি। কে কি করছে সেটাকে কপি পেস্ট করার
প্রয়োজন আছে কি ! ভালোবাসা কখনো মরেনা কিন্তু সেটাকে সযত্নে লালন করতে
হয়।
প্যাকেট দিয়ে আসব যতই হোক এত ভালো একটা আইডিয়া তোমাকে দিল। পারমিতা হেসে বলল
তুমি না খুব অসভ্য ! অমিত বলল সে তো বটেই আর তুমি বাড়ি গিয়ে গরমজলে কুলকুচি করে
নিও নয়তো ব্যথা শুরু হবে আবার। হঠাৎ করে চারিদিকে আলোর রোশনাই দেখা দিল। আকাশের
দিকে তাকিয়ে পারমিতা দেখল শুধু আলো আর আলো। পারমিতা অমিত কে বলল আজ কোনো
খেলা ছিল নাকি! আকাশ টা দেখ মনে হচ্ছে হাজার প্রদীপ জ্বলছে। কারা এত বাজি
ফাটাচ্ছে গো। অমিত পারমিতার হাত ধরে বলল আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর উপহার মনে হয়।
পারমিতা অমিতের হাতদুটো কে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
প্রিয় গল্প পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
ভালো থাকুন।..
Thank You, Visit Again…