স্বামী= বলি শুনছো,,,কালকে যে তোমাকে হাজার টাকা দিলাম বাজার করার জন্য,তো সেখান থেকে আমায় আর টাকা ফেরত দিলে নাতো?
স্ত্রী= টাকা ফেরত??? এই লকডাউনে জিনিসের কত দাম বেড়েছে জানো!
স্বামী= আরে বাবা নিচ্ছ তো বাড়ির সামনে থেকে অল্প কিছু সবজি আর মাছ। তাতে হাজার টাকা লাগে নাকি? আমায় হিসেব দেখাও দেখি।
স্ত্রী= অল্প কিছু সবজি??? লাউ, ঝিঙে,পটল, আলু , পেঁয়াজ, কাতলা মাছ এগুলো অল্প বাজার মনে হলো তোমার?
স্বামী= কাতলা মাছ?? কিন্তু কাল তো রান্না করলে দেখলাম চারা পোনা মাছ। আর আজ বলছো কাতলা মাছ! কোথায় তোমার কাতলা মাছ দেখাও তো দেখি?
সাত সকালে শুধু শুধু মিছে কথা বলা, তাই না!
ক’দিন ধরে রোজই বাজারের টাকা নিচ্ছো আর খাইয়ে যাচ্ছো ডাল, আলু পোস্ত,ডাল, ঝিঙে পোস্ত।বলি এগুলো হচ্ছে টা কি?
আমার টাকার হিসাব চাই। অনেক অনেক ঝেড়েছো জীবনে। কিন্তু আজ আর না। এই লকডাউনে আমি পাই পাই পয়সার হিসাব রাখবো এই বলে দিলাম।
স্ত্রী= কি?? আমায় তুমি সন্দেহ করছো?
কত, কত টাকা তুমি আমায় দাও শুনি? যা দাও তাই তো তোমার পোড়া সংসারে লাগিয়ে দি।
বিয়ের পর থেকে নিজের হাতে করে কখনো একখানা শাড়ি এনে দিয়েছো? কখনো অফিস ফেরত একটু মিষ্টি এনেছো বা তেলেভাজা?
আর আনবেই বা কোত্থেকে শুনি! করো তো ওই কেরানীর চাকরী তার আবার এতো গুমোর!হুউউ!
বলি,,যদি হতে আমার বাপের মতো বড়ো বাবু তবে না হয় বুঝতাম।
আমার পূর্ব পুরুষরা, জমিদার ছিলেন বুঝলে!
আর তুমি,, তুমি কোন্ নবাব পুত্তুর হে! বিয়ের এতো দিন পর এখন এসেছো আমার কাছে হিসাব চাইতে।
স্বামী= আরে রাখো তোমার জমিদারি বংশ!
এই গল্প আর কতদিন চালাবে শুনি।
অতই যে জমিদার বংশের মেয়ে জমিদার বংশের মেয়ে বলে বেড়াও তা বিয়েতে তোমায় কটা হিরের আংটি দিয়েছিল শুনি তোমার জমিদার বংশ থেকে?
জমিদার বংশের মেয়ে না আরো কিছু!
হুউউ, সেতো আমার পকেট সাফ করার দক্ষতা দেখলেই বোঝা যায় কোন্ বংশের মেয়ে তুমি।
স্ত্রী= ( কাঁদো কাঁদো মুখে) দেখো মুখ সামলে কথা বলবে বলে দিলাম। আমায় তুমি চোর বললে? চোর!
মা ঠিকই বলেছিল বাবাকে,এই হাঁড় হাভাতে, ভিখিরির ঘরে মেয়ের বিয়ে দিওনা। তখন শুনলো না বাবা।
আমার জন্য আসা ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার সব পাত্র ছেড়ে দিয়ে বাবা শেষে কিনা তুলে দিল এই হাঁড় হাভাতের হাতে।তার থেকে গলা টিপে মেরে দিত আমায় তাহলেও শান্তি পেয়ে যেতাম।
থাকবো না আর তোমার বাড়িতে।এই রইলো তোমার সংসার।আমি চললাম বাপের বাড়ি। আজও আমার মায়ের ক্ষমতা আছে আমাকে দু বেলা দুটো খেতে দেবার।
স্বামী= হ্যাঁ যাও, যাও না। ঘরের বাইরে এক পা রেখেছো কি পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে সুরসুর করে এ মুখো হবে।
বলি আজ এতোদিন বাদে সাহস করে কোমর বেঁধে ঝগড়া কি এমনি এমনি করছি!
শ্লা,যখনই কিছু বলতে গেছি , ‘ বাপের বাড়ি চলে যাবো, তোমায় ডিভোর্স দিয়ে, সারাজীবনের খয়রাতি নেবো’ এইসব ভয় দেখিয়েছেন মহারানী।
আজ যাও না,যাও! পা বাড়িয়ে দেখো না ঘরের বাইরে। বাপের বাড়ি তো দূরের কথা তোমার বাপের বাড়ির এলাকায় একবার পা রেখে দেখাও দেখি।( মুচকি হেসে)
স্ত্রী= তোমার পেটে পেটে এতো শয়তানি! আমি ভাবতেও পারছি না,এই লোকটার সাথে এতদিন আমি সংসার করলাম।
স্বামী= ভাবো, ভাবো! লকডাউনে তুমি অনেক সময় পাবে ভাববার।
আমি বরং যাই ছাদে গিয়ে একটু হাওয়া খেয়ে আসি।
আর শোনো,,, ভাবা শেষ হলে, ভালো করে এক কাপ চা আর গরম গরম পেঁয়াজি ভেজে নিয়ে আসো দেখি ছাদে। বৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে।
স্ত্রী= (নিজের পরলোকগত বাবার ফটোর সামনে কান্না ভেজা চোখে দাঁড়িয়ে) দেখলে বাবা দেখলে! সেদিন মায়ের কথা না শুনে আমায় তুমি কোন্ ছেলের হাতে তুলে দিলে। দেখলে!
পরলোকগত বাবা= ( ফটো ফ্রেমের ভিতর থেকে) হুম দেখলাম এবং শুনলাম। কিন্তু খুকি, বিয়ের পর থেকে তুইও তো কিছু কম কথা শোনাসনি জামাই বাবাজি কে।
আর যবে থেকে এই ফটো ফ্রেমে তোর ঘরের দেয়ালে লটকে আছি তবে থেকে দেখছি, বেচারা জামাই এর পকেট কি তুই কম সাফ করেছিস!
প্রতি মাসে মাসে দামি দামি শাড়ি, গয়না, বিউটি পার্লারের খরচা আবার আমার চির কুলাঙ্গার ছেলে, মানে তোর টোটো কম্পানির ম্যানেজার ভাই এর প্রতি মাসে হাত খরচ, এইসব পাস কোত্থেকে শুনি?
ওই হাঁড় হাভাতে জামাইয়ের পকেট কেটেই তো করিস নাকি! আর বেচারা আজ একটু ফোঁস করেছে দেখে এতো রাগ!!
স্ত্রী=( অভিমানী গলায়) না বাবা এতো অপমান আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আমায় তুমি তোমার কাছে নিয়ে যাও। আমি আর বাঁচতে চাই না।
পরলোকগত বাবা= ও কথা মুখেও আনিস না খুকি। এমনিতেই করোনার রুগিতে স্বর্গ পাতাল দুটোই ফুল। যমরাজের কর্মচারীরা দিন রাত কাজ করে,এখন তো তারাও শুনছি নাকি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে।
পরশুদিন তো যমরাজের বৌ হাঁচি কাশি দিয়েছে দেখে ওনাকে নাকি কোয়ারেন্টাইন এ রাখা হয়েছে।
আবার কালকের এক সভায় যমরাজ ঘোষণা করলেন –
” যাহারা স ইচ্ছায় মর্ত্যলোক থেকে যমলোকে আসিবে তাহাদের ধরিয়া করোনা রুগিদের সেবায় নিযুক্ত করা হইবে।”
এরপরেও খুকি তুই আসতে চাস এখানে?
যেখানে যেমন আছিস সেখানেই ভালো আছিস। শুধু এই লকডাউনে রাগটা একটু সংযোত কর মা। তাহলেই দেখবি দিনগুলো সুন্দর ভাবে কেটে যাচ্ছে। দরকার পরলে, ব্যায়াম কর, প্রাণায়াম কর কিন্তু ঝগড়া নয় খুকি, ঝগড়া নয়!
স্ত্রী= কিন্তু আমি কোথায় ঝগড়া শুরু করলাম বাবা? ওই তো, যা তা বললো আমায়।
পরলোকগত বাবা= পুরুষ মানুষ,কাজে কম্মে যেতে পারছে না। দিনরাত ঘরে বসে আছে।তাও আবার আতংকিত হয়ে।মাথা গরম হওয়া টা তো স্বাভাবিক মা।
এই সময় তো তোকেই শক্ত করে তোর সংসার টাকে ধরে রাখতে হবে। তাই মনের রাগ ধুয়ে মুছে, জামাই বাবাজির জন্য চা আর গরম গরম পিঁয়াজি করে নিয়ে যা। দেখবি তোর হাতের পিঁয়াজি খেয়ে জামাই এর রাগও একদম জল হয়ে যাবে।
স্ত্রী= তুমি ঠিকই বলেছ বাবা,এই সময় আমাকেই একটু মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
তবে যাই বাবা,চা টা বসাই!
পরলোকগত বাবা= ওরে খুকি শোন্,, আমার ভাগের পিঁয়াজি থেকে একস্ট্রা তেল বার করে নিস। সকাল থেকেই আমার আবার খুব অম্বল হয়েছে।