(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
****************
শ্রেয়া ও সৌরভ…..
মাস ছয়েক হলো,সমাজ ও আইন’কে সাক্ষী রেখে, কায় মন বাক্যে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছে দুজনে I
বিয়ের আগে,বছর খানেক জমিয়ে প্রেম ও করেছে দুটিতে I
সৌরভ একটি নামী প্রাইভেট সংস্থায় কর্মরত, উপার্জন মন্দ’ না I অপর দিকে শ্রেয়া সম্পূর্ণরূপে, গৃহবধূ I ইচ্ছে ছিল,চাকরি করবে,তবে সৌরভের অসম্মতি কে সম্মান জানিয়েছে I
……………………………………………………………….
এক আন্তরিক মধ্যনিশীথে,উষ্ণ শয্যায় মনের ভাব আদান প্রদান হচ্ছিলো দুজনার…
শ্রেয়া: — “একটা কথা বলার ছিলো..! “
সৌরভ: –“বলো..”
শ্রেয়া: — “জানিনা, হয়তো শুনে পাগল ভাববে, বা হয়তো,মনে মনে হাসবে ! অথবা রাগ ও করতে পারো….বুঝতে পারছিনা গো,বলবো কিনা !”
শ্রেয়ার কপালে একটা জমিয়ে চুম্বন করে সৌরভ বলে উঠলো :
–“কী হয়েছে ? কেউ কিছু বলেছে বাড়িতে?”
শ্রেয়া : “না না ! তেমন কিছু না I”.
সৌরভ: – “তাহলে বলে ফেলো..এভাবে মনে মনে কোনো কথা পুষে রেখোনা লক্ষীটি ..I”
সৌরভের চোখের দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া মুখ খুললো :
–” এই যে খুনসুটি করো আমার সাথে,আমাকে আদর করো সুযোগ পেলেই,
আমার শরীর’টিকে নিয়ে এতো দুষ্টুমি করো,,শুধুই কি চাহিদা মেটানোর জন্য?”
সৌরভ যেন আকাশ থেকে পড়লো !.স্বপ্নেও ভাবেনি কোনোদিন এইধরণের অপ্রস্তুতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে..
কয়েক মুহূর্ত পর,ফিক করে হেসে,শ্রেয়ার কপালে হাত রেখে সে জবাব দিলো:
–“তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”
মেয়েটি সৌরভের হাত সরিয়ে উঠে বসলো বিছানায়…
পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে, সৌরভ উঠে শ্রেয়া’কে আবদ্ধ করলো বাহুবন্ধনে I
শ্রেয়ার খোলা পিঠে আদুরে আঁচড় বসিয়ে সৌরভ ফিসফিসিয়ে বললো:
–“তোমার মন থেকে,তোমার শরীর’টি আলাদা করবো কিভাবে? ,তোমাকে মন থেকে দুর্বল হয়ে ভালোবেসেছি বলেই না,তোমায় কাছে পাওয়ার জন্য বিয়ে করেছি..তোমার দেহ’কে আদর করি,মনের দুর্বলতা ঘটেছে বলেই !…
আর তাছাড়া, তোমার কী ইচ্ছে হয়না আমার আদর খেতে?..
আমাদের গোপন মুহুর্ত’গুলি কী,একতরফা তাহলে? শুধুই কী আমার মন রাখার জন্য….?”
(মিষ্টি’ ভাবে আক্রমন করলো সৌরভ)
শ্রেয়া,সৌরভের ঠোটে,ঠোট রেখে, তাকে চুপ করালো….
তারপর…
চোখ বুজে সৌরভের স্বল্প-লোমশ বুকে মাথা রাখলো মেয়েটি..
ততঃপর, নির্লিপ্ত নির্বস্ত্র যুগল; বন্য হয়ে হারিয়ে গেলো তৃপ্ততার সন্ধানে I
****************************************************
এক সপ্তাহ পর….
অফিসে একটা গুরুগম্ভীর মিটিং সেরে, সৌরভ মোবাইল’ ফোন চেক করে দেখে, বাড়ি থেকে এসেছে দশটা মিস্ড কল…
তৎক্ষনাত ফোন করলো বাড়িতে..
ওপার থেকে সৌরভের বাবার অশ্রুসজল কণ্ঠ শোনা গেল…
“বাবু ! তাড়াতাড়ি বাড়ি আয় ! সর্বনাশ হয়ে গ্যেছে !!”
চিন্তায় ফেটে পড়ল সৌরভ:
–“কী হয়েছে বাবা?”
–“বাড়িতে আগুন !..
বৌমা…! আর,, বৌমার… !”
ফোন ডিস্কনেক্ট হয়ে গেলো তারপর…
অপরিসীম দুশ্চিন্তায় পড়ি মরি করে বাড়ির উদ্দ্যশ্যে রওনা দিলো সৌরভ I
বাড়ির কাছে গিয়ে দেখলো, প্রতিবেশীরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে I
বৃদ্ধ’বাবা তাকে দেখেই,কান্নায় ভেঙে পড়লেন I
সৌরভের কানে এলো,রান্নার গ্যাস-সিলিন্ডারে ত্রূটির কারণে মুহূর্তের মধ্যে ঘটে গিয়েছে অগ্নিকান্ড !..
কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে গেলো সে…
ধিকি’ধিকি ধোঁয়া তখনও খেলা করছিলো রান্নাঘরের জানালার কাঁচের ফাঁক দিয়ে I
আর শ্রেয়া?…
অব্যক্ত উত্তেজনায় সৌরভের শরীর কেঁপে উঠলো..I
— ‘না’ I
শ্রেয়া প্রাণে শেষ হয়নি………….তবে…..
……………………………………………………………….
দু’সপ্তাহ পর নার্সিংহোম থেকে ফিরলো শ্রেয়া বাড়িতে..
চাঁদের মতো মুখের একপাশে অমাবস্যার দীর্ঘ্য নিকষ কদাকার কালো দাগ নিয়ে..সাথে, শারীরিক তথা মানসিক যন্ত্রনা’কে সঙ্গী করে I
****************************************************
সারাদিন আধখোলা জানালা’টার ধারে বসে থাকে বিবর্ণ মেয়েটি ; বাইরে জুল’জুল করে তাকিয়ে কি যেন খোঁজার চেষ্টা করে শ্রেয়া I
মুখে ওড়না ঢেকে রাখে, লুকিয়ে রাখে নিজেকে I
তবে সৌরভ সময় পেলেই,শ্রেয়া’র কাছে আসে,তার সাথে মজার গপ্পো করে,তার পছন্দের হোম ডেলিভারি আনিয়ে তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করে প্রানপন I
দিন যায়, রাত্রি ঘনায় ..
শ্রেয়ার আঁধার মুখে আলোক হাসি আর ফোটে কই?
****************************************************
রাত গভীর ,…….
বিছানায় পাশ ফিরে আধখোলা চোখে, মুখে ওড়না ঢেকে গুটিশুটি শুয়ে আছে শ্রেয়া I
জানালার ধারে দাড়িয়ে,ধূমের সুখ’টানে নিজেকে ভাসিয়ে রেখেছে সৌরভ I
‘জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশের বুকে, পেজা’পেজা মেঘে ঢাকা চাঁদের ফালি’টা,কি অপরূপ দেখাচ্ছে আজ….I’
মনে’মনে কি যেন সব ভাবতে থাকে সৌরভ:
-“চাঁদের মুখে কলঙ্ক ,তবুও সে কত মধুর,কত নির্মল ! সব্বাই তাকে স্পর্শ করতে চায়, কাছে পেতে চায়, তবুও পায়না !,কেউ কখনও ভেবে দেখে কি; চাঁদ কি চায়?”
হঠাৎ,শ্রেয়ার নরম আবেগী নম্র কণ্ঠস্বরে সম্বিৎ ফিরলো সৌরভের…I
—“এদিকে এসো !, ভয় করছে আমার !,”
শ্রেয়ার পাশে গিয়ে বসলো তার মনের মানুষ I
ওড়নার ফাঁকে, বহুদিন পর শ্রেয়ার ঠোটে আজ কমনীয় হাসির রেখা স্পষ্ট হয়েছে,,তার শরীরী ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছে ভালোবাসার আবেদন I
কাছে এলো সৌরভ,..
একজোড়া নরম হাত সৌরভের বুকে পিঠে স্পর্শ করছিলো তৎপর ভাবে..
শ্রেয়ার নিটোল বুকে,মাথা রাখলো সে,,
দুজনে দুজনার ঘ্রান নিচ্ছিল সমস্ত উৎকণ্ঠা ভুলে I
শ্রেয়ার নাইটি উঠলো I ..
সৌরভের হাত স্পর্শ করলো,শ্রেয়ার স্বল্পমেদি কোমর,ও নিম্নাঙ্গ I
আগামী আদরে ডুবে যাওয়ার উত্বেজনায় বিভোর ছিল শ্রেয়া …
সৌরভের অশান্ত ঠোট বসলো,শ্রেয়ার গালে..
স্বাভাবিক আঙ্গিকে,শ্রেয়ার মুখে ঢাকা ওড়না খসে পড়লো I
–‘উফফ ! কি কুৎসিত ! অপ্রীতিকর একটি মানুষ !’
‘ডিম্ লাইটের স্বল্প আলোয়, শ্রেয়া কে যেন চেনাই যাচ্ছেনা !’
অস্বস্তিকর ভাবে ,দূরে ঠেলে দিলো সৌরভ অসহায় মেয়েটিকে …..I
শ্রেয়ার চোখে টল’টল করছে অশ্রু ..
যাতনার অনল’উত্তাপে জ্বলে পুড়ে মরছে সে I
সমস্ত কিছু তালগোল পাকিয়ে গেলো সৌরভের I
অপরাধ বোধে নিজেকে শুধরে নিয়ে আরো একবার স্পর্শ করতে গেলো সে শ্রেয়া’কে …I
কঠোর অসম্মতি প্রকাশ করলো তার স্ত্রী..
ভাষাহীন হয়ে চুপটি করে পাশে শুয়ে পড়লো সৌরভ..সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো সে I
ভোরের দিকে কেমন যেন একটা অচেনা শব্দ কানে এসেছিলো বটে …
কিন্তু তাও চোখদুটো যেন খুলতেই চাইছিলোনা I
……………………………………………………………….
সকাল হয়েছে I
বন্ধ চোখে ভাবছে সৌরভ, কিভাবে শ্রেয়ার মুখোমুখি হবে সে?,
খোলা জানালা দিয়ে একমুঠো অবাঞ্ছিত রোদ, ঠিকরে পড়েছে ঘরটাতে I
চোখ টিপতে-টিপতে উঠে পড়লো সৌরভ..
আচমকা কয়েকটি দৃশ্যপটে স্তম্ভিত হয়ে গেলো সে . .গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো তার.!
মেরুদন্ড দিয়ে বয়ে যাচ্ছিলো হিমশীতল আক্রমণাত্মক প্রবাহ..
মেঝেতে ক্লান্ত শুয়ে আছে বড়ো কেদারা’খানি..
উপরে সিলিং-পাখার সাথে ঝুলে রয়েছে,শ্রেয়ার নিথর দেহ.!
শব্দহীন রোদনে,ভেঙে পড়লো মানুষটি ..
****************************************************
টানটান শক্ত হয়ে উঠে দাড়ালো সৌরভ I
এগিয়ে গেলো সে … ,
দূরের গোল’টেবিলে রাখা কর্ডলেস ফোনের
কি-প্যাডে স্পর্শিত হলো তার হাতের আঙ্গুল..
রিং হলো ওপারে ….
–” হ্যালো ! মৈনাক স্ট্রিট থানা?”
— “ইয়েস! কে বলছেন?”
–“আমি একুশের-বি, রায় কলোনির বাড়ি থেকে বলছি !”
–“বলুন”
“– বাড়িতে গৃহবধূ খুন হয়েছে !,
আমি ওনার হাসব্যান্ড বলছি,,
আর…..
খুন’টা আমি’ই করেছি !”
****************************************************
ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর নিয়মিত ভিজিট করুন বাংলার সবচেয়ে বড় স্টোরি টেলিং ওয়েবসাইট ….
কারণ ,আমরা গল্প লিখি না
জীবনের গল্প বলি ….
আরও পড়ুন ,
বেশ কিছু বছর পর – Valobashar Golpo