–“থ্যাঙ্কস নীলিমা ! আজ তুই না থাকলে আমার বেরোনোই হতোনা,বেশ কিছুদিন হলো মা সন্দেহ করছে আমার ব্যাপারটা নিয়ে “
সায়নীর কথা শুনে মিটি’মিটি হাসতে থাকে নীলিমা।
কাছের বান্ধবী সায়নীর কাঁধে হাত রেখে নীলিমা মিষ্টি স্বরে বললো :
–“তুই একদম চিন্তা করিসনা,আমি তো আছি।”
নীল পাড়ের কাঁচা হলুদ শাড়িতে সায়নী’কে আজ পাখনাবিহীন পরীর মতোই অপরূপ লাগছে।
পরিপাটি করে বাঁধা ঘন কেশের সাজ,
টানা টানা দীঘল কাজলা চোখ,ঠোঁটে মানানসই হাল্কা লিপস্টিক,স্বল্পমেদি গঠন, যেন চোখ ফেরানো দায়।
–“তোকে আজ কি মিষ্টি লাগছে রে সায়নী ! অমিত’দা দেখলেই পুরো ফ্ল্যাট হয়ে যাবে “
–“ধ্যাৎ ! কি যে বলিস !”
শরমের শীতচাদর নিটোল গায়ে জড়িয়ে,লাল হয়ে যাচ্ছিলো সায়নীর মনমোহিনী মুখ’খানি।
****************************************************
পার্কের ধার ঘেঁষে পাকা রাস্তাটা ধরে মিনিট দশেক হাঁটার পর,সায়নীর হ্যান্ড পার্সে রাখা মুঠোফোন’খানি গুনগুনিয়ে উঠলো।
পাশ থেকে নীলিমা গালভরা হাসিতে বলে উঠলো:
–“তোর হিরো ফোন করেছে রে সই ! “
গালে টোল ধরানো হাসির ডালি সাজিয়ে চটপট ফোনটা রিসিভ করলো সায়নী ।
হাতে গোনা কয়েকটি শব্দের আদান প্রদান হলো।
এগোতো লাগলো দুই বান্ধবী…
আজ মা’সরস্বতীর পুষ্পাঞ্জলি পর্ব সেরে, অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে নীলিমা,সায়নীর মাকে বুঝিয়ে,বেশ কিছুক্ষনের জন্য তাকে বাইরে আনার অনুমতি হাতিয়ে এনেছে, যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে যাতে,নির্বিঘ্নে আজ সে অমিতের সাথে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে পারে।
***************************************************
রাস্তার বাঁকে একটি চায়ের দোকানের পাশে ধীর গতিতে এসে থামলো একটি মোটর’বাইক।
চোখে সানগ্লাস,পরনে নীল শার্ট আর অফ হোয়াইট জিন্সে সুশোভিত চালকের আসনে সায়নীর মনের মানুষ,অমিত।
অদূরে অমিত’কে দেখা মাত্রই গগনচুম্বী আনন্দে, দ্রুত পদক্ষেপে এগোতে লাগলো সায়নী।
মৃদু ইশারা করে তাকে একটু থামালো নীলিমা… তারপর খুব নিপুণতার সাথে চটপট সে সায়নীর পিঠের দিকে বেশ কিছুটা বেরিয়ে আসা দৃশ্যমান অন্তর্বাসের স্ট্র্যাপ’টা সমন্বিত করে দিলো।
স্বস্তির আবেশ ফুটলো সায়নীর মুখে.
নীলিমার উদ্দেশ্যে তৎপরতার সাথে সে বলে উঠলো :
-“শোন না! তুই কিন্তু মোবাইলে যোগাযোগ করিস! ,তোর কথা অনুযায়ী ও আমাকে এখানেই ঠিক পাঁচটায় ড্রপ করবে,চলে আসিস কিন্তু,নাতো ভীষণ চাপ হয়ে যাবে’রে!”
–“ওরে পাগলী কিছু ভাবিস’না, চুটিয়ে প্রেম কর ! তোকে ঠিক সময় আমি নিয়ে কাকিমার হাতে তুলে দেবো, তারপর’ই হবে ডিউটি শেষ, কাকিমা জানবে তুই আমার সাথেই কলেজে ছিলি “
আন্তরিক স্বস্তি’তে নীলিমা’কে বুকে জড়িয়ে নিলো সায়নী।
****************************************************
গল্পের শেষ পটভূমি ………….
অমিতের কোমর জড়িয়ে বাইকে, নির্মল দৃষ্টিতে বসে আছে সায়নী।
–“হায় ! কেমন আছো নীলিমা ?”
অমিতের স্বাভাবিক প্রশ্নের উত্তরটা প্রকাশ করা বেশ কষ্টকর ছিল সাধারণ শ্যামবর্ণা মেয়ে নীলিমার পক্ষে।
সে স্বপ্নেও ভাবেনি টানটান সুপুরুষ অমিত,দু’মাস আগে যেচে তার সাথে বন্ধুত্ব করেছিল,শুধুমাত্র তার কাছের বান্ধবী সায়নীকে হস্তগত করার জন্য।
দমবন্ধ করা যন্ত্রনা পাঁজরে চেপে, মেকি হাসির পসড়া সাজিয়ে কালো মেয়ে নীলিমা জবাব দিলো:
–“তোমরা পাশে আছো,ভালো না থেকে উপায় আছে ?”
ধোঁয়া উড়িয়ে প্রেমিক যুগল বেরিয়ে পড়লো হাওয়ার গতিতে,বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স দিবসে প্রেমের জোয়ারে গা’ভাসাতে।
****************************************************
নিজেকে যথাসাধ্য ভাবে সামলিয়ে,ঝাপসা চোখে দাঁড়িয়ে ছিল একা নীলিমা।
সে এইকদিনে বেশ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে ।
চোখের জল’কে কোনোভাবে গড়াতে না দিয়ে, অন্য এক গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো সে:
-‘আপাতত ঘড়ি বলছে ‘ঠিক দুপুড় পৌনে’একটা। এবার প্রশ্ন: বিকেল পাঁচ’টা অবধি কিভাবে সময় কাটাবে সে একাকী?”
প্রত্যেকটা সফল প্রেমের উন্মাদনার নেপথ্যে থাকে দলাপাকানো মন’কেমন করা বেদনা, কজন’ই বা তার খবর রাখে?
****************************************************