একজন একটু ঠেস দিয়ে বলেছিলো যে আপনাদের সময়ে ভ্যালেন্টাইন ডে ছিলোনা বলে আপনার বেশ ঈর্ষা হচ্ছে। সবিনয়ে জানাই আজ্ঞে না। এখনতো বছরে মোটে একদিন হয় ভ্যালেন্টাইন ডে , আমাদের সময়ে বেশ ঘন ঘন হতো। তাহলে হিসাব দিয়ে দি।
– সরস্বতী পুজোর ভোরে ফুল চুরি করতে গেছি। সে বারান্দায় বসে ফুলের পাহারা দিচ্ছে। আমাকে ফুল চুরি করতে দেখেও বাবাকে ডাকছে না। উল্টে আঙ্গুল দিয়ে দুরের বড় লাল গোলাপ দেখিয়ে দিলো। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– তার দিদির বিয়েতে কোমরে গামছা বেঁধে রসগোল্লা সার্ভ করছি , সে আমার পিছন পিছন সন্দেশ দিয়ে যাচ্ছে। ভাবুন দেখি ৩০০ লোকের নেমন্তন্ন বাড়ির লোক খাইয়ে কি মজা পেয়েছি । সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– ওর ঠাকুমার বাতের ওষুধ আনার জন্য আমায় নিয়ে গেছে কবিরাজের বাড়ি। কবিরাজ ওষুধের মশলা বানাচ্ছেন খল নুড়িতে। আমি বারান্দায় বসে ওর সঙ্গে গল্প করছি । সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– পাড়ার রবীন্দ্র জয়ন্তীতে ওর গান শুনতে শুনতে যত জোরে হাত তালি দিয়েছি , তত চওড়া হয়েছিল ওর হাসি। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– ভর সন্ধ্যায় অষ্টমীর রাত্রে , ওর সঙ্গে রিক্সায় বসে বেপাড়ায় ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখেছি। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– একাডেমিতে নাটক দেখতে গিয়ে , যত না নাটক দেখেছি তার চেয়ে বেশি , সামনের চায়ের দোকানে ওর সঙ্গে গল্প করে কাটিয়েছি। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– ২৫ বৈশাখের সকাল থেকে আমরা দুজন সারা দুপুর কাটিয়েছিলাম রবীন্দ্রসদনের মাঠে। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– ওর সঙ্গে অনাদির মোগলাই , গোলবাড়ির কষা মাংশ , সাবিরের রেজালা আর সূর্য্য সেন স্ট্রিটের তেলেভাজা খাওয়া। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– সিনেমা হলের সাইডের দুটো টিকিট চেয়ে কাউন্টারের লোকটার মুখে শোনা ” চিরকাল তো সিনেমা সাইডে বসে দেখলে।, একদিন মাঝখানে বসে দেখো কেমন লাগে”। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– পর্দা ফেলা রেস্তোরার কেবিনে বসে , বাইরে খাবার হাতে আসা বেয়ারার গলাখাঁকারি শুনে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– কফি হাউসের চা পাকোড়া খেতে খেতে আঁতলামোর আলোচনার নামে চোখে চোখ রেখে সময় কাটানো। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
– নবমীর রাতে ওদের বাড়িতে খেতে বসে , টেবিলের তলায় চিমটি কাটা। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে।
আর কত হিসাব দেবো। খালি মনে পড়ে
“এক মুঠো পৃথিবীর গাঢ় মাটির মত তোমাকে ভালবাসি।
তোমার সবুজ, উদার প্রান্তর যেন এক তামাম গ্রহ,
আকাশ-খসা কোনো নক্ষত্রের প্রয়োজন তাই হয় না আমার,
আমার কাছে তুমি যে নিয়ত বেড়ে-চলা নীল বিশ্ব — অসীম, রহস্যময়।”