আপনি ইন্টারনেটে Bangla Golpo কিংবা Premer Golpo খুঁজছেন ? হ্যা , আমরা অনেক সময় গল্প পড়তে ইন্টারনেটে সার্চ করি , কারণ সবসময় গল্পের বইয়ের কালেকশন আমাদের হাতের কাছে থাকে না । তাই আপনার জন্য আমরা নিয়ে এসেছি সেরা কিছু গল্পের কালেকশন 10+ Best Bengali Story এই গল্পগুলি এককভাবে পোস্ট করা হয়েছে , যাতে আপনার পড়তে কোন অসুবিধা না হয় ।
10+ Best Bangla Golpo
দুই সান্টা মুখোমুখি
সেদিন রাতে উঠোনে বাবার গলা শুনে, পড়ার বইটা রেখে ঘর থেকে উঠে গেল ভারতী।।
-এই তো মেয়ে এসে গেছে।দেখ তো মা, এটা কেমন। কিনলাম মাত্র কুড়ি টাকা দিয়ে।
তপন কথাটা বলে মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে যে জিনিসটা দিল। সেটা একটা পাতলা গেঞ্জির কাপড়ের গোল করে সেলাই করা ব্যান্ডের মতো।
-ওটা দিয়ে আর যাই হোক ঠান্ডা আটকাবে না।এর চেয়ে তো একটা টুপি কিনতে পারতে,একটু টাকা বেশি খরচ করে।ভারতীর মা বলতে লাগলো।
-টুপির কতো দাম জানো। আমার মতো অটোওয়ালার এই ঠিক আছে।।ভোরের দিকে একটু কানে হাওয়া লাগে তাই।
-এভাবেই তো ঠান্ডা লেগে যাবে। নিজের জন্য তো একটা সুতোও কেনোনা। সেই কবেকার সোয়েটার টা,ছিঁড়ে গেছে তবু ওই পড়ে যাচ্ছো।
-ধুর ধুর। কি হবে কিনে। সারাদিন তো অটো চালিয়েই কেটে যায়। এইটা এখনো বছর দুয়েক যাবে। বছরে তো মাত্র এই দু’মাস। সামনে মেয়েটার মাধ্যমিক,ওকে পড়ানোর জন্য টাকা জমাতে হবেনা??আমার এই ভালো। সস্তায় পুষ্টিকর।কিরে মা ভালো হয়নি??
এতক্ষণ ভারতী মা-বাবার কথা শুনছিলো হাতে করে নেড়ে চেড়ে জিনিসটা দেখে এবার মাথা নাড়লো। মা ও আর কথা বাড়ালো না, গজগজ করতে করতে রান্না করতে চলে গেল।
বছর পনেরোর ভারতী মুখে কিছু বলল না কারণ সে বেশ বুঝে গেছে,তাদের সংসারে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি। নিম্নবিত্ত পরিবার তাদের কোনরকমে দিন চলে, তবু বাবা তার কোন অভাব রাখেনি। তার স্কুলের পেন, খাতা যখন যা লেগেছে সব এনে হাজির করেছে। সেটা হাজির করতে গিয়ে হয়তো শুধু নিজের শখ নয়, নিজের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে পর্যন্ত হাসিমুখে ত্যাগ করেছে। কদিন পরেই বড়দিন, তাদের ছোট্ট শহর জুড়েও উৎসবের মেজাজ। সেটা ভাবতেই মনে হলো, তাদের সংসারে, বাবাই হলো আসল স্যান্টাক্লজ যে হাসিমুখে সবার জন্য করে যাচ্ছে, সারাবছর সবাইকে শুধু দিয়ে যাচ্ছে। এই বাবাদের জন্যেও তো কখনো কখনো স্যান্টাক্লজ কিছু দিতে পারে, মনে হলো ভারতীর।
পরের দিন স্কুলে ওয়ার্ক এডুকেশন ক্লাসে, স্কুলের কাজ হিসেবে করা, ভারতীর বোনা মোজা গুলো দেখে ওর বন্ধু সীমা বলে উঠলো-
-ও মা তুই কি সুন্দর মোজা বানিয়েছিস, আমাকেও প্লিজ বুনে দে না। সেলাই খাতাতে জমা করতে হবে।
সীমার বাবার উলের ব্যবসা সেটা জেনেই, ভারতী একটু ভেবে বলল
-আমি বুনে দেব কিন্তু তার বদলে আমাকে চার গোলা আরো উল এনে দিতে পারবি?? আমার কাছে পয়সা থাকলে আমি কিনে নিতাম। কিন্তু..
-আরে এআর এমন কি ব্যাপার আমি কালকেই তোকে এনে দেবো।
আনন্দে সীমাকে জড়িয়ে ধরে ভারতী বলল ‘তুই আমার আর একটা সান্তা।’
রাত জেগে, সীমার দেওয়া উলগুলো দিয়ে নিজে হাতে বুনে তৈরি করল বাবার জন্য একটা নতুন কান ঢাকা টুপি।।
ভারতী ভেবে রেখেছিল, বড়দিনের দিন বাবাকে ওই টুপিটা উপহার দেবে। আসলে তো স্যান্টাক্লজ লুকিয়ে থাকে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই। কিন্তু সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখল, বাবা তার আগে বেরিয়ে গেছে অটো চালাতে। সারাদিন ধরে অপেক্ষা করতে লাগল কিশোরী ভারতী। অবশেষে রাতে প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ বাবা ফিরলো বাড়িতে।
তাকে দেখেই বাবার কাছে ছুটে হাসিমুখে এগিয়ে গেল ভারতী। তপন তাড়াতাড়ি ঝোলার মধ্যে থেকে একটা কেক বার করে মেয়ের হাতে দিয়ে বলল-
-আমি জানতাম তুই ঘুমাবি না। বড়দিনের দিন,কেক না খেলে চলে, বল।। এই নে মা,একটু দেরি হয়ে গেল।।
একহাতে কেকটা নিয়ে হাসিমুখে বাবার হাতে ধরিয়ে দিলো নতুন বোনা সবুজ-সাদা টুপিটা।
-এটা তোমার জন্য, পড়ে দেখো কেমন হয়েছে?? আমি নিজে হাতে বানিয়েছি। এটা পরলে, আর তোমার ঠাণ্ডা লাগবে না বাবা।
তপন আর কোন কথা বলতে পারল না, এ যেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া। খুব শীতের মধ্যেও ভালোবাসার উষ্ণতায় তার হৃদয় ভরে উঠলো। এই পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে, এই প্রথম বড়দিনে কেউ তাকে উপহার দিল। বুকে জড়িয়ে ধরল তার জীবনের প্রথম সান্টা কে।
নেকলেস চোর
অনিলবাবুর ছোট্ট মেয়ে পায়েল .
তার জন্মদিন আজ .
সকাল থেকেই ব্যস্ত সস্ত্রীক অনিলবাবু .
ক্যাটারার্স, ডেকোরেটার্স,নিমন্ত্রিতদের আপ্যায়নসূচক প্রস্তুতি’পর্ব ; সবকিছু নিয়ে মেতে রয়েছে ছোট্ট মিষ্টি পরিবার’টি .
****************************************************
দুপুর গড়িয়েছে,এই কিছুক্ষন আগে….
আস্তে আস্তে ভিড় জমতে শুরু করেছে আমন্ত্রিত’দের.
পায়েল’সোনা কে একদম পরীর মতো দেখাচ্ছে ..
ছোট নিষ্পাপ কাজলমাখা চোখ,ঠোঁটে মিষ্টি হাসি,পিঙ্ক লং ফ্রকের সাথে শোভা পাচ্ছিলো মাথার ছোট মুকুট’খানি.
কচি পায়ে নুপুর পড়ে, দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছিল সে সারা বাড়ি ..
কেক কাটার পর্ব শুরু হওয়ার আগে অনিল’বাবু আর তার স্ত্রী,পায়েল’কে আদর করে তার গলায় একটি সোনার নেকলেস পড়িয়ে দিলেন .
.. অনেক দিনের পরিকল্পনা ও প্ল্যান মাফিক একটু একটু করে অর্থ সঞ্চয় করে আজকের দিনটা উপভোগ করছেন অনিলবাবু.
*********************
******************************
কেক কাটার পর্ব মিটলো …
খাওয়া’দাওয়ার পরবর্তী অধ্যায়’ও শুরু হলো…
অতিথিবৃন্দ মেতে ছিলেন পেটপুজোতে.
দম্পতি সবার কাছে গিয়ে ভাব বিনিময় করছিলেন.
পাড়া প্রতিবেশী,বন্ধু ,ও আত্মীয় স্বজনের হৈ’হুল্লোড়ে যেন গমগম করছিলো গোটা বাড়ি.
এমন সময় ঘটলো এক,অপ্রত্যাশিত মন ভারাক্রান্ত করা ঘটনা.
ব্যাপারটা প্রথম আবিষ্কার করলেন অনিলবাবুর স্ত্রী.
বলা নেই, কওয়া নেই …পায়েলের গলার হার’খানি কিনা উধাও !!
–“সেকি ! নিশ্চয় কোথাও পড়ে গিয়েছে “
ভাবনা’চিন্তা করে এদিক’সেদিক খুঁজতে লাগলেন অনিলবাবু . কিন্তু মেয়ের মা,অন্য কিছু ভেবে নিয়ে অনিল’বাবু কে বোঝানোর চেষ্টা করলেন..
স্ত্রীর কথার খেই ধরে নিয়ে, ভ্রু কুঁচকিয়ে ভাবলেন অনিলবাবু ..
–” চুরি ?” “কে চুরি করবে এভাবে একপাল লোকের মধ্যে?কার’ই বা সাহস হবে? “
” নানা ! হতে পারেনা !….”
পরক্ষনেই ভাবলেন -‘ ” অসম্ভবের’ই বা কি ? দিনকাল ভালো নয়, লোভে মত্য হয়ে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে ..তাই বলে এভাবে নিমন্ত্রিত হয়ে এসে হার চুরি করবে? “
কিছুতেই তার বিশ্বাস হচ্ছিলোনা ব্যাপার’টি …অনিল বাবু আর তার স্ত্রী অনেক তত্ত্বতালাশ করেও কোনো কিনারা করতে পারলেন না.
****************************************************
এমন সময় নিমন্ত্রিতদের মধ্যে থেকে এক’মহাশয় যুক্তি দিলেন অনিলবাবু’কে :
–“অনিলদা ! আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে থেকেই কেউ এই কুকর্ম’টি করেছে..প্রত্যেকের তল্লাশি নেওয়া হোক.
অনিলবাবু কিছুতেই মাননীয় অতিথিদের এইরূপ হেনস্থার পক্ষ নিলেন’না, কিন্তু শেষমেশ গুরুভাগ অতিথিবৃন্দের সমর্থনে বাধ্য হলেন.
…ডাকা হলো উপস্থিত লোকজনদের.
শুরু হলো সার্চ প্যারেড.
রীতিমতো লাইনে দাড়’করিয়ে প্রত্যেকের তল্লাশি পর্ব চলছিল
.***************************************************
না ! পাওয়া গেলোনা হার.
একদম লাইনের শেষের দিকে ছিলেন এক বয়স্ক প্রতিবেশী ‘ দিনু কাকা’ .. নাম ‘দীনবন্ধু সরকার’. সবাই ওনাকে দীনুকাকা বলেই ডাকে..বয়স সত্তর পেরিয়েছে . .
দিনুকাকা’কেও সার্চ করতে অনিলবাবুর এক আত্মীয় এগিয়ে এলেন.
কিন্তু সব্বাইকে অবাক করে উনি এই তল্লাশির বিরোধিতা করলেন .
একপ্রকার চিৎকার করেই বললেন’ :.
–” না না ! আমি আমার তল্লাশি নিতে দেবোনা, কারণ আমি চুরি করিনি “
পাশ থেকে অন্যএক ব্যক্তি,বয়ষ্ক মানুষটির উদ্দ্যেশ্যে সবিনয় বললেন :
–” চুরি যখন করেননি তাহলে আপনার ভয় পাওয়ার,বা রাগ করার কারণ তো নেই, দয়া করে সহযোগিতা করুন “
এই কথা শুনে দিনু’কাকা যেন আরও চোটে গেলেন..রাগে ফুসতে ফুঁসতে কাঁপা গলায় বললেন :
–” অনিল আমার ছেলের মতো,ও আমাকে অনেক শ্রদ্ধ্যা করে, ও নিশ্চয় আমার কথাই শুনবে. ..অনিল ! তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করো বাবা ? “
অনিল’বাবু তৎক্ষণাৎ সার্চ করানো বন্ধ করে দিলেন..
অনিলবাবুর স্ত্রী তো রেগে টং!
উনি আলাদা করে ডেকে অনিলবাবু কে বললেন
–” ওনার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, নেকলেস’টা উনি’ই নিয়েছেন; তাছাড়া আমি খেয়াল করেছি, ওনার ঢোলা ফতুয়ার পকেটে হাত ঢুকিয়ে বার’বার কিছু একটা স্পর্শ করার চেষ্টা করছেন ..
নির্ঘাত উনি’ই নিয়েছেন,এভাবে এতো বড়ো অন্যায় কে প্রশ্রয় দিওনা..এযে !পুরো চোখের সামনে ডাকাতি !”
****************************************************
অনিলবাবু তার স্ত্রী’কে বুঝিয়ে বললেন :
“এই আনন্দের দিনে উনি চান না কোনো ধিক্কারজনক ঘটনা সব কিছু মাটি করে দিক, তাছাড়া নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনে এভাবে কাউকে অপমানিত করাটাও সভ্য দেখায়না..তবে তিনি অন্যভাবে তার কিনারা করবেন..”
অস্বাভাবিক পরিবেশটি লক্ষ করে ছোট্ট পায়েল ভয়ে চুপটি করে এক কোনে বসে ছিল..
ব্যাপারটা বুঝে সাথে’সাথেই অনিলবাবু সবাইকে করজোরে অনুরোধ করে শান্ত করলেন আর বলে দিলেন বিষয়টি নিয়ে না ভাবতে ..
****************************************************
অনুষ্ঠান’পর্ব মিটলো….
বিদায় নিলেন লোকজন.
অনিলবাবু গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন …
–” লোভ ও দরিদ্রতা মানুষকে কোথায় নামাতে পারে! ..এক প্রবীণ মানুষ,যাকে তিনি এতো শ্রদ্ধা করতেন, শেষমেশ ওনার মনে এই ছিল ? ” তাহলে,ওনার প্রতি দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের’কি কোনো মূলই ছিলোনা? “
হতাশ হয়ে বিশ্রাম নেওয়ার অভিপ্রায়ে বেডরুমে এলেন জামা পাল্টাতে;
————————————————————-
–একি ! ওয়ার্ডড্রোবের নিচে,ছোট চেয়ারের পায়ার কোনে কি যেন একটা চকচক করছে !
কাছে এসে, ঝুকে দেখলেন অনিল’বাবু :
“আরে ! এই তো নেকলেস’টা ! এখানে এলো কি ভাবে? নিশ্চয় পায়েল খেলতে খেলতে কোনো ভাবে এখানে এসে হারিয়ে ফেলেছে …”
-হারটি তুলে ভালো করে দেখলেন, হুকের দিকটা কাটা ..তাড়াহুড়োতে সেদিন ভালো করে না দেখেই স্থানীয় সেঁকড়ার কাছ থেকে কিনেছিলেন এটি..হয়তো প্রথম থেকেই হুক’টি আধকাটা অবস্থায় ছিল..খেয়াল করা হয়নি.
যাই হোক …যেন, প্রাণ ফিরে পেলেন অনিলবাবু .
দেরি না করেই, স্ত্রী’কে ডাকলেন ..
হারটি দেখেই আল্লাদে আটখানা হয়ে গেলেন অনিলবাবুর স্ত্রী.. তার সাথে নিজের উপর লজ্জাবোধ হলো তার .. বললেন:
–” শোনো ! সব্বাইকে কিন্তু জানিয়ে দিও যে ,হারটি পাওয়া গেছে.. তানাহলে প্রত্যেকেই ওই বুড়ো মানুষটিকে অযথা ভুল বুঝবে ..,
জানো ! ..উনি কি সুন্দর একটা পুতুল উপহার দিয়েছেন আমাদের মেয়ে’কে ! “
কথাটা শোনা মাত্রই অনিলবাবুর মনটা আরও চঞ্চল হয়ে উঠলো ..
তার মস্তিষ্কে নুতন করে অন্য চিন্তা ভিড় করে এলো…
” যদি তাই হবে,তাহলে দিনু’কাকা কেনোই বা ওভাবে তখন তল্লাশি নিতে বাধা দিলেন ? ” সব যেন নুতন করে তালগোল পাকিয়ে গেলো ..
জামা পাল্টিয়ে বেরিয়ে পড়লেন…
****************************************************
বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা রাস্তার উল্টো দিকে, একটি পান’দোকানের গুমটি, ওটাকে বাম’দিকে রেখে কাঁচাপাকা রাস্তার দ্বিতীয় বাড়িটাই দীনুকাকার …
দীর্ঘ্যদিনের ঋদ্ধতা তাদের সাথে.
অনিলবাবুর স্বর্গীয় পিতার এক সময়ের বন্ধু ছিলেন এই দিনুকাকা.. এক’ই পাড়ায় থাকতেন..
ওনার বাড়িতে থাকেন ওনার স্ত্রী মানে কাকিমা , আর পায়েলের সমবয়সী বাপ’মা হারা এক নাতনি – ‘তিন্নি’..
আজ ওনাকে কেমন যেন বিষণ্য দেখাচ্ছিল ,
ওনার স্ত্রী,অথবা তিন্নি,কাউকেই আজ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি ..
নেকলেসের ব্যাপারটা নিয়ে এতটাই উনি বিচলিত ছিলেন যে,তাদের খোঁজখবর’ও নেওয়া হয়নি.
****************************************************
ঠক ঠক ঠক !! কড়া নাড়লেন অনিলবাবু..
কিছুক্ষন পরে দরজা খুললো ..
দীনুকাকাই দরজা খুললেন ..
অপ্রত্যাশিত ভাবে অনিলবাবু’কে দেখে যেন চমকে উঠলেন দিনুকাকা ..
বললেন..
–“কোনো সমস্যা হয়েছে বাবা? “
অনিলবাবু একগাল হেসে বললেন :
–” সমস্যা ছাড়া কি আপনার বাড়িতে আস্তে বাধা?” “
দীনুকাকা আনন্দ সহকারে ভেতরে ডাকলেন ..
অগোছালো ঘরে কোথায় যে বসতে দেবেন অনিলবাবু কে, বৃদ্ধ’মানুষটি বুঝে উঠতে পারছিলেন না..
অবস্থা বুঝে অনিলবাবু নিজেই একটা চৌকি টেনে ঘরের এক কোনে বসে পড়লেন.
তারপর জামার পকেট থেকে সেই নেকলেস’টি বের করে,দিনুকাকার সামনে মেলে ধরে বললেন- —“দেখুন ! হার’টি পাওয়া গেছে.. ঘরের মধ্যেই ছিল.”
বুড়ো’মানুষটির মুখে এক অনাবিল আনন্দ ফুটে উঠলো.. প্রাণ ভরা হাসিতে যেন উপছে পড়ছিলো স্বস্তির আবেশ.
শুরু হলো এক অবাক করা কথোপকথন ..
****************************************************
অনিলবাবু শান্ত স্বরে বললেন :
— “এবার বলুন ! তখন কেন অমন আচরণ করলেন শুধু শুধু? সবাই তো আপনাকেই সন্দেহ করলো অযথা..আমাকে নির্ভয়ে সব কিছু বলুন..কথা দিচ্ছি সমস্ত কথা আমাদের মধ্যেই থাকবে.”
দীনুকাকার শুকনো চোখ’দুটি ছল’ছল করে উঠলো..
উনি বললেন:
— ” তোমার কাকিমার ভীষণ জ্বর , পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছে..নাতনিটাও যেতে চাইলোনা ঠাকুমা’কে ছেড়ে ,এদিকে ঘরে কোনো দানাপানি নেই যে ,ওদেরকে খেতে দেবো..
তাই…একাই চলে গেলাম তোমার ওখানে, , তুমি বড় মুখ করে আমাদের ডেকেছো ! গরিব কাকা কে সম্মান দিয়েছো..কথা রাখা উচিত ..চলেও গেলাম..”
“কিন্তু খেতে বসে বার’বার বাড়িতে ওই দুজনার কথা মনে পড়ছিলো জানো !কি খাবে আমার বুড়ি আর পুচকেটা ? “
অনিলবাবু নিজের চোখের জল আর ধরে রাখতে পারছিলেন না.
নিজেকে অনেক কষ্টে সামলালেন …বললেন
–“তারপর? “
হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে দিনুকাকা বললেন :
–” তারপর আর কি বাবা ? তোমরা বড়োলোক, কত লোকজন তোমাদের বাড়িতে ! বিবেক’বুদ্ধি হারিয়ে নাতনি’টার জন্য একটু খাবার চুরি করে এনেছিলাম গো বাবা !!!”
অনিলবাবু মাথা নিচু করে বসে রইলেন কিছুক্ষন …
সীমাহীন কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছিলো. মনে মনে ধিক্কার জানাচ্ছিলেন নিজেদের যুক্তিতক্কের উপর.
“সত্যি তো ! তাদের মতো সমাজের তথাকথিত ভদ্র-সভ্য মানুষেরা আর কি’ই বা ভাবতে পারেন?.. কি করবে ? কি ভাবে মানুষটিকে সান্ত্বনা দেবে; বুঝতে পারছিলেন’না অনিল’বাবু . “
নিজেকে সামলিয়ে তিনি বললেন :
–” আমাকে বাবা বলে ডাকেন! সেই অধিকারে বলতে পারলেন না মনের কথা ? “
দীনুকাকা অনিলবাবুর হাত ধরে বললেন :
— ” বলবো ! এবার থেকে সব বলবো আমার বাবু কে , আমার ছেলেটাও একদম তোমার মতোই কথা বলতো,
….আমার’ই কপাল পোড়া ! সব হারালাম”..
****************************************************
বর্ষশেষের রাতে অনিলবাবুর আগ্রহে,সেদিন বাড়িতে নৈশভোজে বিশেষ অতিথি এলো..
দিনু’কাকা আর তার নাতনি-তিন্নি .
হলো অনেক মজা আর হৈ’হুল্লোড় !
————————————————————-
হ্যামার
ঘরের প্রাথমিক কর্মকান্ড সেরে, সব্জি বাজার করতে মনোযোগী,বছর তিরিশের ঝিলিক..
পুরানো রংওঠা নাইলনের ব্যাগ’টি আলুর ঢিপি তে রেখে, শাড়ির আঁচল দিয়ে দুহাতে কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছিলো সে,সময় নিয়ে..
এমন সময় পানমসলা চিবোতে চিবোতে পেছনে এসে দাঁড়ালো, এলাকার এক উঠতি ছোকরা জগু.. মুখ টিপে হাসতে হাসতে,ঘাড় নিচু করে এক’প্রস্থ পিক ফেলে, এগিয়ে দিলো তার দুষ্টুমির ডান’হাত..
*******************************************************************
গত’রাতে তিনশো টাকার বিনিময়ে পেশাদারি’ ঝিলিক কে আপাদমস্তক ভোগ করেছে সে বন্ধ’ঘরে অবাধে..
জগু’র বেপরোয়া হাতের তালু অসীম তৎপরতায় স্পর্শ করলো ঝিলিকের পশ্চাৎদেশ.
কেঁপে উঠলো মেয়েটির নোনা শরীর .. পেছনে ফিরলো সে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়.
ঝিলিকের চোখে চোখ পড়তেই অপ্রীতিকর হাসিতে স্বাধের পৌরষত্ত্ব বুক ফুলিয়ে জাহির করলো ছেলেটি.
তৎক্ষনাৎ…………………
সপাটে ঝিলিকের বেপরোয়া ডানহাত গিয়ে পড়লো উঠতি ছেলেটির গালে..
গালে হাত দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো সে মেয়েটির দিকে..
ঝিলিকের চোখের মণিতে তখন আগ্নেয়গিরির অনল..
আশেপাশের মানুষগুলি ছিল নিয়মমাফিক নীরব.
চারিদিকের প্রত্যেকটি ডিগ্রি মেপে নিয়ে,চম্পট দিলো ছেলেটি..
*******************************************************************
স্বাভাবিক আঙ্গিকে ঢিপি থেকে সব্জি বাছাই করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ঝিলিক..
চারপাশটা আপাতত শান্ত..
শুধু অদূরে,গুমোট দুর্গন্ধ যুক্ত ছেঁড়া কম্বল জড়ানো রাস্তার পাগলটা অট্টহাস্য দিলো দু’তিন বার.
*******************************************************************
স্ত্রী পরলোকে গমন করার পর এককথায়, একলা হয়ে গিয়েছিলেন রমেন’বাবু..
বৃদ্ধাবস্থায় সাথীহারা হওয়ার বস্তাবোঝাই দুঃখ একমাত্র সেই বোঝে,যাকে এই বিষম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়..
দীর্ঘ্য পঞ্চাশ বছরের একছাদের তলায় হাসি’কান্নার সান্নিধ্য প্রদান করা মানুষটির অভাব,ভুলেও ভোলা প্রায় অসম্ভব..
তবে সময়ের সাথে সাথে রমেন’বাবুর একাকৃত্বের ক্ষত’গুলো ভালোবাসার প্রলেপ পেয়েছিলো অপ্রত্যাশিত ভাবে.
বড়ো’ছেলে ও বৌমা এগিয়ে এসে একলা বৃদ্ধ মানুষটির গুরুযত্নের ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন পরমানন্দে..এতদিন রমেনবাবুর স্ত্রী হাত’পা পুড়িয়ে নিজেই দুজনার জন্য দুমুঠো রেঁধে নিতেন.
অবসর বৃত্তির অর্থে এতদিন মোটামুটি চলে যেতো দুটো দুমড়ে যাওয়া পাকস্থলী..
বাড়ির এক কোনে পরে থাকতেন দুটো অবাঞ্ছিত প্রাণ.
*******************************************************************
তবে এখন বোধয় কালো রাত্রির অবসান ঘটেছে রমেনবাবুর জীবনে.
সকাল বিকেল বৌমার দেখাশোনা পেয়ে কিঞ্চিৎ মানসিক স্বস্তি বোধে বৃদ্ধ মানুষটি..
দুদিন হলো বর্ধমান থেকে ছোট ছেলেটিও সস্ত্রীক চলে এসেছে বৃদ্ধ বাবার সুখদুঃখ ভাগ করে নিতে.
অনেকদিন দিন পর সম্পূর্ণ পরিবার’কে হাতের মুঠোয় পেয়ে ইদানিং অতিশয় আনন্দিত রমেন’বাবু..
ছেলে বৌমা ও নাতির সান্নিধ্যে মনটা বেশকিছুটা ফুরফুরে ওনার.
*******************************************************************
চিরদিনের পরিশ্রমী মানুষটি এই সাঁঝবেলাতেও বেশ শক্তপোক্ত.
প্রায় চার’কুড়ি বছর বয়সের ব্যারিকেড স্পর্শ করা মানুষটি এখন’ও সকালবিকেল পদভ্রমণে বেরোতে পছন্দ করেন,দৈনন্দিন ফুলগাছে জল দেন মনঃস্বার্থে.
প্রতিবেশী নবীন ও প্রবীণদের সাথে গপ্পো গুজব করে সময় অতিবাহিত করেন এক চিলতে অনাবিল তৃপ্তির আশায়..
গপ্পো করার সময় বড়োই গর্ব সহকারে তিনি বলে বেড়ান,-
“আমি মহাসুখী ! ছেলে বৌমারা,রাজার হালে রেখেছে আমাকে..অনেক পূণ্য করেছিলাম বটে,তাই মেয়ের মতো দুইখান বৌমা পেয়েছি.”
শারীরিক সক্ষমতা মোটের উপর ভালো থাকলেও,বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বেশকিছু মাস হলো হ্রাস পেয়েছে ওনার শ্রবণশক্তি..
কোনোকিছুই আর তেমন স্পষ্ট ভাবে শুনতে পান’না.. কানের কাছে কেউ উচ্যস্বরে কথা বললে,তবেই তা বোধগম্য হয় ওনার..
বেতারে স্বর্ণযুগের গান শোনার শখ ওনার চিরদিনের,,কানে খাটো হওয়ার দরুন সেটি থেকেও বঞ্চিত হতে হচ্ছে ওনাকে.
তবে উপরোক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেলেন মানুষটি শীঘ্রই..
ছোটবৌমা একটি শ্রবণযন্ত্রের ব্যবস্থা করেদিলেন শ্বশুর’কে..
রমেন’বাবু খুশি হলেন অপরিসীম. .
সারাক্ষণ সেটি তিনি নিজের নরম’কানে ধারণ করে থাকতেন, গান শুনতেন খুশিমতো,পরিবারের প্রত্যেকের সাথে অবাধ কথা বলতে পারার সামর্থ উপভোগ করতেন..
*******************************************************************
মাঝরাত….
বড়োবউমার নিজের’হাতে গোছানো শয়নকক্ষের বিছানায় শুয়ে,কোনো অজ্ঞাত কারণে ঘুম আসছিলোনা একলা মানুষটির..
হঠাৎ মনে পড়লো নাতি রনির কথা..
ভারী রাত অবধি কম্পিউটারে নাজানি কিসব লেখা পড়া করে সে !. .রমেনবাবুর মন ইচ্ছা প্রকাশ করলো তার সাথে একটু সময় কাটানোর.
যেমন ভাবা,তেমন’ই কাজ.
রেলিং ধরে পা টিপে’টিপে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলেন মানুষটি ..
এমন সময় নিচের ঘর থেকে কিছু মিশ্রিত কণ্ঠস্বর কানে এলো তার..
কৌতূহল’বশত কান পাতলেন মানুষটি..
*******************************************************************
তার দুই সুপুত্রের মধ্যে রীতিমতো তর্কাতর্কি চলছিল ওনার অবসর ভাতা ও ব্যাংকে জমানো ভারী ধনরাশি’ কে কেন্দ্র করে..
একটি নির্দিষ্ট মধ্যস্থতায় আসার পর,,ছোট বৌমা সুর চড়ালো লকারে বন্দি মৃত শ্বাশুড়ির গহনা নিজের আয়ত্তে আনার জন্য..
এটি শুনে,বড় বৌমা পাল্টা আক্রমণ করলেন.
যুক্তি দিলেন সেগুলি নাকি জীবিত অবস্থায় রমেনবাবুর স্ত্রী তাঁকেই দেবে বলে মনস্থির করেছিলেন..
আকণ্ঠ উদ্বেগে প্রায় লাফিয়ে উঠলো ছোট ছেলে..
বাস্তু লাগোয়া সাড়ে কাঠা জমির গুরুভাগটাই নাকি তার প্রাপ্য,যেহেতু বাস্তুভিটা ত্যাজ্য করে সে বাহিরে দিনগুজরান করেছে এতদিন..
মাথা নেড়ে বড়ো ছেলে সম্মতি জানালো বটে,তবে পাল্টা খাড়া করলো আরও এক বলিষ্ঠ যুক্তি :
‘রমেনবাবুর অবর্তমানে,তার জীবনবীমার উত্তরাধিকারী বলে নিজেকে স্বমহিমায় দাবি করে বসলেন.’
ছোটবৌমা প্রতিআক্রমণ করে বললেন–
‘বুড়ির ভাগের পরিণত হওয়া বীমার রাশি তারা নিজেদের দখলে রাখতে চান.’
এর মধ্যে বড়বৌমা ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বলে উঠলেন:-
–“বুড়ো যেভাবে সুস্থ সবল রয়েছে মনে তো হয়না জীবদ্দশায় বীমার টাকা গুলি ভোগ করতে পারবো.”
হাসির রোল উঠলো ঘর জুড়ে..
রমেন’বাবুর ঝুরি ধরা গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছিলো মুক্তধারায়..
টলমল করছিলো তার দুটি পা,,কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে উঠে এলেন সিঁড়ি ভেঙে উপরে..
নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করে ঝিম মেরে বসে রইলেন বেশ কিছুক্ষন আরামকেদারায়..
তারপর আস্তে আস্তে শ্রবণযন্ত্রটি কান থেকে অস্থির হাতে খুলে ফেললেন,,
উঠে এগিয়ে গেলেন ..
ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা ব্যালকনি’তে গিয়ে দাঁড়ালেন..
তারপর নিভু নিভু ফুসফুসে একমুঠো প্রস্বাস গ্রহণ করে সমস্ত শক্তি একত্রিত করে, ছুড়ে ফেললেন যন্ত্রটি..
নিচের ছোট্ট বাগান টপকিয়ে সেটি গিয়ে পড়লো একটি ডোবায়.
****************************************************
রমেন’বাবু মনস্থির করলেন যতদিন বিধাতা বাঁচিয়ে রাখার অনুগ্রহ করবেন, ততদিন বিষাক্ত কিছু শ্রবণ করে মন ভারাক্রান্ত করবেন’না..
শুধু একটু ভালো থাকার জন্য একলা মানুষটি শেষমেশ এভাবেই মেনে নিয়েছিলেন,ব্যাংক ব্যালেন্সের সাথে ফাউ পাওয়া আকাশ ভর্তি যন্ত্রণা গুলি.
*******************************************************************
বৃষ্টির সেই রাত
সংমিত্রা ও নীলাদ্রির বিয়ে হয়েছে বছর চারেক। গ্রামীণ হাসপাতালে ডাক্তার নীলাদ্রি। নীলাদ্রির পোস্টিং যে গ্রামে, সেই গ্রামটি ছায়া স্নিগ্ধ নিবিড়তায় মোড়া।
মনে হয় কে যেন ছবি এঁকে সাজিয়ে দিয়েছে ক্ষেত, পুকুর ও ঘন গাছগুলিকে। পাতা নড়লেও মনে হয় কার যেন বুকের হৃৎপিন্ড কাঁপছে থরোথরো। এমনই জীবন্ত প্রাণের প্রতীক চারিদিকে।
শুধু বৃষ্টি পড়লে নড়েচড়ে বসে
প্রকৃতি এখানে। হাঁসগুলি তুমুল আলোড়ন তোলে নন্দীদের বাঁধানো পুকুরে, আর গোয়ালের গরুগুলির দৃষ্টি ভয়ার্ত। তারা ভাবে পৃথিবীতে বোধহয় প্রলয় ঘনিয়ে এলো। অথচ সংমিত্রার মনে তখন কাব্যের অথৈ রেশ। ভুলে যাওয়া নদীটির কাছে তার প্রথম প্রেমের গোপন সমর্পণ। অঝোরধারার বৃষ্টির কাছে ঘুরেফিরে আসে সেই দিন। যেদিন সে দীপালোকের চোখে চোখ রেখেছিল। সেই কবেকার কথা। সংমিত্রা তখন ক্লাস ইলেভেন হবে। আর দীপালোক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ।
পরিচয়টা ঘন হলো মেঘনার জন্মদিনের দিন। সংমিত্রার প্রিয় বান্ধবী মেঘনা। তারই মাসতুতো দাদা দীপালোক। নরম আলোর ছাদবাগানে চাঁদের কাছে তখন দুটি নরনারীর প্রেমের অর্থ খুঁজতে চাওয়া। এরপর মিষ্টি রাত আরো মিষ্টি হয়েছে। দুজনেই বইয়ের ভাঁজে দুজনের গোপন চিঠি খুলে পড়েছে। ঘনীভূত মেঘ তখন অকারণেই বৃষ্টি নামাতো সংমিত্রার গভীর চোখে। আর দীপালোক ডুবে যেত সেই চাহনির কাছে।
এভাবেই তো বেশ চলছিল।
কিন্তু না, বৃষ্টির রাতের তা না মঞ্জুর ছিল। ঘরের টেলিফোন সশব্দে কেঁপে উঠেছিল সেদিন। বাজ পড়ার শব্দও বোধহয় এর থেকে কম হয়। সংমিত্রার মায়ের গলায় দুরন্ত ভয়। বললো__”শুনছিস মিত্রা, দীপালোক খুউব জোরে বাইক চালাচ্ছিল, আর তখনই….।
এ কি শুনছে সংমিত্রা? তার ছোট্টো পৃথিবী যেন মুহূর্তে টালমাটাল। চারিদিক তার ধূ ধূ শূন্যতায় ঢেকে চলে গিয়েছে দীপালোক। দীপালোক মারা যাওয়ার প্রথম কিছুদিন পর তো সাংঘাতিক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সংমিত্রা। দিন মাস বছর গড়িয়ে সংমিত্রা একটু স্বাভাবিক। তবুও মনখারাপ তার পিছু ছাড়ে না। আজও বৃষ্টি হলেই সেই ভেজা রাস্তায় সে তার পরেরদিন গিয়ে দাঁড়ায়। যেন দীপালোককে সে জীবিত অবস্থায় শেষবারের জন্যে দেখতে পাবে। জায়গাটার মধ্যে একটা অদ্ভুত মাদকতা আছে।
নিমেষে শান্ত হয়ে যায় সংমিত্রার অশান্ত মন। কে যেন ফিসফিস করে বলে, দীপালোক সর্বক্ষণ আগলে রাখছে তোমায় মিত্রা।
__”তুই এতো চিন্তা করিস না, বড়ো হয়েছিস, বুঝতে শিখেছিস। নীলাদ্রি খুউব বড়ো মনের মানুষ। দেখবি সব ভুলে যাবি বিয়ের পর”।
__কথাগুলি একমনে বলে সংমিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় চৈতী। সংমিত্রার মা। এক শ্রাবণী সন্ধ্যায় চার হাত এক হয়ে যায়। ডাক্তার নীলাদ্রি রায়ের ঘরণী হয়ে যায় সংমিত্রা বসু।
আর তারপর কাকদ্বীপের কাছে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে তাদের কাঁচা হাতের সংসার।
হ্যাঁ, বিয়ের পরে জীবন অনেকটাই বদলে গিয়েছিল সংমিত্রার।
নতুন মানুষের সংস্রবে ধীরে ধীরে ক্ষীণ হচ্ছিল দীপালোক।
হাসপাতালের পরিবেশটা ভারি সুন্দর। সকলেই নতুন ডাক্তারবাবু নীলাদ্রিকে খুব খাতির করে।
সংমিত্রাও আলাপ জমায় সকলের সাথে। নীলাদ্রি তো ব্যস্ত তার হাসপাতাল নিয়ে। দরদ দিয়ে সে রুগী দেখে।
সে সপ্তাহে গভীর নিম্নচাপের বৃষ্টি যেন থামছেই না। জেরবার কাকদ্বীপ অঞ্চল।
পঞ্চায়েত প্রধান হরেণ দে নীলাদ্রি ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন।
__”ডাক্তারবাবু, দয়া করে বাড়িতে আসুন? আমার স্ত্রীকে সাপে কেটেছে”।
নীলাদ্রি থতমত খায়।
বলে, __”এমন তো নিয়ম নেই হরেন বাবু। আপনি রুগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসুন”।
কিন্তু হরেন দে নাছোড়।
উপায়ন্তর না দেখে রাজী হয় নীলাদ্রি। বাইরে তখন ভয়াল গর্জন আকাশের।
যাবতীয় চিকিৎসা সেরে নীলাদ্রি যখন বাড়ির পথ ধরতে প্রস্তুত তখন রাত প্রায় আড়াইটা।
সব আলো নিভে গিয়েছে চারিধারে। বোধহয় লোডশেডিং চলছে। কোয়ার্টারের দূরত্ব বেশী নয়। চাপ চাপ অন্ধকারে হেটে যাচ্ছে নীলাদ্রি। সাথে একটা টর্চলাইট। হঠাৎই হাই রোডের পাশে একটা চাপা গোঙানির আওয়াজ।
কাছে গিয়ে দেখে একজন বাইক আরোহী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
ডাক্তার বলে তড়িঘড়ি ছুটে গেল।
___”আহা রে! কোনোও লড়ি বোধহয় ধাক্কা মেরেছে”।
হাসপাতালে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে বললো নীলাদ্রি।
প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে রুগীর।
কিন্তু ভারি অদ্ভুত।
রুগীর মুখে তাও হাজার প্রভার আলো।
__”ডাঁক্তারবাবু কোঁথায় ফোঁন কঁরছেন? অ্যামঁবুলেন্সের দঁরকার নেঁই। আঁমি হেঁটেই যেঁতে পাঁরবো”।
__নীলাদ্রি হতবাক। বলে কি রুগী?
গলাটাও যেন কেমন খোনা খোনা শোনালো।
আঁধারকে তাচ্ছিল্য করে ডাক্তার নীলাদ্রি ও আগন্তুক আলোর পথে পা বাড়ালো।
হাসপাতালের আলো আঁধারীতে রুগীকে ভালো করে দেখে ডাক্তার এবার সত্যিই ভয় পেলো। কি করে হেঁটে এলেন ইনি? রক্তে তো একটা পা মারাত্মক ভাবে জখম। তখন টর্চের আলোয় পরিস্কার দেখতে পায় নি। ইমারজেন্সিতে রুগীকে শুইয়ে নীলাদ্রি সিস্টারকে ডাকতে গেলো।
__” সিস্টার, তাড়াতাড়ি আসুন। একটি রুগী…?”
নীলাদ্রির কথা শেষ হয়নি, ইমারজেন্সি রুম থেকে নাকি কান্নার আওয়াজ।
নীলাদ্রি ও সিস্টার চমকে গিয়ে দৌড়ে দেখে, হাওয়ায় বীভৎস ভাবে নড়ছে ইমারজেন্সি রুমের পর্দাগুলি। ড্রেসিং টেবিলের ছুঁড়ি কাঁচিতেও ঝনঝন শব্দ হচ্ছে।
অথচ বাইরে কিন্তু হাওয়ার দাপট থেমে গেছে।
নীলাদ্রি দেখে রুগী উধাও। ইমারজেন্সির বেডে পড়ে আছে একটি ছোট্টো চিরকুট।
তাতে লেখা__”দশ বছর আগে কেউ যদি আপনার মতো আমায় এভাবে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করতো ডাক্তারবাবু, তাহলে আজ কতো আনন্দের ছটায় ভাসতো আমার জীবন। আপনি সত্যিই নিতান্তই উদার মনের। সেদিন জানেন কতো পথচারী গিয়েছে, কেউ ফিরেও তাকায় নি।
একটু একটু করে নিজের মৃত্যু দেখেছি আমি ডাক্তারবাবু “।
চিঠিটা পড়ার পর ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল নীলাদ্রির শরীরে।
স্ত্রী সংমিত্রার মুখে দীপালোকের কাহিনী শুনেছিল নীলাদ্রি।
তবে কি…?
কোয়ার্টারে যাওয়ার জন্যে মন ছটফট করে ওঠে নীলাদ্রির।
গিয়ে দেখে সংমিত্রা জেগে আছে।
বললো__” একটু আগে, দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে ভাবলাম তুমি এসেছো, খুলে দেখি কেউ নেই”। আর জানো তো, অদ্ভুত ভাবে দীপালোকের একটি চিঠি ডায়েরির ভাঁজ থেকে উড়ে এসে পায়ের সামনে এসে পড়লো।
নীলাদ্রি বলে__”কই দেখি চিঠিটা”?
সংমিত্রা না চাইলেও আজ দেখাতে বাধ্য হলো তার দীপালোকের চিঠি।
মোমের আলোয় নীলাদ্রি স্পষ্ট দেখে সে চিঠির হাতের লেখার সাথে হুবুহু মিল, আজকের লেখা চিরকুটের।
চিরকুটের নীচে আর এক জায়গায় লেখা__
“আর কখনও আসবো না, খুউব ভালো থেকো তোমরা। শুধু আমার নামে একটি পিন্ডদান কোরো গয়া শহরে”।
চিঠিটি সংমিত্রাকে দেখালে সেও বললো___
” হ্যাঁ, জানো তো সেই ঘটনার পর দীপালোকের মা শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল, আর ওর বাবা ঠিক দু বছর পরেই মারা যান”।
চলো এবার কালিপূজায় আমরা ওর পিন্ডদানটা সেরে আসি”।
কথাটা বলা মাত্রই হাজার বাতির আলোয় আলোকিত নিশুত রাতের ঘর। দীপালোকের বৃষ্টিতে।
নীলাদ্রি শুধু বললো__
“কারেন্ট এলো”।
হওয়া বদল
“তোমায় আর দুটো রুটি দিই?”
“হুম”,মাংসের হাড় চিবোতে চিবোতে উত্তর দিল,অনিমেষ।
ওর পাতে রুটি দুটো দিয়ে পল্লবী আর ঋতুর মধ্যে চোখে চোখে ইশারা হলো।পল্লবী মেয়েকে চোখে চোখেই আশস্ত করে,নিজের পাতে একটা রুটি নিল।কি বলে যে শুরু করবে,কিভাবে বললে কাজ হবে?
“জানো,আজ মাসি ফোন করেছিল।”
“কোন মাসি?”অনিমেষ মাংসের ঝোলে রুটি ডুবাতে ডুবাতে বলল।
“আমার মাসি।কোন মাসি আবার।”অনিমেষের কিছুই খেয়াল থাকে না,পল্লবী বিরক্ত হয়।
“ও আচ্ছা,তা কি বলল?”
“এমনি জানতে চাইছিল আমরা সব কেমন আছি?এই আর কি,আর আর”
অনিমেষ পল্লবীর দিকে তাকাল,
“মাসিরা বেড়াতে যাচ্ছে,হরিদ্বার,ঋষিকেশ,দেরাদুন মুসৌরী ,আমাদেরও যেতে বলছিল।”
অনিমেষ এতক্ষনে একটু হেসে বলল, “তো এই হচ্ছে আসল কথা।”
“চলো না গো ,মাসিরা তো প্রতিবারেই বলে,আমরা কোনদিন যাই না।”
“দ্যাখ, পল্লবী আমি তোমাকে আগেই বলেছি,আত্মীয়স্বজন বিশেষ করে শ্বশুরবাড়ীর লোকেদের সঙ্গে বেশী মাখামাখি আমার পছন্দ নয়। হ্যাঁ, একটু হাই হ্যালো করলে,অনুষ্ঠানে গেলে এলে,ব্যাস ঐ পর্যন্তই।বেশী মাখামাখি করলেই দেখবে এরপর মন কষাকষিতে দাঁড়িয়ে যাবে।”
পল্লবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “কে আর মাখামাখি করছে শুনি? ঐ মাসিই একটু যা যোগাযোগ রেখেছে।তাও তুমি”
কথা আর শেষ করে না পল্লবী।তারপর আবার বলে, “বেশ তো আমার বাড়ীর কারো সাথে যাবে না, তা সুনীলদাও তো মাঝে মাঝেই বেড়াতে যায়,তোমায় বলে যেতে।তাই গেলেও তো হয়।”
অনিমেষ বলে ওঠে, “সুনীল?ওর কথা বলছ? ওর আর কি,বিয়ে থা করেনি,কোন ঝামেলা নেই,বেড়িয়ে পরলেই হলো।আমাদের মতো সংসারের জোয়াল বইতে হতো তো বুঝতাম।”
“প্লিজ বাপী চলো না” ,ঋতু বলে ওঠে।
“সামনে পরীক্ষা,সেটা মনে আছে না নেই?যা ভাল করে পড়াশোনা কর।”অনিমেষ উত্তর দের ।
ঋতু আর কিছু না বলে চুপচাপ উঠে যায় গোমড়া মুখ করে।মেয়ের চলে যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে পল্লবী।দড়াম করে ঋতুর ঘরের দরজা বন্ধ হবার শব্দ আসে।
“আমার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম,অন্তত মেয়েটার জন্যেও তো দুদিনের জন্যে কোথাও যেতে পারতে ?”
অনিমেষ কোন উত্তর দেয় না ,চুপচাপ উঠে বেসিনে মুখহাত ধুয়ে সোফায় বসে টিভির বিজনেস চ্যানেলটা খোলে।পল্লবী জানে ,এখন ওর বলে যাওয়াই সার হবে কিন্তু অনিমেষের কানে কোন কথা ঢুকবে না।সারাজীবন খালি ব্যবসা আর টাকা ছাড়া কিছু চিনল না মানুষটা নিজের মনেই গজগজ করতে করতে বাকি খাবার গুলো গুছিয়ে ফ্রিজে তুলতে থাকে পল্লবী।ঐজন্যে ও কোন কথাই তুলতে চায় না এই নিয়ে,কারন ফল কি হবে তা তো জানাই।কমদিন তো আর ঘর করল না লোকটার সঙ্গে।শুধু ঋতুর জেদাজেদিতে বলতে হলো।টেবিল মুছে ,শেষবারের মতো একবার রান্নাঘরে গিয়ে সব চোখ বুলিয়ে নিল ও,ঠিকঠাক করাই আছে সব ,তবু প্রতিদিনের অভ্যাস।
“আমি ঘরে গেলাম।”
কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।মেয়ের ঘরের দিকে একবার তাকাল,দরজা বন্ধ করে দিয়েছে,রাগ হয়েছে,এখন আর ডাকলেও খুলবে না।এই দুজনের মাঝে পল্লবীর যে নিজেকে কি অসহায় লাগে মাঝে মাঝে।অদ্ভুত ঘরকুনো অনিমেষ।একুশ বছরের বিবাহিত জীবনে একবার শুধু দীঘা গিয়েছিল দুজনে,তাও অনেক বায়না,কান্নাকাটি করে।সারাজীবন শুধু এই কোলকাতাতেই কাটিয়ে দিল।যদি টাকাপয়সার অভাব থাকত,তাহলেও না হয় মানতে পারত পল্লবী,কিন্তু তা তো নয়।অনিমেষকে খুব একটা কৃপন বলাও যায় না।কোন কিছুরই অভাব রাখেনি সংসারে।কিন্তু ঘোরা বেড়ানোয় দারুন অনীহা।আগে বলত, ‘ধুস।বেড়ানোর অনেক ঝামেলা।টিকিট কাটা,হোটেল বুকিং ,গাড়ী বুকিং,অতো সময় নেই আমার।’
পল্লবী জানিয়েছিল, “এখন তো ট্যুর কোম্পানি গুলোই সব ব্যবস্থা করে দেয়,তুমি খালি পয়সা দাও আর মজা করে ঘুরে বেড়াও।”
কিন্তু তাতেও অনিমেষকে ঘর থেকে বের করা যায়নি।ও ওর নিজের ব্যবসা, শেয়ারবাজার আর বন্ধুদের সঙ্গে সান্ধ্যআড্ডা নিয়েই খুশি।ঋতুও এখন তার পড়াশোনা,কলেজ কেরিয়ার নিয়েই ব্যস্ত।শুধু অন্য বন্ধুদের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় বেড়ানোর ছবি দিতে পারেনা বলে মনখারাপ করে।মাঝখান থেকে পল্লবীই এই চার দেওয়ালের মাঝে হাঁপিয়ে ওঠে।সেই একই গতে বাঁধা জীবন,আজ একুশ বছর ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
গ্রামের মেয়ে ছিল পল্লবী।দেশ বিদেশে না ঘুরে বেড়াক, খোলা আকাশের নিচে বড় হয়েছে।তখন কতদিন বিকেলবেলা বন্ধুদের সঙ্গে বেড়িয়ে পরেছে সাইকেল নিয়ে।নদীর ধারে বাঁধ ধরে কত দূরদূরান্তে চলে গেছে।মা কাকীমাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছে কত মেলায় মেলায়।পল্লবীদের গ্রামে মেলা বসত খুব।পুজোপার্বন হলেই হলো।মস্ত শাঁখারীর মাঠে সারিসারি দোকান বসে যেত।যাত্রাপাল হতো নিয়ম করে প্রতিবছর,বাবা,কাকারা তো সেখানে যাত্রা করতই,কোলকাতা থেকেওনামকরা দল যেওত।মাঠরান্নার দিনে সবাই মিলে হৈহৈ করে মাঠে গিয়ে একসঙ্গে রান্না করে খাওয়া দাওয়া হতো।তারপর আজ পিসির বাড়ী কাল মাসীর বাড়ী তো পরশু মামার বাড়ী,জীবনের কুড়িটা বছর যে কোথা দিয়ে কেটে গিয়েছিল বুঝতেই পারেনি পল্লবী।হঠাৎ করে একদিন বিয়ে হয়ে গেল,নিজের সেই গ্রাম,সেই রঙিন জীবন ছেড়ে এসে উঠল এই কোলকাতায়।চার দেওয়ালের ফ্ল্যাটের মধ্যে জীবন গেল আটকে।কতদিন খোলা আকাশ দেখেনি পল্লবী তার হিসেব নেই।প্রথম থেকেই বাপের বাড়ী যাবার সৌভাগ্য বিশেষ হতো না ওর ,আর এখন মা ,বাবা চলে যাবার পর তো যাওয়াই হয়না।ছোটবেলায় মা মাসিরা সবাই মিলে একবার পুরী গিয়েছিল,সব মাসতুতো ভাইবোনেরা মিলে সমুদ্রে নেমে যা হুড়োহুড়ি করেছিল,ভাবলে এখনো ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে পল্লবীর।
টুং টুং করে মেসেজ ঢোকে ফোনে।পল্লবী ফোন তুলে নেয় হাতে।এতক্ষন ধরে এই মেসেজটারই অপেক্ষা করছিল ও।এখন এটাই ওর বেঁচে থাকার রসদ।এখন বেশ ঘন্টা খানেক ধরে চলবে কথোপকথন।ও জানে অনিমেষ এখন ঘরে আসবে না।লেপের তলায় নিজেকে গুছিয়ে নিতে নিতে ঘরের আলোটা বন্ধ করে দেয় ও।
******
‘আরও দূরে চলো চলে যাই…মন নিয়ে কাছাকাছি’ গুনগুন করতে করতে সমুদ্রের ধার ধরে হেঁটে যাচ্ছিল পল্লবী।সমুদ্র এখানে অনেক শান্ত,কিন্তু হাওয়া উত্তাল।বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে চুল।ওড়না উড়ছে বাতাসে।ছোট ছোট ঢেউ এসে পা ভিজিয়ে দিচ্ছে,এই অখ্যাত সমুদ্রের তীরে এমনিতেই লোকজনের আনাগোনা কম,তারোপর এই ভোরের দিকে প্রায় নির্জন বললেই হয়।কতদিন পর এইভাবে,খোলা আকাশের নীচে কতদিন পর যে এলো।অবশ্য আসাটা মোটেই সহজ হয়নি, অনিমেষকে অগ্রাহ্য করতে প্রথমে বেশ দ্বিধায় ছিল,তারপর অবশ্য ভেবেছে,অনেক তো হলো,মেনে চলা মানিয়ে চলা,কি পেল শেষ পর্যন্ত,এবার না হয় একটু নিজের খেয়ালেই চলল,নিজের মনের কথাই শুনল।
“পল্লবী”
ডাক শুনে পাশ ফিরল ও।সুদীপ , অনিমেষের বিপরীত মেরুর মানুষ।অনিমেষ জীবনে একটা পা, কোনদিন না হিসাব করে ফেলেনি,অথচ সুদীপ বেহিসাবী ,খেয়ালী।কখন কি করে বসবে ,কোন ঠিক নেই।ওর সঙ্গে যে থাকবে সে বুঝতেই পারবে না সময় কোথা দিয়ে কেটে যাবে। জীবনের পরতে পরতে কত যে রঙ লুকিয়ে আছে,সুর লুকিয়ে আছে।এই যে বালির মধ্যে মুখ ডুবিয়ে চলা কাঁকড়াগুলো যে এতো সুন্দর হতে পারে,তা কি পল্লবী কখনো জানতে পারত,যদি না সুদীপের কথায় রাজী হয়ে বেড়িয়ে পড়ত।
“চা চলবে?”
সুদীপ হাসি হাসি মুখ করে বলল।
“চলবে মানে দৌড়াবে,কিন্তু এখন চা পাই কোথায় ?”
সুদীপ হেসে বলল, “ঐ দিকে আর একটু হেঁটে যেতে হবে,এক কাকার ঝুপড়ি আছে,চা টা দারুন বানায়,তার সঙ্গে ডিম সেদ্ধ।”
দুজনে এগিয়ে চলল।সুদীপ কি একটা সুর ভাঁজছিল মনে মনে,পল্লবী গানটা চিনতে পারল না ।
“আমি মাঝেমাঝেই আসি এদিকটায়,হুটহাট চলে আসি, তাই সবাই আমাকে চেনে।কাকার সঙ্গে তো খুব খাতির।”
“তাই?সত্যি তোমরা পুরুষ মানুষেরা খুব ভাগ্যবান,ইচ্ছা মতো ঘুরে বেড়াতে পার।”পল্লবীর গলায় হতাশা ফুটে ওঠে।
“আজকাল কিন্তু অনেক মেয়েরাও নিজেদের মতো করে ঘোরে।”
“ওসব বিদেশে হয়,এদেশে নয়।”
“ভুলধারনা,এখন এদেশের মেয়েরাও অনেকেই বেড়িয়ে পড়ে। দলবেঁধে তো বটেই, এমনকি সোলো ট্রাভেলও করে।” একটু থেমে আবার বলে,
“সোশ্যাল গ্রুপ ট্র্যাভেল ব্লগ গুলো একটু খুঁজে দেখো পেয়ে যাবে।আমার এক বান্ধবী তো একাই ঘুরে বেড়ায়।”
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস চাপে পল্লবী।সামান্য কোলকাতাতেই নিজের মতো করে চলাফেরা করতে পারে না সে, মানে দেয় না অনিমেষ।গাড়ী ছাড়া যাবার কথা শুনলেই হাঁহাঁ করে ওঠে।যেন জীবনে কোনদিন বাসে ট্রেনে চাপেনি পল্লবী।অবশ্য গাড়ী ব্যবহার করলেও নিজে চালানোর অধিকার নেই ওর।
একটু এগিয়েই চোখে পড়ল,একটা বিবর্ন সাতরঙা ছাতার নিচে চায়ের কেটলি,মগ,ছাকনি।বিস্কুটের বয়াম আর স্টোভ নিয়ে এক বুড়ো দাঁড়িয়ে আছে,সুদীপ “কাকা,কেমন আছো?আবার এসে গেছি” বলে হৈহৈ করে এগিয়ে গেল।কাকাও হাসি মুখে কি বলল, কিন্তু এতো হাওয়ার শব্দে পল্লবীর আর কানে তা ঢুকল না।এখানে হাওয়ার বেগ আরও বেশী।বেশ ঠান্ডা লাগল এবার পল্লবীর,কিন্তু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল, ঐ বুড়ো ,চাওয়ালা কাকাএকটা ছেঁড়া ফতুয়া পরেই দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে।আরো কয়েকজন সামনে দাঁড়িয়ে আছে,সম্ভবত সমুদ্রের জেলেরা,সুদীপ বেশ গল্প শুরু করে দিয়েছে ওদের সঙ্গে।কতো ছোট ছোট পাওয়া মানুষকে জীবনে পূর্ন করে তোলে।কাচের গেলাস ভর্তি চা নিয়ে সমুদ্রের কাছে গিয়ে দাঁড়াল পল্লবী।সমুদ্রের ঢেউয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে নিজের সব না পাওয়া,সব দুঃখগুলো কোথায় যেন ভেসে যায়,ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে।মনে হয় জীবন কি বিশাল,একদম ঐ সমুদ্রটার মতোই,আর মানুষ তার সামনে নেহাতই তুচ্ছ।কি যে এক মন ভালো করা ওষুধ সমুদ্রের হাওয়ায় আছে,পল্লবী জানে না।
“এই যে এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে চা খাওয়া হচ্ছে?আর আমরা খুঁজে মরছি।”
পরিচিত গলায় চমকে আরেকটু হলেই চা পড়ে যাচ্ছিল পল্লবীর হাল্কা গোলাপী কূর্তিতে।
শুক্লা, সুদীপের বৌ আর পল্লবীর মামাতো বোন।
“আমার ছোট ভায়রাভাই টি তো বেশ বুদ্ধিমান,সকালবেলাই সুন্দরী শালীকে বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে।”ওপাশ থেকে বলে ওঠে উঠল উত্তমদা,রীতাদির বর।সুদীপ আর পল্লবী দুজনেই হোহো করে হেসে উঠল।পল্লবী বলল,
“আমি কিন্তু সবাইকেই ডেকে এসেছিলাম,তোমরাই কেউ উঠতে চাইলে না।আমার দোষ নেই বাবা।”
এবার ওর কথায় বাকী সবাই হেসে উঠল।
“মা,আমিও চা খাব।”দলের পিছন থেকে সামনে এসে বলল ঋতু।
পল্লবী অবাক হয়ে বলল, “আরে তুইও উঠে পরেছিস ঘুম থেকে,বাড়ীতে তো…”
“ঐজন্যেই তো বাইরে আসা, বাড়ীর সব বদলে যাবে বাইরে এলে,এসো এসো সবাই চা খাবে এসো,কাকার চা একদম রেডী” সুদীপ বলে উঠল।
আসলে মাস ছয়েক আগেই ফোনে সব মামাতো,মাসতুতো ভাইবোনেদের নিয়ে একটা দল তৈরি হয়েছিল,তার নামকরন হয়েছিল ‘হাওয়াবদল’ স্বভাবতই পল্লবীও তাতে যোগ দিয়েছিল।কতদিন পর সব যোগাযোগ,বিয়ের সূত্রে, কাজের সূত্রে কে কোথায় ছিটকে গিয়েছিল,কিন্তু যোগাযোগটা হতে মনে হয়েছিল যেন মাঝের এই সময়টা কোন ব্যবধানই গড়ে তুলতে পারেনি।পল্লবীর দমবন্ধ জীবনে তো অক্সিজেন জুগিয়েছিল পুরো বিষয়টা।সারাদিনের শেষে রাতের বেলা সব ভাইবোনেরা এক হয়ে গ্রুপে আড্ডা চলত।পল্লবী সারাটাদিন ধরে অপেক্ষা করত এই সময়টার জন্যে।খুব মনে পড়ত, মা মাসি সবাই মামাবাড়ী গেলে ঠিক এইরকমই আড্ডার আসর বসত মামাবাড়ীতে।তারপর সবাই মিলে ঠিক করে কদিনের জন্যে কোন জায়গা থেকে বেড়িয়ে আসবে সবাই মিলে,সব সুদীপের পরিকল্পনা।সবটা শুনে পল্লবীর মনটা নেচে উঠেছিল,কিন্তু অনিমেষ কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না,কিন্তু পল্লবীকে এবার আর অপেক্ষা করেনি অনিমেষের মতামতের জন্যে জানে ও রাগ করছে তবুও কিচ্ছু না ভেবে সোজা সবার সঙ্গে তাজপুরে।যদিও প্রথমে মনটা বেশ খুঁতখুঁত করছিল,আসলে অনিমেষের মনের মতো করে চলাটা পল্লবীর একটা অভ্যাস হয়ে গেছে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, নিজের জন্যে,বাঁচার মতো বাঁচার জন্যে অভ্যাসের বদল মন্দ নয়।
পুরো দলটা হইচই করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে ,ঋতু শুধু মায়ের সামনে এসে কানের সামনে আস্তে করে বলল, “থ্যাংকস মা।”
পল্লবী মেয়ের হাতাটা ধরল।সামনে তখন একটা আস্ত ঝকঝকে দিন।
আপন যে জন
— আঃ মা বৌদির জন্য ওটা নয় | ওই যে হালকা আকাশিটা , পাশেই , দেখো !
কি যে করো না , লালটা আমার | দশমীতে পরবো |
কি ? কেমন ?
ঐন্দ্রির কোনো কথাই উষসীর কান অবধি পৌঁছোয়না |
এক বছর হলো ছেলেটা আর নেই | এতো দূরে চলে গেলো , যেখান থেকে কোনো ফেরার রাস্তা হয়না | কেন যে সেদিন বাবাইকে যেতে দিলো | আজও ভাবলে বুকের ভেতরটা খান খান হয়ে যায় |
চোখের সামনে এখনও ও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ওই তো বাইকটা স্টার্ট দিলো বাবাই |
–সাবধানে ..|
— হ্যা হ্যা মা | অত চিন্তা করোনা |
রত্নাবলীর দিকে কি যেন ইশারা করলো আড়চোখে | উষসী আর বারান্দায় দাঁড়ায় না ভেতরে চলে আসে |
ঘামে ভিজে যায় উষসী সমাদ্দার | ঝাপসা চোখে হাতটা বাড়িয়ে দেন ফাঁকা হাওয়ায় | হঠাৎ শরীরটা কেমন খারাপ লাগে ওর | ঐন্দ্রী পাশ থেকে বকেই যাচ্ছে তখনও |
মা , জলটা খাও | অভিব্যক্তিহীন দুটো চোখ | রত্না ঠান্ডা জলটা ওর শাশুড়ির দিকে বাড়িয়ে দেয় | থতমত খায় ঐন্দ্রী | কি জানি শাড়ীগুলোর কথা শুনে ফেললো নাকি | আর ফেললেই বা কি ! ভুল তো কিছু বলেনি | মা বোঝে কম বলেই ওভাবে বলতে হলো |
*********
রাস্তাজুড়ে কত আলোর খেলা | কোনটা নিভছে কোনটা জ্বলছে | ওদিকে সানাই , পুরোনোদিনের গানে যেন উপচে পরা সুখ | রত্নাবলী বাইরের বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে | লাল হলুদ নীল সবুজ শাড়ী জামাকাপড় পরা উজ্বল হাসি মুখগুলো ওর সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে আসছে | হাত ধরে এগিয়ে চলেছে কত স্বপ্ন | মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি , দেবী বন্দনা চলছে চারদিকে | বারান্দার গ্রিলে মাথা রাখে রত্নাবলী |
— এই তুমি কাঁদছো ? পাগলী একটা | আরে বোকা ফোনটায় একটুও চার্জ ছিল না , এই দেখো |
কাছে টেনে নেয় অরুময় ওকে |নিজের ঠোঁটে ডুবিয়ে নেয় অভিমানী ঠোঁট | রত্না আষ্টেপিষ্ঠে বেঁধে নেয় অরুময়কে | হঠাৎ চমকে ওঠে রত্না | স্পষ্ট উপলব্ধি করে ওর ঠোঁটদুটোয় এখনো অরুময়ের স্পর্শ বর্তমান | চারিদিকে এলোমেলোভাবে খোঁজে অরুময়কে | কোথাও নেই , কোত্থাও তো নেই | দু হাত দিয়ে নিজের মুখটা চেপে ধরে | দলা দলা বেয়ে ওঠা কান্নাগুলো আপ্রাণ গিলতে চেষ্টা করে |
*******
ঐন্দ্রীরা পঞ্চমী থেকে বাপের বাড়ি | বর ছেলেকে নিয়ে কলকাতার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঠাকুর দেখতে বেরোচ্ছে প্রতিদিন | রত্নাবলী হাতের কাছে সবসময়ই এটা সেটা যোগান দেওয়ার চেষ্টা করছে আপ্রাণ |
— মা , আজ নবমী | চলোনা আশেপাশে একটু ঠাকুর দেখে আসবে | তোমার ছেলের বৌকে বলা না বলা তো সমান | সে তো অর্ধেক কথার উত্তরই দেয় না | তুমি তো চলো |
উষসী মেয়ের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দেয় |
— তোরা যা , আমার শরীরটা ঠিক নেই , আমি ঘরেই ঠিক আছি |
******
দশমীর সকালেই উষসী কোথায় যেন বেরিয়ে গেলো | হাজার অহেতুক প্রশ্ন শোনা , করা রত্নার স্বভাবে নেই | শুধু জিজ্ঞাসা করে ..
— তুমি কি পারবে ? না আমি সঙ্গে যাবো ?
— আমি পারবো | কাউকে যেতে হবে না |
*******
গলির সামনে দিয়ে পাশের বাড়ির বৌদি , মুখার্জি গিন্নি , স্যান্নাল কাকিমা সবাই কেমন মুখ রাঙিয়ে বাড়ি ফিরছে | রত্না হাঁ করে ওদের আড়াল থেকে দেখে |
— আঃ , ছাড়ো তো |
— আবার ! আবার বিরক্ত হচ্ছো ? ওরে যেদিন থাকবো না সেদিন বুঝবে স্বামী সোহাগ কাকে বলে |
— থামো | খালি ন্যাকা ন্যাকা ফুটেজ খাওয়ার চেষ্টা |
— ম ম ম ম .. না , থামবোনা | এমন আদুরে সিঁদুরে মাখা মুখটা করে রেখেছো কিছুতেই থামা যাবে না |
শাড়ীর পাশ কাটিয়ে অরুময় রত্নাবলীকে ছুঁয়ে দেয় গভীরে |
চোখ ভোরে ওঠে মেয়েটার |
— রত্না আসবো রে ?
— হ্যা মা | জিজ্ঞাসা কেন করছো !
কাগজের ব্যাগ থেকে লাল একটা শাড়ী বার করে উষসী |
— দেখ তো , শাড়ীটা তোর পছন্দ হয়েছে ?
— হ্যা মা | ঐন্দ্রী কে খুব মানাবে |
— এটা ঐন্দ্রির নয় , তোর | তাড়াতাড়ি পরে নিচে আয় | ওদিকে ভিড় বাড়বে যত দেরি হবে | আমি বেশিক্ষন দাঁড়াতে পারিনা তো | রত্নাবলী অবাক দৃষ্টিতে ওর শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে |
— ওরে বোকা তুই কি আমার মেয়ে না ? ঐন্দ্রী কি আমার একটা মেয়ে ? কেন বুঝিস না তুই ভালো না থাকলে আমি বাঁচি কি নিয়ে ? ছেলেটা তো চলে গেলো , কিছুতেই আটকাতে পারলাম না | তুই তো একটু বাঁচ | চল শিগগির | আমি বরণের থালা গুছিয়ে রেখেছি | লাল শাড়ীটা পরেই মা কে বরণ করতে যাবি |
— না মা | এসব কি বলছো ? তাছাড়া পাঁচজন লোক দেখলে তাঁরা কি বলবে ?
— পাঁচজন লোক আমায় দেখে না রত্না | তাদের মুখ চেয়ে আমার বাকি জীবন আমি বেঁচে থাকবো না | শুধু তোর জন্য মা রে | আর কোনো কথা নয় |তুমি তৈরী হয়ে নিচে নামো | আমি , ঐন্দ্রী তোমার সাথে যাবো | দেখি আমার ছেলেমেয়েকে কে কি বলে |
অরুময় চলে যাওয়ার পর রত্নাবলীকে ওর মা , বাবা , দাদা নিতে আসেন | ও যায়নি | সন্তানহারা মা কে ফেলে কোথায় গিয়ে ও সুখে থাকতো ! সে ও যে অর্ধেক মরেই বেঁচে আছে | রত্নার এতবড়ো আত্মত্যাগ উষসী ভাবতেও পারেনি | নিজের মেয়েরই এতো বড়ো মন সে তৈরী করতে পারেনি | অথচ তার ছেলের বৌ তাকে উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটা দিন | ঈশ্বর সবটা তো কেড়ে নেয়নি যতটা সে পেয়েছে ততটা রঙিন করে রাখতেই হবে |
মিনিট পনেরো পরে বাড়ি থেকে ওরা তিনজনে বেরোয় | সামনে ঐন্দ্রী , রত্নাবলী আর তার ঠিক পেছনেই উষসীদেবী | ওদিকে বরণ শুরু হয় |
রত্না যখন ফিরে আসে ওর দু গালে লালের ছোঁয়া | অরুময়ের ছবিটার সামনে মেয়েটা এসে দাঁড়ায় |
— কোথায় তুমি ? ছুঁয়ে দাও একবার আমায় |
চোখ বুজে আছে রত্নাবলী |
বাইরে ঢাক বাজছে , মায়ের বরণ বুঝি শেষ হলো ||