অরিন্দমের বেশ নাম-ডাক বেড়েছে আজকাল…
বর্তমানে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ক’একটি গ্রূপে তার লেখা গল্প ও কবিতার অনুরাগীদের ছড়াছড়ি..
পাঠক-পাঠিকাদের শয়ে শয়ে মন ভালো করা মন্তব্য’গুলি অরিন্দম’কে,তার দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামের প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে হাসি মুখে চলার ক্ষেত্রে,বাড়তি অক্সিজেন যোগায়..
সেই সুবাদে অরিন্দমের সাথে তার গল্পের বেশ কিছু পাঠিকাদের,স্বল্পবিস্তর ঘনিষ্ঠতা মাথা চাড়া দিয়েছে.
****************************************************
তবে কিছুটা হলেও এ’ক্ষেত্রে বিরূপ মনোভাব তার স্ত্রী নীলাশার..
নিজের স্বামীর সাথে অচেনা মহিলাদের মনের ভাব বিনিময়ের শুরু হওয়া এই’প্রথাটি কিছুতেই যেন মনের মনিকোঠায় স্থান দিতে পারছিলোনা সে..
প্রেম’শাস্ত্রে আছে : ‘কারুর প্রতি মনে পরিপূর্ন প্রেম থাকলে নাকি মনে সন্দেহের বিন্দুমাত্র স্থান থাকেনা, তবে বাস্তবের গতিশীল’চিত্র ঠিক তার বিপরীত,,সন্দেহ থাকলেই বুঝে নিতে হবে,ষোলোআনা প্রেম বিদ্যমান.’
অরিন্দমের লেখা গল্পে পাঠিকামহলের অবিচ্ছেদ্য তৎপরতা যেন ক্রমেই নিরাপত্তা’হীনতার আঁধারে ঠেলে দিচ্ছিলো নীলাশা’কে.
অরিন্দমবাবুর লেখার বিপরীতে, হৈমন্তী,শ্রেয়সী,রাণী, মৃন্ময়ী,বিশাখা,ও দীপিকা’দের নির্লিপ্ত ভালোলাগার মতামত’গুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে ফেলতো তার স্ত্রী নীলাশা…তার সাথে সমান্তরাল ভাবে,সেই সমস্ত মতামতের প্রতিউত্তরে অরিন্দমের পরিপক্ক উক্তিগুলি বিষন্ন মনে পড়তো সে .
****************************************************
কিছু সপ্তাহ হলো ‘সোহিনী’ নামের একটি মহিলার সাথে এই লেখালিখির সূত্র ধরেই বন্ধুত্ব হয়েছে অরিন্দমের..তার লেখা গল্পগুলি অত্যন্ত যত্ন সহকারে পড়েন তার এই, নেটের নুতন বান্ধবী,,
ভালোলাগার স্বাভাবিক নিয়মের চৌকাঠ পেড়িয়ে শুরু হয় বার্তা বিনিময়..
নীলাশা লক্ষ করে,অরিন্দমের পরিবর্তিত গতিবিধি..
কোনো এক গোধূলির মন কেমন করা লগ্নে, ঠিক হলো, প্রত্যক্ষ ভাবে সাক্ষাৎ করবে অরিন্দম তার অদেখা বান্ধবী সোহিনীর সাথে..
একটু বেলার দিকে দূরভাষে,অফিসে কর্মরত অবস্থায় লেখক মহাশয় নিজের অর্ধাঙ্গিনী’কে জানিয়ে দিলেন… ‘অফিসে কাজের চাপের
অনিবার্য কারণ বশতঃ ওনার ফিরতে দেরি হবে’..
কথাটি শোনা মাত্র’ই,যেন অতলে তলিয়ে যেতে লাগলো নীলাশা..
কাজল’কালো চোখের লবনাক্ত অশ্রু’ধারা কর’জোড়ায় মুছে,,ফেলে আসা সুখ দুঃখের স্মৃতি’গুলি কাটাছেঁড়া করতে লাগলো সে.
আপন চেতনে,অনুসন্ধান করতে লাগলো তার খামতি’গুলি..ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল তাকে.
****************************************************
মুখবই’তে,অর্থাৎ ফেসবুকে, সোহিনীর পার্শ্বচিত্র’খানি দুচোখ ভরে দেখছিলো অরিন্দম..কুয়াশা’মাখা শুভ্র সকালে সদ্যফোটা একগুচ্ছ শিউলি’র ছবি.
কেমন যেন আপন একটা নিবিড় গন্ধের ঘ্রান পেতো সে, সোহিনীর সাথে বার্তা বিনিময় করার সময়..
মুখিয়ে ছিল সে মেয়েটির সাথে দেখা করার জন্য.
****************************************************
পড়ন্ত বিকেলের আবেগ তাড়িত আলোয় খোলা জানালার ধারে বসে,শূন্য হৃদয়ে নীলাশার কণ্ঠ দিয়ে,একরাশ অবহেলিত সুর খেলা করছিলো : …”তুই ফেলে এসেছিস কারে,মন মনরে আমার,
তাই জনম গেলো শান্তি পেলিনা’রে , মন..মনরে আমার…”
ভারী অপূর্ব গানের গলা নীলাশার…
একদা একটি সংগীত সন্ধ্যায় নীলাশার গানের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে ভেসে গিয়েছিলো অরিন্দম সুদূর অচিন জাহ্নবী’ সীমান্তে..তারপর এক বন্ধুর মারফত আলাপচারিতা….
-এভাবেই শুরু হয়েছিল তাদের পূর্বরাগের পর্ব..
সেই সব কিছু আজ একেবারেই মিথ্যে মনে হচ্ছিলো নীলাশার..
এইকদিন সোহিনী নামের একটি নকল প্রোফাইল বানিয়ে সেটি থেকেই বার্তা পাঠাতো সে অরিন্দম’কে.
অজান্তেই কেমন যেন দূরত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিলো দুজনার….কিঞ্চিৎ খুচরো খুশির উন্মাদনা’টুকু বাঁচিয়ে রাখতে এইরূপ পদক্ষেপ নিয়ে ছিল সে..কিন্তু বোঝেনি সত্যি সত্যি’ই অরিন্দম কোনো নবীনের খোঁজে আলগা করে দেবে বন্ধন.
আস্তে আস্তে নিজেকে আয়নার সামনে আনলো নীলাশা ….নিজেকে আপাদমস্তক দেখে একটু একটু করে হয়তো,অরিন্দমের অবহেলার কারণটি আবিষ্কার করতে পারছিলো সে..
মনে উঠলো অকাট্য প্রশ্নের ঢেউ..
-“অরিন্দম তো সব’ই জানতো,,সব কিছু বুঝেই তাকে আপন করেছে সে,,তবে কেন এ পরিবর্তন?”
****************************************************
সহসা ডোর’বেলের শব্দে বিচলিত হলো মনটা যেন আরও..
কাজের মাসি দরজা খুলে দিলো…
চেনা পদক্ষেপ শুনে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো নীলাশা..
বেশ কিছুটা অবাক হলো সে !
অবাক দৃষ্টি’তে এগিয়ে আসছে অরিন্দম..
নীলাশা মনে মনে ভেবে ডুকরে কেঁদে উঠলো : নিশ্চই কাল্পনিক সোহিনী’কে বাস্তবে না পেয়ে ভেঙে পড়েছে তার মনের মানুষটি..
–“কিগো, তাড়াতাড়ি এলে যে? “
মেকি কৌতূহলের ডালি সাজিয়ে প্রশ্ন নিবেদন করলো নীলাশা .
কোনো কথা না বলে হুইল চেয়ারের হাতল দুটি যত্ন করে ধরে আস্তে আস্তে সেটিকে ঠেলে শয়নকক্ষে নিয়ে যাচ্ছিলো অরিন্দম..
হুইলচেয়ারে বসা নীলাশা,একদৃষ্টে অবাক হয়ে অনুভব করছিলো তার স্বামী অরিন্দমের গতিবিধি.
খুব শান্ত ভাবে প্রশ্ন করলো নীলাশা :
–“কি ছেলেমানুষি বলোতো?…কিছু বলছনা যে ?”
পেছন থেকে বাহু’বন্ধনে স্ত্রী নীলাশা’র কোমর আবদ্ধ করলো অরিন্দম..
এতদিন পর অরিন্দমের উষ্ণতা পেয়ে তৃপ্তির মাতাল সুবাসে উদ্ভাসিত হচ্ছিলো নীলাশার দেহমন..
নীলাশার কানের লতিতে আলতো কামড় বসিয়ে অরিন্দম মুচকি হেসে বললো :
–“আমি’তো আমার বান্ধবীর সাথেই দেখা করতে এসেছি..ঘড়ি দেখো…বিকেল সাড়ে’পাঁচটা..এই সময়’টিই তো নির্ধারণ হয়েছিল সোহিনীর সাথে দেখা করার…তাইনা?”
শরমের চাদরে জড়িয়ে,দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকলো নীলাশা..
নীলাশার গালে উষ্ণ চুম্বনের স্তবক বসিয়ে অরিন্দম বললো :
–“ওগো ! বিয়ের আগে পরান সঁপেছি তোমায়…এতো সহজে ভুলবো তোমায়,ভাবলে কিভাবে পাগলী ! তোমার মানুষ তোমার’ই থাকবে সারাজীবন..”
ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো নীলাশা …
****************************************************
রাত্রে শয্যায় এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে নীলাশা,অরিন্দম কে শুধালো :
–“ওগো ! এইকদিন’যে একটু উপোষ করে কাটাতে হবে তোমায় ! ভীষণ যন্ত্রনা,,দেহে হায় প্লাবন !..
কোনো উত্তর না দিয়ে নীলাশার কপালে ঠোঁট রেখে,আলতো করে জড়িয়ে তার সাথে সুখস্বপ্নে হারিয়ে গিয়েছিলো অরিন্দম..
****************************************************