” আপনাকে কতোদিন বলেছি মা,যে যেখানে সেখানে পেরেক ঠুকবেন না।সুস্থ,সুন্দর জিনিস দেখলে কি আপনার চোখ কটকট করে?এ কি আপনার সেই স্যাঁতলা পড়া পুরোনো দেওয়াল পেয়েছেন?এই কিছুদিন আগেই একগাদা টাকা খরচ করে আপনার ছেলে রং করালো।ডিস্টেমপার এর দাম সম্পর্কে কোনো আইডিয়া আছে আপনার?”
ভয়ে কুঁকড়ে গেলেন সরলা দেবী।প্রথমে ভেবেছিলেন এইটুকু বলেই বড়বৌমা নিস্তার দেবে….বড়খোকার কান পর্যন্ত যাবে না কথাটা।কিন্তু সরলা দেবীর সমস্ত দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা কে নস্যাৎ করে রাতে খাবার টেবিলে উঠলো কথাটা–” দেখো, মা তোমার শখের দেওয়াল এর কি হাল করেছে।”
খাওয়া ছেড়ে রণিত উঠলো,প্রায় এক লাফে পৌঁছে গেলো দেওয়ালের কাছে।ধীর পায়ে খাবার টেবিলে এসে বসলো আবার।কিছুক্ষনের নীরবতা।তারপর ঝনঝন করে খাবার প্লেট ছিটকে পড়লো ঘরের কোণে——” বলিহারি যাই তোমার মা।বাবার ঐ ছবিটা কি দেওয়ালে না টাঙালে চলছিলো না তোমার?এক পয়সা সাহায্য করার মুরোদ নেই।নষ্ট করার বেলায় মুখিয়ে আছে সব।বলি অতোই যদি বাবার ওপর ভালোবাসা,তবে ছবিটা তো মাথার নীচে রেখে শুলেই পারো। যতোসব আদিখ্যেতা।”
এই ছেলের রাগকে বিলক্ষণ চেনেন সরলা দেবী।ছোট থেকেই উদ্ধত।বড়োদের সম্মান করে কথা বলতে শেখে নি।তবুও মায়ের মন।ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন ছেলের দিকে—” তুই তো মুখে কিছুই তুললি না।বৌমাকে বলি আবার কিছু গুছিয়ে দিতে?”
” বেশী দরদ দেখাতে এসো না মা।আমি মরছি নিজের যন্ত্রণায়,আর উনি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে এসেছেন।তুমি তো গান্ডেপিন্ডে গিলেছো।যাও এবার নিজের রুমে গিয়ে আমাকে কৃতার্থ করো।”
বড়ো ছেলের কথা শুনে আস্তে আস্তে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যান সরলা দেবী।বড়খোকা হয়তো জানতেও পারবে না যে দেওয়ালের রং চটিয়ে দেওয়ার ভয়ে আজ সরলা দেবীর গলা দিয়ে কিছু নামেনি।বৌমাও কোনো জোর করে নি।ঘর বলতে ছোট্ট একটা ঘুপচি কামরা।এতোই ছোট যে রাতবিরেতে বাথরুম যাওয়ার জন্য ঘুম চোখে বিছানা থেকে নামলে দেওয়ালের গায়ে ধাক্কা খান।ছোট্ট একটা দড়ির খাট আর তাতে ততোধিক ময়লা একটা তেলচিটে চাদর।জানালার শিক থেকে একটা দড়ি টাঙিয়ে তাতে জামা কাপড় রাখা।খোকা যখন ঘর রং করালো তখন এই রুমটার কথা চিন্তাতেও আনেনি বোধহয়।ভাড়ার ঘর হিসেবে তৈরি করেছিলো–পুরোনো আসবাব পত্র ফেলে রাখবে বলে।তা মায়ের থেকে পুরোনো আসবাব আর কিই বা পাওয়া যাবে।তাই এটাই সরলা দেবীর ভাগ্যে জুটেছে।বসত বাটি বিক্রি করার কথা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেন নি।ওদের বাবা চলে যাওয়ার পর শ্বশুরের ভিটে আগলে পড়ে থাকতে চেয়েছিলেন।বিয়ে হয়ে আসার পর নিজের হাতে বেশ কিছু গাছ পুঁতেছিলেন।সেগুলো ফলে ফুলে ভরিয়ে রেখেছিলো তাকে।কিন্তু দুই ছেলে মোটেও সময় দিলো না তাকে।নিয়মভঙ্গের কাজ মিটে যাওয়ার পর একদিন দুপুরে ছোটখোকার মুখে শুনতে হলো কথাটা—-” মা,আমার ছুটি তো প্রায় শেষ হতে চললো,ব্যাঙ্গালোরে ফিরতে হবে।তাছাড়া রূপের ও স্কুল,টিউশন সব কামাই হচ্ছে।তাই গতকাল রাতে আমি আর দাদা মিলে ঠিক করেছি যে এই বাড়ি বিক্রি করে দেবো।দাদা তো একটা ফ্ল্যাটের জন্য অ্যাডভান্স ও দিয়ে দিয়েছে।তা তুমি এবার ঠিক করো যে তুমি কার সাথে থাকবে।আর বাড়িটা যেহেতু তোমার নামে তাই জরুরি কাগজপত্রে সব সই করে দিয়ো।”
সরলা দেবী জানতেন যে এই সিদ্ধান্তের নড়চড় হবে না।ওরা আটঘাট বেঁধেই নেমেছে।তবুও ক্ষীণ কন্ঠে একটা মৃদু প্ৰতিবাদ করার চেষ্টা করেছিলেন–” এই বাড়ি তোরা বেঁচে দিবি বাবু?এখনও তো এর আনাচে কানাচে তোর বাবার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই আমি।তাছাড়া ঐ আম গাছটা।আর কিছুদিন পরেই মুকুল আসবে।তোরা বরং এই চিন্তাটা বাদ দে বাবা।বড়খোকা যদি ফ্ল্যাট নিয়ে চলেই যায় তবে আমি দিব্যি এখানে একাই থেকে যেতে পারবো।তোরা বরং মাঝে মাঝে আমাকে এসে দেখে যাস।এই শেষ বয়সে আমাকে নিয়ে আর টানা হ্যাঁচড়া নাই বা করলি?”
রণিত একদিকে বসে সব শুনছিলো।এবার গলা তুললো—-” এমন বেআক্কেলে কথা বলো না তুমি মা,দারুণ হাসি পায় আমার।এই ক বছরের চাকরিতে কি আর অতো বড়ো ফ্ল্যাট কেনা যায় মা?এই বাড়ি বিক্রির কথা মাথায় রেখেই সাহস করে অ্যাডভান্স দিয়েছিলাম।যা টাকা পাবো তা আমি আর ভাই ভাগাভাগি করে নেবো।আর এখানে তুমি একা থাকবে—–এই চিন্তা মাথা থেকে বাদ দাও তুমি।তোমার সিকিউরিটির একটা ব্যাপার আছে।”
মায়ের দিক থেকে এবার রণিত ফিরলো ভাই এর দিকে—” তুই যেনো কি কথা বললি সমু– মা কার কাছে থাকবে?মা তো আমাদের সবার।তাই আমি ঠিক করেছি মা আমাদের দু ভাই এর বাড়িতে ছ মাস–ছ মাস করে থাকবে।সেটাই ভালো হবে বল?তোর ও চাপ হবে না,আমারও না।”
” একটু ভেবে কথা বলো দাদা “–সম্বিত দাদার মুখোমুখি হয়—” মা জন্মাবধি বেঙ্গলে থেকে এসেছে।এখানকার ভাষা,কালচার এর সাথে মা পরিচিত।ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে মা মানাতে পারবে না রে।মা বরং তোর কাছেই থাক।আমি নয় আমার ভাগে যে ছ মাস পড়বে তার দরুন কিছু টাকা পাঠিয়ে দেবো তোর কাছে।”
রে রে করে রুখে এলো রণিত–” সেটি তো চলবে না ভাই।তুমি ব্যাঙ্গালোরের দোহাই দিয়ে তোমার ভাগের ছ মাস ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছো।হয়তো প্রথম বছর কিছু টাকা পাঠালে,তারপর কাঁচকলা দেখালে।তোমাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি ভাই।যতো দিন যাবে মায়ের রোগ জ্বালা ততো বাড়বে।আমরা এখানে গু মুতের কাঁথা কেচে মরি,আর তুমি ওখানে বউ ছেলে নিয়ে ফূৰ্ত্তি করো।আমার সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।ছ মাস– ছ মাস……….ব্যাস।”
সেই থেকে এই ঘুপচি ঘরই সরলা দেবীর আস্তানা।উঠতে বসতে বৌমার খোটা আর ছেলের চোখ রাঙানি সহ্য করে বেশ আছেন।ওদের বাবা চাকরি থেকে অবসরের পর যে সামান্য কিছু টাকা পেয়েছিলেন তাই দিয়ে পোস্ট অফিসে একটা জয়েন্ট MIS ACCOUNT খুলেছিলেন।সুদ বাবদ মাসে হাজার দেড়েক টাকার মতো পান।বড়খোকার সাথে ডাকঘরে গিয়ে টিপছাপ দিয়ে টাকা তোলার পর নিজের হাতে কিছুই পান না।বড়খোকাকে একবার বলতে গিয়ে ধমক খেয়েছেন–” তুমি টাকা দিয়ে কি করবে মা?যা দরকার সবই তো হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছো।”
কিছুদিন পরের কথা।সকালে উঠে পুজোর ফুল তুলছিলেন।মোবাইলে বড়ো ছেলের উত্তেজিত কথা শুনে থমকে দাঁড়ালেন—” ছ মাস পেরোনোর পর তো আরও তিন দিন গড়িয়ে গেলো ভাই।আসছিস কবে?অ্যাঁ,কি বললি–ছুটি পাচ্ছিস না।আমি জানতাম তুই আমাকে ল্যাজে খেলাবি।এই ভয়টাই আমি করেছিলাম।তাও যদি মায়ের পেনশন থাকতো।তুই তাড়াতাড়ি আসার ব্যবস্থা কর।তোর কথা বড্ড কেটে কেটে আসছে।কি বলছিস—মা কে টিকিট কেটে ট্রেনে চাপিয়ে দেবো।তুই ব্যাঙ্গালোরে নামিয়ে নিবি।আচ্ছা তবে তারই ব্যবস্থা করছি।”
শিউরে উঠেছিলেন সরলা দেবী।যে মানুষটা জীবনে কোনদিন বাঁকুড়া থেকে একা খড়গপুরে বাপের বাড়ি যাননি,তিনি যাবেন দুদিন ট্রেন জার্নি করে ব্যাঙ্গালোরে।নিজেকে বড্ড ছোট মনে হতে থাকে সরলা দেবীর।এতোটাই কি গলগ্রহ তিনি।বাকী জীবন কি এভাবেই টেনিস বলের মতো একবার এ-কোর্ট একবার ও-কোর্ট করে বেড়াতে হবে।ভগবান কি তার ভাগ্যলিপি টা এভাবেই লিখেছিলেন?
কিন্তু ভগবান একটা জিনিস তাকে উজাড় করে দিয়েছিলেন–সেটা সহ্যশক্তি।কখনোই প্রতিবাদ করতে পারেননি।করলেও অবশ্য ধোপে টিকতো না।তাই একদিন সমস্ত ভয় কে বুকে চেপে উঠে বসলেন ট্রেণে।বড়খোকা একটা মেকি সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো—” কোনো চিন্তা নেই মা,মোটে দুটো রাত।ওখানে পৌঁছেই ভাইকে দেখতে পাবে স্টেশনে।”
ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পর একরাশ ভয় চেপে ধরেছিলো সরলা দেবী কে।এখন দু দিনের জন্য এই ছোট্ট সিটটাই তার সংসার।কারো সাথেই যোগাযোগ রাখা যাবে না।মোবাইলের ব্যবহারও তিনি জানেন না।সম্বল বলতে ঐ ছবিটা যেটা ব্যাগের এককোণে ভরে নিয়েছেন সরলা দেবী।আর আছে গোপাল ঠাকুর।সাথে শুকনো খাবার ছিলো।তবে ভয়ে জল প্রায় খাননি বললেই চলে।পাছে বাথরুমে যেতে হয়।দু রাত প্রায় বিনিদ্র কাটিয়ে পৌঁছে গেলেন গন্তব্য স্টেশনে।নিজের ছোট ঝোলাটা সাথে নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলেন গাড়ির দরজার দিকে।
” আসুন মা,আমি বেশ কিছুক্ষণ আগেই চলে এসেছি।ট্রেন প্রায় দেড় ঘন্টা লেটে ঢুকলো “—–ছোটবৌমা কে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না সরলা দেবী।হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
” নিজেকে শক্ত করুন মা,আমি বুঝতে পারছি আপনার অবস্থা।দুই দ্বায়িত্ববান ছেলের জন্ম দিয়েছেন যে।এটুকু কষ্ট তো করতেই হবে আপনাকে।আপনার ছোট ছেলে তো অফিসের দোহাই দিয়ে স্টেশনে আপনাকে নিতে পর্যন্ত আসতে পারলো না।চলুন মা,অনেক ধকল গেলো আপনার ওপর দিয়ে।”
কথাগুলো কেমন যেন অন্যরকম শোনালো সরলা দেবীর কানে।এমন কথা তো শোনার তেমন অভ্যেস নেই।বিশ্বাস করতে ভয় হয়।তবে এই ছোটবৌমা বরাবরই একটু অন্যরকমের।স্পষ্টবাদী,দৃঢ়চেতা।অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে শেখেনি।
দু কামরার ফ্ল্যাট।নাতির রুমেই আপাতত সরলাদেবীর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।বেশ ফুটফুটে ছেলে—ক্লাস ফোরে পড়ে।জন্মের পর বিশেষ পায়নি ঠাম্মা কে।এখন একটা পাকা চুলের বুড়ি কে পেয়ে দারুণ আনন্দ ——-” আমি জানতাম তুমি আসছো,মাম্মা বলেছে আমাকে।এবার কিন্তু আমি তোমার কাছে রোজ রাতে গল্প শুনবো।”
নাতিকে বুকে টেনে নেন সরলা দেবী।আহহ,কি তৃপ্তি।হঠাৎই একরাশ ভালোলাগার গন্ধ পান সরলা দেবী।ছোটবৌমা গরম গরম ভাত,ঘি আর আলুসেদ্ধ বেড়ে দিয়েছিলো।বড্ড তৃপ্তি করে খেলেন সরলা দেবী।তারপর টানা একটা ঘুম।
সন্ধ্যে নাগাদ ঘুম ভাঙলো।দেখলেন ছোটখোকা বাথরুম থেকে গা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছে–” তারপর মা,মোটামুটি ছ মাসের জন্য তাহলে এখানে ঘাটি গাড়লে।খুব ভারী হয়ে গেছিলে বুঝি দাদার সংসারে।কিন্তু এখানে আমার আলাদা রুম নেই মা।ঐ রূপের সাথেই ভাগাভাগি করে থাকতে হবে।ওর অবশ্য তাতে পড়াশোনার খুব ডিস্টার্ব হবে।কি আর করা যাবে?”
মনটা আবার কেমন তেতো হয়ে গেলো সরলা দেবীর।ছোটবৌমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকছিলো।থমকে দাঁড়ালো—” তোমার ছেলে মাত্র ক্লাস ফোর সম্বিত।ঠাম্মার সাথে রুম শেয়ার করলে ওর তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।আর যদি তাই হয় তবে এই কদিন সন্ধ্যেবেলা তাসের আড্ডায় না গিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে বসবে।”
সম্বিতের চোখ কেমন যেনো গোলগোল হয়ে যায়—” বাব্বা,রুমি,এ যে দেখছি ভুতের মুখে রাম নাম।দেখি কতোদিন শাউড়ি ঠাকুরন কে সহ্য করতে পারো?”
কিন্তু সম্বিতের সব ধারণা কে নস্যাত করে শাশুড়ি বৌমারমধ্যে অদ্ভুত একটা ভালোবাসা সবার অলক্ষ্যেই যেনো তৈরি হয়ে যায়।সম্বিত সকালে অফিস বেরোনোর আগে দেখে রান্নাঘরে মা খুন্তি নাড়ছে,আর বসে বসে তরকারি কাটছে রুমি।মাঝে মাঝে মায়ের উঁচু গলা কানে আসে—ওওও বৌমা,মাছের ঝোলের আলু এমন কেটেছো কেনো মা?সরো,আমি দেখিয়ে দি তোমায়।”
কখনও বা রুমির উচ্চকন্ঠ শোনা যায়–” মা,
এরপর খুন্তি ছেড়ে আপনি স্নানে যান।পূজো না হলে আপনি তো আবার কিছু দাঁতেও কাটবেন না।”
সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে ফিরে সম্বিত দেখে,রূপ একমনে ঠাম্মার সামনে বসে গল্প শুনছে–” বুঝলি দাদুভাই,যেইনা সীতা গন্ডির থেকে বেরিয়েছে,অমনি রাবণ তাকে রথে তুলে নিয়ে চম্পট দিয়েছে।”
কেমন যেনো নেশার মধ্যে দিয়ে পাঁচ মাস কেটে গেলো।রূপ এখন ওর ঠাম্মার সাথেই স্কুলে যায়।রুমি ও বিকেলে শাশুড়ি কে নিয়ে মল থেকে ঘুরে আসে।
একদিন রাতে বিছানায় শুয়ে সম্বিত পাড়লো কথাটা–অ্যাই শুনছো,মা এর তো যাওয়ার সময় হয়ে এলো।রিজার্ভেশন করতে হবে।একাই পাঠিয়ে দেবো।এবার মায়ের আর অতো অসুবিধে হবে না।”
” মা আর যাবে না সম্বিত “—বলে রুমি পাশ ফিরে শুলো।
চমকে উঠলো সম্বিত।কি বলছে রুমি এটা—” বলি নেশা করেছো নাকি?যাবে না মানে??আমৃত্যু কি মা কে আমিই বইবো।এ যে দেখছি মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশী।আরো বয়স হলে সেবা করতে পারবে?”
” হ্যা,পারবো সম্বিত।ছোটবেলায় মা কে হারিয়েছি।এই পাকা চুলের মানুষটার মধ্যে আমি যে আমার মা কে খুঁজে পেয়েছি সম্বিত।এতোদিন তেমন বুঝতাম না অভাব টা।কিন্তু একবার যখন পেয়েছি তখন তো আর ছাড়তে পারবো না।আর ছেলের কাছে তোলো তো দেখি কথাটা।ঠাম্মাকে ছাড়া থাকতে পারবে ও?? নিজের মাকে ভাগের মা বানাতে তোমাদের ভালো লাগে সম্বিত?বাকী জীবনটা না হয় ঐ বৃদ্ধা মানুষটা আমাদের মা হয়েই থাক।”
সম্বিত চেনে এই মানুষটাকে।এর কথার নড়চড় হয় না।ঠিক ছ মাসের মাথায় মাথায় ব্যাঙ্গালোর থেকে বাঁকুড়া তে একটা ফোন গেলো।ফোনটা করেছিলো সম্বিত নিজে—-
—-” শোন দাদা,মা কে আর পাঠালাম না।তোর যদি মা কে দেখার ইচ্ছে হয় তবে দয়া করে এখানে এসে দেখে যাস।”
( সমাপ্ত )