” বিভাস ছেলেটি বেশ হ্যান্ডসাম, ব্যাচমেট মেয়েগুলি ওর জন্য এককথায় পাগল …সেই লাইমলাইটে বিচরণ করা ছেলেটি কিনা শেষমেশ আমায় প্রপোসাল দিলো !”
–কথাটি আপনমনে ভাবতে ভাবতে মিষ্টি উত্তেজনায় ভেসে যাচ্ছিলো পাপিয়া.
দুপুরের পর একতলার একটি ফাঁকা ক্লাসঘরে নিজের মনের কথা জানিয়েছিল বিভাস.
বিভাসের সম্মুখে সেইমুহূর্তে কিছুই সেভাবে প্রকাশ করতে পারেনি পাপিয়া..
উন্মাদনায় ভরে উঠেছিল মেয়েটির সর্বাঙ্গ..
শুধু মুচকি হেসে একছুটে বেরিয়ে এসেছিলো সে ক্লাসঘর থেকে..
_______________________________________________
কলেজ ছুটি হওয়ার পর বাস স্টপেজের উদ্যেশ্যে পা মিলিয়েছিল মেয়েটি শুভ’র সাথে..
–‘শুভ ?’
শুভ পাপিয়ার সহপাঠী. এক’ই স্ট্রিমে পড়াশোনা করে দুজনে..
এককথায় হরিহর আত্মা যাকে বলে বাংলা অভিধানে..
ঝগড়া,ঠাট্টা,তামাশা,গালিগালাজ…সব কিছুর সাথী দুজনে..
চোখে পড়ার মতো বন্ধুত্ব দুজনার..
——————————————————————————
দুপুরের ব্যাপারটা শুভ কে বলার জন্য যেন মুখিয়ে ছিল পাপিয়া,,
অপেক্ষায় ছিল কখন সে শুভ কে একান্তে পাবে..
স্টপেজের পথে যেতে যেতে, প্রাণ খুলে শুভ’কে সব’টা জানালো পাপিয়া.
একগাল হেসে শুভ বলেছিলো–
–“বাহঃ ! দারুন খবর ! দারুন মানাবে তোদের দুজন’কে”
লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলো পাপিয়ার মিষ্টি মুখখানি.
–“এই যে লজ্জাবতী ! তোর বাস আসছে ,উঠে পর..”
—“তুই উঠবিনা ?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল পাপিয়া .
–কলেজ স্ট্রিট যাবো, কয়েকটা বই কিনে ফিরবো.
পাপিয়া কে বাসে তুলে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো শুভ..চোখে তার বিন্দু বিন্দু অশ্রুকণা.. কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলো গুটি গুটি পায়ে.
—————————————————————————-
তিন দিন পর…
পাপিয়া কে আজ ডানাকাটা পরীর মতো রমণীয় লাগছে .
একঝলক দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো,বেশ পরিপাটি করে নিজেকে প্রস্তুত করেছে সে.
আজ বিভাসের সাথে প্রথম ডেটে বেরোচ্ছে সে.. গতকাল ফোনে মোটেও কথাটি বলতে কার্পণ্য করেনি সে শুভ’কে .
ঘড়ির কাঁটা ছুঁয়েছে দুপুর সাড়ে বারোটা..
বিভাস ও পাপিয়া ..
দুজনেই যথাক্রমে নিজেদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো একটু আগু পিছু হয়ে .
কলেজ গেটের উল্টো দিকে,অদূরে ভোলার চায়ের দোকানে একটি বেঞ্চিতে বসে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল শুভ..
গল্পের পটপরিবর্তন..
স্বল্পজনবসতি এলাকার বনবিতান কুঞ্জে, টিকিট সংগ্রহ করে নব্য যুগল কে দেখা গেলো, পায়ে’পা মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে অন্দরে.
পাপিয়ার হাতে পপকর্ণের একটি বাস্কেট. কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ.
——————————————————————————
বেশ কিছুটা গভীরে প্রবেশ করার পর, স্বাবলীল ভঙ্গি’তে পাপিয়ার বাম হাত শক্ত করে ধরলো ছেলেটি .
স্লিভলেস শর্টকুর্তি,ও মানানসই জিন্সে ঢাকা পাপিয়ার আকর্ষণীয় ওঠা নামা গুলো গোগ্রাসে গিলছিল বিভাস.
বিভাসের শরীরীভাষা দেখে, কোনো অজানা আতঙ্কে না জানি কেন পাপিয়ার গলা শুকিয়ে প্রায় কাঠ হয়ে গেলো.
হঠাৎ করে তার মনে হলো, সে বোধয় আজ কোনো আগন্তুকের সাথে এতটা পথ পেড়িয়ে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে অচেনা এক স্থানে উপস্থিত হয়েছে..
সামনের একটি বেঞ্চিতে বসলো দুজনে..নিজেকে বেশ কিছুটা সামলালো পাপিয়া.
কিছু স্বাভাবিক কথোপকথনের বিনিময় হলো দুজনার মধ্যে.
আসেপাশে বেশ কয়েকটি উন্মত্ত প্রেমিক যুগল কে অশালীন অবস্থায় দেখে ভাষাহীন হয়ে যাচ্ছিলো পাপিয়া.
——————————————————————————
কথাপ্রসঙ্গে ব্যস্ত হওয়ার মাঝে সুযোগ বুঝে, পাপিয়ার কাঁধে হাতরেখে নিজেকে আস্বস্ত করলো বিভাস.
একটা অপ্রকাশিত উদ্বেগে আচ্ছন্ন হয়ে উঠলো পাপিয়া.. সে যেন তৈরী ছিলোনা এতো তাড়াতাড়ি এইরূপ আবদার সহ্য করার জন্য..
তার মুখের ভাষা গিয়েছিলো হারিয়ে. কলেজের সহজ সরল ছেলেটিকে যেন মেলাতে পারছিলোনা কিছুতেই.
পাপিয়ার মৌন মনোভাব’কে অবাঞ্চিত আস্কারা বুঝে উৎসাহের সাথে বিভাসের উষ্ণ হাত জড়িয়ে নিলো মেয়েটির নরম কোমর..
মুহূর্তে কেঁপে উঠলো পাপিয়ার শরীর..
বিভাসের চোখের ভাষা গেলো পাল্টিয়ে..কোনো সময় নষ্ট না করে, ঠোঁট বসালো সে পাপিয়ার কাঁধে..
——————————————————————————
গল্পের পরবর্তী পটভূমি…
চোখ মুছতে মুছতে দ্রুত পায়ে পাপিয়া’কে পার্কের প্রবেশ পথের দিকে ফেরত আস্তে দেখা গেলো..
বেশ কিছুটা পেছনে, ইতস্তত ভাবে আসতে দেখা গেলো বিভাস’কে..
গেট থেকে বেড়িয়ে রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে দিশাশূন্য হয়ে রাস্তা পেরোতে যাবে,, এমন সময় সহসা কে যেন হাত চেপে ধরলো পাপিয়ার.
ঘাড় ঘুড়িয়ে নিথর হয়ে দেখছিলো সে শুভ’কে.. দুচোখ ভরে দেখছিলো তার চেনা সঙ্গী’টি কে. যেন সম্বিৎ ফিরে পেলো মেয়েটি ..
কিছু একটা ভেবে নিয়ে ঠাস করে একটা চড় বসালো শুভর গালে !
শুভর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই,, চিৎকার করে অভিমানী মেয়েটি বলে উঠলো —
—” কোথায় ছিলি এতক্ষণ স্টুপিড?”
নির্লিপ্ত হয়ে পাপিয়া জড়িয়ে ধরলো শুভ’কে.
পাপিয়ার ফর্সা গালে গড়িয়ে পড়া ,কাজল কাদা নোনাজল দেখে, সম্পূর্ণ জলছবি’টা পরিষ্কার হয়ে গেলো শুভর কাছে..
——————————————————————————
এতক্ষনে এগিয়ে এসেছে বিভাস.
শুভর দুচোখ দিয়ে যেন আগুন ঠিকরে পড়ছিলো.. পাপিয়া কে ছেড়ে,ফুল স্লিভ শার্টের হাতা গুটিয়ে এগোতে গেলো শুভ.
হাত চেপে ধরলো মেয়েটি
…ইশারা করে বললো —‘না..এসব একদম না’..
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্যাক্সি’তে উঠে পড়লো দুজনে..
ধোঁওয়া ছুটিয়ে রওনা দিলো ট্যাক্সি..
——————————————————————————
সারাটা পথ কোনো কথা হয়নি দুজনার..শুধু একবার ফিস্ ফিসিয়ে শান্ত কাঁপা গলায় পাপিয়া বলেছিলো:
–“প্লিস মাথা ঠান্ডা কর, তেমন কিছু অসভ্যতামো করতে দেইনি রাস্কেল’টাকে”
শুভর কাঁধে মাথা রেখে দীর্ঘ্য পথ অতিক্রম করেছিল পাপিয়া..
বাড়ির কিছুটা কাছে এসে ট্যাক্সি থেকে নামার আগে, অবাক হয়ে শুভ’কে একটা প্রশ্ন করেছিল পাপিয়া..
—” তুই তো বোধয় বুঝতে পেরেছিলি বিভাস ভালো ছেলে নয়,অন্ততঃ আমার তাই মনে হয়..
তাহলে কেন আমায় যেতে দিলি ওর সাথে ? তাহলে তোকেও এতটা কষ্ট করে এতদূর যেতে হতোনা.”
শুভ ছিল নির্বাক ! কোনো উত্তর দিতে পারেনি সেদিন সে পাপিয়ার প্রশ্নের …
——————————————————————————
তারপর কেটেছে বেশ কিছু বছর ,বয়েছে সময়ের অগুন্তি ঢেউ..
বর্তমানে শুভ রয়ে গিয়েছে সেদিনের মতো আজ’ও ভাষাহীন,নির্বাক..
অফিস ছুটির পর, যখন বাজার সেরে ক্লান্ত হয়ে শুভ বাড়ি ফেরে…
তখন কেনা জিনিসপত্র মিলিয়ে মিলিয়ে দেখে তার স্ত্রী পাপিয়া বলে ওঠে–
–“কিগো ! সকালে যে তোমাকে বললাম,ফেরার সময় একটা পিঙ্ক,আর একটা নীল রংয়ের টু বাই টু ৩৪’এর ব্লাউস কিনে আনবে, সেটাও ভুলে মেরে দিয়েছো? “
–মাথা চুলকাতে চুলকাতে শুভ আবারো রয়ে যায় মৌন..
——————————————————————————
সমাপ্ত …
ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না …❤️