“বলছি লজ্জা পেয়ে কি লাভ,শুতেই যখন হবে আমার সাথে!”, অমিত কথা টা বলেই, ছিটকিনি তুলে দিল। সামনে ফুলশয্যার খাটে,বসে আছে বিদিশা। চোখের দৃষ্টিতে চূড়ান্ত বিস্ময়। সে ঠিক শুনছে তো!অমিত ততক্ষণে ওর ঠিক পাশে এসে বসেছে।তার দুচোখ বিদিশাকে চেখে নিচ্ছে আপাদমস্তক। অমিত যদিও ওর স্বামী, তাদের বৌভাত হয়ে গেল আজকে, তবুও কেন জানিনা বিদিশার অমিতের এই তাকানো টা ভালো লাগল না। অমিত অদ্ভুত একরকমের হাসি দিয়ে উঠে গেল বিছানা থেকে। ঘরের অন্যদিকে একটা আলমারি আছে, বিদিশার বাবা ই যৌতুক হিসেবে দিয়েছে। অমিত আলমারি টা খুলে তার ভিতর থেকে কালো রঙের ট্রান্সপারেন্ট একটা নাইটি এনে বিদিশার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল,”বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও। এইটা আমি কিনে রেখেছি তোমার জন্য।” বিদিশার বিস্ময় এর ঘোর যেন কাটতেই চায়না। এটা কোথায় এসে পড়ল সে!
তবে একবার কাউকে না জানিয়ে সম্রাট দের বাড়ি গিয়েছিল সে,সম্রাটের অনুরোধেই অবশ্য। সম্রাটের বাড়ির দোতলার একটা ঘরে স্টুডিও আছে, ওর নিজের। সেই স্টুডিওর দেওয়ালে নিজের ছবির পর ছবি সযত্নে সাজানো দেখে সেদিন কেঁদেই ফেলেছিল বিদিশা। ভাঙা ভাঙা গলায় জিজ্ঞাসা করেছিল,”কেন?”। ওপাশ থেকে সম্রাট বলেছিল,” ভালোবাসি।”। বিদশা ছুটে বেরিয়ে যেতে গেলে সম্রাট ওর হাত ধরে বলেছিল,”অন্তত একদিন থাকো আমার কাছে।” গলার স্বরে এমন কাতরতা ছিল,বিদিশা আর নড়তে পারেনি একপাও।কেবল অস্ফুটে বলেছিল,”বাড়ি থেকে আমার সম্বন্ধ দেখে নিয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেলেই আমার বিয়ে দিয়ে দেবে।”, মাথা নামিয়ে সম্রাট বলেছিল,”জানি। অমিত চৌধুরী। ব্যাঙ্কে কাজ করে। তোমাকে হয়ত অনেক ভালো রাখবে।তবে আমার মতো ভালোবাসতে পারবেনা।”। বিদিশার কেন জানিনা সেদিন মনে হয়েছিল, কথাগুলো অদ্ভুত রকমের সত্যি। সম্রাট বিদিশার হাত ধরে বলেছিল,”তোমার কাছে একটা কিছু চাইলে দেবে!”। বিদিশা যন্ত্রের মতো মাথা নেড়েছিল। সম্রাট বিদিশার কোলের কাছে বসে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল,” এই একটা দিনের জন্য আমার হবে!”
অমিত এসে নাড়া দিল,”কি হল টা কি! আশ্চর্য যাওনা, তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে এসো। আমার বেশিক্ষণ ওয়েট করতে ভালো লাগছে না।” বিদিশা চোখ মুছল। হাতের ড্রেসটা নিয়ে উঠে গেল বাথরুমে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো প্রস্তুত হয়ে। অমিত ততক্ষণে বিছানা পরিষ্কার করে,তৈরি হয়ে বসে আছে। বিদিশা পুতুলের মতো বিছানায় এসে বসল। অবচেতন মনে ভাবল,”এই পৃথিবীতে সম্রাট ও আছে, অমিত ও আছে। কেউ ভালোবাসার প্রত্যেক টা স্পর্শ মনের মধ্যে পৌঁছে দিতে শুধু কটা কথা বলে,আর কেউ শরীরের বেআব্রু হবার আগেই চরিত্র বেআব্রু করে দিতে একবারের বেশি দুবার ভাবেনা।কেউ “ভালোবাসা” দিয়ে “ভালো” “বাসা” বানায়, কেউ মানুষ বলতে শুধু একটা শরীর বোঝে। বিদিশা কল্পনার জগত থেকেই অনুভব করল একটা হিংস্র ঝড় ওর শরীরটাকে তখন নিংড়ে নিচ্ছে।তার প্রতিটা আঘাতে খিদে আছে,ভালোবাসা নেই। বিদিশা চোখ বন্ধ করে নিল। চোখের সামনে তখন সে দেখতে পাচ্ছে, একটা ছেলে তার দুর্মূল্য দুটো চোখে তার দিকে তাকিয়ে হাতে গিটার টা নিয়ে গেয়ে চলেছে ,
…………….
আপনার প্রিয় লেখাগুলো শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জন আর বন্ধুদের সাথে ….
ভালো থাকুন , সুষ্ঠ থাকুন …😊
ধন্যবাদ ।