“আমি ঠিক ছিলাম। আমার ধারনাটাই ঠিক। ও ভুল ছিলো। আমি যেটা ভাবছি ওটাই ঠিক।”
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে যেখানে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ি, সেটাকেই আমরা পাহাড়ের টিলা ভাবা শুরু করে দেই।
কিন্তু বেমালুম ভুলে যাই, বাঁদিক থেকে দেখলে যে জিনিসটাকে 6 মনে হচ্ছে, ডানদিক থেকে দেখলে সেটাকেই 9 মনে হয়।
একটা সম্পর্কে ঝগড়া যেমন খুব সাধারণ একটা ব্যাপার, ঠিক তেমনই সাধারণ ব্যাপার ঠিক ভুলের প্রসঙ্গটা।
ঝগড়ার মুহুর্তে হয়তো আপনার পয়েন্টগুলো ঠিক অথবা আপনার পার্টনার তার যুক্তিগুলোর দিক থেকে নির্ভুল, কখনো আবার এরকমও হয় যেখানে আপনি এবং আপনার পার্টনার দুজনেই নিজের নিজের পয়েন্টে, নিজের নিজের জায়গায় ঠিক- শুধু দেখার দৃষ্টিভঙ্গীটা আলাদা।
আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ঝগড়ার মুহুর্তগুলোতে নিজেদের ঠিক প্রমাণ করতে আঁদা জল খেয়ে লেগে পড়ি; কিন্তু কেউই নিজের ইগোটাকে একটু সরিয়ে রেখে সম্পর্কের খাতিরে ঝুঁকতে পারিনা।
কিন্তু আদতে আমরা ভুলে যাই, সম্পর্কে কোনো হার জিত সত্যিই হয়না। যতোবার আমরা সম্পর্কে ঝুঁকতে ভুলে যাই, যতোবার আমরা জিতে যেতে চাই, ততোবার আমরা আদতে হেরে যাই।
একসাথে দুটো মানুষ থাকলে ভালোবাসার সাথে সাথে মনকষাকষিটাও খুবই কমন। কিন্তু এই মনকষাকষির মধ্যে ইগো যেন ঢুকে না পড়ে। ইগো জিনিসটা একটা সম্পর্ক শুধু না- একটা মানুষকে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
-“আমি কেন মিটমাট করবো?আমি কেন স্যরি বলবো? ভুল তো ও করেছে…”
-“আমার পয়েন্টটা কেন ও বুঝবে না? ওর ভাবনাগুলো ভুল। আমারটা ঠিক। ওর আমার পয়েন্টগুলোকে ফলো করা উচিৎ…”
আসলে আমরা স্যরি বলতে পারিনা। আমাদের ভেতরের ইগো আমাদের স্যরি বলতে দেয় না।
আসলে কিছু কিছু সময় আসে রিলেশনে, যখন আমরা ভুলে যাই- আমাদের কাছে ইম্পর্টেন্ট কোনটা?-
সম্পর্কটা? নাকি, পার্টনারকে ভুল প্রমাণ করে নিজেকে জিতিয়ে দেওয়াটা?
ঝগড়ার সময়গুলোতে দু’মিনিট ধৈর্য ধরে আমাদের পার্টনারের পয়েন্ট অফ ভিউগুলো বোঝার চেষ্টা করাটা কি খুব কঠিন একটা সম্পর্কের সার্থে?
সবসময় আপনিই ঠিক হবেন এই মাথার দিব্যি তো কেউ দেয়নি। সূর্য-কে কেউ দিবাকর বলে, কেউ ভাস্কর; তাই বলে কি আপনি পার্টিকুলার কাউকে ঠিক বা ভুল বলতে পারবেন?
আমার মনে হয় না সেটা।
আবার ধরুন, আপনি ভাবছেন আপনি ঠিক- আপনার পয়েন্ট অফ ভিউটা ঠিক। কিন্তু আপনার পার্টনার সেটা মানতে নারাজ। এক্ষেত্রে যুক্তির পিছে যুক্তি বসালে তর্ক বরং বাড়বে- কমবে না।
আর আমাদের এই জিতে যাওয়ার প্রবণতা আসে আমাদের ভেতরের ইগো থেকে।
“আমার অমুককে ছোটো প্রমাণ করতে হবে… আমার ওকে ভুল প্রমাণ করতেই হবে।”
-আমাদের ভেতরের ইগোটা আমাদের ঝুঁকতে শেখায় না। বরং তিলে তিলে নষ্ট করে সামাজিক সম্পর্কগুলো।
কখনো আমরা ঠিক হলেও সম্পর্কের খাতিরে নিজে ইনিশিয়েটিভ নিয়ে কাউকে স্যরি বলা মানে হেরে যাওয়া নয়।
সম্পর্কে স্যরি বলা মানে একজন ছোটো হয়ে গেলো, বা হেরে গেলো- এটা একেবারেই নয়। বরং স্যরি বলার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ইগোটাকে সরিয়ে, সম্পর্কটাকে আগলে নিয়ে বাঁচতে পারি আরও সুন্দরভাবে। স্যরি বলা মানে, আপনি আপনার ইগোর থেকেও বেশী ভ্যালু দিচ্ছেন আপনার পার্টনারের প্রতি।
ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে একটা স্যরি একজন মানুষকে অনেকটা স্পেশাল ফিল করায়।
কিন্তু এখানেও একটা ব্যাপার আছে। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে নিজেকে আকাশ ভাবাও যেমন ভুল, তেমনই ভুল ঝুঁকতে ঝুঁকতে মাটির সাথে মিশে যাওয়াটাও৷ সম্পর্কে ততোটাই ঝোঁকা উচিৎ, যতোটা ঝুঁকলে নিজের মান সম্মান নষ্ট হয়না। যেখানে দেখবেন অ্যাডজাস্ট করতে করতে নিজের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলছেন, নিজের আত্মসম্মান বিকিয়ে যাচ্ছে, আমি মনে করি সেই সম্পর্কে নিজেকে আগলে না রেখে, সম্মান নয়ে বেড়িয়ে আসাটা বেটার। এটা ইগো না। বরং এটার মানে- আরেকজনের কাছে নিজেকে সস্তা না করা।
যখন দেখছেন দিনের পর দিন হয়তো আপনাকে একতরফা কম্প্রোমাইজ, একতরফা অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে রিলেশনে; আমার মতে তখন রিলেশনটাকে বা নিজেকে টেকেন ফর গ্র্যান্টেড না করে নিজের সেল্ফ রেসপেক্ট নিয়ে বেড়িয়ে আসুন। কারন সেক্ষেত্রে আপনি সত্যিই আরও ভালো কাউকে ডিসার্ভ করেন।
সব শেষে এটাই সত্যি যে-
তুমি আর আমি দু’জনেই আজ মৃত,
হেরে গেছি রোজ, জিততে চেয়েছি যতো;
দু’জনের কেউই পেরোতে পারিনি জেদ;
খোদাই করেছি লাল গোলাপের ক্ষত।
সেদিনের মতো অকপট বোবা জলে,
শহর ভিজেছে বৃষ্টিতে বারবার;
তুমি আর আমি পেরোতে পারিনি জেদ।
মেঘ পেরিয়েছে জ্বলন্ত কাঁটাতার।