” হ্যালো কে বলেছেন ?”
” আমি থানা থেকে বলছি !
” থানা থেকে কেন ? কোন মেয়ের কেস এসেছে নাকি!”
” না সেরকম কিছু নয়। এবারের কেসটা আপনাদের নিজের ।চলে এলেই দেখতে পাবেন।”
” নিজের হবে কেন ! থানায় আমাদের কেউ চাকরি করে না আর আমার ফ্যামিলিতে এমন কেউ নেই যে অপরাধ করে থানায় যাবে ।আমার বর অনেক উঁচুপদে চাকরি করেন আর একমাত্র ছেলে আমার হীরের টুকরো ।সবসময় পড়াশোনা নিয়ে থাকে ।আপনি হয়তো ভুল করে অন্য কোথাও ফোন করতে গিয়ে আমার ঘরে ফোন করে ফেলেছেন। আচ্ছা এখন রাখি। আমি একটু বেরুব ।”
nbsp; ” মোটেও রাখবেন না । এতোগুলো কথা একসঙ্গে বললেন এবার আমার কথা শুনুন ।তাড়াতাড়ি একবার থানায় চলে আসুন তাহলে জানতে পারবেন কে কিসের টুকরো । “
ফোনটা কেটে গেল । নীলিমা দেবী মহিলা সমিতির কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। এই সময় থানা থেকে ফোনটা এল ।এমনিতে তিনি অনেক মেয়েদের সমস্যা নিয়ে অনেকবার থানায় গেছেন। তাকে সবাই চেনে কিন্তু এবার ফোনটা কেন এলো ।একটু অন্যরকম কিছু মনে হচ্ছে ।শানের কিছু হয়নি তো ! একবার শানকে ফোন করবেন নাকি সোজা থানায় চলে যাবেন এটাই ভাবছিলেন ।ফোনটা হাতে নিয়ে শানের ফোন ট্রাই করতেই দেখলেন সুইস অফ্ !
মনে মনে একটু ভয় পেলেন নীলিমা দেবী । শানের ফোন কখনও সুইস অফ থাকে না । কি ব্যাপার !
বাসনগুলো ধুয়ে এসেছে সাধনা । নীলিমা দেবীকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলল, “কি গো বৌদি এই তো এতো তাড়াহুড়ো করে তৈরী হলে কোথায় বেরুবে বলে ।এখন দেখি এখানে বসে আছো !”
” বেরুনোর সময় থানা থেকে ফোন এল।বলছে এখনই একবার থানায় যেতে খুব দরকার ।কেন ফোন করেছে বুঝতে পারছি না।”
“তুমি এত চালাক মানুষ আর তা বুঝতে পারছ না ।দেখ গে কোন মেয়ের কি বিপদ হয়েছে তাই তোমাকে ফোন করেছে । তুমি তো মহিলা সমিতির কি যেন হও না !”
” সবই ঠিক আছে ! কিন্তু এবার ওদের কথা একটু অন্য রকম শোনাল। যাই গিয়ে দেখি কি ব্যাপার ।”
” তাই যাও ,দুগ্গা দুগ্গা ।”
নীলিমা দেবী গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন থানার উদ্দেশ্য । ভাবছেন শান্ এর কথা ।ওরা কেন বললো আসলে জানতে পারবেন কে কিসের টুকরো । শান কিছু করেছে নাকি ! এমনিতে শান খুব বাধ্য ছেলে ।মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এরপর কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে বি,এস,সি ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে । মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এসব ওর পছন্দ নয়। কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করছে কলেজের প্রফেসার হওয়ার ইচ্ছে ওর। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে তার মনে হচ্ছে শানের পড়াশোনায় মন যোগ কমে যাচ্ছে, একটু সুযোগ পেলেই কার সঙ্গে ফোনে কথা বলে । নীলিমা দেবী সবসময় ব্যস্ত থাকেন আর যখন বাড়িতে থাকেন তখন শান ঘরে থাকে না নইলে পড়াশোনা করে বোঝা যায় এসব কারণে মা, ছেলের খুব একটা কথা হয় না । এমনিতে শানের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব ভালো ।কিন্তু সময়ের অভাবে দুজনের কথা বার্তা কম হয়।তাই ওর মনে কি চলছে সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না ।
থানায় গিয়ে যা দেখলেন তাতে তার মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল। শান একটা মেয়েকে আজই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছে। মেয়েটির বাড়ির লোকেরা থানায় কেস করেছে তাই ওদের দুজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে ।কিন্তু দুজনেই এডাল্ট তাই কেউ কিছু করতে পারছে না । আজ শান বেশ সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। বলেছে কলেজের পর কোন বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে যাবে ফিরতে দেরী হবে। এই তার বন্ধুর বাড়ি যাওয়া ! কি কান্ড করেছে তার শান্ত শিষ্ট ছেলেটা !
নীলিমা দেবী ধস করে চেয়ারে বসে পড়লেন।শান ভ্যাবাচাকা হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে । কি বলবে বুঝতে পারছে না ।
মেয়েটির বাবা অনিমেষ সেন বললেন, “দেখুন মিসেস রায় আপনার ছেলে কি কান্ড করেছে । আমার মেয়ের আশীর্বাদ হয়ে গেছে এরপর ওরা কি করল এটা ! আমি আমার মেয়েকে ফিরে যেতে বলছি কিন্তু ও কিছুতেই যেতে রাজি নয় । আপনি একবার ওদের বোঝান এখনও খবরটা ছড়িয়ে পড়েনি ।সামনেই বিয়ে । কেউ কিছু জানার আগেই ওকে বাড়ি নিয়ে যাই। খুব ভালো জায়গায় ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে ।খুব বড়লোক ওরা ।এমন পাত্র কিছুতেই হাতছাড়া করা যায় না ।আপনি মহিলা সমিতির সভানেত্রী তা আমি জানি ।অনেক মেয়েদের উপকার করেছেন এবার আমার মেয়েটার উপকার করুন ।”
নীলিমা দেবী বরাবরই একজন পজিটিভ মনের মানুষ । তিনি উঠে শান আর মেয়েটির পাশে গেলেন। দুজনকে বলতে লাগলেন, ” দেখ তোমাদের এখন বিয়ে করে সংসার করার সময় হয়নি । তাই এসব পাগলামি ছেড়ে পড়াশোনায় মন দাও । বাড়ি যাও দুজনে । মন দিয়ে পড়াশোনা করো তারপর নির্দিষ্ট সময়ে তোমাদের চার হাত এক করে দেওয়া হবে ।”
মেয়েটির নাম পিয়া ।সে কিছু বলার আগেই তার বাবা অনিমেষ বাবু গর্জে উঠলেন । ” এ আপনার কি ধরনের কথা মিসেস রায় ।আপনাকে তো মেয়েদের ভালো চাওয়া একজন মানুষ বলেই জানতাম ! কিন্তু এ আপনার কি ধরনের কথাবার্তা ! যার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাকে আপনি পড়াশোনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন, পড়াশোনা শেষ হবার পর ওদের চার হাত এক করে দেওয়ার কথা বলছেন । কি হবে মেয়েদের এতো পড়াশোনা করে । যা পড়ার পড়েছে এখন যখন একজন ভালো বর পেয়ে গেছে তাহলে ওর জীবনে আর কি চাই ! ঔ বাড়িতে বিয়ে হলে পিয়া রাণীর মতো জীবন কাটাতে পারবে । আপনি ওকে বাড়ি ফিরে যেতে বলুন ।”
nbsp; পিয়া বলল, ” আন্টি আমি বিয়েটা করতে চাই না । আমি শানকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না । তাছাড়া আমি এখন পড়াশোনা করতে চাই। বাবা আমার কথা না শুনে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছে । এরকম করলে আমি সুইসাইড করব। “
” শুনলেন তো আপনি মেয়ের কথা । আপনি একটা কথা ভুলে যাচ্ছেন ওরা দুজনে এডাল্ট।যদিও ওদের এখন বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি ।তাছাড়া ওরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। আপনি মেয়েটার জোর করে বিয়ে দেবেন না । পিয়াকে বাড়ি নিয়ে যান। ও পড়াশোনা করুক । ওর যেখানে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাদের আমি বুঝিয়ে বলব ব্যাপারটা।ওরা নিশ্চয়ই বুঝবে ।”
থানার অসি সুকুমার বাবু বললেন, ” এতো সুন্দর করে ব্যাপারটা আপনি সমাধান করলেন ভালো লাগল । যান আপনারা দুজনে ছেলেমেয়েকে বাড়ি নিয়ে যান। “
“কিসের সমাধান হল ! ওকে বাড়ি নিয়ে যাই।যদি বিয়েতে রাজি না হয় তাহলে ওকে খুন করে আমি জেল কাটব।”
থানায় দাড়িয়ে এরকম কথা বলায় ভয় পেল পিয়া । সে বলল, ” আন্টি তোমার দুটি পায়ে পড়ি তুমি আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাও । আমরা খুব বড়ো ভুল করেছি সেটা আমি জানি । কিন্তু কি করব এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় ছিল না । আমি আর ও বাড়িতে যাব না । আমি আমার বাবাকে চিনি খুব রাগী মানুষ । বাড়িতে নিয়ে গিয়ে হয়তো আমাকে কেটেই ফেলবে ।”
শান চুপচাপ দাড়িয়ে শুনছে সব কথা । হঠাৎ করে এমন একটা কাজ করে ফেলল এখন সে নিজেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় । কি করবে বুঝতে পারছে না । শানের মনে হয়েছিল তার মতো শান্ত শিষ্ট ছেলে এমন একটা কাজ করে ফেলায় মা হয়তো খুব কষ্ট পাবে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে । বাবার জন্য ভয় নেই ।চিরকাল দেখে এসেছে মায়ের যা সিদ্ধান্ত তাই বাবা মেনে এনেছে । কিন্তু আজ নীলিমা দেবীর পজিটিভ কথাবার্তা শুনে মায়ের প্রতি তার শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে ।
নীলিমা দেবী বললেন, ” বেশ ওরা তাহলে আমার বাড়িতেই চলুক । যদিও ওরা ভুল করেছে তাই বলে আমি ওদের পথে ছুড়ে ফেলতে পারি না ।তোমরা আমার সঙ্গে বাড়ি চলো।”
সুকুমার বাবু বললেন, ” তাই নিয়ে যান ম্যাডাম ওদের আপনার বাড়িতে ।কিছু করার নেই ওরা এডাল্ট । ওদের মতের বিরুদ্ধে কি করা যাবে ।”
অনিমেষ বাবু বলতে লাগলেন ,”আপনার বিরুদ্ধে আমি মামলা করব। আমি জানতাম আপনি মেয়েদের রক্ষা করেন ।এই আপনার রক্ষার নমুনা ।”
” রক্ষাই তো করছি ! চল তোমরা ।”
নীলিমা রায় আর সোমনাথ রায়ের একমাত্র ছেলে শান। যার ভালো নাম সনুরাগ রায়।সোমনাথ বাবু আয়কর বিভাগে উঁচু পদে চাকরি করেন । আর নীলিমা দেবী হাউস ওয়াইফের পাশাপাশি সমাজ সেবা করেন।তিনি মহিলা সমিতির প্রেসিডেণ্ট । সমাজের অত্যাচারিত মেয়েদের নিয়ে তিনি কাজ করেন।বেশ দাপুটে মহিলা । অন্যায় তার সহ্য হয় না ।
সোমনাথ বাবু নিরীহ মানুষ । অফিসের কাজ নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন। সংসার চলে নীলিমা দেবীর কথায়। সংসারের সব কাজ করে সাধনা ।সেও এক অসহায় বিধবা ।তিনকূলে কেউ নেই তার ।নীলিমা দেবী তাকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। অনেক বছর ধরে তার বাড়িতে আছে সাধনা। এই পরিবারেরই একজন সাধনা । শান ওকে পিসি বলে ডাকে ।
শান বরাবরই মায়ের বাধ্য ছেলে ।পড়াশোনায় ভালো । ভালো গান গায় ।কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে বি,এস,সি ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে । কিন্তু ওর কলেজেই বি,এ সেকেন্ড ইয়ারে পড়া মেয়ে পিয়ানি যার ডাক নাম পিয়া তাকে ভালোবেসে ফেলে । পিয়া বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ছে । তবে ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব সেই হাইস্কুল থেকে । ধীরে ধীরে তা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে ।নীলিমা দেবী এমনিতে শানের সঙ্গে বন্ধুর মতোই আচরণ করেন কিন্তু ওর ভালোবাসার কথা জানতে পারেনি। কারণ শান খুব চাপা স্বভাবের ছেলে ।শান ভেবেছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেয়ে গেলে মাকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেবে ।মা অমত করবে না সে জানে ।আর মায়ের যা মত বাবার ও তাই মত।কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু ঘটল যে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে রাজি হল।
পিয়া পরিবার ব্যবসায়ী পরিবার।ওদের পরিবারে মেয়েদের খুব একটা লেখাপড়া করাতে চায় না । কোন রকমে মাধ্যমিক পাশ করে নিলেই বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলা হয় ।অন্য মেয়েদের চাইতে পিয়া একটু বেশী পড়াশোনাই করেছে । বেশ কিছুদিন থেকে ওর বিয়ের তোড়জোড় চলছে । এরপর হঠাৎ করেই ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেন ওর বাবা ।ছেলে বড় ব্যবসায়ী। বেশ বড়লোক ওরা ।আর কি চাই ! আর লেখাপড়া করে কি হবে ।ভালো বর পেয়ে গেছে ।
কিন্তু পিয়া আরও পড়াশোনা করতে চায় ।ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় ।তাছাড়া ও শানকে ভালোবাসে । তাকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবতেই পারে না সে। কিন্তু একথা ঘরের কাউকে বোঝাতে পারেনি পিয়া । অনিমেষ বাবু বড্ড এক রোখা মানুষ ।ওর মতে মেয়েদের ভালো বিয়ে হয়ে গেলে আর কিছু চাই না ।
কোন উপায় না দেখে পিয়া শানের কাছে আসে । বলে ওকে যদি বিয়ে না করে তাহলে সে সুইসাইড করবে । এই বিয়েটা কিছুতেই করতে চায় না সে।
শান প্রথমে পিয়াকে বোঝাতে চেয়েছিল।কিন্তু পিয়া বুঝতেই চায় না ।শানকে কথা শোনাতে না পেরে সে কলেজের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিতে গেছিল ।ওকে বাঁচাতে গিয়ে শান বিয়েটা করে ।এরপর পিয়ার বাবার অভিযোগ শুনে ওদের থানায় আনা হয় । কিন্তু দুজনেই এডাল্ট কারো কিছু করার নেই ।পিয়া কিছুতেই আর বাড়ি ফিরতে চায় না । কারণ সে জানে বাড়ি ফিরলেই তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হবে ।আর ঔ বিয়েতে সে কিছুতেই সুখী হবে না ।
নীলিমা দেবী ওদের নিয়ে বাড়ি এলেন।সোমনাথ বাবুকেও তিনি ফোন করে দিয়েছেন।শান, পিয়া সব কথা উনাকে বলে দিয়েছে। সোমনাথ বাবু ও বাড়ি এসে গেছেন।সব শুনে নীলিমা দেবী বললেন, ” আমি তোমাদের একটা শর্তে মেনে নিতে পারি !”
“কি শর্ত মা ?”
” যত দিন না পর্যন্ত তোমাদের লেখাপড়া শেষ হচ্ছে, তোমরা নিজের পায়ে না দাড়াচ্ছ ততদিন পর্যন্ত তোমরা স্বামী- স্ত্রীর জীবন যাপন করতে পারবে না । এক ঘরে থাকতে পারবে না ।তোমাদের একজনের বয়স কুড়ি অন্য জনের একুশ ।এখন লেখাপড়া করার বয়স ,সংসার করার নয়। যদি তোমরা আমার কথা মানতে রাজি হও তাহলে আমি তোমাদের ধুমধাম করে দ্বিতীয়বার বিয়ে দেব।”
সোমনাথ বাবু ও ওর কথায় সায় দিলেন ।
দুজনে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল কিছুক্ষণ । তারপর শান বলল, ” আমরা দুজনেই তোমার শর্তে রাজী ।আমরা ও এখন বিয়ে করে সংসার করতে চাই না ।লেখাপড়া করতে চাই।”
“বেশ তাই হোক । পিয়া এখন থেকে সাধনার ঘরে থাকবে পড়াশোনা ।সাধনা আমাদের পরিবারের একজন শান ওকে পিসি বলে ।ওকে একাই থাকতে দিতাম কিন্তু একটা নূতন জায়গায় একা না থাকাই ভালো । শান নিজের ঘরে থাকবে ।যতদিন পর্যন্ত দুজনে স্বাবলম্বী না হচ্ছ ততদিন তোমরা শুধু বন্ধু এর বাইরে কিছু নও কথাটা মাথায় রেখো। নইলে আমি পিয়া তোমাকে তোমার বাড়ি পাঠিয়ে দেবো।দেখি তোমরা তোমাদের কথা রাখতে পার কিনা।”
সেই থেকে পিয়া নীলিমা দেবীর বাড়িতে থাকে । আশেপাশে কিছু কানাঘুষো হলেও নীলিমা দেবী এসব পাত্তাই দেননি ।আর তার সামনে কেউ কিছু বলতে পারবে না ।নীলিমা দেবী বেশ দাপুটে মহিলা ।আর তাকে পাড়ার সবাই ভয় করে ।
পিয়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ওর সার্টিফিকেট গুলো সঙ্গে নিয়ে এসেছিল।ওর সঙ্গে ওর বাড়ির লোকেরা কোন যোগাযোগ রাখেনি ।
যাই হোক নীলিমা দেবী, সোমনাথ বাবু ওকে খুব ভালো বাসেন। পিয়া খুব ভালো মেয়ে ,দেখতে ও সুন্দরী ।এ বাড়িতে এসে ওর মিষ্টি ব্যবহারে সবার মন জয় করে নিয়েছে। নীলিমা দেবী, সোমনাথ বাবু খুব খুশি ।যাই হোক শান তাদের মনের মতো বউমা এনেছে ।
শান- পিয়া একসঙ্গে কলেজে যায় । মন দিয়ে পড়াশোনা করে ।কলেজে ভালো রেজাল্ট করে শান ইউনিভার্সিটি চলে গেছে । পিয়াও পরের বছর ভালো রেজাল্ট করে ইউনিভার্সিটি চলে গেছে । দুজনে একসঙ্গে বেড়াতে যায় ,হাসি- তামাশা আনন্দ ফুর্তি সবই করে ।একে অপরের সাথে সবকিছু শেয়ার করে ।পরিবারের সঙ্গে ও খুব মিলে মিশে থাকে পিয়া।শুধু ওদের মধ্যে কোন শারীরিক সম্পর্ক হয়নি।
এভাবে ছয় বছর কেটে যায় ।পিয়ার বাড়ির থেকে কেউ ওর খবর করেনি এতোদিন । দুজনের লেখাপড়া শেষ করে নেট পরীক্ষা পাশ করে দুজনেই কলেজে প্রফেসার হয়। দুজনেই প্রতিষ্টিত। নীলিমা দেবী ,সোমনাথ বাবু এবার ভাবলেন ওদের এবার সংসার জীবনে প্রবেশ করা দরকার ।আর কতদিন এরা এভাবে থাকবে ।
নীলিমা দেবী , সোমনাথ বাবু পিয়ার বাড়িতে গেলেন । পিয়ার বাবা মা বাড়ির লোকের সাথে কথা বলতে ।
অনিমেষ বাবুকে বললেন, ” দেখুন অনিমেষ বাবু আমি জানি আপনি মেয়ের উপর খুব রেগে আছেন ।ওর মুখ দেখতে চান না ।ও আপনাকে অনেক অপমান করেছে । কিন্তু কি করবেন বলুন আমরা তো সবসময় চাই আমাদের ছেলে মেয়েরা খুশি থাকুক । সেদিন আপনি যদি জোর করে পিয়ার বিয়ে দিতেন তাহলে পিয়া কোনদিন সুখী হতো না ।পিয়া ওর ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে সারা জীবন থাকতে চেয়ে ছিল তাই সেদিন ওরা কলেজে পড়ার সময় এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । এখন ওরা দুজনেই স্বাবলম্বী ।আমি ওদের ধুমধাম করে ওদের দ্বিতীয়বার বিয়ে দিতে চাই।সব নিয়ম পালন করে ওদের বিয়ে দিতে চাই।ওরা সবার আশীর্বাদ নিয়ে নূতন জীবনে প্রবেশ করুক । তাই আমরা চাইছি পিয়া আপনার বাড়িতে আসুক ।ওখান থেকেই ওর বিয়ে হোক।”
অনিমেষ বাবু মাথা নীচু করে বসে আছেন ।কিছু বলছেন না ।পাশে পিয়ার মা ,ভাই ,ঠাম্মা বসে আছেন। মনে হচ্ছে ওরা কিছু বলতে চান কিন্তু বলার সাহস কারো নেই ।
সোমনাথ বাবু বলতে লাগলেন, ” আমার মনে হয় আপনি পিয়াকে এখন ও ক্ষমা করতে পারেননি ।ঠিক আছে কি আর করা যাবে ।ও আমার ছেলের বউ , আমার বাড়িতে এতোদিন ধরে আছে ওর বিয়ের সব অনুষ্ঠান আমার বাড়িতে হবে ।এভাবে এসে আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য ক্ষমা চাইছি ।চলি আমরা ।”
নীলিমা দেবী, সোমনাথ বাবু উঠে দাঁড়ালেন ।তখন অনিমেষ বাবু বললেন, ” দাঁড়ান মিসেস রায় ।”
একি অনিমেষবাবু কাঁদছেন নাকি ! তার গলার স্বর এরকম কেন ?
দুজনে ঘুরে দাঁড়ালেন ।দেখলেন অনিমেষবাবুর দুচোখ বেয়ে জল পড়ছে ।হাত জোড় করে তাদের বলছেন , ” আমাকে ক্ষমা করে দিন আপনারা। আমি আমার মেয়ের জন্য যা করিনি আপনারা তাই করেছেন ।আমার মেয়েটা পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল ।যাকে ভালোবাসে তার সঙ্গেই সংসার করতে চেয়েছিল । কিন্তু আমি তা করতে দিইনি ওকে ।সেই পুরানো ধারণা নিয়ে বসে ছিলাম মেয়েদের ভালো বর পেয়ে গেলে আর কিছু চাওয়ার থাকে না ।তাই ওকে পড়াশোনা বন্ধ করে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু মিসেস রায় আপনাকে আমার আজ প্রণাম করতে ইচ্ছে করছে । এতো দিন জানতাম শাশুড়িরা কখনও ছেলের বৌয়ের আপন হয় না ।আমার বাড়িতেই দেখি মা আর বৌ দুজনের ঝগড়া লেগেই থাকে ।কিন্তু আপনি যেভাবে অন্য অসহায় মেয়েদের পাশে দাঁড়ান তেমনি আমার মেয়ের পাশে ও দাড়িয়েছেন।আপনাদের কাছে থেকে আজ আমার মেয়ে লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। এখন আপনি ওদের ধুমধাম করে বিয়ে দিতে চাইছেন ।আমি অবশ্যই পিয়াকে আমার বাড়িতে এনে বিয়ে দেব। পিয়া আমার একমাত্র মেয়ে ।এই কয়েক বছর আমি এক মুহূর্তের জন্য ও ওর কথা মন থেকে ভুলতে পারিনি। সবসময় ওর খবর নিয়েছি খুব ভালো আছে আমার মেয়ে । কিন্তু সাহস করে যেতে পারিনি যদি আপনারা আমার উপর রাগ করেন ।”
“আপনি এই চিনলেন আমাদের !”
” চিনেছি সেদিনই কিন্তু আমার অহংকারের জন্য মাথা নত করিনি । ওদের বিয়ে তারিখ কবে ঠিক করেছেন ।”
” আমরা কি একা একা বিয়ে ঠিক করব।চলুন সবাই মিলে একটা ভালো দিন ঠিক করি।”
অনিমেষ বাবু চিৎকার করে বলতে লাগলেন , মা পাজি নিয়ে আসো , পরমা উনাদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করো।এই আবির যা ভালো দেখে মিষ্টি নিয়ে আয় ,তোর জ্যাঠুকে ফোন কর । পিয়ার বিয়ের দিন ঠিক হবে ।”
সবাই খুশিতে ছোটাছুটি করতে লাগলেন ।পিয়ার বিয়ের দিন ঠিক হল এরপর জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হল।
nbsp; অনিমেষ বাবু, পরমা দেবী গিয়ে এতো বছর পর পিয়াকে বাড়ি নিয়ে এলেন ।এরপর সব নিয়ম পালন করে খুব ধুমধাম করে পিয়া আর শানের দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়ে গেল ।বিয়েতে অনেক লোকজন হয়েছে আর সবাই মিলে খুব আনন্দ করেছে । পিয়া – শান খুব মন দিয়ে ঘর সংসার করছে ।বিয়ের দেড় বছর পর ওদের মধ্যে একটা ফুটফুটে মেয়ে এল। সোমনাথ বাবু এখন রিটায়ার ।সোমনাথ বাবু আর নীলিমা দেবীর সময় এখন নাতনিকে নিয়েই কেটে যায়।