রতনবাবু এক রেশন দোকানের মালিক সাথে কেরোসিন তেলের ডিলার বটে । সংসারে বউ বিধবা মা ছাড়া আছে এক কন্যা । তার কন্যার নাম প্রিয়া এবং সে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।খাওয়া দাওয়া কম 0 ফিগার তৈরীতে লেগেছে মেয়ে , নিজস্ব বাড়ী আর্থিক দিক মোটামুটি স্বচ্ছল বলাই যেতে পারেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ রতনবাবুর মনটা ঠিক নেই তার কারন বাড়ীতে তার পুরানো স্কুটারটাকে মেনে নিতে পারছে না। মেয়ের কাছে তার স্কুটারের নাম এলেমেলে ভেসপা,একটা ভটভটি। মেয়ের বায়না নতুন স্কুটি কিনতে হবে যেটা সেও চালাতে পারবে আর না হলে বাইক । এই পুরানো স্কুটারে চেপে নাকি যেতে আসতে তার প্রেস্টিজে লাগে আর এতে সায় আছে রতনবাবুর মা আর স্ত্রীয়েরও।
হতে পারে স্কুটারটা বেশ পুরানো, স্পীড কম , আওয়াজটাও বেশ হয় কিন্তু তা বলে বিক্রি করে দিতে মন সায় না । এই করেই বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো রতন বাবুর মেয়ের আজ পরীক্ষা শেষদিন , এই কদিন ঐ পুরানো গাড়ী করেই যাতায়াত হয়েছে । মেয়ের সাথে এই চুক্তি হয়েছে নতুন স্কুটি কেনা হবে এবং সেটা প্রিয়াকে দেওয়াও হবে কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হতে হবে আর সাথে পুরানো বাইকটাও থাকবে । যাইহোক পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে যথারীতি বাবার বাইকে চেপে বসলো প্রিয়া তবে আজকের বসার স্টাইলটা একটু আলাদা , দুদিকে পা দিয়ে ছেলেদের কায়দায় ।বাইক স্টাট করে মেয়েকে নিয়ে বাড়ী চললেন রতনবাবু যদিও বা আজ একটু তাড়া আছে তার ,মেয়েকে নামিয়ে দোকানে যেতে হবে তেল আসবে ,তাই গাড়ীর স্পীডটা একটু বেশী সাথে আওয়াজ একটুও বেশী এতে একটা সুবিধা রাস্তায় হর্ণ দিতে লাগেনা । এমনিতে রাস্তা ফাঁকা, খালি রাস্তায় চার পাঁচটা যা বাম্পার আছে । যথারীতি বাড়ী পৌঁছান রতনবাবু কিন্তু গাড়ী থেকে নামার সময় খেয়াল করেন যে পিছনের সিটে তার কন্যা নেই। এই দিকে রতন বাবুর স্ত্রী ,মা এই খবর পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেন পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যেও উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয় । এই ভাবে বেশকিছু সময় কেটে যায় রতনবাবু ভাবতে থাকেন হলোটা কি । বেশ কিছুক্ষন পর রতনবাবুর মেয়ে ক্লান্ত অবসন্ন মুখ নিয়ে বাড়ী ঢোকে । যথারীতি সবার একটাই প্রশ্ন তার দেরী হবার কারন কি আর রতনবাবুর সাথেই বা না আসার কারন কি ?
প্রিয়া রাগে কান্নায় বলতে লাগলো ” আমি কি করবো বাবা এমন বাম্পারের উপর গাড়ী চালালো আমি পেছন দিক থেকে সোজা লাফিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরলাম , আর বাবার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই,রাস্তার লোকেরা কত ডাকলো , আমি বাবা বাবা করে ডাকলাম , এই ভটভটিটার যা আওয়াজ শেষে আমি এতটা রাস্তা হেঁটে এলাম ।“
পড়ুন ,বাংলা প্রেমের কবিতা “তোমার মতো করে”
সবার দৃষ্টি রতনবাবুর দিকে কিন্তু রতনবাবুর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই বাইকে বসে বলে উঠলেন ” যত দোষ এখন কি আমার গাড়ীর নাকি , আর কম খাও 0 ফিগার বানাও,আরে আমার পেছনে মানুষ বসেছে না পাখী বসেছে বোঝাই যায় না ও বসলে, তাই ও কখন পরে গেলো নাকি টিয়া পাখীর মতো উড়ে গেলো বুঝবো কি ।” বাইক স্টার্ট করে ঝড়ের মতো কথাগুলো বলে তিনি দোকানের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন ।