1.
আজকে নিয়ে তিনরাত আমার ঘুম হলো না | টানা তিন রাত জেগে থাকা যে কতোটা কষ্টকর তা আমিই জানি | তিনদিন আগে ঠিক আমার পাশেই বুড়ো টাকে ওর বাড়ির লোকেরা কবর দিয়েছিল | রাত হলেই ঐ খেঁকুরে বুড়োটা কেশে কেশে আমার কানের মাথা খেয়ে নেই |
2.
ধূর ধূর লোকে যে কিভাবে মিথ্যা কথা বলে তা আমি এখন বেশ বুঝতে পারছি | কাল সারারাত মর্গে শুয়ে ছিলাম , কয়েকটা ইঁদুরের ছোটাছুটির আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দই পেলাম না | মাঝখান থেকে ঠান্ডায় ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছি , বাবা !! ড্রয়ারের ভিতরটা কি ঠান্ডা | কখন যে বাড়ির লোক এসে নিয়ে যাবে , আমাকে চুল্লিতে ঢোকাবে তা কে জানে ?
3 .
দশ বছর আগে কত সাধ করে ফ্ল্যাটটা কিনেছিলাম কিন্তু ভোগ করতে পারলাম না | তারপর কতজন এই ফ্ল্যাটে এলো গেলো , কাওকে টিকতে দিইনি | কিন্তু মাসখানেক হলো একটা ছেলে এসেছে তাকে কোনোভাবেই তাড়াতে পারছি না | দিনরাত মোবাইল মুখে বসে থাকে, কোনো দিকে তাকাই না | পরশু ভোর রাতে ছেলেটা ঘুমালে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি বেটা গ্রুপে ভূতের গল্প পড়ে , জলজ্যান্ত ভূত সামনে থাকতে কিনা গল্পের ভূত | আমিও ঐ গ্রুপে দিলাম লিখে একখানা গল্প | এখন দেখি , ও বাবা !! সবাই লাইক দিচ্ছে |
4.
রান্না ঘরে চায়ের কাপে চুমুক দিতে যাব ওমনি বাথরুম থেকে গার্লফ্রেন্ডের গলা পেলাম–
‘ তোয়ালেটা দিয়ে যাও না |’
আমি উঠে যাচ্ছি , এমন সময় ফ্রিজের ভিতর থেকে আমার গার্লফ্রেন্ড খিল খিল করে হেসে বলল —
‘ যেও না , আমি তো এখানে , তুমিই তো আমাকে গলা টিপে মেরে ফ্রিজে ভরে রেখেছো | ‘
5.
খেতে বসে আমার ছেলেটা কাঁদতে লাগল মুড়োঘন্ট খাবে বলে | আমার স্ত্রী কটমটিয়ে আমার দিকে তাকাল | আসলে দোষটা আমারই , মর্গ থেকে লাশটা আনার সময় দেখিনি যে লাশটার মাথা নেই … একটা কবন্ধ |
6.
ছোটো থেকেই কুকুর আমি অপছন্দ করি | হোস্টেলে আসার পর দেখি এখানে পায়ে পায়ে কুকুর ছানা ঘোরে , কি যে বিরক্ত লাগে | গত সপ্তাহে চোদ্দো টা কুকুর ছানা সমেত মা কুকুরটাকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে শেষ করে দিয়েছি , ভাবলাম বাঁচা গেল | কিন্তু কোথায় কি ? ঠিক তারপর দিন থেকেই রোজ সারা রাত এক দঙ্গল কুকুর ছানা দরজার বাইরে সমানে কুই কুই করে , দরজা আঁচড়াতে থাকে , সেই আওয়াজ আমি ছাড়া আর কেও শুনতে পাইনা | ওরা যেন মৃত্যুর বদলা নিতে আসে |
7.
সেই দেশভাগের সময় এপার বাংলায় চলে আসি রিফিউজি হয়ে , তারপর মরে যাওয়ার পর শ্মশানের পাশে একটা বট গাছের ডালে থাকতাম | গত কয়েক বছর আগে আইলার ঝড়ে গাছটা ভেঙে যাওয়ার পর এই পুরোনো ভাঙা বাড়িটায় আশ্রয় নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটছিল | কিন্তু এখন শুনছি এটা ভেঙে বড় ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরী হবে | যানিনা এরপর কোথায় থাকবো ? মরে ভূত হওয়ার পরেও যেন আমি রিফিউজি |
8.
এই চৈত্র মাসেই দুপুরবেলায় যেন জৈষ্ঠ্যের লু বইছে | দোকানে বসে আমি হাতপাখার বাতাস খাচ্ছিলাম | হঠাৎ একটা লোক এসে বলল —
‘ দাদা একটা ঠান্ডা জলের বোতল দিন তো | ‘
আমি জলের বোতল দিতেই ঐ লোকটি গলা থেকে মাথাটা খুলে বোতলের জলটা ডাইরেক্ট গলায় ঢেলে নিল | এরপর আবার মাথাটা তুলে গলায় লাগিয়ে একগাল হেসে বলল —
‘ খুব তেষ্টা পেয়ে ছিল কিনা , তাই ডাইরেক্ট গলায় ঢাললাম মুখ দিয়ে খাওয়ার ধৈর্য্য নেই | ‘
তারপর ঐ লোকটা হাওয়াতে মিলিয়ে গেল |
9.
এই শহরে আমি আর আমার বিড়াল পুচু থাকি | কিন্তু পুচু আজকাল আর আমার কোলে বসে না | আমাকে দেখলেই বাইরের ডাস্টবিনটায় চলে যায় | গত সপ্তাহে আমার দামি ইলিস মাছে মুখ দেওয়ার জন্য আমি ওকে মেরে যেখানটায় ফেলে দিয়েছিলাম |
10.
গেস্টরা সবাই ডিনার করে চলে যেতেই আমি ছুটে আমার বেডরুমে গেলাম | নীলাঞ্জনা লাল বেনারসী আর রজনীগন্ধার মালা পড়ে , ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে আছে । কাছে যেতেই হাসি হাসি মুখ করে নীলাঞ্জনা বললো–
‘ I Love You ‘
বেচারা জানেই না যে আমি ওকে বিয়ে করেছি ওকে ভালোবেসে নয় , ওর টাটকা গরম নোনতা রক্ত খাবো বলে …. ওহ্ সো য়ামি | আমি ওকে জড়িয়ে ধরে মুখটা কাঁধের কাছে নিয়ে গিয়ে ওর মিষ্টি গন্ধ শুঁকে দাঁতটা ঘাড়ে বসাতে যাব , কিন্তু একি !! আমার ঘাড়ে আলপিন ফোটানোর মতো নীলাঞ্জনা ওর দাঁত ফুটিয়ে দিল , ওর চোখে মুখে পৈশাচিক হাসি ।
11.
মাঝরাতে ফোনের রিং হচ্ছে শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল |
সঞ্জয়ের গলা — ‘ হ্যালো সৌমেন …. আদিত্য আমাকে একটু আগে খুন করেছে এরপর ও তোকে মারবে ঠিক রাত তিনটেয় ।’
কি বললো সঞ্জয় আদিত্য ওকে খুন করেছে , তা কী ভাবে সম্ভব একমাস আগে আমি আর সঞ্জয় তো আদিত্যকে মেরে মাটিতে পুঁতে দিয়েছি | তাহলে ???
ঠিক তক্ষুনি দরজায় নক্ করার শব্দ , ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তিনটে বাজতে দুই |
***********