লিখেছেন – পুষ্পিতা ভৌমিক
__”কই গো শুনছো?এবার দুগ্গা দুগ্গা বলে বেড়িয়ে পড় আর মাথা গরম করনা কতদিন পর খোকা আসছে এখানে”;স্বামীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেন নূপুরদেবী।
“হুম আমাদের গুণধর ছেলে বলে কথা।কিছু কি বলা চলে!”,স্যান্ডালে পা গলাতে গলাতেই উত্তর দেন মনোজবাবু।এরমধ্যেই সুবল ডাকে,”দাদাবাবু আসেন গাড়ি তৈরী আছে জলদিজলদি বেড়িয়ে পড়ি আমরা।”প্রায় সাত বছর হল সুবল ওনাদের গাড়ি চালাচ্ছে সেই শান্তিনিকেতনে আসার পর থেকেই।গাড়িতে উঠে পড়েন মনোজবাবু।এত সকালেও জৈষ্ঠ্য মাসের তপ্ত বাতাস চোখেমুখে এসে ঝাপটা মারছে।আর হবে নাই বা কেন?লালমাটির দেশ বলে কথা।গাড়ির কাঁচ তুলে এসিটা চালিয়ে দেয় সুবল।ব্যাকসিটে গা এলিয়ে দেন মনোজবাবু। ফ্ল্যাশব্যাকে মনে পড়ে যায় অনেক স্মৃতির টুকরো টুকরো কোলাজ।কলকাতায় খাদ্যদপ্তরে উচ্চপদস্থ পদে চাকরি করতেন মনোজবাবু। স্ত্রী নূপুর আর ছেলে মল্লারকে নিয়ে সুখের সংসার।মল্লার ছোট্টবেলা থেকেই মেধাবী। জয়েন্ট পরীক্ষায় চোখধাঁধানো রাঙ্ক করে শিবপুরে ইঞ্জিনারিং কলেজে চান্স পেল।তারপর চার বছর পেরিয়ে ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরিও পেয়ে গেল একটা নামকরা কোম্পানিতে কিন্তু পোষ্টিং হল কানাডায়।প্রথমে মনে একটু দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকলেও ছেলের মুখ চেয়ে রাজি হয়ে গেছিলেন কর্তা গিন্নী দুজনেই।হাজার হোক প্রথম চাকরি বলে কথা। মল্লার কর্মসূত্রে সেটেল হয়ে গেল ওখানে আর মনোজবাবুও অবসর গ্রহণ করে শান্তিনিকেতনে নিজের বাড়িতে ফিরলেন।খুব সখ ছিল অবসর গ্রহণের পর এমন একটা খোলামেলা জায়গায় থাকবেন প্রকৃতির কাছে।সবই হল কিন্তু এবার তো মল্লারের ব্যাক্তিগত জীবনে ও সেটেল করতে হবে,বিয়ে দিতে হবে ছেলের।
মনোজবাবু মনেমনে একটি পাত্রী নির্বাচনও করে ফেলেছিলেন।ওনারই সহকর্মী দ্বিজেনবাবুর মেয়ে দিতিপ্রিয়া।রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতে মাস্টার্স করছে আর মল্লারও দিতিকে চেনে।এর আগে তিন চারটে অফিস প্রোগ্রাম, বেশ কিছু পিকনিকে দেখা হয়েছে দুই পরিবারের।শিল্পকলা; সাহিত্যের প্রতি মনোজবাবুর বরাবরের ঝোঁক বিশেষ করে সেটা যদি রাবীন্দ্রিক হয় তাহলে তো আর কোন কথা নেই।নিজের বিয়ের সময়ও নূপুরকে পছন্দ করেছিলেন ওর রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে।যাইহোক একদিন স্ত্রী নূপুরকে দিয়ে দিতিপ্রিয়ার সাথে বিয়ের প্রস্তাবটা পারলেন ছেলের কাছে।নূপুরদেবী ফোনে ছেলেকে বলেছিলেন,”দিতিকে তো তুই চিনিস খোকা,বড্ড ভাল মেয়েটা।আমরা সব ঠিকঠাক করে রাখছি।তুই এবার দেশে এলে শুভ কাজটা সেরে ফেলা হবে।সেই প্রথম অবাধ্য হল মল্লার।”সেই প্রথম মা বাবার মুখের উপর সোজাসুজি না বলে দিয়েছিল এবং জানিয়েছিল ও একটি মেয়েকে ভালোবাসে এবং ওকেই বিয়ে করবে।অবাক হবার বোধ আরো বাকি ছিল। মেয়েটার নাম জিজ্ঞাসা করতে মল্লার বলেছিল,”ওর নাম জেনেলিয়া গোমেজ,ওরা এক অফিসে চাকরি করে। জেনেলিয়ার বাবা অনেক ছোট্টবেলায় গত হয়েছেন আর ওর মাও দুরারোগ্য স্নায়ুরোগে ভুগছে। মৃত্যুপথযাত্রী একজন মার সামনে ওনার মেয়েকে বিয়ে করবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মল্লার।”এতদিনের সাধ স্বপ্ন এক লহমায় গুড়িয়ে গিয়েছিল ওনাদের।তারপরে অবশ্য আরেকবার দেশে ফিরেছিল মল্লার জিনি ওরফে জেনেলিয়াকে নিয়ে।সেদিনও শান্তিনিকেতন থেকে গাড়ি নিয়ে এসছিলেন কর্তাগিন্নী দুজনেই।ফ্লাইট থেকে নেমে জিনির সাথে মল্লার পরিচয় করিয়ে দেবার সাথেসাথেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় জিনি বলেছিল,”নমস্কার;ক্যান ই সে ইউ মম্ অ্যান্ড ড্যাড;actually I have lost my father at the age of ten by a car accident & very recently my mother passed away।” কিন্তু সেদিন মনোজবাবুর দাবি ছিল জেনেলিয়াকে ছাড়াই মল্লারকে বাড়িতে যেতে হবে নচেৎ পাড়াপ্রতিবেশীর কাছে নইলে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবেননা।স্ত্রী নূপুরের অনেক অনুনয় বিনয় সত্ত্বেও রাজি হননি সেদিন।মল্লারও জিনিকে কলকাতায় একা হোটেলে ফেলে রেখে বাড়ি যেতে চায়নি।কর্তা গিন্নীতে মিলে ফিরে এসছিলেন।সেই থেকে অভিমানে ছেলের সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছিলেন মনোজবাবু।
নূপুর দেবীর সাথে অবশ্য কথা হত ছেলে বৌমার।কিন্তু কিছুদিন আগে নূপুরের প্রথম কার্ডিয়াক অ্যাটাকের পর এবার আর স্ত্রীর অনুরোধ ফেলতে পারেননি মনোজবাবু।নূপুরের খুব ইচ্ছা ছেলে,বউমা আর নাতিকে একসাথে দেখতে।”হ্যাঁ ওদের একটা ছেলেও হয়েছে শুনেছেন মনোজবাবু। তার নাম নাকি মনসিজ।বছর পাঁচ বয়স হয়েছে ওর।কত ইচ্ছা ছিল মনোজবাবুর নাতির সাথে খেলবেন,কবিতা শেখাবেন কিন্তু সে সাধ আর মিটলো কই?
__”দাদাবাবু নামুন আমরা এসে গেছি।”ড্রাইভার সুবলের ডাকে হুশ ফেরে ওনার।গাড়ি থেকে নেমে লাউঞ্জের দিকে এগিয়ে যান মনোজবাবু।ওইতো ওরা আসছে;বাহ বেশ হয়েছে তো ছেলেটা।একদম ছোট্টবেলার মল্লারের মুখের আদল পেয়েছে।দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”হাই দাদুভাই আই অ্যাম মনসিজ চ্যাটার্জী।”চমকে যান মনোজবাবু ওইটুকু ছেলে ওনাকে এত সহজে চিনে ফেলল কি ভাবে?
__”তো মনসিজ তুমি আমাকে চিনলে কি করে?”,মনোজবাবু জিজ্ঞাসা করেন ওকে।
মিষ্টি হেসে মনসিজ বলে,”কেন বাবা তো ফ্যামিলি ফটোগ্রাফ দেখিয়েছে কতবার।তুমি,ঠাম্মি,বাবা কত ছবি তোমাদের।” মল্লার এসে পায়ে হাত দিতে প্রণাম করে;জিনিও এগিয়ে এসে পায়ে হাত দেয়।
__”বাঃ জিনি বেশ উন্নতি হয়েছে দেখছি প্রণাম করা শিখেছ দেখছি!”;খানিক ব্যঙ্গের সুরেই কথা বলেন মনোজবাবু।মল্লার বলে,”বাবা এইসব মান অভিমানগুলো মুছে ফেলে দিলে হয়না সবাই মিলে?”আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন সবাই। পথে যেতে যেতে মনসিজের মুখে কথার ফুলঝুরি ফোটে,” লুক দাদুভাই কত বড় বড় গাছ,এটার নাম কি ওটা কেন?”শান্তিনিকেতনে গাড়ি ঢোকার আগেই আকাশের মুখ ভার।জৈষ্ঠ্যের ভরদুপুরেই যেন আষাঢ়সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসছে।গাড়িটা কম্পাউন্ডের মধ্যে ঢোকার প্রায় সাথে সাথেই বৃষ্টি নামে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন নূপুরদেবী। মল্লার ছুট্টে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে।জিনিও গিয়ে প্রণাম করে শাশুড়িকে। মাতৃসুলভ সরলতায় মল্লারের সাথে জিনিকেও কাছে টেনে নেন নূপুর।কিন্তু মনসিজ কোথায়?সবার চোখ এড়িয়ে কোথায় গেল ছেলেটা? মনোজবাবুর খেয়াল হতেই এদিক ওদিক খুঁজতে গিয়ে দেখেন ছাদে দাঁড়িয়ে ভিজছে দস্যিটা।প্রায় পাঁজাকোলা করে ধরে নিয়ে আসেন নূপুরের কাছে।নিজের মনেই বলতে থাকেন,”তোমার মনে পড়ে নূপুর ছোট্টবেলায় আমাদের মল্লারও এভাবে লুকিয়ে ছাদে গিয়ে ভিজতো।”মনসিজ ঠাম্মির আর দাদুর গালে হামি দিয়ে বলে,”আমার বৃষ্টি ভেজার কথা মা বাবাকে প্লিজ বলোনা তোমরা।” মনোজবাবু বলেন,” আচ্ছা বলবনা তাহলে ঝটপট একটা কবিতা শোনাও দেখি।”মনসিজ বলতে শুরু করে,”দিনের আলো নিবে এল সুয্যি ডোবে ডোবে/আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে/মেঘের উপর মেঘ করেছে;রঙের উপর রং/মন্দিরেতে কাঁসর ঘণ্টা বাজল ঠংঠং/ও পারেতে বৃষ্টি এল; ঝাপসা গাছপালা/এপারেতে মেঘের মাথায় একশো মানিক জলা/বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে ছেলেবেলার গান/বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান।”কবিতা শেষ হতেই মনোজবাবু নাতিকে জিজ্ঞাসা করেন,”এই কবিতা তুমি কোথায় শিখলে? কে শেখালো?”শিশুসুলভ ভাবে মনসিজ বলে,”কেন দাদুভাই আমার মা শিখিয়েছে;আমি প্লে স্কুল থেকে ফেরার পর মা শেখায়।মা বলে আমার বাবা যখন ছোট ছিল তখন ঠাম্মী এই কবিতাটা শিখিয়েছিল।”
__”বাঃ নাতিকে নিয়ে তো ভালোই আড্ডা জমিয়েছ দেখছি তোমরা আর এদিকে খিদেয় পেট চুইচুই করছে!তো কি কবিতা শোনানো হচ্ছিল শুনি?”মল্লারের আওয়াজে ওনাদের সম্বিত ফিরে এবার।নূপুরদেবী বলেন,”ওই যে রে খোকা তোকে যেটা শিখিয়ে ছিলাম তোর ছোটবেলায়, রবিঠাকুরের লেখা”বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর।”মল্লার বলতে শুরু করে,”তোমার মনে পড়ে মা যখন মেঘের গর্জনে তোমাকে জড়িয়ে ধরতাম তুমি বলতে”মনে পড়ে ঘরটি আলো মায়ের হাসিমুখ/মনে পড়ে মেঘের ডাকে গুরুগুরু বুক/বিছানাটির একটি পাশে ঘুমিয়ে খোকা/মায়ের পরে দৌরাত্মি সে না যায় লেখাজোকা/ঘরেতে দুরন্ত ছেলে করে দাপাদাপি/বাইরেতে মেঘ ডেকে ওঠে সৃষ্টি ওঠে ঝাঁপি/মনে পড়ে মায়ের মুখে শুনেছিলেম গান/বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান।”
__”মা,ছেলে,দাদুনাতি মিলে শুধু কবিতা বললে চলবে?”কথাগুলো বলতে বলতে ঘরে ঢোকে সবিতাপিসি ওদের বাড়ির সর্বক্ষণের দেখাশুনার লোক বহুদিন ধরেই আছে। ওনার হাতে ট্রে ভর্তি গরমগরম ফিশ ফ্রাই,চানাচুর,পেস্ট্রি আর ওনার পিছন পিছন জিনি আসে চা নিয়ে।সবিতাপিসি মল্লারদের বাড়ি কাজ করছে বিগত প্রায় কুড়ি বছর ধরে।প্লেটগুলো সবার হাতে তুলে দেয় জিনি।মনোজবাবু বলেন,” থাক আমি নিজেই নিয়ে নিচ্ছি।”একটু ব্যথিত চোখে মল্লারের দিকে তাকায় জিনি।চোখের ইশারায় ওকে ভরসা দেয় মল্লার।মল্লার সবসময়েই বলে,”বাবার উপরটা খুব কঠিন কিন্তু ভিতর খুব নরম।দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি জানি তুমি তোমার গুণ দিয়ে ঠিক বাবার ভালোবাসা আদায় করে নেবে।”রাত্রে খাওয়াদাওয়ার পর সবাই ঘরে চলে যায়।নূপুরদেবী বলেন,”দেখেছ আমাদের খোকার বউ আর নাতিকে।কত সুন্দর মিশে গেছে আমাদের সঙ্গে।সেদিন তো বলেছিলাম খোকা আমার ভুল করার ছেলে নয় জহুরীর চোখ ওর।”মনোজবাবু বলেন,”ওতো আদিখ্যেতা করনা গিন্নী,নাতিকে দুটো বাংলা কবিতা শিখিয়েছে আর একটু প্রণাম করতে শিখেছে বলেই কি আমাদের শিক্ষাদীক্ষা সংস্কৃতি সব জেনে গেছে?কি ভেবেছ এইসব করে এই মনোজ চাটুজ্জের মন ভোলাবে কভী নেহি।”নূপুরদেবী এতদিন পর আর চুপ করে থাকতে পারেন না।ফস করে স্বামীর মুখের উপর বলে বসেন,”ওই চাটুজ্জে বাড়ির বংশগৌরবের খোলসটা ছেড়ে যদি একটু বেরোতে পার দেখবে সম্পর্কগুলো অনেক সোজা।” ঘরে তখন সুচ পড়ার নিস্তব্ধতা।চুপচাপ শুয়ে পড়েন দুজনেই।ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে যায় মনোজের।
প্রতিদিনকার মত একটু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান।কিন্তু আজ বাগান থেকে কার গানের গলা ভেসে আসছে, ওই তো জিনি গান গাইছে “ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি বনের পথে যেতে/ফুলের গন্ধে চমক লেগে উঠেছে মন মেতে/ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান… বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান/আকাশ ভরা সূর্য তারা বিশ্বভরা প্রাণ।বাঃ বেশ মিষ্টি গায় তো জিনি।এরকম একটা মেয়েই তো মনে মনে চেয়েছিলেন ছেলের জন্য। গত রাতের স্ত্রীর কথা মনে পড়ে।মিথ্যে জাত্যাভিমানের বশে কোনোদিন মেয়েটাকে কাছে টানতে পারলেন না। চুপচাপ বাজারে বেড়িয়ে পড়েন।ফিরে এসে বাজারগুলো আর একটা শাড়ি স্ত্রী নূপুরের হাতে তুলে দেন দিয়ে বলেন,”জিনিকে এটা দিয়ে দিও;বলো আজ সন্ধেবেলা পড়তে।দরকার হলে তুমিও ওকে সাহায্য কর।”
__”সে না হয় দেব। কিন্তু হঠাৎ কি ব্যাপার বলতো?এত বাজার,বৌমার জন্য নতুন শাড়ি!” নূপুর একটু অবাক হন। ভ্রু নাচিয়ে মনোজবাবু বলেন,”সময় আসলেই দেখতে পাবে গিন্নী কি ব্যাপার, এখন জমিয়ে খাওয়াদাওয়া তো হোক।”সন্ধেবেলা হতেই কিছু পাড়াপ্রতিবেশীরা আসেন “চাটুজ্জেভিলা”তে। মা আর ছেলে নূপুর আর মল্লার দুজন তো হতবাক।মনোজবাবু আর সবিতাপিসি মিলে আম পান্নার সরবত দিচ্ছে।এরপর সবাইকে অবাক করে বলেন মনোজবাবু বলেন,”আজ সবার সামনে আমি কিছু কথা স্বীকার করতে চাই।আজ থেকে সাত বছর আগে যখন আমাদের মল্লার প্রথম
জিনির কথা বলেছিল মানতে পারিনি।খাঁটি ব্রাহ্মণবাড়ির ছেলে হয়ে অন্য দেশ;অন্য ধর্ম,অন্য রুচির মেয়েকে বিয়ে করবে আমার ছেলে?কিন্তু এই মেয়েটা জিনি আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে।আমাদের দেশে জন্মালেই যে আমাদের শ্রদ্ধা করবে,আমাদের সংস্কৃতি জানবে তা নয়।ও আমার চোখ খুলে দিয়েছে।আমি বুঝতে পেরেছি কোন দেশ, সেই দেশের ভাষা,কোন কবিকে মন থেকে শ্রদ্ধা জানাতে হলে সেটা বাইরের দেশে থেকেও শেখা যায় যদি নিজের মনে সেই সদিচ্ছাটুকু থাকে।এই দেশে থেকেও তো অনেকে আছে বাংলায় কথা বলতে,বাংলা কবিতা বলতে লজ্জা পায় আর বিশেষ দিনে টিভি বা সোশাল মিডিয়ায় গুরুগম্ভীর ভাবে বুলি কপচিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যর্থ প্রয়াস করে।কিন্তু অন্তর থেকে যে উপলব্ধি করতে হয় কোন দেশকে তাদের রুচি শিক্ষাকে।সকলের চোখে তখন জল।মনোজবাবু সবিতাকে বলেন বরণডালা নিয়ে আসতে।জিনিকে কাছে ডাকেন মনোজবাবু বলেন সাত বছর আগে বাবা বলে ডাকতে চেয়েছিলি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম সেদিন তোকে। আজ আরেকবার বাবা বলে ডাকবি মামণি?”
জিনির চোখের জল বাঁধ মানেনা।ছোট্ট মেয়ের মত এক দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে মনোজবাবুর বুকে।পৃথিবীতে বাবা মেয়ে সম্পর্কের যে কোন দেশ কাল গণ্ডি হয়না।সবিতা পিসির শঙ্খ,আর নূপুরদেবীর উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে এক অন্যরকম বধুবরণের সাক্ষী হন সবাই।সকলে মিলে গান ধরেন “এমনি করে যায় যদি দিন যাকনা;মন উড়েছে উড়ুক না রে মেলে দিয়ে গানের পাখনা।।।”