বিশেষ নিবেদন
নারী দিবস ” জ্যোতির মা’
কোন প্রয়োজন ছিলোনা , বাড়ির নতুন বৌকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বোটানিক্যাল গার্ডেন বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার।
সুচিস্মিতা আর আশীর্বাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে , সকালে উঠে আশীর্বাদ , মায়ের অনুমতি নিয়ে বেরোলো উদযাপনে।
“দাদা , বৌদিকে নিয়ে বাইকে যাসনা ,রাস্তায় ঝাঁকিতে ঝুঁকি থাকবে। এইসময়ে-ওলা কি উবের নিয়ে যা। “
‘ মেঘনা , তুই রাত্তিরে তোর বরকে নিয়ে আসিস, এখন জ্ঞান দিসনা , আমাদের প্ল্যান বাইকেই যাওয়ার , সময় পাইনা ,আজকের দিনটা ছুটি নিয়েছি , দুপুরে বাইরে খাবো , তোর বৌদির একটু ইচ্ছে বাইরে লং ড্রাইভ , গাড়ি বলতে তো এই হোন্ডা মোটরসাইকেল ‘
আশীর্বাদ সুচিকে প্রমিস করেছে , গাড়ি এবার কিনবে , বাড়িতে ছোট্ট অতিথি আসছে , স্ত্রীভাগ্যে বিয়ের ৩ মাসে প্রমোশন হলো , আর একটারও সুযোগ সামনে।
মা বললেন ‘ওরে যা তোরা, আজকের দিন বলে কথা ,কথা বাড়াস না দুগ্গা দুগ্গা’
সুন্দর ‘এই পথ যদিনা শেষহয় ‘ গাইতে গাইতে বিদ্যাসাগর সেতু , তারপর বোটানিক্স।
একটু নৌকাবিহার, লাঞ্চ তারপর ফেরার পথেই অঘটন হলো, লাল হোন্ডা দেখে , এক গুন্ডা অটো বাড়ির কাছেই মারলো হালকা গুঁতো। তারফল সুচির মাথায় আঘাত (ডাক্তার অবশ্য বললেন গুরুতর কিছু নয়)
প্যানিকে মাঝেমাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছে আর বলছে ‘ জ্যোতির্ময়, জ্যোতির্ময়’
নার্সিংহোম ছেড়ে দিলো , সন্ধের অনুষ্ঠানে সুচিস্মিতা যত আনন্দ করছে , আশীর্বাদের ততই মন খারাপ।
‘জ্যোতির্ময় কে ???’
মেঘনা ব্যাপারটা আঁচ করে সুচির মাকে টেলিফোন করে প্রথমে ভালোখবরটা দিলো , “মাসীমা যদিও ছোট একটা একসিডেন্ট হয়েছে , ভালো খবর আপনার ভাবি নাতি কি নাতনি আসছে আর সুচিও খুব ভালো আছে।”
‘ মাসিমা, কিছু মনে করবেন না , সুচি আধা-অজ্ঞান হয়েছিল ২/৩ বার , ভয়পেয়ে , বারবার বলেছিলো ‘জ্যোতির্ময় জ্যোতির্ময় একবারটি এস’ , তাই দাদার মনটা একটু ইয়ে- মানে খারাপ।
আশীর্বাদ সংশয়ে , এই সাতদিন আগে , ডাক্তার শুভখবরটা দিলো। এখনো অফিসিয়াল ঘোষণা করেনি , আজ করবে , স্বামী হিসাবে তার কর্তব্য ১০০% করেছে , সুচি নিজে গর্বে বলে সবাইকে ‘এরকম স্বামী ভাগ্য করে পাওয়া যায় , এতো কেয়ারিং” , আশীর্বাদ ভাবছে ,কিন্তু এই জ্যোতির্ময় হারামজাদা কে?
আজকের দিনে ‘ জ্যোতির্ময়, জ্যোতির্ময়’ কেন করলো , অজ্ঞান অবস্থায়!! যখন মানুষ সত্যি কথাই বলে। মনটা খুব খারাপ তাই।
১ ঘন্টার মধ্যে সুচির মা- বাবা- ভাই আর একবয়স্কা মহিলা এদের বাড়ি এলেন।
“এই হলো জ্যোতির-মা , সুচিকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে , আমিতো এজি বেঙ্গলে কাজ করতাম ,জ্যোতির-মা ওর আরেকটা মা বলতে পারো।”
আশীর্বাদ ঢিপ করে প্রণাম করে বললো ‘জ্যোতির মা , আজকেরদিনে আশীর্বাদ করুন ‘
সুচি এই মহিলাকে চিনতেই পারছেনা , সুচির মা ধমক দিয়ে বললেন , আমাদের যা খাওয়াবি দে , জ্যোতির মাকে নিতে ওর মেয়ে বসে থাকবে- আমরা এখন যাবো ।
সুচি মুচকি হেসে বললো , “এস তোমরা ভেতরে”।
বেরিয়ে ওই মহিলা মানে “জ্যোতির মা” খুব অবাক
, ‘ এই তোমার মেয়ে ? আমাকে তো চেনেই না , জ্যোতির মা কেন ডাকছে ? ‘
“চুপ করো , পরে বলছি , আমি কি ছাই জানি নাকি , কে একটা জ্যোতির্ময় সেই কলেজে সুচির বন্ধু ছিল।
“মেয়েদের মনের কথা , ভগবান জানেনা , তুমি-আমি কোন ছাড়”।
চলো বীণাপানি এখন মহিলা দিবসের প্রোগ্রামে যাই ।
অনেকে অপেক্ষা করছে।
সুচি বাথরুমে গিয়ে খুব হেসে এলো , ‘ক্যামন মজা , হানিমুনে আবেগে ‘সুচি ‘ ডাকতে কতবার ইন্দ্রানী বলেছিলে? হাঃ হাঃ