লেখায় – শুভাশিনী
অর্ক, চলো আমরা বিয়ে করে নেই। এভাবে আর সম্ভব না।বয়স বাড়ছে আমার। বাসা থেকেও চাপ দিচ্ছে খুব।- অর্ক কে এই কথাটা বলতেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে।
তারপর মৃদু হেসে উত্তর দিলো- বিয়ে করে খাওয়াবো কি? আমারও তো বয়স বাড়ছে।কই, আমার তো এত বাহানা নেই।
অর্কের জবাবে আমার কেন জানি অজান্তেই চোখ ভিজে এলো।
-কেন এভাবে বলছো? আমি কি গরু নাকি ছাগল? আমার কি ড্রাম ড্রাম খাবার লাগে? আমার তো কসমেটিক্সের শখও কোনোদিন হয়নি,এসবের আমার প্রয়োজনও নয়।যার জন্য তুমি ভয় পাবে।তিন বছর ধরেই তো সাদাসিধে আমাকে দেখে আসছো।
-দেখো, অবন্তী, বিয়ে একটা বিশাল জিনিস। আর এখন এসব বিয়ে টিয়ে নিয়ে আমি ভাবছি না।ভালবাসি তোমাকে খুব,এইটুকু বিশ্বাস করে আমার উপর আস্থা রাখো। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি চুপচাপ বাড়িতে ফিরে এলাম। ঘরে ঢুকেই দেখতে পেলাম আজও পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছো। রোবটের মত সেজেগুজে সামনে বসতে হলো।ছেলেটা দেখতে কিছুটা কালো।
একেবারে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল আমার।
ওর মামা বলল-ছেলে মেয়ের আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া উচিত।
এসব শুনে আরো রাগ উঠছিল।
কালো বলেও আমার ঘৃণা নয়।আসলে আমি অর্ককে ছাড়া কাউকে ভাবতে পারিনা। আলাদা করে কথা বলার প্রয়োজন মনে করিনি। আমার মা কে বললাম-আমার মাথা ঘুরছে।কথা বলতে পারবো না।
সেদিনের মত ওরা চলে গেলো।
এরপর প্রায় দুইদিন হতে চললো-অর্কের সাথে আমি কোনোভাবেই আর যোগাযোগ করতে পারছিনা।ফোন বন্ধ।ওর কোনো পরিচিত ফ্রেন্ডের নাম্বারও আমার কাছে নেই। আমি পাগলের মত হয়ে গেলাম।
কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছি। মা হয়ত কিছুটা টের পেয়েছিলেন। আমার মন ভালো করার জন্য হাতে একটা পত্রিকা দিয়ে গেলেন। ররবিবারের পত্রিকায় চাকরীর খবর এলে আমি সেগুলো যত্ন সহকারে পড়ি।
আজও তার ব্যতিক্রম নয়। পত্রিকার ভাজ থেকে চাকরীর অংশ টুকু বের করতে গিয়ে দেখি অর্কের ছবি।
বড় বড় হেডলাইনে লেখা আছে-“এস আই এর মেয়ের সাথে পালিয়ে বিয়ে করলো অর্ক নামের একটি ছেলে।”
আমি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলাম। পুরো পরিবার জেনে গেলো-আমি অর্ক নামের কাউকে ভালবাসতাম।
ঠিক ওই সময় আমাদের ঘরে প্রবেশ করে সেই ছেলেটা-যার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে।
আমি বুঝে গেছি- এর মধ্যে সে সব কিছুই জেনে গেছে। এবং আমাদের বিয়েটা হচ্ছে না। এসব নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। ওইদিন জানতে পারলাম-ওর নাম আবীর।
আবির চুপচাপ এলো,বাবার সাথে কি জানি কথা বললো,তারপর চলে গেলো।
আমি খেয়াল করলাম- সে বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
রাত্রে না খেয়ে বারান্দায় বসে রইলাম।খুব করে মনে পড়ছে অর্কের কথা-“আমার উপর বিশ্বাস করো। খুব ভালবাসি তোমায়।”
আচ্ছা, ও তো আমাকে বলে দিতে পারত,-অবন্তী, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। ৩বছরের সম্পর্ক কি এতটাই ঠুনকো ছিল?
ফোনে রিং বেজে উঠলো।একটা অচেনা নাম্বার। রিসিভ করে চুপচাপ বসে রইলাম। ওপাশ থেকে বলল-
-এখন কি শান্ত আছেন? নাকি আগের মত কান্না করছেন?
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা আবীর।
শুকনা গলায় উত্তর দিলাম –আমি এত সহজে ভাঙি না। যাই হোক, এতকিছুর পরেও আপনার থেকে কল আসা মানে-আপনি এখনো বিয়েতে আগ্রহী। দয়া দেখাবেন না প্লিজ।
–কিন্তু আপনি তো আমাকে একটু দয়া দেখাতে পারেন।
-মানে?
–যে মেয়ে, কোনো পারিবারিক বা বৈবাহিক সম্পর্কে না গিয়েই কাউকে ভালবেসে ভেবলার মত এতটা আকড়ে ধরে বাচার স্বপ্ন দেখে, সে যদি বিয়ে করে আমার ঘরে আসে-তবে আমি সম্ভবত হতে পারি সবচেয়ে সুখী স্বামী।
-আমি সংসারী না।
–আপনার চোখ দুটো মিথ্যে বলেনা।ওই চোখে জাদু আছে, নেশা আছে আর আছে স্বপ্ন।যে স্বপ্নটা আমাকে আমার ভালবাসার মানুষটা দেখিয়েছিল।
–সে কোথায়?
-বাকি গল্প নাহয় বিয়ের পরেই শুনবেন।আর গল্প শুনতে হলে-বিয়ে করে ঘরে আসতে হবে। রাজি তো?
অনেকক্ষন চুপ থেকে উত্তর দিলাম-“ভেবে দেখি।”
আবির ফোন রেখে দিল।
এই স্বপ্নটা অর্ক কেন দেখতে পায়নি?
উহু,আবিরের গল্পটা ভীষণ শুনতে ইচ্ছে করছে।
বারান্দা থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। অর্ধপূর্ণ আধফালি চাঁদ।
আর কিছুটা দিন গেলেই সে পূর্ণ হয়ে গোলাকার ধারণ করবে,যার আলোয় জ্বলজ্বল করবে আমার বারান্দা।
……………….
আরও গল্পঃ-