আজ ফুলশয্যার রাত । সব মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত। মানুষ কত স্বপ্নই না দেখে এ রাত নিয়ে। কিন্তু আশ্চর্য! আমার মাঝে আজ কোন অনূভুতি কাজ করছে না। অনূভুতিগুলো সব ভোতা হয়ে গেছে। হয়তো অবহেলার আঘাতে অনূভুতিগুলো আজ মৃতপ্রায়।
বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই আমার ছিল না। কিন্তু বাবা মা একপ্রকার জোর করেই আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল। আর কোন মেয়েকে আমার জীবনে জড়ানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু না চাইতেও আরো একজন এসে আমার জীবনে জড়িয়ে গেল।
ঘরের দরজাটা আস্তে করে ধাক্কা দিলাম। ক্যাচ করে একটা শব্দ হলো। আর এই শব্দে আমি মোটামুটি ভালই চমকে উঠলাম। কিন্তু এই শব্দটা আমার অতি পরিচিত। তবে আজ কেন এমন চমকে উঠলাম? হয়তো আজ আমার ফুলশয্যার ঘরে ঢুকছি তাই !
খাটের উপর একটা মেয়ে একহাত লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। সে আজ থেকে আমার স্ত্রী, আমার অর্ধাঙ্গিনি। কিন্তু তারপরও আমার মনে কোন উত্তেজনা অনূভব করছি না কেন? কি কারনে এমন হচ্ছে?
..
জীবনে অনেক অবাক হতে হয়েছে আমায়। পদে পদে অবাক হয়েছি। পদে পদে চমকে উঠেছি। কিন্তু আমার ঘরেই আমার জন্য এমন চমক অপেক্ষা করছে তা আমি জানতামই না।
আমি খাটের কাছে এগিয়ে যেতেই মেয়েটা মানে আমার স্ত্রী হঠাৎই তার শাড়ীর নীচ থেকে একটা ইয়া বড় ছুরি বের করে আমার দিকে তাক করলো।
— খবরদার ভুলেও আমার কাছে আসবেন না। আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না। ( মেয়েটা)
মেয়েটার নাম মনে নেই। তবে মেয়েটা অসম্ভব রুপবতী। বিয়ের আগে ছবি দেখেছিলাম একবার। তবে ছবিতে তাকে এত সুন্দর লাগেনি যতটা আজ লাগছে।
আমি কোন কথা না বলে খপ করে মেয়েটার হাত ধরে বসলাম। মেয়েটা হয়তো ভেবেছিল আমি হয়তো তাকে বিভিন্ন কথায় ভুলানোর চেষ্টা করবো। কি কারনে সে আমার দিকে ছুরি তাক করলো?
কেন তাকে ছোঁয়া যাবে না ?
এসব জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু এসব জিজ্ঞেস করার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।
এসব জিজ্ঞেস করলে হয়তো মেয়েটা বলবে আমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না, কারন সে অন্য কাউকে ভালবাসে।
যদি জিজ্ঞেস করি তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করেছো তাহলে হয়তো বলবে যে, তার বাবার হার্টের সমস্যা। তাই বাধ্য হয়েই তাকে বিয়ে করতে হয়েছে। যে সব প্রশ্নের উত্তর জানি সেসব প্রশ্ন করে লাভ কি?
মেয়েটার হাত থেকে ছুরি টা নিয়ে জানালার বাইরে ফেলে দিলাম।
— আপনি আমার হাত ধরলেন কেন?
আপনাকে না বলেছি আমাকে ছোঁবেন না। (মেয়েটা)
— তোমার নাম কি? (আমি)
— মানে?
— মানে তোমার নাম কি?
— আপনি আমার নাম জানেন না?
— নাম জানলে কি নাম জিজ্ঞেস করতাম?
— নাম জানেন না অথচ বিয়ে করে ফেলেছেন?
— এত কথা বলছো কেন? যা জানতে চাইছি তার উত্তর দাও।
— কিসের উত্তর দিবো?
— আজব তো? তোমার নাম কি বলো তাড়াতাড়ি।
— মিতু !
— আচ্ছা মিতু আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। আমি এখন ঘুমোবো। তোমার যা সমস্যা আছে তা কাল সকালে বলতে পারো। এখন আপাতত ঘুমোও।
..
মিতু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সে হয়তো ভেবেছিল আমি আমার পুরুষত্ব প্রমানের জন্য তার উপর ঝাপিয়ে পড়বো। কিন্তু এখন এভাবে আমাকে ঘুমানোর কথা বলতে শুনে সে হয়তো অনেকটাই অবাক হয়েছে। হোক অবাক, একটু আধটু অবাক হওয়া স্বাস্থের জন্য উপকারী !
এসব বলে নিজের মনে নিজেই হাসতে লাগলাম ।
..
সকাল বেলা কখন ঘুম ভাঙ্গলো জানিনা। তবে ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমার বুকের উপর কেউ শুয়ে আছে।
মিতু তার মাথাটা আমার বুকের উপর রেখে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। বালিশের কি এতই অভাব যে আমার বুকের উপর ঘুমাচ্ছে? মেয়েদের মন বোঝা কখনো কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
যে মেয়ে ফুলশয্যার রাতে স্বামীকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখায় সে মেয়ে আজ আমার বুকে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কি আজব দৃশ্য!!!!!!
আমার এখন উচিত ওর মাথাটাকে বালিশে রেখে দিয়ে উঠে পড়া। কিন্তু আমি পারলাম না। কারন মিতু আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
মিতুর এই ঘুমন্ত রূপ দেখে ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। একেবারে ছোট্ট মেয়েদের মত আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে সে।
আমার মনের অজান্তে কখন যে আমার হাত মিতুর চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো তা টেরই পাইনি। কিন্তু এমন কেন হলো?
আমি তো চাইনা আর কোন মায়ার বাঁধনে জড়াতে। কিন্তু তারপরও কেন মনে হচ্ছে মিতু নামের এই মেয়েটার কপালে একটা ছোট চুমু এঁকে দেই? কেন মনে হচ্ছে মিতু নামের এই মেয়েটা আমাকে পাগলের মত ভালোবাসবে?
তার এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমোনো তাই প্রমান করছে।
তাহলে কি আমার হারানো অনূভুতিগুলো আবারো ফিরে আসছে? যে অনূভুতিগুলো ফিরে পেতে কত রাত জেগে কাটিয়েছি। কিন্তু ফিরে আসেনি। কিন্তু শুধু মাত্র এক রাতেই মিতু তা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাও কোন ঘনিষ্ঠতা ছাড়াই।
আমি মিতুর চুলে আঁকিবুকি কাটছি এমন সময় মিতুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভাঙ্গতেই সে লজ্জামাখা একটা হাসি দিল। হয়তো আমি তাকে আমার বুকে ঘুমাতে দেখে ফেলেছি তাই।
..
— রাতে ছুরি নিয়ে ভয় দেখিয়েছো আর সকালে বুকের উপর ঘুমোলে। ঘটনা কি? (আমি)
— ঘটনা কিছুই না। (মিতু)
— তাহলে রাতে ছুরি দেখালে কেন?
— খুব ভয় পেয়েছিলাম তাই।
— ভয় পেয়েছিলে? কিন্তু কেন?
— জানিনা। এত প্রশ্ন করছেন কেন? আমি কি আপনার বিয়ে করা ব…….!
— কি ব্যাপার থেমে গেলে কেন?
— (চুপচাপ। শুধু মুচকি হাসি)
— হাসছো কেন?
— আপনাকে একটা কথা বলি?
— বলে ফেলো, কান খোলা আছে।
— আমি একজনকে খুব ভালবাসি।
— আগেই জানতাম আমি। নয়তো ফুলশয্যার রাতে কোন স্ত্রী তার স্বামীকে ছুরি দিয়ে ভয় দেখায় না। ছেলেটা কে? কি করে?
— উহু বলবো না।
— বলবে না কেন?
— কারন আপনি খুব খারাপ ! পুরো কথা না শুনে আপনি বকবক করে এত্তোগুলো কথা বলেন কেন?
— আমি আবার কি বললাম?
— আমি একজনকে ভালবাসি।
— তো?
— আমি আপনাকে ভালবাসি। বলেই বালিশের আড়ালে মুখ লুকোলো
— (এবার আমি নিশ্চুপ।)
— আপনাকে আরেকটা কথা বলি?
— হুম বলো।
— আমি কিন্তু প্রতিদিন আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমোবো। আপনি কিন্তু বারন করতে পারবেন না।
কথাগুলো শুনে আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন । এই ফাঁকে সে টুক করে বিছানা ছেড়ে এক ছুটে ঘরের বাইরে চলে গেল ।
ওর বাইরে যাওয়ার আগে শুধু ওর লজ্জারাঙা মুখে এক অনাবিল আনন্দের হাসি দেখতে পেলাম ।
যা হয়তো শরীরী মিলনের আনন্দের চেয়ে কয়েক কোটি গুন বেশি আনন্দের , শান্তির আর ভালোবাসার ….!!
আমি আর কিছু বললাম না। শুধু মিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আবারো আমি কোন মেয়ের মায়াজালে আটকে গেছি। তবে এবার কোন ছলনাময়ীর জালে আটকে পড়িনি। পড়েছি কোন এক মায়াবতীর জালে।
………………………..
আরও পড়ুন ; যৌনতা ও প্রেম