নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প – Bengali Love Story Golpo – Premer Golpo
Bengali Love Story
তাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম, তখন আমি মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
লেখাপড়ার কারণে বাড়িতে থাকা আমার হতো না, দু তিনমাস অন্তর বাড়ি ফিরতাম আমি।
সেবার মায়ের চিঠি পেলাম আমার বড় দাদার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ের দিনক্ষণ
জানিয়ে মা লিখেছেন, দাদার বিয়ের কয়েকদিন আগেই যেনো আমি পৌঁছে যাই বাড়িতে।
বিয়ের আগের দিন রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়ি গিয়ে দেখলাম সব প্রস্তুত
ভিয়েন বসেছে, সারা বাড়িতে প্যান্ডেল। জেঠতুতো পিসতুতো দাদারা বললো -“হবু
ডাক্তার আর ছোট ছেলে হওয়ায় বেঁচে গেলি সব দায়িত্ব থেকে।”
যাইহোক বিয়ের গায়ে হলুদ সব অনুষ্ঠান হৈহৈ করে পালন হল সকালে, তারপর সন্ধ্যায়
আমরা চললাম কনের বাড়ি, আমি হাতে নিয়েছিলাম আমার প্রিয় ক্যামেরাটা। যখন
কনেবাড়িতে পৌছালাম তখন রাত আটটা। পাত্রের ছোট ভাই আর তার উপর হবু ডাক্তার আমার
বেশ ভালোই খাতির করছিল ওই বাড়ির লোকজন। বেশ কিছু সময় অপেক্ষার পর শুরু হল
বিয়ের অনুষ্ঠান, পান পাতায় মুখ ঢেকে কনে এলো দাদার সামনে, তখনো আমি তার মুখ
দেখিনি। পানপাতাটা সরাতেই দেখলাম সেই অপরুপ সুন্দর মুখখানা, কি গভীর সেই টানা
টানা চোখের চাউনি, আমি ছবি তোলা ভুলে অভিভূত হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। সেই
রাতে বাড়ি ফিরতে মা পান চিবাতে চিবাতে বললেন-“বৌদি পছন্দ হয়েছে? কতো খুঁজে
খুঁজে এ পাত্রী ঠিক করেছি আমি, যেমন রূপবতী তেমন গুনবতী, স্কুল ফাইনাল পাশ
দিয়েছে এই মেয়ে।”
মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকলো শহরে এতো আধুনিক মেয়ে দেখেছি, আমাদের মেডিক্যাল
কলেজেও তো কতো মেয়ে পড়ে, এতো গভীর চাউনি আমি কারো চোখে দেখিনি আমি।
Bangla New Love Story
তাকে বরণ করে ঘরে তুললো। আমি তখন ক্যামেরা হাতে ব্যস্ত ছবি তুলতে। সবাই
তার সাথে আমার পরিচয় করালো, বললো -“ওই ক্যামেরা হাতে লাজুক ছেলেটা তোমার
একমাত্র দেওর।”
লাগছিল তাকে। বৌভাতের পরের দিন আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হলাম হোস্টেলে ফেরার
জন্য। বাবা বললেন-” এই তো তিনচার দিন এলি বাবা, আরো কয়েকদিন থেকে যা।”
পর পরীক্ষার হলে ফিরবো, এসে বেশ কয়েকদিন থাকবো।”
ওপরের দালান থেকে উদাস ভাবে তাকিয়ে আছে পথের দিকে।
Premer Golpo In Bengali
হোস্টেলে আসার মাস দেড়েক পর একদিন সকালে দেখলাম আমার দুই পিসতুতো দাদা
হোস্টেলের সামনে এসে উপস্থিত। কারণ জিজ্ঞেস করতে তারা বললো -“সর্বনাশ হয়ে গেছে
ভাই তোর দাদা মনোময় আর নেই, বন্ধুদের সাথে পিকনিক করতে গিয়ে নদীতে স্নান করার
সময় স্রোত তাকে টেনে নিয়ে যায়, আবার ফিরিয়েও দেয় কিন্তু প্রাণহীন
অবস্থায়।”
রাত হয়েছে। দেখলাম আমাদের সুন্দর বাড়িতে আলো নেই, খুশি নেই আছে শুধু
নিঃস্তব্ধতা, কান্না আর হাহাকার। তাকেও দেখলাম দাদার পায়ের কাছে বসে কাঁদতে।
মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন-“তোর দাদা আর নেই বাবা।”
দিনগুলোর কথা, আমার দাদা কখনো আমাকে শাসন করেনি, কোনোদিন সমাজের গোঁড়ামি
বিধিনিষেধ মানেনি, আমাকে সবসময় সততা আর নিষ্ঠা নিয়ে বাঁচতে শিখিয়েছে। আমি
বোধহয় উপলব্ধি করতে পারছিলাম দাদার পায়ের উপর মাথা দিয়ে বসে থাকা মেয়েটার
যন্ত্রণা।একে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর স্বামী হারানোর দুঃখ সাথে তো সমানে
চলছে দোষারোপ। কেউ বলছে-“বিয়ে না হতে হতে বরের মাথা খেয়েছে মেয়েছেলে।”
অমঙ্গলের শেষ নেই।”
সাদা থান উঠলো, শাঁখা সিঁদুর মুছে দিলো কয়েকজন মিলে। সে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো ,
কিন্তু কেউ তা গ্ৰাহ্য করলো না। আমাকে থেকে যেতে হল বাড়িতে শ্রাদ্ধশান্তি মিটে
যাওয়া পর্যন্ত।
শারীরিক প্রেমের গল্প
শরৎচন্দ্র, তার প্রিয় খাবার পায়েস, আর তার প্রিয় রং লাল। আমার সাথে কথা বলে
সে বোধহয় একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। সে বললো-“আচ্ছা তুমিও কি মনে করো তোমার
দাদার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী?”
জলে ডুবে মারা গেছে দাদা এখানে তোমার দায় আসে কোত্থেকে? কুসংস্কারে আচ্ছন্ন
আমাদের সমাজ তোমায় অযৌক্তিক ভাবে দোষারোপ করবে এ নিয়ে মন খারাপ করো না তুমি।”
কাটিয়ে দিতে হবে আমায়।”
পুরোটা পড়ে আছে এখনো, নতুন করে শুরু করবে আবার।”
এখানে হয় না। তার উপর তোমাদের মতো বড়লোক বাড়ির বিধবা বৌ আমি, আমার বাড়ির
লোকও নিজের ঘরে ঠাঁই দেবে না আমায়।”
ঘরের আলমারির চাবি তার হাতে দিয়ে বললাম -“আমার দেশবিদেশের বিভিন্ন বইয়ের শখের
সংগ্ৰহ আমি তোমায় দিয়ে গেলাম, পড়ো মন ভালো থাকবে।” আমি চলে যাওয়ার সময়
সেদিন তার চোখ ভরা জল দেখে, বুকের ভিতরটা যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগতে লাগলো। এই
প্রথমবার হোস্টেলে ফিরে এতো কষ্ট অনুভব করলাম আমি, সেই দুটো চোখ বারবার ভেসে
উঠলো চোখ বন্ধ করতেই।
দুবার। যাওয়ার সময় তারজন্য কলেজ স্ট্রিট থেকে নিয়ে যেতাম শরৎ রচনাবলী আর
চোখের কাজল। বিধবা বৌ হওয়ায় তার শখের কথা আমায় ছাড়া বলতে পারেনি কাউকে। আমি
বাড়ি গেলে ভীষণ খুশি হতো সে। নিজের রাতে রাঁধতো, ভাত বেড়ে দিতো, পাখার
বাতাস করতো। আর অবসরে চলতো গল্প। আস্তে আস্তে কখন যে ওই বিধবা মেয়ের প্রেমে
পড়ে গেছি জানতেই পারিনি। যখন জানলাম তখন ওই ভালোবাসার বন্ধন ছেদ করা আমার
সাধ্যের বাইরে চলে গেল। আমি উপলব্ধি করলাম আমার সারা মনজুড়ে শুধু সে আর সে।
সেবার কি প্রচন্ড বৃষ্টি, ঘুম থেকে উঠে খেয়াল পড়লো আমার সাধের কোর্টটা নিজে
কেচে ছাদে মেলেছিলাম। দৌঁড়ে ছাদে গিয়ে দেখলাম, সাদা শাড়ি পরা সেই
মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজছে, বৃষ্টির জলে তাকে কি প্রচন্ড স্নিগ্ধ লাগছে, ঠান্ডা
জলের স্পর্শে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে তার শরীর। মনে হচ্ছিল দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে
ধরে তাকে উষ্ণ করি, চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিই তার ভেজা শরীরটা চেঁচিয়ে বলি
ভালোবাসি ভালোবাসি। হঠাৎ সে আমার দেখতে পেয়ে চমকে উঠে ভেজা শাড়িতে তার
উন্মুক্ত কোমর ঢেকে, সলজ্জ ভাবে ভেজা ঘোমটা মাথায় টেনে নীচে ছুটলো, আমি
তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়ার পথের দিকে।
গল্প একসময় বদলে গেল প্রেমে। একদিন আমি জোর করে তার নরম পা দুখানি আমার কোলে
নিয়ে শহর থেকে কিনে আনা একজোড়া নূপুর পরিয়ে দিলাম তার পায়ে। সেই প্রথমবার
স্পর্শ করলাম তাকে, আমার স্পর্শে কেঁপে উঠলো সে ভয়ার্ত হরীনির মতো। আমাদের
নিষিদ্ধ প্রেম দিনের পরদিন সবার অগোচরে বাড়তে লাগলো, সাথে সাথে বাড়তে লাগলো
চিঠির পৃষ্ঠাও। একদিন আমি বলেই দিলাম-“খুব ভালোবাসি তোমায়, আমার সমস্ত
ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে আমার করে নেবো তোমায়, নতুন সংসার পাতবো আমরা।”
বললাম-“ও সমাজের গোঁড়ামি মতামত আমি মানি না।”
নিয়ে এ বাড়িতে এলে তা আমি দেখতে পারবোনা, বিষ খেয়ে মরবো আমি। ”
তোমার একার বাস, একার অধিকার।”
তারপর ঠিক করলাম এম ডি পড়বো। বাড়িতে আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু হল।
আমি তখন পেশেন্ট দেখতে ব্যস্ত আর চোখে জল নিয়ে তখন আমার জন্য অধীর ভাবে
অপেক্ষা করছে সে। বাড়িতে ফিরতেই মাঝরাতে ছাদে দেখা করলাম আমরা। সে আমাকে
জড়িয়ে ধরে বললো-” মা যে তোমার জন্য মেয়ে দেখে পাকা কথা দিয়ে দিয়েছে।”
পেয়োনা আমি আছি।”
আমার কিছু কথা আছে। সবাই এলো তাকেও আসতে বললাম। সবার সামনে বললাম আমি তাকে
ভালোবাসি তাকে নিয়েই সংসার করতে চাই। বাবা বললেন-“লেখাপড়া শিখিয়ে অমানুষ
তৈরি করেছি, ত্যাজ্য পুত্র করবো তোকে।”
ছিল তোর পেটে!”
সবাইকে বলো। তুমি কি আমার হাত ধরে এ বাড়ি ছেড়ে নতুন সংসার পাততে চাও আমার
সাথে?”
সে। আমিও তার হাত ধরে বাড়ি ছাড়লাম সেইদিন, কালিঘাটে বিয়ে সেরে আমার নতুন
ভাড়ার ঘরে তাকে নিয়ে সংসার পাতলাম।
শহরে। একটা বাড়ি কিনলাম আমি দোতলা, তিনটে ঘর তাতে। তারপর একসময় আমি বাবা
হলাম, একটা ফুটফুটে ছেলে হল আমাদের। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর আমি ওর মাথায় চুমু
খেয়ে বললাম এ আমার শ্রেষ্ঠ উপহার। ছয় মাস বয়সে ছেলের অন্নপ্রাশন আমি নিজে
গেলাম বাড়িতে, আসতে বললাম সবাইকে শহরে, মনে হল বাবা মায়ের রাগ একটু কমেছে।
কিন্তু ওনারা আসবে নাকি সে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম, কারণ ততোদিনে আমাদের বাড়ির
বদনাম ছড়িয়েছে বিধবা বৌদিকে বিয়ে করার অপরাধে। আমি দেখলাম তাকে আমাদের পাশের
ঘরটা সুন্দর করে সাজাতে, আমি কারণ জিজ্ঞেস করতে সে বললো-“বাবা মা ও বাড়িতে
ভীষণ একা, ওনারা একবার এলে, পায়ে পড়ে ওনাদের রেখে দেবো এখানে, কিছুতেই যেতে
দেবো না।”
আর ফিরতে দিইনি তাদের। শেষ বয়সে বাবা মায়ের সেবা করেছি আমরা। বাবা মা এক
নাতনিকেও কোলে নিয়ে সাধ পূরণ করেছেন। এখন আমি, সে আমাদের দুই ছেলে মেয়ে আর
বাবা মায়ের সুখের সংসার। আমার মেয়ের গানের গলা খুব সুন্দর একসময় সে চান্স
পেলো টিভি শোতে। বহুবছর পর যখন সপরিবারে আমরা বাড়ি ফিরলাম পাড়ার লোক সব ভুলে
তাকেই বললো রত্নগর্ভা।
মেয়েরও বিয়ে দিয়েছি ভালো পরিবারে দুই নাতনি আমার মেয়ের ঘরের, দাদু হয়েছি।
আমার ছেলে বিদেশে চাকরিসূত্রে, বছরে একবার আসে, ফোনে খোঁজ নেয় প্রায়ই।
বিদেশিনী বৌমা আমার ভীষন মিষ্টি আমার সাথে ভীষণ ভাব, আর শাশুড়ি মায়ের আদরের
বৌমা। এতোদিন এক এক করে সবাই আমার থেকে দূরে সরে গেলেও সে কিন্তু আমার সাথে ছিল
আমার খারাপ সময়ে, আমার অসুস্থতার। কিন্তু আজ সেও আমায় ছেড়ে চলে গেল চিরকালের
মতো। ওর দুপায়ে চওড়া করে আলতা আর নূপুর পরিয়েছি, কপালে চন্দন, সিঁদূর সব
নিজের হাতে পরিয়েছি, মেয়ে জামাই কিছু সময়ের মধ্যেই চলে আসবে ছেলেও বলেছে যতো
তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসবে এখানে। আজ বৃদ্ধ আমি, চোখে জল নিয়ে তার মুখের দিকে
তাকিয়ে আছি। যারা বলেছিল এ মেয়েকে বিয়ে করলে অমঙ্গল হবে, আমিও মারা যাবো
তারা আজ কোথায়? এ মেয়ে যে আমাকে একা করে দিয়ে নিজেই চলে গেলো। খুব অভিমান
হচ্ছে আমার ওর উপর। আমায় ফেলে যখন যাবে, কেনো এতো ভালোবেসেছিল কেনো বলেছিল
সবসময় সাথে থাকবো? আমাদের বাগানের কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া গাছটা আজ ফুলে ভরা।
ও বড় সাধ করে বসিয়েছিল গাছ দুটো। বলতো-“এ দুটো তুমি আর আমি সবসময় পাশাপাশি
থাকি যেমন। কৃষ্ণচূড়াটা তুমি আর রাধাচূড়াটা আমি।”
আদরে ভরিয়ে দিয়েছি ওকে, আশেপাশের লোক এখনো ওর মৃত্যু সংবাদ পায়নি। বিকালে
রাধাচূড়ার নীচে এসে দাঁড়ালাম আমি এই দুটো গাছ আমাদের সারা জীবনের প্রেমের
সাক্ষী। মনে পড়ে গেলো পাশের মাধবীলতার ফুলের গয়না দিয়ে ওকে সাজিয়ে দিতাম
আমি। কিন্তু একি চোখে অন্ধকার দেখছি যে আমি, খুব জোরে পড়লাম মাটিতে। আমি একি
দেখছি আমার মাথাটা কোলে নিয়ে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। ওর পরনে লাল
বেনারসি, গা ভর্তি গয়না, চন্দনের সাজ, পায়ে সেই আলতা আমার পরিয়ে দেওয়া
নূপুর। আমি পরম শান্তিতে চোখ বুঝলাম।
আমি। আমাকে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন মিলে। আজও পাশাপাশি শুয়ে আমরা দুজন
প্রাণহীন অবস্থায়। আমাদের মেয়ে আর নাতনি দুটো খুব কাঁদছে। রাতের মধ্যেই সৎকার
করা হবে আমাদের কারা যেনো বলছে রাধাচূড়া আর কৃষ্ণচূড়া গাছ দুটো কাটা হোক, সেই
কাঠেই পোড়ানো হবে আমাদের। আমি আর আমার সে পরম নিশ্চিন্তে শেষ ঘুমে ঘুমিয়ে
আছি। ও হ্যাঁ একটা কথা, আমার সেই তাহার নামটি চন্দনা।