Durga Puja 2022: Durga Puja Story In Bengali – দূর্গা পূজার গল্প

Bongconnection Original Published
9 Min Read

Durga Puja 2022: Durga Puja Story In Bengali – দূর্গা পূজার গল্প

 

Durga Puja 2022: Durga Puja Story In Bengali - দূর্গা পূজার গল্প
Loading...

Durga Puja Stories In Bengali

বৌ যখন পূজারী
 – প্রতীপ বোস
  
       এক এক করে আমাদের সব বন্ধুদের বিয়ে হয়ে গেল, খালি
নীলুটাই পরে রইল। নীলু কিন্তু পাত্র হিসেবে খারাপ ছিলনা, সরকারি চাকরি, নিজের
বাড়ি,দেখতেও সুন্দর।দু তিন বছর ধরে মেয়ে দেখা চলছিল তাও কেন বিয়ে হচ্ছিলনা
বুঝতে পারতাম না।নীলুটা চিরকালই একটু ছিচকাঁদুনে ছিল তবে এত খুঁতখুঁতে হবে
ভাবিনি।পরে অবশ্য ওর সাথে পাত্রী দেখতে গিয়ে বুঝলাম ও আসলে হচ্ছে রাম ক্যাবলা।
মেয়েরা কিছু জিজ্ঞেস করলে কথা কি বলবে, ভয়ে তোতলাতে শুরু করত। এরকম আনস্মার্ট
ছেলেকে কোন মেয়ে পছন্দ করবে !


       ওদিকে আবার নীলুর বিয়ে করার ষোলআনা ইচ্ছে। দিনরাত
আমাদের কাছে ঘ্যানঘ্যান করত। আমাদের আনা সম্পর্কগুলো তো আগেই বাতিল হয়ে গেছে।
শেষে নীলুর মা উনার স্কুলের সহকর্মীর থেকে একটা সম্বন্ধ যোগাড় করলেন। নীলুর
বাবা মারা যাবার পর উনি একাই নীলুকে মানুষ করেছিলেন। উনার সামনে নীলুর কোনো
ট্যা ফ্যো চলত না । উনি সোজা ছেলেকে বলে দিলেন ” এবার যে মেয়েকে দেখছি তাকে না
বিয়ে করলে নিজেই দেখে নিস।”
         নীলু নার্ভাস হয়ে আমাকে ধরল।  ওদের
সাথে মেয়ের গ্রাম পৌঁছতেই দুপুর হয়ে গেল। মেয়ে তো দেখলাম খুব মিষ্টি, নাম
পিউ, অল্পবয়সী, কলেজে পড়ছে। ঘরে এসে সবাইকে ফটাফট প্রনাম করে নিল। নীলুর মা
বলা মাত্রই সুরেলা গলায় একটা ভজন শুনিয়ে দিল। আর এদিকে নীলু কেমন থম মেরে
বসেছিল।নীলুকে কনুইয়ের ধাক্কা মেরে সিগন্যাল দিলাম যাতে ও একটু কথা বলে। 
         পিউ খালি রান্না আর পূজো নিয়ে কথা বলে গেল।
নীলুর মার তো বেশ পছন্দ হয়ে গেছিল। দেখলাম নীলু এত পুজোর কথা শুনে ভয় পেয়ে
গেছে। আসলে ওর পিসিও খুব ভালো গান গাইতেন, সারাদিন পুজোআর্চা নিয়ে থাকতেন।
একদিন উনি মঠের সন্যাসিনী হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।  অনেক চেষ্টা করেও
ওনাকে আর ফেরানো যায়নি।


         নীলুর মাথায় তখনও ভজন আর পুজোর কথা ঘুরছে,
তাই বোঝালাম, দেখ বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ, তাছাড়া এই অজ পাড়াগাঁয়ে
আর আছেটা কি? সাথে এও বলে দিলাম কলকাতায় খুঁজলেও এমন মেয়ে পাবি না।সব আগে
থেকেই রিজার্ভ হয়ে যায়। অবশেষে নীলু আমাদের কথা মেনে নিল।
          বৌভাতের দিন দেখি নীলু বৌয়ের সাথে বেশ
স্টাইল মেরে ফটো তুলছে। ভাবলাম ছেলেটা বিয়ে হতে না হতেই স্মার্ট হয়ে গেছে।
বিয়ের পর দশ দিনও কাটল না দেখি আমাদের বাড়ি এসে হাজির। চোখের কোণে কালি
চুলগুলো উস্কোখুস্কো,ওর অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলাম সব ঠিক আছে তো। বৌদির সঙ্গে
কেমন আলাপ হল?


পুরো এককাপ কফি খেয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, ” কই আর হল “।
আমি বললাম, বলিস কি রে ! এতদিনে আলাপ হলনা। ফুলশয্যার দিন কি করছিলি ?
নীলু বলল, ” সেদিন একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল,ঘরে ঢুকে দেখি বৌ ঘুমিয়ে পরেছে।
চারিদিকে ফুলের গন্ধ, ভাবলাম জোৎস্নার আলোয় ব্যালকনিতে বসে গল্প করব। হাতটা
ধরা মাত্রই ধড়ফড় করে উঠে আমায় একটা প্রণাম ঠুকে বলল, আপনি আমায় ডাকছিলেন?
বললাম না তোমাকে দেখছিলাম; তুমি কি মিষ্টি গো।”
আমি উত্তেজনায় নীলুর পিঠ চাপড়ে বলে উঠলাম, বাহ্ নীলু তুই এই কদিনে কত কথা
শিখে গেছিস। বল বল তারপর কি হল?
আরো পড়ুন, 

কেউ কথা রাখেনি – Bengali Story – Durgapuja Special Golpo


নীলু বলল, “তারপর ও লজ্জা পেয়ে ওপাশে ফিরে ঘুমিয়ে গেল।আর আমি সারারাত এপাশ
ওপাশ করতে থাকলাম। সকালে বৌ এসে মিষ্টি হেসে ঘুম থেকে ওঠালো। হাতে কাপ দিয়ে
বলল, আপনার চা। এরপর সারাদিন আপনি, আজ্ঞের বহর চলতে থাকল। অষ্টমঙ্গলা কেটে অফিস
জয়েন করে ফেললাম, কিন্তু বর বৌয়ের সম্পর্ক আর হয়ে উঠল না রে “।
আমি বললাম,তোর থেকে দশ বছরের ছোট মেয়ে, ওর তো একটু মানাতে সময় লাগবে। আর তোকে
তো আর দাদা বলে ডাকেনি। একটু আপনি আজ্ঞেই না করেছে। নীলু রেগে যাচ্ছে বলে কথা
ঘুরিয়ে বললাম, রবিবার কি করলি?
নীলু: ও সকালে চান করে পুজোয় বসে পরে, আবার রান্না সামলে ফের পুজোয় বসে।
দুপুরে মার কাছে শোয়। বলে, মা পুরো সপ্তাহটা স্কুলে থাকে, তাই রবিবার ও মাকে
কাছছাড়া করতে পারেনা। 
আমি:  বিকেলে তো বৌকে নিয়ে একটু সিনেমা,শপিং মলে,যেতে পারতিস।
নীলু বলল বিকেলে ও আবার চান করে সন্ধ্যা দিতে বসে। তারপর মায়ের সাথে বসে বাঙলা
সিরিয়াল দেখে। শপিং মল যেতে বললে বলে, “আমায়  মন্দিরে নিয়ে চল”।
ঠাকুরঘরে উঁকি মেরে দেখেছি ওখানে গুনগুন করে গান গায় আবার ধিনাক ধিনাক করে
নাচে। এ বোধহয় আমার পিসিমণির মত সন্ন্যাসিনী হয় যাবে রে। বলতে বলতে নীলু
কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। 

দূর্গাপূজা গল্প

Loading...
আমি বললাম, দেখ বাঙলা সিরিয়াল দেখে মানে সংসারের ওপর টান আছে। তুইও এমন কিছু
কর যাতে তোর ওপর টান আসে। বেডরুমে একটা রাধাকৃষ্ণের ফটো টাঙ্গা, রোজ ভক্তিভরে
পুজো করে রাতে বৌকে রাধাকৃষ্ণের লীলার গল্প বলবি। ঠিক বুঝবে যে তুই কৃষ্ণ। নীলু
হেসে চলে গেল।
         কদিন পরেই দেখি নীলু একটা প্যাকেট নিয়ে
হাজির। খুশি হয়ে ভাবলাম এতদিনে বর বৌয়ের মিলন হয়েছে। নীলু দেখি মাথা নামিয়ে
বসে আছে। মুখ ফস্কে বেড়িয়ে গেল,এবার কি হল রে ? 
নীলু বলল কদিন গল্প শোনাবার পরেই দেখি, বৌ কয়েকটা পকেট সাইজের ভগবানের ফটো
নিয়ে এসেছে।আমার গল্প শেষ হলে ঐ ফোটোগুলোয় প্রণাম করে ঘুমিয়ে পরে।
আমি: সে কি রে !! তুই গল্প শুনিয়ে বলিস নি যে, তুমি আমার রাধা…..।
নীলু বলল তুই তো কৃষ্ণ বলতে বলেছিলি।
আমার মুখ দিয়ে বেরোচ্ছিল, হায় রে ভগবান ! খুব জোর সামলে, জিগ্যেস করলাম, “তোর
ঐ প্যাকেটটায় কি আছে রে? ” ও একটা বড় হিট স্প্রে বার করে দেখাল, বাড়িতে নাকি
মশা, মাছি, আরশুলার উপদ্রব। আমি জানতে চাইলাম, তোরা মশারী টাঙিয়ে শুস না। নীলু
ঘাড় নাড়িয়ে বলল, ওরা গুডনাইট জ্বালিয়ে শোয়।
      ওকে বললাম তুই আপাতত স্প্রে টা  এখানে রেখে যা। আর
আমাদের ঠাকুরঘর থেকে অনেকটা নকুল দানা এনে ওকে বললাম, রোজ রাতে পুজোর সময়
এগুলো ঠাকুরকে দিবি। সকালে এই প্রসাদটাকে গুঁড়ো গুঁড়ো করে ঘরের চারকোনে আর
খাটের তলায় ছড়িয়ে দিবি। দুদিন বাদে আমাদের গুরুদেব আসছেন। শনিবার রাতে গিয়ে
আমি উনার মন্ত্রপূত ওষুধ পৌঁছে দিয়ে আসব, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। নীলু
বিশ্বাস করে চলে গেল।
       শনিবার রাতে নীলুকে ঠোঙা ভর্তি গুরুদেবের মন্ত্রপূত
ওষুধ দিয়ে, ভালো করে বুঝিয়ে এলাম, যাতে শোবার আগে মুখটা একটু ছিঁড়ে খাটের
তলায় ঢুকিয়ে দেয়।
       ও বাবা ! রবিবার দেখি সাতসকালে নীলু এসে হাজির।
আবার আপনমনে গান গাইছে, ” তুরুক তুরুক তুক তারা রা রা …..”।  যাক নীলুকে
খুশি দেখে  হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
         আমাকে দেখেই ও বলতে শুরু করল, ” রাতে ওষুধটা
দিয়ে, পিউকে রাধাকৃষ্ণের গল্প শোনাচ্ছিলাম; অন্যদিন অত কিছু বলতে পারিনা,
কিন্ত গুরুদেব সাথে আছে ভেবে ওর হাতটা ধরে বলে ফেললাম, আমি কৃষ্ণ তুমি আমার
রাধা। ও ধ্যাত বলে অন্যদিকে সরে গেল।
        এরপর ঘুমিয়ে পরেছিলাম। রাতে বাঁচাও বাঁচাও আওয়াজ
শুনে, আলো জ্বালিয়ে দেখি পিউ চোখ বন্ধ করে চেঁচাচ্ছে আর ঘরে কয়েকটা আরশুলা
ফরফর করে উড়ছে। আলোতে ওগুলো  দূরে চলে গেল। ওকে বললাম আবার কিছু হলে তুমি
আমার নাম করে ডাকবে।
          বৌ সাহস করে আমার দিকে একটু ঘন হয়ে শুয়ে
পরল। ঘুমিয়ে পরেছিলাম আবার বৌয়ের আওয়াজে উঠে গেলাম। কৃষ্ণ, তুমি আমায়
বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। এরপর বুঝলি আর একটুও দেরী না করে, পায়ের কাছে রাখা
বড়ো বেডশিটটা দিয়ে আপাদমস্তক মুড়ি মেরে, দুহাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিলাম।
       ভয়ে ওর বুকটা ধুকপুক করছিল। আর চাদরের নীচে আমার
ঠোঁটটা ওকে স্পর্শ করতেই আমারও না ভিতরটা কেমন উথাল পাথাল হতে শুরু করল। আমায়
অসভ্য বলে ঠেলে দিয়েছিল, আমি কিন্তু ওকে একটুও ছাড়িনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে
বলল, আজ রবিবার দুপুরে নাকি আমার পাশেই শোবে।”
        এই পর্যন্ত বলে, নীলু করুণ চোখে তাকিয়ে বলল, ”
ভাই আজ দুপুরে আমার জন্যে আর এক ঠোঙা গুরুদেবের ওষুধ হবে?” 
     নীলু বাজারে চলে গেল।
     আমি আর লিখতে পারছিনা, বেজায় ব্যাস্ত হয়ে পরেছি। নীলুর
জন্যে রান্নাঘরের কোনায় কোনায় আরশুলা খুঁজছি।


Share This Article