Notun Premer Golpo (ভালোবাসার ওভারডোজ) Bengali New Love Story
Notun Premer Golpo
সকাল ঘুমটা ভেঙে যায় রুপমের। গাটা বড্ড ম্যাজম্যাজ করছে, গতকাল আসা জ্বরটা
এখনও ছাড়েনি পুরোপুরি। ঋতু পরিবর্তনের সময় যেমন হয় আর কী! ডাক্তার বলেছেন
চিন্তার কিছু নেই তবে যতটা সম্ভব সাবধানে থাকতে হবে আর বিশ্রাম নিতে হবে।
অগত্যা পাতলা চাদরটা জড়িয়ে বিছানায় বসে বসেই জানলা দিয়ে বাইরে চোখ চলে যায়
ওর।
হয়ে যায় রুপমের। এই সময় লালমাটির দেশের একটা আলাদা মাদকতা আছে। বেশিক্ষণ
বাইরে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলে একটা ধিমি ধিমি মাদলের সুর বাজতে থাকে বুকের
ভিতর। সেই সাথে আজকের দোলের বিশেষ দিনে মনটাও একটু খারাপ হয়ে যায় রুপমের ওই
বাড়ির কথা ভেবে। এই প্রথম দোলের দিন সবাইকে ছেড়ে ও একা রয়েছে বহুদূরে।কলকাতা
শহরের উপকন্ঠে সোনারপুরে ওদের বাড়িতে পরিবারের সকলে মিলে কত আনন্দ হয় আজকের
দিনে সব ভাইবোনরা একজোট হয়ে।ভোরবেলা উঠে স্নান সেরে প্রথমে গুরুজনদের পায়ে
আবীর দিয়ে প্রণাম করে রুপম,তারপর ভাইবোনদের সাথে পিচকিরি খেলা,বাঁদুরে রং
মাখানো আর সেই সাথে ঠাকুমার হাতে বানানো স্পেশাল নারকেল নাড়ু, নিমকি আর শরবৎ
দিয়ে পেটপুজোর দেদার আয়োজন।
আর সেই সাথে পাশের বাড়ির বিয়াসের সাথে কাটানো ভালোলাগার মুহূর্তগুলো তো
আছেই।সেই কোন ছোটবেলা থেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিয়াসের সাথে
ব্যাডমিন্টন,ডাংগুলি খেলতো ও। কোথা দিয়ে যে তারপর বড় হয়ে গেলো ওরা দুজন।
রুপমের তখন কলেজের প্রথম বর্ষ আর বিয়াস একাদশ শ্রেণী। শৈশবের খেলার সাথী
বিয়াসকে এই দোলের দিনই চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে গিয়ে রুপম লাল আবিরে রাঙিয়ে
দিয়েছিল। “ধ্যাত অসভ্য তুমি একটা!”; বলে লজ্জা পেয়ে পালাতে গিয়ে রুপমের
ঠাকুমার কাছে ধরা পড়েছিল বিয়াস। তারপর দুজন মিলে আদরের কানমলাটাও খেয়েছিল
ঠাকুমার কাছে। বসে বসে ভাবনাই সার এইবার এইসব কিছুর স্বাদ থেকে বঞ্চিত রুপম।
ভারতীয় ডাকবিভাগে চাকরি পেয়ে পুরুলিয়ার এই গ্রামে মাস তিন হল চলে এসছে ও। আর
শরীরটাও বাধ সেধেছে নাহলে না হয় দিন দুই বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসা যেতো। আজ ওর এই
আবাসনে আদিবাসী বৃদ্ধা মহিলাও কাজে আসবেনা বলেই মনে হয়। ওদের কাছে এটা যে বড়
উৎসব।সাতপাঁচ না ভেবে রান্নাঘরে যায় রুপম।
সামনের রাস্তা রঙিন হয়ে গেছে আবিরে আবিরে। রুপম ওর মুঠোফোনে নেট চালু করতেই
ভেসে ওঠে একের পর বন্ধুবান্ধবদের রঙের উৎসব উদযাপন করার ছবি। সেই সাথে
ভাইবোনদের ট্যাগ করা বাড়ির দোলের ছবি তো আছেই। টুকটাক ছবিতে লাইক,কমেন্ট দিতে
দিতেই মেসেঞ্জারে বিয়াসের বার্তা ভেসে আসে ,”শরীর কেমন আছে তোমার? এবার তুমি
বাড়ি ফিরলে কিন্তু তোমার রঙেই সাজবো আমি। তাই রংগুলো সব সযত্নে তুলে রাখলাম
মনের গভীরে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো।” রুপমের চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে
যায় এক আদিবাসী প্রেমিক যুগল। ওদের খিলখিলে হাসিতে যেন ঝরে পড়ে ঝর্ণা। রুপম
আঙুল ছুঁয়ে বিয়াসের উদ্দেশ্যে টাইপ করে,”কিছু রং ছবিতে,কিছু রং কবিতায়,কিছু
রং হাওয়ায় ভাসালাম/যত রং স্বপ্নের তোকেই ছুঁতে চায় সবটুকু তোকে
দিলাম।”
ওষুধ খেয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। এভাবে থাকতে থাকতে কতক্ষণ যে পেরিয়ে গেছে টের
পায়না রুপম। হুঁশ ফেরে ঠাণ্ডা হাতের স্পর্শে। ও তাকিয়ে দেখে বিয়াস দাঁড়িয়ে
মিটিমিটি হাসছে।
নতুন প্রেমের গল্প
হেয়ালি করলি আজ কোনো রং খেলবি না বলে!কি দরকার ছিল এসবের? আমি এমনিতে ঠিক হয়ে
যেতাম।”;ঝাঁঝিয়ে উঠে রুপম বলে।
কিন্তু তোমার ঠাকুমা কাকভোরে গাড়ি ছাড়ার আগে আমাকে বলে দিলেন একবারে তোমার
কাছে পৌঁছে সারপ্রাইজ দিতে। ঠাকুমা আরো বলেন একেবারে আজ দোলের দিন গিয়ে তোর
কেষ্ট ঠাকুরকে চমকে দে। আর আমার সঙ্গে ঠাকুমা কি পাঠালো দেখো। ওনার হাতে বানানো
নাড়ু, নিমকি। তোমার ভালো না লাগলে ফিরে যাচ্ছি আবার বাড়ির গাড়িতে করেই।
ঠাকুমার ইচ্ছেতেই আজ এখানে এলাম আমি। উনি বললেন আমরা বাড়িতে সবাই দোলের দিন
আনন্দ করব আর রুপম ওখানে একা বসে থাকবে। তার থেকে বরং বিয়াস বাড়ির গাড়ি করে
ওর ওখান থেকে ঘুরে আসুক।”
সুন্দর প্রেমের গল্প
বল! ভালোবাসার ওভারডোজ পেলাম এবার। একাধারে নাড়ু, নিমকি আর তোর ওই মিষ্টিমুখ।
সত্যি ঠাকুমার কোনো জবাব নেই।” কপট রাগ দেখিয়ে বিয়াস বলে,”পেটুক একটা”।
খোঁপায় লাগিয়ে দেয় ও। পালাতে চাইছিল বিয়াস রুপমের বাহুডোর থেকে। এক ঝটকায়
নিজের ঘামে ভেজা হলুদ পাঞ্জাবিটার খুব কাছে বিয়াসকে টেনে নেয় রুপম। ওর সিঁথিতে
ছুঁইয়ে দেয় আবিরের পরশ।তারপর গুনগুন করে গেয়ে ওঠে,