Romantic Bangla Love Story – বাংলা রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বেস্ট
ফ্রেন্ড
Romantic Bangla Love Story
বেস্ট ফ্রেন্ড
– শুভজিৎ জানা
____________________
‘আরে শোন না, আমার বরটা না পুরো সে-ই মাল। হেব্বি আছে।’ লেপের ভেতর থেকে কিরন
স্ত্রীর মুখটা চেপে ধরে বলল,’কি সব বলেছিস? বরকে মাল বলেছিস?’ কিরন জেগে আছে
দেখে মালার একটু বিরক্ত হল। কল মিউট করে গম্ভীর কন্ঠে বলল,’তুই ঘুমোসনি এখনো?
লুকিয়ে কথা শুনছিস?’
‘ঘুমিয়ে তো গেছিলাম, ভেঙ্গে গেল।’
‘আবার ঘুমিয়ে পড়।’ বেশ ভালোই ঠান্ডা রয়েছে।পাশ ঘুরে সদ্য চোখ বন্ধ করতে গেছে
তখনই মালা বলল,’ওই ভাবে ঘুমালে হবে না। আমার দিকে মুখ করে আমাকে জড়িয়ে ঘুমাতে
হবে।’
‘যথা আজ্ঞা।’ এক গাল হেসে জবাব দিল কিরণ। স্ত্রীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। চোখ
বন্ধ করলো কিন্তু ঘুম আসলো না। মালা কল আনমিউট করে বান্ধবীর সাথে কথা বলল।
অনেকক্ষণ ধরে কথা চলল।
‘… হ্যাঁ রে, আমার বর পুরো সে-ই হ্যান্ডু আছে।’ এই একটা কথা শুনেই কিরণের
দ্বিতীয়বার ঘুম ছুটে গেল। এই ‘হ্যান্ডুর’ মানে কি? স্ত্রী কি গালি দিচ্ছে, না
প্রশংসা করছে? কিছুই বুঝতে পারলো না। সাহস হল না জিজ্ঞেস করতে। যদি রেগে যায়
তাহলে স্ত্রীর হাতে মার খেতে হবে। আবার কৌতুহল চেপে রাখতে পারলো না। স্ত্রীর
চাইতেও কিরণের কাছে মালার সবচেয়ে বড়ো পরিচয় সে তার স্কুল লাইফের বেস্ট
ফ্রেন্ড। একটু মার খেলে অসুবিধা হবে না। নরম গলায় বলল,’এই ‘হ্যান্ডুর’ মানে কি
রে?’ মালা মুখ ঘুরিয়ে কিরণকে দেখলো। এবার আর কল মিউট করলো না। কেটে দিল। ফোন
রেখে স্বামীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে তার গাল টিপে দিয়ে বলল,’বোকারাম হ্যান্ডু মানে
হল হ্যান্ডসাম। এটাও জানিস না?’
‘ও মা,এই হ্যান্ডসাম আবার কবে থেকে হ্যান্ডু হয়ে গেল?’
‘দূর, ঘুমা তো। বাবুই টা।’ স্বামীর বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে বললো
মালা। কিরণও বেশ খুশি হলো। মালাকে আগলে নিল। আদুরে কন্ঠে কিরণ বলল,’ আমার
সোনাটা।’
‘ঢং, তোর ঢং দেখলে আর থাকতে পারি না।’
‘বা রে,নিজে আদর করে বাবুই বললি ওটা ঢং হলো না। আমি সোনা বলতেই ঢং হয়ে গেল?’
‘হ্যাঁ, তোর সব কিছুই ঢং।’ হাসিখুশি মনটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কথাটি ভালোভাবে
নিল না। মালা স্বামীর মনের অবস্থা ঠিক বুঝে গেল।
‘দূর রাগ করছিস কেন,বাবুই? আমি মজা করে বলছি তোকে রাগানোর জন্য।’
কতক্ষণ ঘুমিয়ে পড়েছিল ঠিক মনে নেই। হঠাৎ ঘুম ভাঙতে লক্ষ করল পাশে কিরণ
ঘুমিয়ে আছে। ভয় পেল। তাড়াতাড়ি তার শরীর ধরে নাড়িয়ে তাকে ডেকে তুললো।
উত্তেজিত হয়ে দ্রুত বলল,’কত রাত হল তুই এখনো আমার বাড়িতে? সবাই জানতে পারলে
আমাদের ধরে বিয়ে দিয়ে দেবে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যা।’ ঘুম জড়ানো চোখে
স্ত্রীকে ভালো করে লক্ষ্য করলো। বিরক্ত বোধ করলো। কাঁচা ঘুম ভেঙে দিয়েছে।
জড়ানো কণ্ঠে বলল,’কি যা তা বলছিস? আমাদের আজ দুই মাস হল বিয়ে হয়েছে।’
Bangla Romantic Love Story
অদ্ভুতভাবে মুখ ঘুরিয়ে প্রমাণ খুঁজলো মালা। হাতে শাঁখা পলা দেখে একটু আস্বস্ত
হলো। নিজেকে স্বাভাবিক করল। ঘুমের ঘোরে কি যা তা ভেবে বসেছে। সত্যিই তো অনেক
আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। হেসে ফেললো। মুখে লাবণ্য বজায় রেখে বলল,’হারামি বিয়ে
করে নিয়েছিস আর আমাকে ট্রিট দিসনি? বা রে,বাহ্! চমৎকার! হাততালি দেবে?’
কিরণ অদ্ভুতভাবে স্ত্রীর দিকে তাকালো। কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর উঠেছে কিনা!
অদ্ভুত রকমের কথা বলছে। ভুতে ধরেনি তো আবার?
‘কি হলো, কপালে কি দেখছিস?’
‘মনে হচ্ছে তোর মাথাটা পুরো গেছে। আমাকে বিয়ে করেছিস আবার আমার কাছে ট্রিট
চাইছিস?’
‘আরে ভাই বুঝিস না কেন…।’ মালার কথা আটকে গম্ভীর মুখে কিরণ বলল,’আমি তোর ভাই
হই?’ মালা ফিক করে হেসে উঠলো। লজ্জাও পেলো। কোনো দিন কি শোধরাবে না? এভাবেই
থেকে যাবে? স্বামীকে জোর করে তুলে বিছানায় বসালো। তারপর সেও তার কোলে গিয়ে
বসলো। লাজুক কন্ঠে বলল,’তোর মনে আছে আমাদের প্রথম কবে দেখা হয়েছিল?
‘হ্যাঁ, মনে আছে।’
আরো পড়ুন,
‘একসঙ্গে শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে সাইকেল চালিয়ে কতবার টিউশন গেছি। টিফিন
ভাগ করে খেয়েছি। দুষ্টুমি করেছি।বাড়িতে টিউশনির নাম করে দুর্গা পুজোর সময়
প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়িয়েছি। তুই যখন প্রথম আমার হাত ধরে ছিলি তখন
দুজনে কত লজ্জা পেয়ে ছিলাম। অথচ আজ দেখ তোর কোলে বসে আছি কোনো লাজ-লজ্জা নেই।’
‘তখন বন্ধু বান্ধবী ছিলাম এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী।’
‘কোনটা বেশি ভালো লাগছে, স্বামী-স্ত্রী না বন্ধু-বান্ধবী?’
‘ বন্ধু-বান্ধবী।’
‘কেন? বর্তমান জীবন নিয়ে তুই কি বেশি খুশিতে নেই?’
‘অনেক বেশি খুশি। আর তোকে স্ত্রী নয় সবসময় বান্ধবী-ই মনে হয়। আর একটা কথা কি
জানিস, প্রত্যেক সম্পর্কের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকা চাই। আর আমাদের মধ্যে তা প্রথম
থেকেই আছে। তোকে পিয়ে আমি ভীষন খুশি রে। তোর এই বিরক্ত গুলো আমাকে দিগুন খুশি
দেয়।’
মালা কোনো জবাব দিল না। একরাশ মুগ্ধতা আর স্তব্ধতা ঘরকে ঘিরে ধরলো। কিরণ আলতো
করে মালার গালে চুমু দিল। মালা লজ্জা পেল না। উত্তেজিত এবং মুগ্ধ কন্ঠে বলল,’আজ
একটু বেশি করে আদর করবি?’
‘বেশি করে আবার কী করে আদর করা হয়?’
‘ন্যাকা ষষ্ঠী। যেন কিছু জানে না। দুগ্ধপোষ্য শিশু আমার।’
কালাচাঁদ বাবু দুপুরে খেতে বসেছেন। কিছুটা ভাত খাবার পর লক্ষ্য করলেন পাশে আর
একটা থালায় ভাত তরকারি সাজানো রয়েছে। কেউ খেতে বসেনি। মাছি ভনভন করে
বেড়াচ্ছে। বিরক্ত হলেন। কেউ যদি এখন খাবে না,তাহলে ভাত বেড়েছে কেন? ঢাকা
দিলেও হয়। গম্ভীর কন্ঠে বৌমাকে ডাকলেন। মালা দ্রুত উপস্থিত হল।
‘খাবার এ ভাবে ফেলে রেখেছো কেন?সে কখন আসবে ঠিক নেই, এতক্ষণ থেকে খাবার বেড়ে
ফেলেছো! ঢাকা দিতে পারো না? কোনো কাজে একটা হিসাব নেই। সবসময় অন্যমনস্ক থাকো
কেন?’
‘আমি কতক্ষন থেকে কুত্তাটাকে খেতে ডেকেছি, এখনো আসেনি। ভাত বেড়ে দিয়ে দুটো
কাজ শেষ করে ফেললাম। আর কালা চোদা এখনো খেতে আসেনি। যেমন বাব তেমন তার ছেলে।
শালা কালাচাঁদের বাচ্চা। তোর হচ্ছে দাঁড়া।’ মালা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে একটা
থালা এনে খাবার গুলো ঢেকে দিল। দাঁড়িয়ে পড়তেই চোখ দুটো রীতিমতো কেঁপে উঠল।
পাশে তো শশুর মশাই রয়েছেন। তিনি কটমট চোখে তাকে দেখছেন। চোখেমুখে তীব্র
গাম্ভীর্য ফুটে উঠেছে। মালার একটু ভয় করল। কি সব কথা বলে ফেলেছে?একবারের জন্য
ভেবে দেখেনি, পাশে কে রয়েছেন? সর্বনাশ! হাত না ধুয়ে দৌড়ে সোজা নিজের রুমে
চলে গেল। খপ করে কিরণকে জড়িয়ে ধরলো।
‘এই ভর দুপুরে তোর আবার কি হলো?’ কোনো জবাব দিল না। হাঁপিয়ে উঠেছে। জলের
গ্লাস বাড়িয়ে দিল। জল পান করলো। তবুও শান্ত হতে পারলো না। সময় লাগলো।
‘কাকু ভাত নেবে কিনা জিজ্ঞেস কর তো?’
‘তোর কাকু এসেছে?’
‘হনুমান তোর বাবার কথা বলছি।’
‘এখনো আমার বাবা তোর কাকু হয়?’
‘বেশি কথা বলেছিস। খাবার শেষ হয়ে গেলে জিজ্ঞেস করবি নাকি!’
‘তুই তো জিজ্ঞেস করতে পারিস! আমাকে বলছিস কেন?’
‘ওরে আমার কালাচাঁদের বাচ্চা, পৃথিবীতে কি আর কোন নাম ছিল না? বাবার নাম
কালাচাঁদ দিতে হলো?একটা ভালো নাম দিতে পারলি না?’
‘আরে ভাই,আগে বাবা জন্ম হয়েছে তারপর আমার। আমি কি করে বাবার নাম দিবো?’
‘আমি তোর ভাই হই।’ রাগে গনগন করে বলল মালা।তার রাগ দেখে হেসে ফেললো কিরণ।
বলল,’তুইও তো আমায় ভাই বলিস, তখন?’
‘আমি বলি বলে, তুইও বলবি? হবে না। ওটা শুধু আমি বলবো।’ বাবার কথা ভুলে ঝগড়া
শুরু করে দিল দুজন। বেশ অনেকক্ষণ পর সব কিছু শুনে বাইরে এসে দেখলো বাবা না
খিয়ে উঠে গেছেন। উভয়ের মন ভেঙ্গে গেল। বাবার রুমে গিয়ে দেখলো, তিনি ঘুমিয়ে
পড়েছেন। কিরন আদুরে কন্ঠে বলল,’বাবা খাবে না?’ কোনো জবাব আসলো না। পাশে মালা
দাঁড়িয়ে ভয়ে ঝড়ের মত কাঁপছে। নিশ্চয়ই বকুনি দেবেন। কিরণ আবার বলল,’ও বাবা,
খাবার থালা ছেড়ে চলে এলে কেন?’
‘পেট ভরে গেছে,আর খাবো না। তোরা খিয়ে নে।’
‘চল তো।’
‘বললাম তো খাবো না।’ বাবাকে অনেক আকুতি মিনতি করার পরও উঠলেন না। তাঁকে
কিছুক্ষণ একা থাকতে দেওয়া ভালো হবে। বেশি কথা বড়ালো না। দুজন রুম থেকে চলে
আসলো।
‘আমার বাবা সত্যি সত্যিই কানে একটু কম শুনে,আর তুই তাঁকেই…।’
‘ সত্যি বলছি,আমি অপমান করার জন্য বললিনি।মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।’
‘আমি বুঝতে পারছি।রাতে বাবার পছন্দের একটা খাবার বানিয়ে দিস। তারপর নিজে হাতে
খাইয়ে দিবি। দেখবি বাবা তোকে মেয়ে ভেবে ক্ষমা করে দিয়েছে।’ মালা মাথা
নাড়ালো। দুপুরে খাবার শেষ হওয়ার পর মালা প্রথমে রুমে এসে বিছানা করলো।
কিছুক্ষণ পর কিরণ এসে লক্ষ্য করলো, মালা তার মোবাইল নিয়ে কি সব খুঁজে যাচ্ছে।
স্ত্রীর কাছে দ্রুত ছুটে গিয়ে মোবাইল ছাড়িয়ে নিল। চেঁচিয়ে বলল,’কি
দেখছিলি?’
‘কিছু না। তোর ফ্রেন্ড লিস্ট চেক করলাম। পুরোটাই গার্ল হোস্টেল। মাঝখানে দুই
একটা ছেলেকে দেখে মনে হল গার্ল হোস্টেল প্রাচীর টপকে ঢুকে পড়েছে।’ এক বিশেষ
ভাবে মুখ ভ্যাংচিয়ে বললো মালা। না হেসে পারলো না কিরণ। হা হা করে হেসে উঠলো।
স্বামীকে হাসতে দেখে হাত মুঠি করে ইচ্ছেমতো কিল ঘুষি বসালো পিঠে। বেশ অনেকক্ষণ
স্ত্রীর জ্বালাতন সহ্য করে নরম কন্ঠে বলল,’জানিস তো মালা, ছোটবেলায় দুপুরে
ঘুমোনোর সময় মা গান গাইতো,-‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে..’এখন
বুঝতে পারছি বর্গী আসলে কে?’
‘কিইইই! আমি বর্গী?’
‘তা নয় তো কি?’
‘তোর বাবা বর্গী, তোর মা বর্গী, তুই বর্গী, তোর পুরো গুষ্টি বর্গী…..।’
কিরণ তাড়াতাড়ি স্ত্রীর মুখ চেপে ধীরে ধীরে বলল,’আস্তে কথা বল ভাই। সবাই শুনতে
পাচ্ছে। বাবা উঠে পড়বে তো!’
‘উঠুক,তাতে আমার কি? আমায় বর্গী বলবি কেন?’
‘আচ্ছা ঠিক আছে ভাই, তুই বর্গী নয়,আমি বর্গী। হয়েছে? খুশি?’
‘আবার ভাই!’
আরও অনেক গুলো বছর সুন্দর ভাবে কেটে গেলে।কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের
চাইতে বন্ধু-বান্ধবীর সম্পর্কটা বেশি প্রাধান্য পেলো। সব সময় ঝগড়াঝাটি মান
অভিমান লেগেই থাকলো। কিন্তু কেউ এক মুহূর্তের জন্য একে অন্যের সঙ্গে কথা বলা
বন্ধ করলো না। কেউ বাড়ি ছেড়ে চলেও গেল না। দ্রুত ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করে
ফেলে। দুজনেই রাগ করে দুজনেই নিজেদের রাগ ভাঙ্গিয়ে দেয়। বাইরে কেউ বের হলে,
কিছু খেলে আরেকজনের জন্য একটু হলেও নিয়ে আসে।যদিও বেশিরভাগ সময় কেউই একা যেতে
যায়।একে অপরে প্রচুর খেয়াল রাখে। আদর ও যত্নতে কমতি পড়ে না।একে অপরকে খুব
সময় দেয়। নিজের জন্য একা সিদ্ধান্ত নেয় না। প্রিয় মানুষটির কথা কাহিনীও
শুনে। এ ভাবেই দিন গুলো কেটে গেল…..
কিভাবে দিন গুলো কেটে গেল কেউ বুঝে উঠতে পারলো না।একটা সময় তাদের মাথায় চুল
পাকতে শুরু করলো। বয়স বেড়ে গেল। কিন্তু তারা এখনো স্বামী স্ত্রী নয়, বরং
বন্ধু বান্ধবী হয়ে আছে। সকালে উঠে খবরের কাগজে বার দু-একবার চোখ বুলিয়ে
স্বামীর কাছে এসে উপস্থিত হলো মালা। সে-ই বিয়ের প্রথম থেকেই কখনো স্বামীর পাশে
বসে না সবসময় তার কোলে বসে। আজও ব্যতিক্রম হল না। চুপচাপ স্বামীর কোলে বসে
পরল। গল্প বই পড়ছিল কিরণ। বইটি টেবিলের উপর রেখে দিয়ে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে
ঘাড়ের কাছে থুতনি নিয়ে গেল। স্ত্রীর পুরনো সে-ই রূপ যৌবন অনেক আগেই হারিয়ে
ফেলেছে। এখন অনেক রোগা হয়ে গেছে। বার্ধক্যর করুন ছাপ চোখে মুখে পড়েছে। রক্তের
তেজ কমে গেছে।
Best Bangla Romantic Love Story
‘কি হলো, সকাল সকাল কোলে এসে বসলি যে?’
‘ভালো লাগছে না কিছু।’
‘কেন? আমি তো আছি, তাও ভালো লাগছে না!’ মালা হেসে ফেললো। বলল,’এই একটা তুই-ই
আমার সমস্ত ভালো লাগার কারণ। বড্ড ভালোবাসি রে তোকে। গোটা জীবনে তোকে কত
জ্বালিয়েছি। নিজের কাজগুলো নিজে না করে তোকে দিয়ে করিয়েছি। তার বিনিময়ে
একবারও আমার কাছ থেকে প্রশংসা পাসনি বরং বকুনি খিয়েছিস। আমার জন্যই তোকে তোর
বাবাকে হারাতে হয়েছে অল্প বয়সে…।’ আরও কিছু বলতে চাইছিল তার আগেই কিরন
মালার মুখ চেপে ধরল। বলতে বারণ করল। কালাচাঁদ বাবু সেদিন দুপুরে শেষবারের মতো
ঘুমিয়েছিলেন। ঘুমের মধ্যেই দেহত্যাগ করেছিলেন। কেউ ভাবতে পারেনি মারা যাবেন।
সেদিনের পর থেকেই মালা দাবি করে আসছে, তার জন্যই শশুর মাসাই মারা গেছেন। যদি
দুপুরে খাওয়ার সময় ভুলবশত কতগুলো কথা না শোনা তো তাহলে কখনো মারা যেতেন না
তিনি। সুস্থ থাকতেন। বেঁচে থাকতেন। তারপর থেকেই বেশ কয়েকটা বছর মালা ভেঙে
পড়ে। নিজেকে দোষী মনে করে। কিরণ অনেক বুঝিয়েছিল, বাবা হার্টের রোগী ছিলেন।
তাই তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন। তাতে তার কোনো দোষ নেই। বাবাও একসময় ওই
বয়স পেরিয়ে এসেছেন। তিনি সব কিছুই জানতেন। তারা একে অপরের স্কুল লাইফের বন্ধু
ছিল। বন্ধুত্বের মধ্যে কেমন কথা হয় তা নিশ্চয়ই অজানা ছিল না কালাচাঁদ বাবুর।
সেদিন দুপুরে হয়তো রাগ করেছিলেন কিন্তু মৃত্যুর আগে ক্ষমা করে দিয়ে গেছেন।
বৌমাকে চিনতেন। বারবার কত প্রশংসা করেছেন। সামান্য কথায় নিশ্চয়ই ভেঙ্গে পড়বে
না। অভিমান করে থাকবেন না। তবুও অবচেতন মন মানে না। নিজেকে শ্বশুরমশাই মৃত্যুর
জন্য দায়ী করে। স্ত্রীকে আষ্টেপিষ্টে ধরে আদুরে কন্ঠে বলল,’তুই ঠিক কথা বলছিস।
আমি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করতাম তাহলে এত কাজ কখনো করতে হত না। এত জ্বালাতন
সহ্য করতে হতো ঠিকই, কিন্তু মনের মানুষ পেতাম না। ভালবাসার মানেটা বুঝতাম না।
এত ভালোবাসা আদর যত্ন কখনো আমার জীবনে আসতো না। বরং আমি অনেক লাকি যে তোর মতো
একটা জীবনসঙ্গী পিয়েছি। অনেকগুলো বছর একটা বাড়িতে কাটিয়েছি আরও অনেকগুলো জনম
কাটাতে চাই। আমি বলছি না তুই আমাকে পুরোপুরি বুঝে গেছিস, কিন্তু যতটুকু বুঝেছিস
অতটুকু কখনো কেউ বুঝতে পারত না। আমি ঠোঁট নাড়লেই বুঝে যাস আমার কি দরকার। আমার
কখন কি দরকার, জানলি কি করে?একে অপরের প্রতি বিশ্বাস সম্মান ভালোবাসা রয়েছে
বলে একে অপরের মন বুঝতে পেরেছি। খুব ভালোবাসি তোকে। সারাজীবন এ ভাবেই থাকতেই
চাই।’ কিরণ একটু থেমে আবার বলল,’আর রইল বাবার মৃত্যু? নিজেকে দোষী মনে করে কি
হবে? বাবা হার্টের রোগী ছিলেন। ওই জন্যই মারা গেছেন। নিজেকে দোষী ভাবিস না।’
মালা কোনো জবাব দিল না। চোখ থেকে জল ঝরে পড়ছে। হঠাৎ করে মুখ থেকে আওয়াজ
বেরোলো না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে গেল। কিছুক্ষন পর মালা বলল,’আজকে তুমি
রান্না করে ফেল না!আমার ভালো লাগছে না।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু কাঁদিস না। তোর চোখের জল আমার সহ্য হয় না।’ কিরণ
আঙ্গুলের ডগা দিয়ে স্ত্রী চোখের জল মুছে দিল। হাসতে বলল। হাসতে পারলো না।
উল্টে আবার একবার কেঁদে ফেলল। স্ত্রীকে ইমোশনাল হয়ে পড়তে দেখে নিজেও একটু
ভেঙে পড়ল। বলল,
‘কাঁদে না কাঁদে না বাবু
বাঁশ গাছে হনু
মা গেছে ঘাস কাটতে
আইনে দুধু খাবু।'(আঞ্চলিক ভাষায় লেখা)
এই ছোট্ট একটা কবিতা শুনে মালা যেমন খুশি হলো তেমন রেগেও গেল। রেগে অভিমানের
সুরে বলল,’কুত্তা, আমি কি বাচ্চা? দুধ খাই নাকি?’
‘যেভাবে কাঁদছিস তাতে তাইতো মনে হল।’
‘দাঁড়া তোর হচ্ছে। একটু অপেক্ষা কর আমি আসছি।’ মালা স্বামীর কোল থেকে উঠে গেল।
লজ্জা পেলো কিরণ। কি অপেক্ষা করে আছে তা অজানা নয়। মালা উঠে যাওয়ার পর তাদের
আঠারো বছরের কন্যা অনামিকা বাবার পাশে এসে বসল। তার শুষ্ক মুখ এবং ঠোঁটের কোণে
অস্পষ্ট হাসি কিছু একটা আবদারের কথা বলছে। কিরণ কিছু বলার আগেই অনামিকা
বলল,’বাবা, আমার অ্যাসাইনমেন্ট গুলো করে দেবে?’ কিরণ শীতল কন্ঠে জবাব
দিল,’হ্যাঁ, একটা সময় তোর মায়ের অ্যাসাইনমেন্ট গুলো করেছি এখন তোর করি।’
____________________ সমাপ্ত _________________