Olympic Rare Story – অলিম্পিকের গল্প – Inspiring Olympic Stories

Bongconnection Original Published
6 Min Read


 Olympic Rare Story – অলিম্পিকের গল্প 

Olympic Rare Story - অলিম্পিকের গল্প
Loading...

Olympic Stories 2021

আধুনিক অলিম্পিকে কি স্বেচ্ছায় কেউ সোনার পদক ভাগ করে নিতে চায়? 
 তাও সময়টা যেখানে ২০২১ এবং আন্তর্জাতিক  ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্য
যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতিরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে!


উত্তরটা যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তবে আশ্চর্য হতে হয় বৈকি!
কাতার ও ইতালির হাইজাম্পার একই উচ্চতায় লাফ দেবার পর টাইব্রেকের জন্য আরো
তিনবার করে সুযোগ পান। কিন্তু প্রত্যেকবার তাঁরা আগের উচ্চতাতেই লাফান। চতুর্থ
লাফের আগে ইতালির অ্যাথলিটকে সরে যেতেই হত। কারণ তার শরীর আর দিচ্ছিল না।
অর্থাৎ আর একটা বাড়তি সুযোগ নিতে পারতেন কাতারের অ্যাথলিট। তাঁর দেশের জন্য
ইতিহাস তৈরি হত। কিন্তু সৃষ্টি হল অন্য এক ইতিহাস। বিচারককে জিজ্ঞাসা করলেন
তিনিও যদি আর না লাফান সোনা কি দু’জন একসাথে পেতে পারেন? বিচারক সায় দিলেন।
ব্যাস! আবেগ উচ্ছ্বাস আনন্দাশ্রু বিস্ময়বিহ্বলতায় ভেসে গেলেন ইতালির
জিয়ানমার্কো তাম্বেরি ও কাতারের মুতাজ এসা বারসিম। বারসিমের কোলে ঝাঁপিয়ে উঠলেন
তাম্বেরি, ঠিক যেমন মেসির কোলে ঝাঁপিয়ে ওঠেন দিমারিয়া।

Inspiring Olympic Stories

মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর একটা— খেলা। শারীরিক ও মানসিক আনন্দই যার
প্রাথমিক উদ্দেশ্য। কিন্তু গত এক-দেড় শতক ধরে খেলা যেন যুদ্ধ হয়ে উঠল। খেলার
সঙ্গে রাষ্ট্রীয় রাজনীতি, ব্যবসা এইসব জড়িয়ে যেতে লাগল। মোহনবাগান যখন খালিপায়ে
ব্রিটিশ ক্লাবকে হারাল, খেলার সাথে সাথে ব্রিটিশ শাসনকে হারানোর প্রতীকী আনন্দ
পেল বাংলার জনতা। কিন্তু খেলায় জেতা-হারার সঙ্গে রাষ্ট্রের মানসম্মান ও ক্ষমতার
দাম জুড়ে গেলে কী কেলেঙ্কারি হতে পারে তা অনেকেই জানেন। ১৯৯৪ সালের ফুটবল
বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগের ম্যাচে আমেরিকার কাছে হেরে বিদায় নেয় কলম্বিয়া।
কলম্বিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাক আন্দ্রেস এস্কোবারকে দেশে ফেরার পর গুলি করে খুন করা
হয়, কারণ ওই ম্যাচে একটা গোল এস্কোবারের পায়ে লেগেই নিজেদের জালে জড়িয়েছিল।
এরকমই ভয়ঙ্কর উদাহরণ পাওয়া যাবে অলিম্পিয়ান অ্যাথলেটদের মধ্যেও। ইউএসএসআর-এর
অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের প্রাণের তোয়াক্কা না করেই পদকের
জন্য প্রস্তুত করার অভিযোগ শোনা যায়। সোনাজয়ী রানার ভ্লাদিমির কুট্স ১৯৫৬
মেলবোর্ন অলিম্পিকে ৫০০০ ও ১০০০০ মিটারে সোনা জেতেন। এই প্রথমবার বেশি দূরত্বের
রেসে সোভিয়েতের আধিপত্য স্থাপিত হয়। কিন্তু মাত্র ৪৮ বছর বয়সে তাঁর ভয়াবহ
ওবেসিটি ও হৃদরোগে মৃত্যু ট্রেনিং সেশনের অনুশাসন, ড্রাগ ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে
প্রশ্ন তুলে দেয়। নানা সময় সোভিয়েত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। মেয়ে
সাঁতারুদের পুরুষ হরমোন প্রয়োগের কাহিনিও শোনা যায়। সোচিতে ২০১৪ শীতকালীন
অলিম্পিকে রাশিয়ার সিস্টেমেটিক ড্রাগচক্রের কারণে এই টোকিওয় রাশিয়া রাষ্ট্র
হিসেবে নির্বাসিত। রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটির নামে খেলতে নেমেছেন খেলোয়াড়রা।
ব্যবহার করতে পারছেন না জাতীয় পতাকা, পোডিয়ামে বাজছে না জাতীয় সঙ্গীত। ইরাকে,
উত্তর কোরিয়ায় এমনকি আমেরিকাতেও রাষ্ট্রীয় ‘আশা’ পূরণে ব্যর্থ অ্যাথলেটদের
নিদারুণ  মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার সইতে হয়েছে। সিমোনে বাইলসের পরপর
ইভেন্ট থেকে নাম তুলে নেওয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন কানে আসছে। বেলারুশের অ্যাথলেট
কোচের ভূমিকার সামান্য সমালোচনা করেছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির
কাছে আশ্রয় চাইছেন, দেশে ফিরলেই নাকি গ্রেপ্তার করা হবে তাকে। ভারতের প্রসঙ্গ
থাক। প্রণতি নায়েক কিংবা মনিকা বাত্রার কথা পরে হবে।
এই হচ্ছে পরিস্থিতি। রাষ্ট্রের মানরক্ষা যেখানে পদকপ্রাপ্তির সঙ্গে সম্পর্কিত
সেখানে অ্যাথলেটদের সুরক্ষার চেয়ে জয়ী হওয়ার মূল্য বেশি হবে সেটাই স্বাভাবিক।

Olympic Moments That Stopped The World

এইখানেই গতকালের ঘটনাটা শুধু অনাবিল আনন্দ বয়ে আনছে না, হয়ে উঠছে একটা সামাজিক
স্বর। টাইব্রেক করতেই হবে? চ্যাম্পিয়ন কি একজনকেই হতে হবে, সর্বদা? গত ক্রিকেট
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের জয় অনেকে মেনে নিতে পারিনি। টাই হয়েছিল। তারপর সেই
কিম্ভূত বাউন্ডারি সংখ্যার গেরো। ইউরো ফাইনালেও পেনাল্টি শ্যুটাউট মিস করে
রাশফোর্ডদের পড়তে হল বর্ণবৈষম্যের মুখে। কত বিখ্যাত খেলোয়াড়ের জীবন অতিষ্ট হয়ে
গেছে টাইব্রেকারে ব্যর্থ হয়ে। কত সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী শেষ হয়ে গেছে ফার্স্ট
হওয়ার মারণ খেলায়। এবার মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক ৭৯ জনকে নিয়ে টানা
ট্রোল করে গেল ফার্স্ট-ফেটিস সমাজ, এমনকি ‘বামপন্থী’ যুবনেতা। অথচ মানব সভ্যতার
অগ্রগতির ইতিহাস, একজনকেই সেরা হতে হবে— এমন আব্দারকে পাত্তা দেয়নি কখনও।

দুই অ্যাথলিট আবার তুলে দিলেন তর্কটা। তাদের সিদ্ধান্তে দুই দেশের, এমনকি সারা
বিশ্বের ক্রীড়ামোদীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস প্রমাণ করল সহযোগিতার প্রতি, ভাগ করে
বাঁচার প্রতি সামাজিক মানুষের টান আদিম ও চিরকালীন। অনেকেই গণমাধ্যমে প্রস্তাব
দিয়েছেন, যেকোনো ফাইনাল খেলায় এই নিয়মই কাম্য। টাইব্রেকার চাই না। কিংবদন্তী
ফুটবলার গ্যারি লিনেকারও আছেন এই দলে।

একদিকে যেমন শত্রুকে ভেঙেচুরে ক্ষতবিক্ষত করে জীবনের সর্বাংশে হারিয়ে দেবার
ধর্ষকাম মাথা তুলছে বেশি করে, অন্যদিকে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ অন্যান্যবারের
মতই কাছাকাছি গায়েগায়ে নিয়ে এসে ফেলছে বিবদমান যুযুধান রাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের।
এবং রাষ্ট্র বা জাতির সমর্থন ও আনুকুল্যে উদ্বুদ্ধ খেলোয়াড়রা অনেকসময় জাতীয়
পতাকা গায়ে জড়িয়েও হয়ে উঠছেন সমস্ত আধিপত্যবাদ ও যুদ্ধবাদের কাঁটাতার অস্বীকার
করা ভুবনবাদী মানুষ। শুধুই দুনিয়াজোড়া মানবসমাজের প্রতিনিধি। দুনিয়ার নিপীড়িত
অত্যাচারিত মানুষের যেমনটা হওয়া উচিত, সংকটময় জলবায়ুর সামনে অসহায় মানুষের
যেমনটা হওয়া দরকার। 
ধন্যবাদ মুতাজ আপনার সহজ জিজ্ঞাসার জন্য। জিয়ানমার্কো, আপনাকে ধন্যবাদ ওই বন্য
আবেগের জন্য। যথাক্রমে ৩০ ও ২৯ বছর বয়সে প্রতিদ্বন্দ্বীতার সর্বোচ্চ মঞ্চে
আলিঙ্গনের যে অর্থ আপনারা হাজির করলেন, তাতে আমি যুগপৎ মুগ্ধ ও আত্মবিশ্বাসী।
আজীবন সাম্য ও সমবন্টনের স্বপ্নমুগ্ধতা ঘিরে থাকুক আমায়, আমার কচিকাচাদের।
অলিম্পিক বেঁচে থাকুক মানুষের হয়ে। খেলা শেষপর্যন্ত আনন্দের উৎস হোক। সেই আনন্দ
জীবনকে সিঞ্চিত করুক। প্রতিযোগিতার মাটি ফুঁড়ে মাথা তুলুক সহযোগিতার অগুন্তি
চারাগাছ।
Tags –
Story, Olympic,
Bengali Story
Share This Article
Leave a comment

Adblock Detected!

Our website is made possible by displaying online advertisements to our visitors. Please consider supporting us by whitelisting our website.