প্রেমের গল্প – প্রকৃত প্রেম – Premer Golpo – Bengali Love Story
Free
সব দিকটা কেমন অন্ধকার হয়ে গেল।ঘরে ফিরতে আর ইচ্ছে করছিলনা ,কেমন যেন
নিজেকে অপূর্ণ লাগছিল।তাই সামনের পার্কে একটি বেঞ্চিতে উদাস ভাবে বসে
পড়লাম। শীতের দুপুরে বাচ্চারা সব দৌড়ে দৌড়ে
খেলছে ।ওদের দেখে মনটা কিছুটা হলেও ভাল হয়ে গিয়েছিল কিন্তু একটু পরে যখন
সূর্যটা পশ্চিম আকাশে ঢোলে পড়লো তখন নিজের জীবনের দিকে ফিরে তাকালাম।
সম্ভ্রান্ত বোনেদি বংশের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় ছোট থেকেই খুব আদরে
মানুষ হয়েছি।জ্যাঠা ও কাকার কারুরই মেয়ে না থাকায় সমস্ত আদর ও যত্নের
বেশিটাই আমার প্রাপ্য ছিল। ঠাকুমা আদর করে নাম রেখেছিলেন শুভলক্ষ্মী।
লেখাপড়ায় বরাবর ভাল ছিলাম বলে নামী স্কুল ও কলেজে ভর্তি হতে পেরেছিলাম।
ছেলে ,আমি ওর থেকে তিন বছরের ছোট ছিলাম।মনের প্রানের সব কথা ওর সঙ্গে
শেয়ার করতাম।
সঙ্গে নিয়ে।বন্ধুটি কলকাতায় একটা মেসে থেকে পড়াশুনা করে ওদের বাড়ি সুন্দর
বনে। কোন অপরিচিত ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আমার খুব জড়তা লাগে তাই দাদার বন্ধু
জেনেও আলাপ করতে যাইনি। খাবার টেবিলে যখন ছোড়দা তার বন্ধুটির সঙ্গে
বাড়ির সকলের আলাপ করিয়ে দিচ্ছিল তখন আমিও বাদ যাইনি।
দেখতে।বাংলায় এম.এ পড়ছে এইটুকু তার পরিচয়। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে যে
যার ঘরে শুতে চলে যায়।ছোড়দাও ওর বন্ধুকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
শুনে সকলে ছুটে গিয়ে দেখে জ্যেঠুর খুব শরীর খারাপ এতো রাতে কোথায় ডাক্তার
পাওয়া যাবে এই নিয়ে সবাই যখন খুব চিন্তিত তখন ছোড়দাদার বন্ধুর সাহায্যে
ডাক্তার এলেন এবং খুব তাড়াতাড়ি নার্সিংহোমে ভর্তি করা গেল।কি ভাবে ছেলেটি এই
সব করল তা আমরা ভেবে পেলামনা।
বলে আমরা বুঝতে পারলাম না ও সব কিছু কি ভাবে ম্যানেজ করে দিল।আমাদের বন্ধুদের
মধ্যে কারুর কোন অসুবিধা হলে মানস ঠিক তার সমাধান করে দেবে।তাই বন্ধু মহলে ওকে
বিপদ তাড়ন বলে ডাকা হয়।”
বা কেন ঐ দিন আমাদের বাড়িতে ওকে পাঠিয়ে দেবেন?একদিন ওকে নিমন্ত্রণ করে
খাওয়াতে হবে।”
নিল।এখন থেকে অবাধে যাতায়াত করতে থাকবে।
আসতে আসতে আমিও কখন মানসদাকে ভালোবেসে ফেলি নিজেও তা বুঝতে পারিনি।
মানসদাকে ফোন করে আমার মনের ইচ্ছাটা জানাই। প্রথম দিকে আপত্তি করলেও পরে
সেও রাজি হয়ে যায়। কেমন যেন মনে একটা জোর পেয়ে গিয়েছিলাম, বাড়ির সকলে
মানসদাকে এতো ভালোবাসে যে কেউই আমাদের এই সম্পর্ক টা নিয়ে কোন
আপত্তি করবে না।
লক্ষ্মী এ কাজ তুই কখনও করিসনা। মানস আমার বন্ধু কিন্তু এ বাড়ির উপযুক্ত
জামাই সে কোন দিন হতে পারে না।কোথায় তুই আর কথায় মানস একটা অজ পাড়া গাঁয়ে
বাড়ি।সত্যি তোর রুচিটা কোথায় নেমেছে?”
বাড়িতেই বা নিয়ে এলি কেন?মানসদাকে তোরা শুধু প্রয়োজন মত ব্যবহার করেছিস।তাই
ও তোদের বাড়ির প্রয়োজন প্রিয়জন না!”
Premer Golpo Love Story
আলোচনা হয় না এই বাড়িতে।যে জ্যেঠুকে বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজে সব ব্যবস্থা করল
সেই জ্যেঠু মানসদাকে“ লোভি বলে তিরস্কার করে বলেন,লোভনীয় মেয়ে তাই এই
ধরনের ছেলেরা তো আসবেই।”বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভাল
ছেলে দেখে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করো।”
ছোট থেকেই খুব পছন্দ।শুধু লক্ষ্মী পড়াশোনা করছিল বলে।এই পাড়ার মধ্যে
তিলকের মতো এতো ভালো ছেলে আর নেই।”
দেখতে পাবো।”
ছিল তখন তাকে নিয়ে আদিখ্যেতা করল আর এখন তিলকদা!
ওকেই বিয়ে করবো।
পর দুজনে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে একটা ঘর ভাড়া নিই।মানসের কাছে কোনো টাকা নেই
তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার সময় বেশ কিছু টাকা ও গয়না নিয়ে চলে আসি।বেশ
কয়েক মাস এই ভাবে থাকার পর আমরা রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে ওদের গ্ৰামে
যাই।মনে মনে ভাবলাম আমাদের বাড়ির লোকেরা মানসের উপর যে অবিচার করেছে আমি ওকে
বিয়ে করে … ।
একসাথেই থাকে।আমাকে দেখে ওর মা এমন একটা অদ্ভুত ব্যবহার করলেন যা আমি স্বপ্নেও
ভাবতে পারিনি।মানস এই বিয়ের ব্যাপারে ওদের কাছে লুকিয়ে রেখেছিল ।তার ওপর আমার
কোন গয়না ছিলনা তাই…সব গয়না বিক্রি করতে হয়েছিল।
ব্যতিক্রম হয়নি।
যতটা সম্ভব মিশে থাকার চেষ্টা করেছি।মানস আমাকে গ্ৰামে রেখে আবার কলকাতায় চলে
আসে।ছোড়দা আমার খবর ওর কাছে থেকে জানতে পারে।
প্রেমের গল্প রোমান্টিক
পারি।বাবা,মা ও বাড়ির সকলে আমার জন্যে খুবই চিন্তিত।আমার কষ্ট হচ্ছে
শুনে বেশ কিছু টাকা দিতে চায় আর একটা কলকাতায় ফ্ল্যাট।
না” একটু অভিমানের সুরে কথা গুলো বলে গেলাম।আমার উপর মানস খুব রেগে গিয়ে
বলল“আমরা তো চাইনি,তারা যদি দেয় তাহলে আপত্তি করার কারণ কি?আমি এখনো চাকরি
পায়নি,আমাদের বড় সংসার বুড়ো বাবার ওপর আর কতো চাপ দেবো ?তোমার জেদের জন্যে
হুট করে বিয়ে করতে হলো,তোমার বাড়ির লোকেরা যদি আমাদের মেনে নেন তাহলে আপত্তি
করছো কেন?”
শুধু সম্পত্তির লোভে আমার সঙ্গে ভালবাসার অভিনয় করে ছিলে!”
নেই? যারা তোমাকে অপমান করলো আর তুমি …!”
পারিনা।, শুধু বসে বসে খাই ।অলক্ষ্মী তাই বাপ মা এক কাপড়ে বিদায় করেছে ইত্যদি
ইত্যাদি অনেক অভিযোগ আমার সম্পর্কে।এখন আমি মনে মনে ভাবি বিয়েটা কিন্তু ছেলে
খেলার বিষয় নয়।আমার মত অনেক মেয়ে সাময়িক আবেগ তাড়িত হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না
নিয়ে সরাটা জীবন কষ্টপায়।
শাশুড়িমার খোঁটা খেয়ে।
রাখে।প্রথম দিকে এই বিষয়টাকে কোন গুরুত্ব দিইনি কিন্তু কথায় আছে ধর্মের কল
বাতাসে নড়ে ঠিক তাই হলো আমার জীবনে।এবারও একটা খাম তাড়াতাড়ি আলমারিতে রাখতে
গিয়ে হঠাৎ আমাকে দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে মানস।তাড়াহুড়োয় খামের মুখ টা উল্টো
ভাবে ধরার ফলে খামের ভেতর থেকে কিছু টাকা ও একটি চিঠি পড়ে যায়।আচমকা এই ঘটনাটা
ঘটার ফলে মানস ও হকচকিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি টাকাগুলো কুড়তে এতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে
যে চিঠিটার দিকে কোন নজর পড়লনা।
পড়ে আমার সবদিকটা কেমন অন্ধকার হয়ে গেল। মানসকে চিনতে আমি এতো ভুল করলাম? ও যে
এতোটাই লোভী তা আমি একবার ও বুঝতে পারিনি !
চিঠিটা আমার বাবার লেখা মেয়ের যাতে কোন কষ্ট না হয় তার জন্যে তিনি
প্রত্যেক সপ্তায় ছোড়দার হাত দিয়ে মানসকে টাকা পাঠাতেন।আর সে নির্লজ্জভাবে
সেই টাকা গুলো নিত।পাছে আমি জানতে পারি তাই লুকিয়ে আলমারিতে রেখে
দিত।
প্রত্যেক সপ্তায় ছোড়দার হাত দিয়ে মানসকে টাকা পাঠাতেন।আর সে নির্লজ্জভাবে
সেই টাকা গুলো নিত।পাছে আমি জানতে পারি তাই লুকিয়ে আলমারিতে রেখে
দিত।
Premer Golpo In Bengali
করিনি।
যাওয়ার পর আমিও কাজের অযুহাতে শাশুড়ীমা কে মিথ্যা কথা বলে কলকাতায়
চলে আসি ।আলমারিতে যা টাকা পয়সা ছিল সব নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আর এক অজানা
জীবনের সন্ধানে।কলকাতায় আসার পর আমার এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতাম।
করলাম। এখন আর আমি বন্ধুর বাড়িতে থাকিনা স্কুলের কাছে একটা ভাড়া বাড়িতে
থাকি।তারপর ঠিক করলাম যার জন্যে আমার জীবনের এই পরিণতি তার সঙ্গে সব
সম্পর্ক চুকিয়ে দেব।তাই উকিলের সাথে কথা বলে ডিভোর্সটা করে ফেললাম।কেস
চলাকালিন বহু বার মানস ক্ষমা চেয়েছিল কিন্তু ওকে ক্ষমা করতে পারিনি।
অনেক বার বাড়িতে ফিরে আসতে বলেছিল কিন্তু আমি কি করে নির্লজ্জের মত তাদের কাছে
ফিরতে পারি?মানসের সঙ্গে পালানোর সময় একবার ও তাদের কথা ভাবিনি, আমার জন্যে
তাদের উঁচু মাথা নিচু হয়ে গিয়েছে।
খুলে ঘরে ঢুকে সবে হয়ে চেয়ারে বসেছি হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ একটু বিরক্ত
হয়ে দরজাটা খুলে চমকে উঠি–তিলকদা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমার মুখদিয়ে
কোন কথা আর বেরোলনা –তিলকদা নিজেই বলল“ভেতরে ডাকবেনা”সম্বিত ফিরে পেয়ে শুধু
দরজা থেকে একটু সরে গিয়ে বললাম “এসো , ভেতরে এসো”।
তিলকদা।আমি তো একেও ঠকিয়েছি ,বিয়ের যখন আমাদের সব ঠিকঠাক তখনই তো আমি পালাই
।তহলে কি সুযোগ বুঝে আমার কাছে অভিযোগ করতে এসেছে? কতো প্রশ্ন কতো চিন্তা মনের
মধ্যে ভিড় করে আসছে কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারলাম না।এই ভাবে পাঁচ মিনিট কেটে
গেল দুজনের মুখে কোন কথা নেই।
নতুন প্রেমের গল্প
তিলকদা।চা করতে রান্নাঘরে গিয়ে কিছু টা স্বস্তি পেলাম,ওর সামনে দাঁড়ানোর মুখ
ছিল না আমার।
আছে।চা টা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আমি আমার চা টা নিয়ে চেয়ারে বসলাম।কিছু টা
সাহস সংগ্রহ করে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করলাম “হঠাৎ আমার বাড়িতে এলে
?”
হবে।তাই তোমাকে মনে মনে …”
বিশ্বাস ছিল আমার প্রকৃত প্রেম তোমাকে আমার কাছে ঠিক ফিরিয়ে আনবে।”