গল্প হলেও সত্যি – Golpo Holeo Sotti – Bangla Golpo Online

Bongconnection Original Published
13 Min Read


 গল্প হলেও সত্যি – Golpo Holeo Sotti – Bengali Story

গল্প হলেও সত্যি - Golpo Holeo Sotti - Bengali Story
Loading...

গল্প হলেও সত্যি

Loading...
ছেলেটাকে তো আগে  কখনো দেখেনি এখানে সমরেশ। বয়েস বড়ো জোর বছর আষ্টেক হবে।
হাতে রবি ঠাকুর, নেতাজির সঙ্গে শাহরুখ, অমিতাভকেও দেখা যাচ্ছে। চোখাচোখি হতেই ও
সমরেশের সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে কিছু একটা পোস্টার কিনতে। সমরেশ বলে – কিনতে
পারি যদি তুই আমার সঙ্গে এখানে একটু এখানে বসিস। সমরেশের অফিস পার্ক স্ট্রিট
এলাকায়। অফিস থেকে বেরিয়েই যে খাবার দোকানটা ফুটপাথে, সেখানে সে মাঝে মধ্যে
টিফিন করে, চা-বিস্কুটও খায়। এই এলাকার সব দোকানদার থেকে হকার প্রায় প্রত্যেকেই
ওর মুখচেনা কিন্তু এই বাচ্চাটাকে কখনো দেখেছে বলে মনে করতে পারে না ও।

যাই হোক ওকে পাশে বসিয়ে প্রথমে নাম জিজ্ঞেস করে সমরেশ। ছেলেটা বলে- ওকে সবাই
ছোটু বলে ডাকে। সমরেশ জিজ্ঞেস করে – কি রে সিঙ্গাড়া খাবি? ও একটু ঘাবড়ে যায়।
কেউ কোনোদিন ওকে যেচে জিজ্ঞেস করেনি কিছু খাবার কথা। বরং খাবার সময় কিছু বিক্রি
করতে গেলে দুর দুর করে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছে। সে এই রকম ট্রিটমেন্টেই
অভ্যস্থ। আর এই লোকটা নিজের থেকে খাবার কথা বলছে। খিদে যে তার পায়নি তা নয়, আজ
বাড়িতে চাল বাড়ন্ত, তাই ভেবেছিলো যে আজ জল খেয়েই থেকে যাবে। সেইসময় কেউ
সিঙ্গাড়া খেতে বলছে? প্রত্যেকদিন এই সিঙ্গাড়া ভাজার গন্ধটা যখনই পায়, তখন খিদে
না থাকলেও ছোটুর খিদে পেয়ে যায়। সেই কবে লাস্ট সিঙ্গাড়া খেয়েছে মনে করতে পারে
না। কোনো একটা দোকানদার দিনের শেষে দয়া করে ওকে একটা সিঙ্গাড়া খেতে দিয়েছিল।
আহা! কি সুন্দর খেতে। – ‘কি রে? কি ভাবছিস?’ সমরেশের কথায় ছেলেটার সম্বিৎ ফেরে।
‘সিঙ্গাড়া খাবি না?’  বাচ্চাটা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। সমরেশ ছেলেটাকে
দুটো সিঙ্গাড়া কিনে দেয়। একটা খেয়ে আরেকটা পকেটে রাখে। সমরেশ জিজ্ঞেস করে – কি
হলো ওটা পকেটে রাখলি কেন? বাচ্চাটা বলে বাড়িতে ছোটোবোন আছে, তার জন্যে নিয়ে
যাবে। সেই কথা শুনে ওকে আরো দুটো সিঙ্গাড়া কিনে দেয় আর বলে – তুই ওই 
সিঙ্গাড়াটা খেয়ে নে আর এই ঠোঙার সিঙ্গাড়া দুটো বোনের জন্যে নিয়ে যাস। তারপর
একটা রবিঠাকুরের পোস্টার কিনে ওকে দাম মিটিয়ে বিদেয় করে। ছেলেটা চলে গেলে সমরেশ
ভাবে আস্তাকুঁড়ের বাচ্চা হয়েও নিজের ছোট বোনের কথা ভেবে নিজের ভাগ থেকে একটা
সিঙ্গাড়া সরিয়ে রেখেছিলো। আর তাকে কিনা তার দাদা সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত
করতে দুবার ভাবেনি। আসলে মানুষের অভাবটা বোধহয় তার মনে, মনুষ্যত্বে আর
মানবিকতায়। এই অভাবের মধ্যেও, ভালো লাগার জিনিসটা যে ভাগ করে নেবার স্পর্ধাটা
আজ ওই বাচ্চাটা দেখালো, সেও কি পারবে কখনো সেই স্পর্ধাটা দেখাতে? নিজেই নিজের
দিকে ওই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয় সমরেশ। জীবনের ছোট ছোট বাঁকে, কত ছোট ছোট ঘটনা
মানুষের জীবনে গভীর রেখাপাত করে, কোনো সন্দেহ নেই। যেমনটা আজ করলো সমরেশকে।

Bangla Golpo Love


সমরেশ আজকাল যখনি বাইরে খেতে বেরোয়, তখনই ছোটুকে খোঁজে। ছেলেটা গেল কোথায়? হটাৎ
করে আবার প্রায় সপ্তাহ দুই বাদে দেখে সেই একই ছেঁড়া প্যান্ট আর ছেঁড়া জামা পরে
লোকের কাছে গিয়ে পোস্টার বিক্রি করছে। সে হাঁক পাড়ে  ‘ছোটু ছোটু’ বলে।
বাচ্চাটা তাকিয়ে দেখে চিনতে পারে সমরেশকে। সমরেশ হাতের ইশারায় ওকে ডাকে। কাছে
এলে পাশে বসতে বলে আর জিজ্ঞেস করে লুচি আর আলুর তরকারি খাবে কিনা। ছেলেটা বলে –
আগের দিন তো খাবালে, আজ খাব নি। সমরেশ বলে সে এমনি এমনি খাওয়াচ্ছে না, ওর সঙ্গে
বসে গল্প করার জন্যে ওর ব্যবসার যে ক্ষতি হবে, সেই জন্যে খাওয়াচ্ছে। ছেলেটা কি
যেন ভাবলো। বললো ঠিক আছে তাহলে। সমরেশ ঘাবড়ে যায়। এইটুকু ছেলে, তাও আবার
রাস্তায় থাকে তারও কি আত্মসম্মান বোধ। এই বোধটা ওর না থাকলেও সমাজের এতটুকুও
ক্ষতি হতো না। এই বোধটা যাদের থাকার দরকার যদি তাদের থাকতো।

তারপর দুজনে মিলে বেশ গল্প হয়। ছেলেটা ওকে জানায় ওরা পাশের ক্রসিংয়ে যে
ফ্লাইওভারটা আছে, তার তলায় এসেছে বেশ কিছুদিন হলো। আগে গড়িয়াহাটের  নিচে
থাকতো, কিন্তু ওখানে পার্কিং এর জন্যে সরকার জায়গাটা কাউকে লিজ  দিয়েছে
তাই পুলিশ আর পার্কিং কোম্পানির লোক মিলে ওদেরকে তুলে দিয়েছে। সে তার মা ও
বোনের সঙ্গে থাকে। বাবাকে কোনোদিন দেখেনি। সমরেশ বেশ বুঝতে পারে ছোটুও সেই
আস্তাকুঁড়ে জন্মানো একজন যে জানে না তার বাবা কে। দেখে মনেও হলো না বাবার
ঠিকানা জানতে তার বিন্দুমাত্র উৎসাহ আছে। সমরেশ একবার নিজের মনে হাসে। সামনে
একটা বাড়ির ছাদে একটা বাচ্চাকে ঘুড়ি ওড়াতে দেখে সেই দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে
ছেলেটা। বড় নিষ্পাপ, মায়াভরা মুখ ওর। ঘুড়ি ওড়ানোর কিছু কায়দা আছে। একবার লাটাই
গুটিয়ে সুতো ছাড়তে হয় আবার পরক্ষনেই তাড়াতাড়ি গুটিয়ে আরো উপরে তুলতে হয়। মাঝে
মাঝে একটু বেশী হাওয়া দিলে, ঘুড়িটা  ঘুরপাক খায়, যত ঘুরপাক খায়, ছোটু তত
চেঁচায় এখান  থেকে। আর নিজের মনে খিলখিল করে হাসে। সমরেশকে দেখায় ঘুড়িটার
অবস্থা। যেন বলতে চায়  – সমাজ, তুই দৌড়ো পিতৃত্বের স্বীকৃতির পেছনে আমি
বরং ততক্ষন একটু ঘুড়ি ওড়ানো দেখি। ওর থেকে আজ একটা নেতাজি আর একটা বিবেকানন্দের
পোস্টার কিনে ওকে দাম মিটিয়ে আসতে বলে সমরেশ আবার অফিসেমুখো হয়।

সমরেশ বাড়ি ফেরার সময় সারা রাস্তা ছেলেটার কথা ভাবে। ভুল বললাম ছেলেটাই যেন
সমরেশকে ভাবায়।  ছেলেটা জানে না বাড়ি ফিরে  দুটো খাবার জুটবে কিনা,
তবুও অনাবিল হাসিটা মুখে সবসময় লেগে থাকে ওর, কি করে? যে সমাজ ওকে বুড়ো আঙুল
দেখায়, সেই সমাজকেই যেন হাসতে হাসতে বুড়ো আঙুল দেখায় রাস্তার ওই একরত্তির 
ছেলেটা, যেন থোড়াই কেয়ার। বাড়িতে সমরেশের স্ত্রী, মৌসুমী জিজ্ঞেস করে বড়ো বড়ো
মনীষীদের পোস্টার কেন সে আজকাল কিনে আনে। সমরেশ বলে – বুবাইয়ের জন্যে, ওর রুমে
লাগাবো। মৌসুমী বুবাইয়ের রুমে পোস্টারগুলো লাগাতে আপত্তি করে। বলে, ওই রুমের
দেওয়ালের কালারের সঙ্গে ঠিক মানানসই হবে না। তাই অগত্যা রোল করা অবস্থায়
পোস্টারগুলোর ঠাইঁ হয় ঘরের এক কোনে।

এখন মাঝে মাঝেই ছোটুর সঙ্গে টিফিন আওয়ার্স কাটায় সমরেশ।ছোটুকে জিজ্ঞেস করে বড়
হয়ে ও কি হতে চায়। সে বলে শাহরুখ খান। তার জন্যে সে মুম্বাই যাবে, আর তার জন্যে
এখন থেকেই সে পয়সা জমাচ্ছে। সে পড়াশুনা কোনোদিনই করেনি তবে তার ব্যবসা চালানোর
জন্যে যতটুকু অঙ্ক জানা দরকার সেটা যথেষ্টই মনে হয় সমরেশের। পড়াশুনার সুযোগ
পেলে সে ভেবে দেখতে পারে। সব প্রশ্নের উত্তরই যেন ওর কাছে আছে। সব কিছুই কত সহজ
সরল। সেই জন্যেই বোধহয় এক অদ্ভুত সারল্য ওর চোখে মুখে সবসময় লেগে থাকে। বেশ
লাগে সমরেশের ছোটুকে।


Bangla Golpo Online Reading

হটাৎ করে বেশ কয়েক সপ্তাহ ছোটুকে দেখতে পায়না সমরেশ। আরে ছেলেটা গেল কোথায়?
আবার কি ওরা থাকার জায়গা চেঞ্জ করলো? যাই হোক কি আর করা যাবে। প্রায় মাস দুয়েক
হয়ে গেল ছোটুর পাত্তা নেই। সমরেশ প্রায় ওর কথা ভুলতে বসেছিল। হটাৎ করে একদিন
দেখলো একটা বাচ্চা ছেলেকে বেশ কয়েকজন পেটাচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখলো আরে এ তো ছোটু।
যাইহোক সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওকে কোনোরকমে উদ্ধার করে ওকে নিয়ে আসে। কি হয়েছিল
জানতে চাইলে সে বলে লাস্ট তিন চার দিন ধরে ওর মায়ের জ্বর। ওদের কারো পেটে কোনো
দানা পানি পড়েনি। তাই বাধ্য হয়ে দোকান থেকে পাউরুটি চুরি করেছিল। সমরেশের মুখ
দিয়ে এর পর আর কোনো কথা বেরোয়নি। বাড়ি শুদ্ধ লোকের জন্যে বেশ কিছু খাবার কিনে
দেয় সমরেশ। সেই প্রথম দেখেছিলো বাচ্চাটার করুন চাউনি। ওর সামনে যাই হোক করে
চোখের জল চাপার চেষ্টা করেছিল সমরেশ। জানিনা ছেলেটা বুঝতে পেরেছিলো কিনা। তবে
সেই দিনই ছিল প্রথম দিন যেদিন সমরেশ ছোটুকে হাসতে দেখেনি। খাবারটা নিয়ে সে
গুটিগুটি পায়ে চলে গিয়েছিলো মুখ নিচু করে। সমরেশ বেশ বুঝতে পারে বাচ্চাটার
মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল। 

বুকে একরাশ চাপা যন্ত্রনা নিয়ে সমরেশ বাড়ি ফিরেছিল ওই দিন। মৌসুমী, বুবাই সবাই
জিজ্ঞেস করেছিল শরীর ঠিক আছে কিনা? শুধু একবার ঘাড় নেড়ে ঘরের মধ্যে চলে গেছিল।
সারা রাত ঘুমোতে পারেনি। উত্তাল সমুদ্রে যেমন একের পর এক ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ে, ওর
বুকের মধ্যেও সেই রকম অসংখ্য ঢেউ একদিক থেকে উঠে অন্যদিকে আছড়ে পড়ছিলো। সে
পরিষ্কার বুঝতে পারছিলো জীবনের প্রথম অপরাধটা বাচ্চাটা আজ করে ফেলেছে। এর পর না
আটকালে সে তলিয়ে যাবে  অন্ধকারে। অমনি একটা নিষ্পাপ হাসিমুখ। না না ভাবতে
পারে না। কিছু না করতে পারলে সারাজীবন এই ক্ষতটা বয়ে বেড়াতে হবে। ওর বিবেক ওকে
বলছিলো – ‘সমরেশ কিছু করো। জীবনে একটা বার অন্তত অন্যের জন্যে বাঁচো।‘

মৌসুমীকে ও বলেছিলো ছোটুর ব্যাপারটা নিয়ে। ও বলেছিলো কি হবে ঘরের খেয়ে বনের মোষ
তাড়িয়ে। আর তাছাড়া যাই হোক কিছু পয়সা খরচ হবে ছেলেটার পেছনে। কি দরকার? তাদেরই
কত শখ এখনো মেটানো বাকি। সমরেশ শোনেনি। বলেছিলো জেনেশুনে একটা বাচ্চাকে
অপরাধজগতে সে ঠেলে দিতে পারবে না। বুবাই মা-বাবার কথা পেছন থেকে শুনেছিলো। ও
বলেছিলো – বাবা, আমি নাহয় কিছু খেলনা কম কিনবো। তুমি সেই টাকা বাঁচিয়ে ছেলেটার
জন্যে যদি কিছু করতে পারো।  তারপর যত্ন করে সেই রোল করা পোস্টারগুলো খুলে
বুবাই একে একে রবি ঠাকুর, স্বামীজী আর নেতাজীর ছবিগুলো নিজের রুমের দেওয়ালে
লাগায়।

Read Bangla Premer Golpo Online

পরের দিন সকাল বেলা সমরেশ অফিস না গিয়ে সোজা যায় রামকৃষ্ণ মিশন। নিজে মিশনের
ছাত্র হয়ে সে জানে ওরা এই রকম বাচ্চাকে নেয়, পড়াশুনা শেখায়। সেখানে গিয়ে সব কথা
খুলে বলে মিশনের মহারাজকে। তারপর মহারাজকে নিয়ে সোজা আসে সেই পার্কস্ট্রিট
ফ্লাইওভারের নীচে, লোকাল থানার পুলিশকে নিয়ে। ভাগ্যক্রমে ছোটু ও তার মা দুজনেই
সেই সময় সেখানে ছিল। সমরেশ, মহারাজ সবাই ওর মাকে বুঝিয়ে বলে ছোটুকে তারা নিয়ে
যেতে এসেছে যাতে করে ও মিশনে পড়াশুনা করতে পারে। তাছাড়া সমরেশ মাঝে মাঝে ওর
মাকে নিয়ে গিয়ে ছোটুর সঙ্গে দেখা করিয়ে আনবে। চিন্তার কোন কারন নেই। এই বলে ওরা
ছোটুকে নিয়ে সোজা মিশনে আসে। আচ্ছা ভর্তি হবে কি নামে? পদবী কি? বাবার নাম ই বা
কি? অবশেষে মহারাজ নাম দেয় – অপরাজিত। কিন্তু পদবী? সমরেশকে মহারাজ বলেন – তোর
পদবীটাই লিখে দিলাম। সমরেশ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। বাবার নামের জায়গাটা ফাঁকা
পড়ে থাকে।
দিন যায়, মাস যায়, বছর চলে যায়। আস্তে আস্তে ছোটু অপরাজিত বা অপুতে রূপান্তরিত
হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর জায়গা হলো আস্তাকুঁড়। সেখানে যেমন কোনো গাছ লাগালে,
সেই গাছ খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে ছাপিয়ে যায় ঠিক তেমনই, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সব
জায়গায় খুব ভালো রেজাল্ট করে অপু।  ডাক্তারিতে চান্স পায় আর অবশেষে পাসও
করে। চাকরিতে জয়েন করবে আজ, স্বভাবতঃই খুব আনন্দের দিন ওর। শুধু মন খারাপ যদি
আজ বোনটা থাকতো। ও মিশনে চলে যাবার কয়েক বছর পর হটাৎ করে ডেঙ্গিতে….চোখটা
একবার মুছে নেয় অপু। ফর্মে বাবার নামের জায়গাটায় কিছু লেখার আগে সমরেশের দিকে
তাকায় একবার। সমরেশ কোনোরকমে চোখের জলটা চেপে শুধু একবার ঘাড়টা উপর-নীচে করে।
অপু বাবার নামের জায়গায় লেখে ‘সমরেশ সরকার’। ওর চোখ থেকে একটা ফোঁটা ফর্মে পড়ে
সমরেশের নামটা ভিজিয়ে দেয়। পাশে বৃদ্ধ সমরেশের চোখেও তখন বাঁধ ভাঙ্গে।
উল্টোদিকের চেয়ারে বসা ভদ্রলোক ফ্যালফ্যাল করে বাবা-ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে আর
বোঝার চেষ্টা করে আজ এই আনন্দের দিনে ওরা  দুজনে কাঁদছে কেন।  

অপুর আর বিয়ে করা হয়নি। সে এখন ডাক্তারির সঙ্গে ফুটপাথের ছোটু, পিন্টু,
বিট্টুদের অন্ধকার থেকে এক চিলতে নীল আকাশের স্বপ্ন দেখাতে ব্যস্ত যেমন তাকেও
একদিন দেখিয়েছিলো সমরেশ, না না তার বাবা। আর ওরাই এখন তার সংসার – অপুর সংসার।
জানালা খুলে সবাই ওরা একসঙ্গে আজ নীল আকাশ দেখে আর ভাবে কবে পাখি হয়ে একদিন উড়ে
যাবে..

Share This Article