পরকীয়া সম্পর্কের গল্প – Porokiya Somporker Golpo – Bangla Choto
Golpo
– প্রণয় কুমার বর্মণ
কার সাথে যেনো চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত। দেড়মাস হলো মা বোনের ঘরে ঘুমায়।তাদের মধ্যে
এখন প্রয়োজন ছাড়া আর কথা হয়না।
পরিচয় হয় সায়নের বাবা অতুলের।কোনো একটা গল্পকে কেন্দ্র করে অতুলের সঙ্গে
কয়েকজন পাঠকের মধ্যে একটু বাকবিতণ্ডা চলছিলো সেসময় গার্গী তাকে সাপোর্ট
করে।সেদিন গার্গী অতুলের স্বপক্ষে অনেক যুক্তি দেখিয়েছিলো যা অতুলের মন ছুঁয়ে
যায়।
দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে।স্ত্রী মালতীর সাথে তার বনিবনা হয় না।বিয়ের এতদিনেও
কোনোদিনের জন্য মতের মিল হয়নি দুজনের মধ্যে। অতুলকে কখনো বোঝার চেষ্টায় করেনা
তার স্ত্রী।সবসময় বিরোধিতা করা যেনো মালতীর একটা বদ অভ্যাস।তার ওপর সংসারের
নিত্য নতুন ঝামেলা।সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এই একঘেয়েমি জীবনে।
পরকীয়া সম্পর্কের কাহিনী
মিল।সে মেয়েটিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেন্ড করে।রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে ওদের
বন্ধুত্বের বাঁধন আরো দৃঢ় করে গার্গী। তারপর থেকে সুযোগ পেলেই ম্যাসেজ করে একে
অপরের খোঁজ নেয় তারা।
বয়েসে এসে সে যেনো বেঁচে থাকার প্রথম স্বাদ অনুভব করে।
এক ভাই আর মা রয়েছেন।পছন্দের কোনো ছেলে পাচ্ছিলো না বলে সে এই আটত্রিশ বছরেও
বিয়ে করেনি।একথা শুনে অতুলের মনের মণিকোঠায় একবার যেনো ঝঙ্কার দিয়ে ওঠে।ওর
সাথে যতই কথা বলছে ততই যেনো বেশি করে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে অতুল।কোনো এক সুপ্ত
বাসনা যেনো প্রথমবারের জন্য অঙ্কুরিত হয়ে বীজপত্রসহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে
বারবার।
তার স্ত্রীর ভাবনা চিন্তায় যে বিস্তর ফারাক তা অতুল সুযোগ পেলেই কথার ফাঁকে
বলে।
মেলে তখন দুজনে চ্যাটিং করতে বসে।অতুলের তখন মনে হয় কত কথা যেনো তার অন্তরে
এতদিন মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছিলো না।আজ যেনো সত্যিকারের বন্ধু পেয়েছে যে
অন্ততপক্ষে তার কথাগুলো মন দিয়ে শোনে।অতুল অনেকবার চেয়েছিলো তাকে ফোন করবে
কিন্তু মেয়েটি রাজি হয়নি।তাই দুধের সাধ ঘোলেই মেটায় অতুল।
রাগ করে না।স্কুলে স্টুডেন্টদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে না।ইদানিং কাজে খুব মন
বসছে তার।সংসারের যাবতীয় কাজকর্মে একটা ছন্দ ফিরে এসেছে।সবচেয়ে বড় বিষয় এখন
সে আর মদ ছুঁয়েও দেখেনা।শিক্ষক হয়ে রোজ রাতে যেটা না খেলে ঘুম হতো না এখন তার
নাম শুনলেই যেনো বুকটা ধড়াস করে ওঠে।কারন একজন,সে হলো গার্গী,সে তাকে মাথার
দিব্যি দিয়েছে যে।তার কথা অমান্য করে এতটা সাহস এখনো হয়নি অতুলের।মেয়েটা
যেনো কী এক মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে ফেলেছে অতুলকে।সে বেশ বুঝতে পাচ্ছে গার্গী
তাকে একটা নতুন মানুষে পরিণত করে ফেলেছে।
হয়েছে।মালতীকে ডিভোর্স দেবে তারপর গার্গীকে বিয়ে করবে এমনটাও মনে মনে স্থির
করে ফেলেছে অতুল।
মাথায় যেনো বাজ ভেঙ্গে পড়ে অতুলের।সে জানায় আগামী মাসে এক কলিগের সাথে তার
বিয়ে ঠিক হয়েছে।
দুঃশ্চিন্তায় চোখের পাতা এক করতে পারে না সে। হঠাৎ কেনো জানি তার নিজের ওপর
খুব ঘৃণা হতে শুরু করে।একটা অপরিচিত মেয়ে যাকে সে কখনো দেখেয়নি, ফেসবুকে
আলাপ।তার জন্যে আজ মন এতো ছটফট করছে।অথচ যে মানুষটা সারাটা জীবনের জন্য তার
সঙ্গে থাকবে বলে হাত ধরেছে, নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে এসেছে,সংসারের জন্য দিনরাত
পরিশ্রম করে যাচ্ছে তার সঙ্গে একটা দিন ভালো করে কথা বলেছে কিনা মনে করতে পারলো
না অতুল।মনের মধ্যে একটা অনুশোচনার ঝড় ওঠে।তার স্ত্রীর,ছেলেমেয়েদের চাওয়া
পাওয়াকে কখনোই সে গুরুত্ব দেয়নি।এতদিন শুধু নিজে কী চায় তা প্রাধান্য দিয়ে
এসেছে।কী অবিচার না করে এসেছে সে তাদের প্রতি।প্রয়োজনের বেলায় শুধু টাকা
দেয়।ভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করে সে।কিন্তু তার চেয়েও যে একটা
বড়ো দায়িত্ব রয়েছে,একজন বাবা হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে সেসব যেনো কোথায়
হারিয়ে গিয়েছিল তার মধ্যে থেকে।অনুশোচনার অনলে সারারাত জ্বলে অতুল।
বদলে দেওয়ার জন্য।তারপর তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক এই শুভেচ্ছা জানিয়ে
গার্গীর কাছ থেকে চির বিদায় নেয় অতুল।
আজ মালতীর জন্মদিন।তার প্রিয় খাবার তৈরি করেছে অতুল নিজেই।এসব দেখে মালতীর
যেনো চোখের জল থামছেই না।অতুলের এমন কর্মকান্ডে বাড়ির সবাই আজ খুব খুশি।সায়নও
খুশি।বাবার কথামতো সে আজ নিজে ফর্দ মিলিয়ে বাজার করে এনেছে।সায়ন অনেক কাজ
করেছে আজ।এখন আরো একটা কাজ বাকি আছে,গার্গী নামে ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা
চিরোকালের জন্য ডিলিট করে দেওয়া।