পরকীয়া প্রেমের গল্প – Porokiya Prem – Bengali Story

Bongconnection Original Published
6 Min Read


 পরকীয়া প্রেমের গল্প – Porokiya Prem – Bengali Story

পরকীয়া প্রেমের গল্প - Porokiya Prem - Bengali Story
Loading...

 পরকীয়া গল্প 

Loading...
– অমিতাভ মুখোপাধ্যায় 
সকালে, ন্যায় অন্যায় জানি নে জানি নে জানি নে, শুধু তোমারে জানি, তোমারে জানি,
ওগো সুন্দরী –খালি গলায়, সুরে – বেসুরে গাইতে গাইতে, পুরীর হোটেলে স্বামী
স্ত্রী পরিচয়ে আসা তমাল, মেধার চিবুকটি তুলে ধরে তার ঠোঁটের সঙ্গে সঙ্গে নিজের
ঠোঁট মেলাতে যাবে,মেধা বলে উঠলো এত তাড়া কিসের মশাই, এখনো সাত সাতটা দিন আছে,
হাতে। 

ফেসবুকে আলাপ,ম্যাসেঞ্জারে কথাবার্তা, মাস তিনেক সময় লেগেছে হোয়াটস অ্যাপের
নম্বর বদলাবদলি করতে।

দু’জনের বিবাহিত জীবন পনেরো বছর পেরিয়ে গেছে, দুজনের এখনকার বিবাহিত জীবন কেবল
অভ্যাস।কেবল দায়সারা দাম্পত্য, শরীরমিলন্। নিজের শরীর – আর নিজের মন,নিজের
চাহিদাগুলো – যখন পানসে- থেকে অতি পানসে আর   জোলো জীবন, তা থেকে
বেরিয়ে,একটা অন্য রকম কিছু করবে বলে ভাবছিলো, তখন  দুজন দুজনকে খুঁজে বের
করে ফেসবুকে।
দুজনেই স্বাবলম্বী, দুজনেই শারীরিক ছুঁৎমার্গিতা থেকে বেরিয়ে এসে, অফিসের কাজ,
সাতদিন বাইরে থাকতে হবে বলে বেরিয়ে এসেছে। 
মেধা এত সস্তা নয় যে শরীরের জন্য সব দেবে, আগে তো মন,মনের মিল হবে -তার পরে না
আসবে,  শরীর? 

আর কি আশ্চর্য, মেধার পছন্দ কি?মেধার আনন্দ কিসে? মেধা কি ধরনের কথা অপছন্দ
করে, সব সবই তমালের নখদর্পনে। মেধা অবাক হয়েছিলো, সুবোধ, মেধার স্বামী পনেরো
বছর একসাথে থেকে -এক বিছানায় শুয়ে যা জানতে পারে নি, তমাল ঠিক জানে।
মেধা জানে,  পৃথিবীতে একজনের জন্য একজনকে ঠিক করা থাকে, আর যাকে খুঁজে
বেড়াতে হয়,আজীবন । মানুষের ভাগ্যে যা  জোটেনা বললেও চলে।
তা বলে সংসারকে অবহেলা, না।  আলাপ, তাও ; বছর  গড়িয়েছে, নিজেকে
প্রস্তুত করেছে, একটা সিস্টেম ভাঙা  কম কথা  নয়,একটা সংস্কার ভাঙা
ভীষণ কঠিন, আর তা যদি হাজার বছর ধরে মনের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকে।
পনেরো দিন  আগে হোটেল আর আসা-যাওয়ার টিকিট বুক করতে বলেও,মনে মনে
পিছিয়েছে, আগিয়েছে।
প্রথম  সকাল গেলো  নিজেদের গুছিয়ে নিতে  , দুপুরে সমুদ্রের ধারে
হাতে হাত দিয়ে নিজের জীবনের কতশত কথা ভাগ করতে করতে, তমালের জীবনের কথা শুনতে
শুনতে মেধা  নিজের অবশিষ্ট দুর্বলতাটুকু অতিক্রম করলো।
রাত্রে  অনুভব করলো,দুর্বলতাটুকু  জয় করতে পেরেছে বলে  জেনেছে
শরীরে এখনও এত ক্ষুধা ছিলো,এত সুধা ছিলো-এত শিহরণ  লুকিয়ে ছিলো।
আজ এই রোমাঞ্চকর শরীরি যাত্রায় গা ভাসাতে পেরেছে বলে, দীর্ঘ ব্যবহারে
 জীর্ণ  ভাঙাচোরা চাঁদগুলো  তমালের হাতে সঁপে দিয়ে, অন্ধ অতল
জোয়ারে –  করাতের মতো চিরে চিরে তমাল যখন  ছিনিমিনি 
খেলছিলো,মেধা বিস্ময়াবিষ্ট হচ্ছিলো শরীরের অনৈসর্গিক সুখে এত পূর্ণতায়।শরীরি
সঙ্গমে মনে হচ্ছিলো ও যেন একটা হারমোনিয়াম, আর ওর অঙ্গ গুলি যেন এক-একটা
রীড,সেই রীডগুলির এদিক ওদিকে চাপে ওর শরীরে শরীরে  যেন সঙ্গীতের মূর্ছনা।
 আর সুবোধ?  এতদিন এত বার এতভাবে মিলনেও পূর্ণ সঙ্গীত কেন? 
ভাঙাচোরা সুর ও তার শরীর থেকে বের করতে পারে নি।

তারপর একটা একটা করে  রাত কেটেছে, আর  মেধা, নিজেকে নতুন করে 
আবিস্কার  করেছে।

পরকীয়া প্রেমের গল্প PDF

 তমাল এমনিতে পুরুষ হলেও; বহুগামী নয়,কোনোদিন ভাবে নি, আরো কোনো নারী আসবে
তার জীবনে, তমাল হিসেবী তার সংসার যাপনে এবং তার সংসারের দায়িত্ব পালনে কোনো
খাদ নেই।
কিন্তু তার স্ত্রীর?দাম্পত্য যে একটা আর্ট, তাকে পরিশীলিত করতে হয়,পরিবর্তন
করতে হয় পরিবেশনায়, সে সব ভুলে   দিনের পর দিন নিজে মেশিন হয়ে গিয়ে
তমাল কেও একটা লৌহনির্মিত যন্ত্রে পরিণত করেছিলো।
যাক সে কথা,ঃঃ-
মেধার সঙ্গে আলাপ যত গড়ায়,ততই অবাক হয়, তমাল।এ মানুষীটি কোথায় ছিলো, কোন কন্দরে
লুকিয়ে, কেন এলোনা প্রথম জীবনে।এত মিল? 
মতে,জীবনদর্শনে,কথাবার্তায়,পছন্দে।
তারপর তো এখানে আসা বেড়ানো হাতে হাত,মিলন।
এত কিছু নিজের শরীরে লুকিয়ে ছিলো, এত প্রেম আবেগ,শরীরের উত্তাপ।।

এরপর একে একে ঘুরে আসা,কোনোদিন চিল্কা ,কোনোদিন কোনার্ক,দুদিন আবার পুরী
মন্দিরে পূজোও দিলো।কোণার্কে মিথুনমূর্তি দেখতে দেখতে মেধা ভাবছিলো,তখন যা
সমাজে প্রচলিত ছিলো,আজ কেন যে সমাজের অনুশাসনের নামে গর্হিত। 

সাতটা দিন কোথা দিয়ে কেটে গেলো! 
আজ রবিবার! 
এক রবিবার  রাতে গাড়ীতে চড়ে,সোমবারে পুরীতে পা দিয়েছিলো, স্বপ্নের উজানে
ভেসে গিয়েছিল, আর আজ?  দু জনেই ফিরছে,তমালের হাত থেকে ফোন নিয়ে 
মেধা  নিজের নাম্বার ডিলিট করে, ফেসবুকে নিজেকে ব্লক করে, নিজের ফোন থেকে
তমালের নম্বর ডিলিট করে, তমালকে ফেসবুকে ব্লক করতেই, তমালের জিজ্ঞাসু মুখের
দিকে তাকিয়ে বললো,তমাল শোনো , কথা দাও, তুমি আর কোনোদিন কখনো আমার সঙ্গে
যোগাযোগের চেষ্টা কোরো না।
তোমার -আমার এ’ ভালোবাসার বীজ, একে মহীরুহ হতে দিও না।
নয়তো কোনোদিন  কোনো ঝড়ে তোমার আমার ঘরের ওপর পড়ে দুটো ঘরই ভাঙবে।তাই তার
বীজটুকু নিজের হাতে ধ্বংস করে দিলাম।
জানবে,তোমার আমার একসঙ্গে কাটানোর স্বপ্নের সাতটা দিন, আমার  যতদিন জীবন
আছে,স্মৃতি আছে, সযত্নে মনের মণিকোঠায় -আমার অবসরের অবলম্বন করে তুলে
রাখলাম।  
তুমি আমাকে মনে রাখবে তো, তমাল? 
তমালের চোখের কোনে জমা জল,আর বিষাদযুক্ত  সম্মতিসূচক ঠোঁটের ওপরে নেমে এলো
মেধার ঠোঁট।
এ গল্প পরকীয়ায় উৎসাহ দেবার জন্য নয়।পরকীয়া আছে, থাকবেও।
এটা গল্প,গল্প হিসেবে দেখলেই খুশী হবো।

Share This Article