পরকীয়া কেন এবং মুক্তির উপায় – পরকীয়া অর্থ, টিপস, লক্ষণ
পরকীয়া এবং নারীত্ব
জয় বলে চিৎকার চেঁচামেচি করছেন , কিন্তু আমার দুঃখ হচ্ছে । কেন ?তাহলে খুলেই
বলি ।
পরকীয়া অর্থ
অজস্র কাব্য ও রচনা করেছেন কবিরা , কিন্তু সেটা কে পরকীয়া বলতে সবার ঘোরতর
আপত্তি । কুন্তী একজন নারী হয়েও দৌপ্রদী কে পাঁচ সন্তানের ভোগ্য হিসেবে বিধান
দিয়েছেন , অথচ তিনি নিজেই বিয়ের আগে অবৈধ সম্পর্ক করে কর্নের জন্ম দিয়ে
লোকলজ্জায় যমুনার জলে ভাসিয়েছেন সেই পুত্র কে । অবশ্য বিয়ের পরেও পান্ডুরাজা
সঙ্গমে অক্ষম হওয়ার জন্য ধর্মরাজ কে এনে মন্ত্রবলে যুধিস্থিরের জন্ম দিয়েছেন ,
পবন দেব কে এনে ভীমের জন্ম এবং ইন্দ্র কে অর্জুনের জন্ম দিয়েছেন , মহাভারতকার
এখানে পৌরানিক আখ্যানের উল্লেখ করেছেন । কিন্তু ধ্রুব সত্য এটাই যে মহাভারতের
রচয়িতা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব , নিজের বংশের বিলুপ্তি রক্ষা করতে এবং রাজা
পান্ডু সঙ্গমে অক্ষম হওয়ায় এটা মেনে নিয়ে ছিলেন , তাই রাজপত্নী হওয়া সত্বেও
কুন্তীকে বংশ রক্ষার্থে পরপুরুষের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত হওয়াতে কোন
আপত্তি ছিলনা । কিন্তু সমাজ বড় বালাই , যতই রাজার ঘরের বৌ হও না কেন ?অতএব তিন
খানা পর পুরুষের সাথে কুন্তীর রতিক্রিয়ার ফলে জন্ম নেওয়া তিন পুত্রকে তিন
দেবতার সন্তান বলে চালান করতে হয়েছে ব্যাসদেব কে । সব দোষ তাঁকেই দেব কারন
তিনিই তো মহাভারতের সূত্রকার । এর আগেও বিচিত্রবীর্য্য মারা যাওয়ায় তিনিই ঋষি
হয়েও ভাতৃ বধূ অম্বিকা , অম্বালিকার সাথে যৌন ক্রিয়া করে ধৃতরাষ্ট্র , পান্ডু ,
বিদুরের জন্ম দিয়েছিলেন , অবশ্য মাতা সত্যবতী এবং মহামতি ভীষ্মের মতো মানুষ ও
বংশ রক্ষার্তে এটা মেনে নিয়েছিলেন । এটা কে কি বলবো ?পরকীয়া ?অবশ্যই
পরকীয়া।
বেশ ধরে(যদিও পুরানে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে কেউ যখন ইচ্ছে যে কোন রূপ
ধরতে পারতেন । বিতর্কে যাচ্ছিনা কারন স্বাভাবিক ভাবে কোন মানুষই কারোর রূপ ধারন
করতে পারেন না তবে পৌরানিক কাহিনীর চরিত্র গুলোর দেবত্ব বিচার করলে এটা সম্ভব ,
অনেকটা এখন কার দিনের সিনেমার শুটিংয়ে ডামি ব্যবহারের মতোই )গুরুপত্নী অহল্যার
সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হলেন ।গুরুতর অপরাধ এটা । গৌতম মুনি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে
অহল্যা কে অভিশাপ দিলেন সহস্র বছর ধরে শিলা হয়ে অর্থাৎ পাথর হয়ে থাকতে হবে ,
কিন্তু অহল্যার কাতর অনুরোধে তিনি বিধান দিলেন যে সূর্যবংশীয় রাজা দশরথের পুত্র
রামচন্দ্রের স্পর্শে অহল্যা শাপমুক্ত হবেন । এখানে কিন্তু স্ত্রী অহল্যা কে
করুনা করেছেন গৌতম মুনি । আর দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর ইন্দ্রত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন
তবে সমুদ্র মন্থন করে পুনরায় হৃত গৌরব লাভ করবেন । কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত্ত
পুরানে সৌণোক এক জায়গায় বর্ননা করছেন অহল্যা থাকাকালীন মুনি গৌতম হিমালয়
পাদদেশে রক্তীকা নাম্নী এক অপ্সরার সাথে কিছুদিন মাতোয়ারা ছিলেন। এর জন্য
অহল্যা কি মুনি গৌতম কে কোন শাপ দিয়েছিলেন ?পুরানে এর সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই
, মেনে নিলাম অহল্যা হয়তো জানতেন না মুনি গৌতমের এই পরকীয়া । একই দোষ করে গৌতম
তাহলে অহল্যা কে শাপ দিলেন কেন ?যেখানে ভালোভাবেই উল্লেখ আছে ইন্দ্র ঋষি গৌতমের
ছদ্মবেশে এসেছিলেন । এটা কি পরকীয়া নয় ?না পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্বামীই নারীর
প্রতিভূ -শ্মশুর বাড়ি থেকে পাওয়া গিফট ।
পরকীয়া কি অপরাধ?
কারন টা সহজেই অনুমেয় । ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতায় তখন বাবু
কালচারের আমদানি ।” সন্ধ্যাবেলা বাবুরা ফিনফিনে পাঞ্জাবি আর চওড়া পরিয়া গলায়
সোনার চেন আর মুখে তাম্বুল চর্বন করিতে করিতে পক্ষিনিবাসে বাহির হইতেন ,ভোর
রাত্রে বাটি ফিরিয়া মখমলের গাড়িতে বেলা দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঘুম দিয়া উঠিতেন ,
আর স্ত্রীলোকেরা অষ্টাদশ ব্যঞ্জন প্রস্তুত করিতে থাকিতেন পতিদেব নিদ্রা
হইতে গাত্রোত্থান করিয়া স্নান সমাপনান্তে আহারে আসিবেন । ”
সমাজের বর্ননা দিয়েছেন । ইংরেজরা এমন আইন করেছিল যাতে কলকাতার তৎকালীন শিক্ষিত
বাবু সম্প্রদায় নিজের বৌকে বাড়ি তে রেখে যথেচ্ছ যৌনাচার করতে পারে । কারন বৌ
বাড়িতে ঘোমটা দিয়ে থাকবে , বারান্দায় দাঁড়িয়ে কোন পুরুষের দিকে তাকালেও সেটা
সমাজে নারীকে কুলটা বলে চরিত্রহীন বলে আখ্যা দেওয়া হবে ।
আরো কিছু বছর এগিয়ে আসলে , অধুনা আলোচিত রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বরীর দেবীর পরকীয়া
প্রেম তো হট টপিক । এখন কিছু বলতে গেলেই রবীন্দ্রপ্রেমীরা রে রে করে তেড়ে আসবেন
। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি ,আপনারা যেমন রবীন্দ্রনাথ কে ভালোবাসেন ঠিক ততটাই আমিও
ভালোবাসি , কখনো তার চেয়েও বেশি । মুশকিল হলো আপামর বাংঙালি রবি ঠাকুর কে
দেবত্বের পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন তাই রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কিছু বললেই রেগে যাবেন
। তাঁদের কে জাস্ট একটা কথা বলতে চাই , সমুদ্র সমান প্রতিভার অধিকারী , যাঁর
প্রতিভা সাহিত্যের সব দিক ঋদ্ধ করেছে , তাকে দেবতা না ভেবে একজন মানুষ হিসেবে
বিচার করুন তাহলেই তাঁকে তাঁর সাহিত্যকে আরো ভালোভাবে উপলদ্ধি করতে পারবেন ।
বৌদি কাদম্বরী দেবীর সাথে রবীন্দ্রনাথ এর প্রেম পরবর্তীকালে কাদম্বরী দেবীর
আত্মহত্যা এটা কি ঠাকুর বাড়ির লোকেরা জানতেন না যে এটা একটা পরকীয়া?সম্ভবত
জানতেন তাই কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহের সুরতহাল হয়নি , স্বয়ং
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে রাতারাতি পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় ।আর
আমাদের কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের হয়তো পরোক্ষ মদত ছিল পরকীয়া তে , তাই তাঁর
উপন্যাসে অজস্র পরকীয়া প্রেম , সে চরিত্রহীন হোক বা গৃহদাহ ।
বাংলাদেশে পরকীয়া আইন
একজন মুসলিম যত ইচ্ছে বিয়ে করতে পারেন , একটার পর একটা স্ত্রী কে তাঁর নিজস্ব
ভোগ্য বস্তু ভাবতেই পারেন । এবার যদি শাহবানু মামলায় কিছুদিন আগে মহামান্য
সুপ্রিম কোর্টের তিন তালাক নিয়ে ঐতিহাসিক রায়টি পুনর্মূল্যায়ন করি , তাহলে কি
দাঁড়াবে ?নাঃ আপনি যখন ইচ্ছে যেমন ইচ্ছে আপনার স্ত্রীকে তিন বার তালাক -তালাক
-তালাক বললেন , ওমনি আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার সাথে কোন সম্পর্ক নেই । এতদিন
ধরে এক মহিলা বিয়ের পর স্বামী গৃহে এসে দিনের পর দিন একটা সংসার সাজিয়ে গুছিয়ে
সন্তান সন্ততি জন্ম দিলেন , আর কোন একটা অজুহাতে আপনি তাকে বললেন তালাক -তালাক
-তালাক , ব্যাস সব শেষ । কেন ?কারন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর
ভোগপণ্য বস্তু -তিনি যেমন ইচ্ছে তাঁর মর্জিমাফিক তা ব্যবহার করতেই পারেন
।
,
বাইরের একটা মেয়ের সাথে আমার একটা সম্পর্ক হলো , নর্মাল ব্যাপার , ফলের দোকানে
কচি শশা সবাই পছন্দ করে , আর আমার ঘরে থাকা বৌটি বুড়ো শশা -তার মধ্যে কোন
শারীরিক আকর্ষন আবেদন নেই । এবার আমার নতুন প্রেমিকাটি আমাকে বিয়ে করতে চায় ,
বা আমি বিয়ে করতে চাই নতুন প্রেমিকাটি কে । ঘরে বৌ থাকলে কোন মেয়ে বা মেনে নেবে
! উপায় ?সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি গিয়ে বৌকে তালাক -তালাক -তালাক বলে দিলাম । ব্যাস
জাহান্নামে যাক আমার বুড়ি/আধবুড়ি বৌ । আমি নতুন প্রেমিকা কে নিয়ে জান্নাতে এবার
থাকবো ।
নয় । এটা মানবতার জয় । সমান অধিকার পাওয়ার জয় । স্ত্রী যে স্বামীর ব্যক্তিগত
সম্পত্তি নয় এটা তার জয় ।
সোশাল মিডিয়াতে একটা ছবি নিয়ে ঝড় উঠলো । মুম্বাই প্রবাসী একটা রক্ত মাখা
স্যানিটারি ন্যাপকিনে মা দুর্গার ছবি দিয়ে বললেন , রক্ত মাখা স্যানিটারি
ন্যাপকিন নারীত্বের প্রতীক ।
নামক চারটি ছেলে মেয়ে আছে , কাজেই তাঁর ও পিরিয়ড হয় , নরমাল ব্যাপার । কিন্তু
ভারতবর্ষের অনেক মন্দিরে এখনও পিরিয়ড হলে মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ । এক বন্ধু
বলছিলেন অনেক মসজিদেও এমন রীতি আছে । মসজিদের ব্যাপারটা সঠিক জানিনা তাই এ
প্রসঙ্গে মন্তব্য না করাই ভালো । কিন্তু স্যানিটারি ন্যাপকিনে মা দুর্গার ছবি
দিয়ে কিভাবে প্রমান করা যাবে যে এটা নারীত্বের প্রতীক ? আচ্ছা , হিন্দু
মেয়েদের কথা বাদ দিলাম , মুসলিম বা খৃষ্টান মেয়েরা কি করবে ??তারা কি তাদের
রক্তমাখা স্যানিটারি ন্যাপকিন কোন মসজিদের চূড়ায় বা ক্রুশে ঝুলিয়ে দিয়ে নিজেদের
নারীত্ব প্রমান করবে ?যখন কোন নারী ধর্ষিতা হয় , অত্যাচারিত হয় তার স্বামীর
দ্বারা বা অন্য পুরুষের দ্বারা তখন কি ধর্ম বিচার করে হয় ?না নারীর নারীত্ব কি
যোনি তে লুকিয়ে থাকে ?আর যদি যোনি তে লুকিয়ে থাকে নারীত্ব , তাহলে একজন কলগার্ল
এর কি কোন নারীত্ব নেই ?না সে অনেক পুরুষের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত বলে তার নারী
হিসেবে প্রাপ্য সন্মান টুকু সমাজ দেবেনা ?তাহলে ধরে নিতে হবে একজন নারীর
নারীত্ব বা পুরুষের পৌরুষত্ব নির্নয়ের মাপকাঠি যোনি বা লিঙ্গ।মূলঘটনার সাথে এই
ফটোগ্রাফি ব্যাপারটা ও বললাম কারন পরকীয়া সম্পর্কে বলতে গেলে নারীর নারীত্ব
নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসে বারবার ।
আমার দুঃখ হচ্ছে এটা ভেবে যে স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর অপেক্ষা করতে মান্ধাতা
আমলের আইনটিকে বাতিল করতে ।
করে , সেই সমাজ সেই নারীকে ধর্ষন , সন্মান রক্ষার্তে হত্যা , লিঙ্গ নির্নয় ,
ভ্রুন হত্যা করতে বাধ্য করায় ।এই ভারতবর্ষের মধ্যেই গ্রামে শহরে অজস্র নারী কে
নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করতে হয় , বৈষম্যের শিকার হতে হয় ।
।ভাবুন স্বাভাবিক ভাবে , আমি একজন কর্পোরেট অফিসের এমপ্লয়ী । বাড়ি তে
স্ত্রী আছে , তবু ও মাঝে মধ্যে কোম্পানির কাজে যাচ্ছি বলে আমরাই মহিলা সহকর্মী
বা সেক্রেটারি কে নিয়ে দুদিন দীঘা ঘুরে আসলাম , কিম্বা কলেজ জীবনের প্রেমিকার
সাথে হঠাৎ করে পরিচয় হয়ে পুনরায় গোপনে প্রেম প্রেম খেলে যে টুকু নিতে বাকি ছিল
ওটা বিছানায় শুয়ে শুষে নিলাম । কিন্তু স্ত্রী বেশি রাতে কারোর সাথে ফোনে কথা
বললেই অমনি অশান্তি শুরু ।
কিনা , যদি না পড়ে থাকে তাহলে ভাবতে বাধ্য আমার বর্তমান স্ত্রীটি বিয়ের
আগে অনেকের সাথে রাত কাটিয়ে এসেছে । এখন প্রশ্ন উঠবে সাইকেল চালালে বা ঘোড়ায়
চড়লে বা গাছে উঠলে সতীচ্ছদ ছিঁড়ে যায় , কিন্তু এমন ও তো অজস্র মেয়ে আছে যারা
সাইকেল চড়েনি বা গাছে ওঠেনি বা ঘোড়ায় বসেনি , স্পেশালি শহুরে মেয়েদের কথা বলছি
, তাদের ক্ষেত্রে কি হবে ?ফুলশয্যার রাতে রক্ত বেরোয়নি মানে ওই মেয়েটি
চরিত্রহীন !কিন্তু ছেলে দের ?খুব কম ছেলেই কিন্তু বিয়ের দিন পর্যন্ত ভার্জিন
থাকে , কথা টা শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি কিন্তু ।
এই রায় টা ঘোষনা হতে । বহুদিন আগেই হওয়া উচিত ছিল ।
Porokiya,
Bangla Golpo,
Bengali Article