Premer Golpo – প্রেমের গল্প (প্রেমের গতিবিধি)
রাত একটা বাজে। আজ পিকলুর ঘুম আসছে না। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে আর ভাবছে
শুক্লার কথা। এও কি সম্ভব! শুক্লা তার প্রেমে পাগল হয়ে পড়েছে। পিকলু তো ভেবেই কুল
কিনার পাচ্ছে না। সবাই তো তাকে দিয়ে শুধু কাজ করিয়ে নেয়। সে তো সবার ফাই ফরমাস
খাটতেই অভ্যস্ত। লোকের চোখে সে একটা বেকার ছেলে। পিকলু ভাবতে থাকে, দেখতে গেলে সে
তো বেকার ছেলেই। সে যা কাজ করে, সেটাকে তো ধর্তব্যের মধ্যে রাখা যায় না। পিকলু
ভাবতে থাকে।
Premer Choto Golpo
পিকলুর বাবা যখন মারা গিয়েছিল, তখন পিকলুর বয়েস মাত্রা ছ সাত বছর। পিকলুর
বোন টুম্পার বয়েস তো তখন আরও কম। মাত্র তিন বছর। সেই সব দিনের কথা পিকলুর খুব
বেশি মনে মেই। একটু যখন সে বড় হলো, তখন বুঝতে পারলো, বাবা না থাকলে কি হয়। বাবা
মারা যেতে, পিকলুর মা বাবার অফিসেই চাকরি পায়। সকাল নয়টায় পিকলুর মা, রান্না
বান্না সেরে, পিকলু আর টুম্পার স্কুলের ব্যাগে টিফিন ভরে দিয়ে অফিস বেরিয়ে যেত।
পিকলু আর টুম্পা মা অফিস চলে যাওয়ার পর স্নান করে সাড়ে দশটার পর স্কুলে যেত। তখন
পিকলু আর টুম্পা, বাড়ির কাছেই একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়তো। পরে অবশ্য ওদের স্কুল
আলাদা হয়ে যায়।
পিকলু স্কুল থেকে ফিরতো বিকেল চারটে নাগাদ। পিকলুর মার অফিস থেকে ফিরতে
ফিরতে সাতটা বেজে যেত। এই সময়টায় পিকলু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো। কখনো সখনো
পাড়ার মাঠে একটু আধটু বন্ধুদের সাথে ফুটবল বা শীতকালে ক্রিকেটও খেলতো। কিন্তু
খেলার চেয়ে তার মন ছিল অন্যদিকে। পাড়ায় কার শরীর খারাপ, ডাক্তার ডাকতে হবে বা
ওষুধ আনতে হবে, কার বাড়িতে আজ শনি পুজো বা সত্য নারায়ণ পুজো, সেই পুজোর জোগাড়
দিতে হবে, এই সব কাজেই যেন পিকলুর উৎসাহ বেশি ছিল। মা সন্ধ্যের পর বাড়ি ফিরে একটু
জল খাবার বানিয়ে পিকলু আর টুম্পাকে দিত। নিজেও খেত। এরপর পিকলু আর টুম্পা পড়তে
বসতো। মা ব্যস্ত থাকতো রান্না ঘরে।
দেখতে দেখতে পিকলু বড় হয়ে গেল। স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে গেল। লেখা পড়ায়
তার কোনো দিনই খুব বেশি মন ছিল না। তবে পরীক্ষায় ফেলও কোনোদিন করেনি। বি কম পাস
করার পর বেশ কয়েকটা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু চাকরি তার কপালে জোটে নি। কবে
যে তার চাকরির বয়েসটাও পেরিয়ে গেছে, পিকলুর সে খেয়ালও ছিল না।
আজকাল সে পাড়ার ক্লাবের দাদা। শুধু ক্লাব নয়, সে যেন পাড়ার সবার দাদা। কেউ
বাড়ি খালি করে পুরী বেড়াতে যাচ্ছে, ডাক পরে পিকলুর। পিকলু নিজে বা পাড়ার অন্য কোন
ছেলের ব্যবস্থা করে দেয়, তাদের বাড়িতে রাত্রে শোয়ার জন্য। কেউ হসপিটালে ভর্তি
আছে, সেখানেও পিকলু যাবে। পাড়ার কোনো মেয়েকে পাশের পাড়ার কোনো ছেলে বিরক্ত করছে,
সেই ছেলেটিকে টাইট করার দায়িত্বও পিকলুর। প্রায়ই রাত্রে, পিকলুর মা, পিকলুকে
বলতো,’এভাবে আর কত দিন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবি? কিছু একটা কর। কিছু না করলে
চলবে কি করে? টুম্পার বিয়ে হলে, তোর বিয়ের কথাও তো ভাবতে হবে!’ মায়ের কথায় পিকলু
জবাব দিত না। চুপ করে শুনতো। শেষে পিকলু শুরু করে জীবন বিমার এজেন্সি। কিন্তু ওই
নামেই। মাঝে মধ্যে দুই একটা পলিসি করাতো। সামান্যই টাকা তাতে পেত। তবে একটাই
পিকলুর সুবিধা হয়েছিল যে তাকে আর নিজের হাত খরচের জন্য মায়ের কাছে হাত পাততে হতো
না। পিকলু বার বার ভাবতে থাকে। সে বলতে গেলে বেকার ছেলে। সেই বেকার ছেলের প্রেমে
কোন মেয়ে কি করে পরে। তাও আবার যে সে মেয়ে নয়, শুক্লা। পিকলু জানে, শুক্লা এম এ
পাস। একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ায়। সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় শুক্লার রূপ। সে
অসামান্য সুন্দরী। কত ছেলে যে শুক্লার প্রেমে পাগল। সে প্রায়ই দেখে মোটর সাইকেলে
ছেলেরা শুক্লাদের বাড়ির আসে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই শুক্লা, হটাৎ তার প্রেমে কেন
পড়লো। আজ পর্যন্ত প্রেম তো দূরের কথা পাড়ার বা আসে পাশের পাড়ার কোন মেয়ে তো তার
দিকে ভালো করে চেয়েই দেখে নি। আর দেখবেই বা কেন। তার মতো বেকার ছেলেদের দিকে কেই
বা তাকায়!
Govir Premer Golpo
পিকলু, শুক্লাকে প্রথম দেখেছিল বছর পাঁচেক আগে। শুক্লার বাবা পিকলুকে
পাড়ার ওই বাড়িটা তখন সবে কিনেছেন। একদিন তিনি গাড়ি নিয়ে পাড়ার ক্লাবে এসে হাজির।
পিকলু তখন তার সাঙ্গ পাঙ্গদের সাথে ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছিল। তিনি নিজের পরিচয়
দিলেন। বললেন,’ বাড়িটাতে বেশ কিছু মেরামতির কাজ আছে। তাছাড়া রঙও নতুন করে করতে
হবে। আমি এখানে কাউকে চিনি না। তাই তোমাদের কাছে এলাম। আমাকে একটা রাজ মিস্ত্রি
আর পেন্টার জোগাড় করে দাও।’ পিকলু শুনেই বললো,’পেয়ে যাবেন। কাল সকালে আপনার
বাড়িতে রাজ মিস্ত্রি, জোগারে সব পৌঁছে যাবে। আপনি থাকবেন, আমি কথা বলিয়ে দেব। তবে
পেন্টার পেতে একটু সময় লাগবে।’
পরদিন সকালে পিকলু যখন রাজমিস্ত্রির সাথে শুক্লার বাবার পরিচয় করিয়ে
দিচ্ছিল, তখন শুক্লা, পিকলুর দিকে তাকিয়ে পিকলুকে দেখছিল। পিকলু কথা বার্তা বলে
যখন শুক্লাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে, ঠিক তখন পিকলুকে শুক্লা ডেকেছিল,’একটু
দাঁড়ান। কথা আছে।’ পিকলু ঘুরে শুক্লার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তখনও শুক্লার বাবা,
রাজমিস্ত্রির সাথে কথা বলছে। পিকলু শুক্লার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই, শুক্লা
বললো,’আপনি পিকলু,তাইতো? এ পাড়ার দাদা!’ পিকলু হেসে বললো,’দাদা! কিন্তু আমি তো
কোন গুন্ডা নই। আমার তো কোন দলও নেই।’ শুক্লা একটু লজ্জা পেয়ে বলল,’ না না গুন্ডা
হতে যাবেন কেন। আসলে আমি এর আগেও দু তিন বার এই বাড়িতে বাবার সাথে এসেছি। আসে
পাশের বাড়ির লোকেদের সাথে কথা বলার সময় বুঝলাম যে এই পাড়ায় যে কোনো সমস্যার জন্য
আপনাকেই ডাকতে হয়। তাই দাদা কথাটা বললাম। সবার মুখেই আপনার নাম শুনছি। তা, আপনি
কি করেন?’ পিকলু হেসে বলল,’মায়ের বেকার সন্তান। তবে জীবন বিমার এজেন্সি করি কাজের
ফাঁকে ফাঁকে।’ শুক্লা অবাক হয়ে বলল,’ মানে? লোকের জন্য কাজ করাটা আপনার মূল কাজ
আর জীবন বিমার এজেন্সি করাটা পার্ট টাইম। খুব ইন্টারেস্টিং তো!’ পিকলু বলল,’আসলে,
সেই ছোট বেলায় বাবা মারা গেছেন। মাকে অফিস যেতে হতো। ফলে দেখা শোনার কেউ ছিল না।
ছোট বেলা থেকেই লোকের কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এখন আর নিজের জন্য ভাবার সময়
নেই।’ শুক্লা বলল,’ আপনার সাথে আলাপ করে খুব ভালো লাগলো। মাঝে মধ্যে আসবেন। এখন
যতদিন বাড়ি মেরামতের কাজ চলবে, আমি রোজই নটার সময় আসবো।’
আরো পড়ুন, মন তুই আমার হবি
সেই শুরু। মাঝে মধ্যে নয়, প্রায় রোজই পিকলু পাড়ার ওই রাস্তা দিয়ে গেলেই,
শুক্লার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে নিজের কাজে চলে যেত। এরপর শুক্লারা যেদিন ওই
বাড়িতে শিফট করে এলো, সেদিন পূজা আচ্চার ব্যবস্থা রেখেছিল, সঙ্গে দুপুরে খাওয়ার
ব্যবস্থা। পাড়ার প্রায় সবাইকেই নেমন্তন্ন করেছিল। পুজো, খাওয়ার দাওয়ার ব্যবস্থার
দায়িত্ব শুক্লার বাবা, ক্লাবের ছেলেদের দিয়েছিল। ক্লাবের ছেলে মানে পিকলুকে।
পিকলুর কথায় ক্লাবের ছেলেরা ওঠে বসে। সেই দিনই পিকলু প্রথম শুক্লাদের ফ্যামিলির
ব্যাপারে একটু আধটু জানতে পেরেছিল। জানতে পারা মানে শুক্লাই বলেছিল। তখন প্রায়
দুপুর দুটো। পুজো শেষের পর, সবাই শুক্লাদের বাড়ির ছাদে খেতে বসেছে। পিকলু খাওয়ার
পরিবেশনের তদারকি করছিল। হঠাৎই শুক্লা তাকে ডেকে নিয়ে নিজের ঘরে যায়। ঘরে তখনও
কোনো আসবাব পত্র আসে নি। ডেকোরেটর থেকে ভাড়া করা একটা চেয়ারে পিকলুকে বসিয়ে,
শুক্লা একটা প্লেটে করে কয়েকটা মিষ্টি দিয়ে বলেছিল,’সকাল থেকে যে ভাবে আপনি দৌড়
দৌড়ি করে চলেছেন, তাতে মনে হয় না, সকাল থেকে আপনার পেটে কিছু পড়েছে। নিন চট পট
এগুলো খেয়ে নিন। আমি জল আনছি।’ মিষ্টির প্লেটটা পিকলুকে ধরিয়ে দিয়ে, শুক্লা জল
আনতে চলে গিয়েছিল। জল নিয়ে এসে, পিকলুর সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বলল,’ আপনার সাথে
আমার অনেক মিল আছে। আপনার বাবা নেই, আমার মা নেই। আপনার এক বোন আছে, আমার এক দাদা
আছে। যদিও দাদা থেকেও নেই। দাদা ইউ এস এ থাকে। দাদা একটি মেয়েকে ভালোবাসতো।
কিন্তু ইউ এস গিয়ে সেখানে এক বিদেশি মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এতে বাবা এতটাই বিরক্ত
হয়েছেন যে দাদাকে বাবা আর ঘরে ঢুকতে দেন না। তাই আমাদের ফ্যামিলিতে আমি আর বাবা।
অবশ্য অন্যান্য আত্মীয় স্বজন আছেন।’
Bangla Premer Golpo Love Story
এরপর দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেছে। কিন্তু শুক্লার সাথে পরিচয়ের
ছ মাসের মাথায় একটা ঘটনা ঘটেছিল, যেটা আজ পিকলুর বার বার মনে পড়ছে।
দিনটা ছিল দূর্গা পুজোর কয়েক দিন আগে। পিকলু শুক্লাদের বাড়ির সামনে দিয়ে
যাচ্ছিল। পিকলুকে দেখেই, শুক্লা তাদের বারান্দা থেকে ইশারায় ডাকে। পিকলু ভেতরে
যেতেই, শুক্লা তাকে বসতে বলে। পিকলুকে বসার ঘরে বসিয়ে, শুক্লা নিজের ঘরে চলে যায়।
একটু পরেই দু কাপ চা নিয়ে ফিরে আসে। চা খেতে খেতেই শুক্লা বলল,’আজ আপনাকে একটা
জিনিস দেব। সেটা নিতে হবে। না করতে পারবেন না।’ পিকলুও চা খেতে খেতেই বলল,’আগে
দেখি, তারপর নয় ভাবা যাবে।’ চা খাওয়া শেষ হতে, শুক্লা চায়ের কাপ আর প্লেট দুটো
নিয়ে ভেতরে চলে গেল। একটু পরেই ফিরে এলো হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে। পিকলুর হাতে
দিয়ে বলল,’বাড়ি গিয়ে খুলে দেখবেন। হ্যাঁ, আর একটা কথা। আমাকে একটা অনুমতি দিন।
আমি আপনাকে তুমি বলবো।’ পিকলু আকাশ থেকে যেন পড়লো। বলল,’এতে অনুমতির কি আছে?
আমাকে পাড়ার কেউ তো আপনি বলে ডাকে না। আপনিই শুধু আপনি বলেন।’ শুক্লা বলল,’উহু,
আপনি নয় তুমি। তুমিও আমাকে এখন থেকে তুমি বলবে।’ বাড়ি ফিরে পিকলু প্যাকেট খুলে
দেখেছিল একটা বিমলের প্যান্ট আর শার্টের পিস। এরপর থেকে প্রতি বছর পুজোর আগে
শুক্লা পিকলুকে এরকম দামি প্যান্ট শার্টের কাপড় দিত।
এরপর বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। প্রায়ই শুক্লা, পিকলুকে ঘরে ডেকে চা
খাওয়াতো। পিকলুর সাথে গল্প করতো। এতেও পিকলু কোনো দিন কিছু বুঝতে পারে নি। পাড়ার
অনেকেই তাকে ডেকে চা খাওয়ায়, গল্প করে।
আরো পড়ুন, বন্য প্রেমের গল্প
কিন্তু আজ যেটা ঘটেছে,সেটা যেন পিকলু স্বপ্নেও ভাবতে পারছে না। তারও
শুক্লার সঙ্গ খুব ভালো লাগতো। কিন্তু সে খুব বেশি এটা নিয়ে কোনো দিন ভাবে নি।
ভাবার প্রশ্নও ছিল না। শুক্লা সব দিক দিয়ে পিকলুর চেয়ে অনেক এগিয়ে। সে অপরূপ
সুন্দরী, ধনী বাবার এক মাত্র মেয়ে। তার জন্য কত ভালো ভালো ছেলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে
আছে! তাই পিকলু এই নিয়ে চিন্তাটাকেও কোনোদিন প্রশ্রয় দেয়নি। না:, পিকলুর যেন মনে
হচ্ছে বিকেলের ঘটনাটা যেন একটা স্বপ্ন। তাকেও যে কোন মেয়ে এত ভালোবাসতে পারে, সে
তো ভাবতেই পারছে না। লোকে তাকে ভালোবাসে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু শুক্লা
যেন অন্যরকম। সে যে পিকলুকে এত ভালোবাসে, তা পিকলু কোনোদিন বুঝতেই পারে নি।
পিকলুর বিকেলের ঘটনাটা আবার ভাবতে থাকে।
বিকেল তখন পাঁচটা হবে। শুক্লা দের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে পিকলু
যাচ্ছিল। শুক্লাকে পিকলু দূর থেকেই দেখেছিল, সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। পিকলুর
মনে হয়েছিল, শুক্লা যেন তার জন্যই অপেক্ষা করছে। বাড়ির কাছে যেতেই, যেমন অন্যদিন
হাত নেড়ে ডাকে, সেরকমই শুক্লা, পিকলুকে ডেকে ভেতরে বসালো। পিকলু বসতে, শুক্লা
অন্যদিনের মতো আর চা বানাতে ভেতরে গেল না। সে এসে, পিকলুর মুখোমুখি বসলো। এক
দৃষ্টে পিকলুর দিকে চেয়ে আছে। হটাৎ পিকলুর খেয়াল পড়লো যে শুক্লার চোখে জল। পিকলু
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,’ কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন?’ পিকলুর কথা শেষ হতে না হতেই,
শুক্লা, পিকলুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। পিকলু জিজ্ঞেস করতে লাগল,’আরে, তুমি
কাঁদছো কেন? কি হয়েছে, বলবে তো?’ শুক্লা কোনো উত্তর দেয়না। পিকলুর কাঁধের ওপর
মাথা দিয়ে কেঁদেই চলেছে।
কিছুক্ষণ এই ভাবে কাঁদার পর, কাঁধের ওপর মাথাটা রেখেই, কান্না ভেজা গলায় বলল,’
বাবা, আমার জন্য ছেলে ঠিক করেছে। সামনের ফাল্গুনে আমার বিয়ে দিয়ে দেবে।’ পিকলু
অবাক হলো। এতে আবার কান্নার কি আছে! এত ভালো খবর। তাই পিকলু বলল,’ কিন্তু তুমি এর
জন্য কাঁদছো কেন? ছেলেটাকে কি তোমার পছন্দ নয়?’ শুক্লা আবার কেঁদে উঠে বলল,’ না
আমি ছেলেটাকে চিনি না।’ পিকলু বলল,’ তাহলে আগে থেকেই তুমি কাঁদছো কেন?’ শুক্লা
এবার গলা জড়িয়ে ধরে পিকলুর কানে কানে ফিস ফিস করে বলল,’ আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও
যাবো না। কথা দাও, আমাকে ছেড়ে তুমি কোথাও যাবে না?’ পিকলু যেন একটা ঝটকা খেলো।
মুহূর্তে তার মনে হলো, সে কি স্বপ্ন দেখছে। তারপর নিজে সামলে নিয়ে বলল,’ কথা
দিলাম, তোমায় ছেড়ে যাবো না। কিন্তু তোমার বাবা কি রাজি হবে?’ শুক্লা বলল,’ বাবা,
তোমাকে পছন্দ করে। আপত্তি করবে না।’ শুক্লা পিকলুর কাঁধের থেকে মাথা সরিয়ে এনে,
পিকলুর মুখের কাছে নিজের মুখ এনে বলল,’প্রথম দিন, তোমার কথা লোকের মুখে শুনে,
তোমাকে দেখে, আমি তোমায় ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। তুমি সবাইকে এত ভালোবাসো। তোমার
মনটা কত ভালো। আমি যে তোমার মত আর কাউকে খুঁজে পাইনি।’ এই কথা বলে শুক্লা পিকলুর
কপালে একটা চুমু এঁকে পিকলুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। পিকলু শুক্লার মাথায় হাত
বোলাতে লাগলো।
… শেষ….