ভৌতিক গল্প – হঠাৎ সেদিন – Horror Story
ঠাণ্ডায় কম্বলের নীচে আশ্রয় নিয়েছি। বিকেল থেকেই আকাশটা গোমড়া হয়ে আছে। কনকনে
ঠাণ্ডা তার সাথে পাল্লা দিয়ে হিমেল বাতাস। কে জানে কোন তিথি! অমাবস্যাই হবে
হয়তো বা পূর্ণিমা। এক কাপ কফি হাতে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান পড়ছিলাম। হঠাৎ
মুঠোফোনটা বেজে উঠলো। নবাবগঞ্জ থেকে বোনের ফোন। বোনের শাশুড়ীর শরীর বেশ ভালো
নয়। রূপক বাড়িতে না থাকায় বোন বেশ ঘাবড়ে গেছে, তাই আমাকেই ফোন করেছে।
কি করবো ভেবে স্থির করতে পারছিলাম না। সত্যি কথা বলতে, কম্বল থেকে বাইরে বেরোতে
ইচ্ছে করছিলো না। রমাকে ডেকে সবটা বললাম। স্ত্রী তো শুনেই বললো, ‘এখনি যাওয়া
উচিত। ‘ ভাবলাম যেতেই যখন হবে তখন আর সাত পাঁচ ভেবে কি লাভ। কম্বলের মায়া ত্যাগ
করে উঠেই পড়লাম। গরম জামা-কাপড়ে যতটা সম্ভব আচ্ছাদিত হয়ে গুটিগুটি পায়ে রওনা
দিলাম।
চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না, বিগত দু’দশ বছরে এমন ঠাণ্ডা পড়েছিলো কি না।
দমকা বাতাস জ্যাকেট ভেদ করে শরীরে যেন ছুঁচ ফোটাচ্ছে। ঠাণ্ডায় হাত-পা যেন অবশ
হয়ে আসছে। স্টেষন থেকে অটোরিক্সা নিলাম। বেশ কয়েকটা স্টপেজ পরেই বাদামতলা। ওখান
থেকে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে বোনের বাড়ি যেতে হবে। ঘুষিপাড়া পার হলেই ঠাণ্ডার
প্রকোপটা যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। গরমকালে রাত্রে নাকি পাখা না চালিয়েও থাকা যায়!
অন্ধকার ভেদ করে সাঁই সাঁই করে অটো ছুটে চলেছে। ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা আছড়ে
আছড়ে এসে পড়ছে চোখে মুখে। আর কিছুক্ষণ এমন চললে নির্ঘাত ঠাণ্ডায় মারা পড়বো।
পৈত্রিক প্রাণটা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবো কিনা ভাবতে ভাবতে স্ত্রীর দিকে আড় চোখে
চাইলাম। দেখলাম সেও ঠাণ্ডায় কাঁপছে। ইশারায় বলতে চাইল, ‘আর কতদূর?’
ভৌতিক গল্প সমগ্র
আরও জোরে বইতে শুরু করছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে শীতের দাপট। এককাপ চা না খেলেই
নয়। রাস্তার ধারে সারি সারি দোকান। ধোঁয়া ওঠা গরম চা হাতে নিয়ে বেশ আয়েশ করে
খেতে শুরু করলাম। গরমকাল হলে হাতে ধরা যেত না চায়ের গ্লাস, আর এই ঠাণ্ডায় গরম
গ্লাস কেন বোধহয় আগুন হাতে নিলে কিছু হবে না। এবার রিক্সা করে যেতে হবে। দেড়
কিলোমিটার রাস্তা তো হবেই বাদামতলা থেকে নবাবগঞ্জ ঘাট। স্ট্যাণ্ডে একটাও রিক্সা
নেই। রমাকে বললাম অহেতুক সময় নষ্ট না করে হেঁটেই চলো। যদি রাস্তায় কোনো রিক্সা
বা টোটো পাই নিয়ে নেবো। রমাও সাথে সাথে সম্মতি দিলো। দু’জনে হাঁটা শুরু করলাম।
রাস্তার দু’ধারে সাবেক কালের বড় বড় বাড়ি। অনেক বাড়িই দাঁতমুখ বের করে
জীর্ণতা বুকে নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে, কোনো বাড়ি আবার মুখ থুবরে পড়ে আছে
ধ্বংসাবশেষ হয়ে। রাস্তার বতিগুলো জ্বলছে না। লোক চলাচলও সেভাবে নেই। কেউ দায়ে
না পড়লে এমন দূর্যোগে কে আর ঘর থেকে বের হবে! কম্বলের নীচে বোধকরি এখন শ্রেষ্ঠ
আশ্রয়।
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে শুরু করলে। হঠাৎ
আলোর ঝলকানি। কাছাকাছি কোথাও বাজ পড়লো। রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য। দোকানপাটও
প্রায় বন্ধ। দু’একটা দোকান যা খোলা আছে তা থেকে আলো এসে ক্ষীণভাবে আলো
এসে রাস্তাকে আলোকিত করেছে। সেই ক্ষীণ আলো আর বিদ্যুতের ঝলকানির ওপর ভরসা করে
পথ চলেছি দু’জন। দূর থেকে ভেসে আসছে নিশাচর পাখির ডাক। রমা সভয়ে জিজ্ঞাসা করলে,
‘আর কতদূর?’ আমি নিশ্চুপ হয়েই রইলাম। বৃষ্টিটা এবারে আরও একটু জোরে এলো। এবার
একটা আশ্রয় না হলেই নয়। কাজ নেই আর বৃষ্টিতে ভিজে, শেষে ঠাণ্ডাতে জমে গিয়ে
হার্টফেল না করি! একটা দাঁড়াবার মতো জায়গা খুঁজছিলাম। বিদ্যুতের ঝলকানিতে
যেটুকু দেখতে পেলাম, কোথাও একটুকরো দাঁড়াবার জায়গা নেই। অগত্যা হাঁটতে থাকলাম।
বৃষ্টিটা এবারে আরও জোরে এলো। এবার যে কোথাও আশ্রয় নিতেই হবে আর কিছুতেই ভেজা
যাবে না। হঠাৎ একটু ক্ষীণ আলোর রেখা চোখে পড়লো। দু’পা এগোতেই দেখি একটা ছোট
গুমটি থেকে আলোটা আসছে। একটা পুরোনো শো-কেশের ওপর একটা লন্ঠন আলোর উৎস। এখন এই
বৈদ্যুতিক যুগে লন্ঠন আর দেখাই যায় না। দোকানের সামনে গিয়ে সরাসরি একটু আশ্রয়
চাইলাম। ভাঙা গলায় ভদ্রমহিলা দোকানের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। আমরাও কোনো
সঙ্কোচ না করেই দোকানে প্রবেশ করলাম। একটা তেলেভাজার দোকান। বোধহয় ভদ্রমহিলা
দোকান বন্ধ করতে যাচ্ছিলেন। বয়স ঠিক বোঝা যায় না। ষাট হতে পারে বা আশি। আমি
এবার বেশ বিব্রত বোধ করলাম। হয়তো আমাদের জন্য ভদ্রমহিলা বেশ অসুবিধায়
পড়লেন।
সেরা ভৌতিক গল্প
তেলেভাজা কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা জিজ্ঞেস করাতে ভদ্রমহিলা
বললেন, গোটা দুই চপই শুধু অবশিষ্ট আছে। তাই দিতে বললাম। এই ঠাণ্ডায় গরম গরম চপ
আর অপরাধবোধ থেকে বেড়িয়ে আসা যাবে। হাত বাড়িয়ে চপদু’টো নিলাম। শালপাতায় মোড়া
বেশ বড় সাইজের দু’টো চপ, ভুরভুর করে গন্ধ বেরোচ্ছিলো। রমাকে একটা দিয়ে আরেকটা
থেকে একটু কামড় দিলাম। আঃ, কি অপূর্ব স্বাদ। এমন স্বাদের চপ আমি জীবনে খেয়েছি
কিনা মনে করতে পারলাম না। মনে মনে ভাবলাম, এই দূর্যোগে বাইরে আসাটা সত্যিই
সার্থক হলে। কি করে যে দিই সে স্বাদের বর্ণনা! আরও গোটাদু’ই হলে বেশ হতো। নিছক
বয়সের কথা ভেবে নিজেকে সংবরণ করলাম। আবার কাছেই কোথাও বাজ পড়লো। একটা গরম
হাওয়ার হলকা গায়ে এসে লাগলো। এবার সত্যিই একটু ভয় পেয়ে গেলাম। রমাও আমার গা
ঘেঁসে দাঁড়াল। বোধহয় ও একটু বেশিই ভয় পেয়েছে।
নিয়ে যাবার ইচ্ছে ছিল। ভদ্রমহিলাকে বললাম আরও গোটাচারেক চপ দিয়ে দিতে।
ভদ্রমহিলা বললেন, ‘আর তো নেই তবে একটু দাঁড়ালে ভেজে দিতে পারি।’ কিন্তু আমাদের
যে আর দেরী করা যাবে না। বেশ রাত হয়েছে। বোনের বাড়ি যেতে হবে। জানি না ওখানে
আমাদের জন্যে কি অপেক্ষা করছে। বললাম, এখন থাক, যদি ফেরার সময় দোকান খোলা থাকে
তখন না হয় নেবো। এখন আর দাঁড়াবার মতো সময় নেই। উত্তরে ভদ্রমহিলা বললেন, আমার
দোকান অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, আপনারা নিশ্চই কুটুম বাড়ি যাচ্ছেন, ফেরার
সময় না হলে নিয়ে যাবেন। আমিও সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। সত্যি বলতে চপটা এতো ভালো
লেগেছিলো, যে খাওয়ার লালসা বেড়েই গেলো।
সুতরাং আবার দু’জনে হাঁটা শুরু করলাম। মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছেও গেলাম। একরাশ
আশঙ্কা নিয়ে যখন পৌঁছলাম, দেখি সব প্রায় স্বাভাবিক। মনটা কিছুটা হলেও উৎফুল্ল
হয়ে উঠলো। বোনের শাশুড়ী মায়ের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিলো, মুখ দিয়ে কোনো কথাও
বলতে পারছিলেন না। এমন সময় রূপক বাড়ি ফিরে পাড়ার সামন্ত ডাক্তারকে ডেকে
দেখিয়ে নিয়েছে। ডাক্তার দেখে ইনজেকসান ওষুধ দেওয়াতে ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়ে
গিয়েছিলো। সব খবর নিতে নিতে বোনের দেওয়া এককাপ কড়া চা কণ্ঠস্থ করেছি। আরও কাপ
হলে ভালো হতো। এই ঠাণ্ডায় এককাপ চায়ে কি হয়? রমা বোধহয় আমার মনোভাব বুঝতে পেরে
বাড়ি যাওয়ার তাড়া লাগানো। আমরা সবাইকে বিদায় জানিয়ে ওবাড়ী থেকে বেরিয়ে
পড়লাম।
নাঃ, এবারও রিক্সার দেখা নেই। রূপক (ভগ্নীপতি) বলেছিলো মোটরসাইকেলে
বাসস্ট্যাণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কথা, কিন্তু রমা ঠিক বাইকে চড়তে অভ্যস্ত
নয়, তাই সে সজোরে আপত্তি জানালো। আবার সেই পায়ে হেঁটেই রওনা দিলাম। সেই আলো
আঁধারি রাস্তা, রাস্তার দু’ধারে একশো বছর আগের জরাজীর্ণ বাড়ি আর কিছুক্ষণ আগে
ঘটে যাওয়া একটা দূর্যোগের পরিবেশ এখন বেশ অসস্তিকর হয়ে উঠেছে। দু’জনে গায়ে গা
ঘেঁষে পথ চলছি। রাস্তার পাশে চোখ রেখে চলেছি পাছে তেলেভাজার দোকান ফেলে না আসি
!
কি দোকানটা ফেলে এলাম? নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে নিজের ওপর খুব রাগ হলে।
রমাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে দেখেছে কিনা! উত্তরে সে শুধু ঘাড় নাড়ল। এবার আমি বেশ
অসন্তুষ্ট হলাম। রেগে গিয়ে রমাকে বললাম, ‘একটু খেয়াল রাখবে তো।’
ভৌতিক গল্প pdf
যখন পা চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক তখনই এক বৃদ্ধ লোকের সাথে দেখা।
হাতে লাঠি, চোখের দৃষ্টি প্রখর, চামড়ায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। এমন পরিবেশে এইসময়ে
একজন মানুষের দেখা পাবো কল্পনা ও করিনি। আসলে এতক্ষণ হাঁটছি একজন মানুষের দেখা
পাওয়া যায়নি।
তাকালেন। আমি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম—-
হয়ে গেছে! ঠিক ঠাহর করতে পারছি না, দোকানটা কোথায় যেন দেখেছিলাম!
শুরু করলেন…..
সাথে কড়কড় করে বাজ পড়ছিলো। আর যে তেলেভাজার দোকানটা দেখেছিলে, ওটা চালাতো এক
বিধবা বুড়ি। এ রাস্তা তখন মাঝরাত পর্যন্ত জমজমাট থাকতে। হঠাৎ সজোরে বাজ পড়লো
খুব কাছেই। আমি তখন বারান্দায় বসে ঝড়জল দেখছিলাম। একটু চুপচাপের পর শুনি তুমুল
হৈ চৈ । চোখ যেন ঝলসে গেলো। বাতাসে তখন আগুনের হলকা। ঐ তেলেভাজার দোকান মানে ওই
বিধবা বুড়ির দোকান দাউ দাউ করে জ্বলছে। চারপাশে লোকজনের কোলাহল, জল আন, বালতি
করে জল আন…..
আগুন নেভাতে নেভাতে বুড়ি তখন শেষ। কড়াইয়ের তেলে আগুন ধরে বুড়ির সারাদেহে
আগুন ছড়িয়ে পড়েছিলো। তাকে আর বাঁচানো যায়নি। আমার সচক্ষে দেখা। তারপর বাড়ি
বিক্রি হয়ে গেলো, সব ভেঙেচুরে নতুন বাড়ি হলো কিন্তু বুড়িকে প্রত্যেক বছর
এইসময় এমনই ঝড়-বৃষ্টির রাতে কেউ না কেউ একবার দেখে। যেমন তোমরা আজ
দেখলে।
গায়ের সাথে মিশে গেছে।
হয়েছে…….
Download PDF –
Click Here
ভালো থাকুন, ভালোবাসায় থাকুন। ..
Thank You, Visit Again…
Bhuter Golpo,
Bengali Horror Story, Bangla Golpo