বন্য প্রেমের গল্প – Bonyo Premer Golpo

Bongconnection Original Published
9 Min Read


 বন্য প্রেমের গল্প – Bonyo Premer Golpo

বন্য প্রেমের গল্প - Bonyo Premer Golpo
Loading...


প্রতিশোধ
– শাশ্বতী দত্ত
প্রিয় অমিত,
   প্রিয় বলেই সম্বোধন করলাম।
তোমার ঘরণী যদি এ চিঠি দেখেনও তাঁকে বুঝিয়ে বলো,এটা শুধুই সৌজন্য ,তার বেশি
কিছু আর আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট নেই!
সত্যিই কি নেই?
   তাহলে কবি কেন বলেছেন,রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে!

     মনে পড়ে ,তোমাদের ঐ ১ নম্বর রাজবল্লভ সাহা লেনের পুরনো
বাড়ির একতলার ঘরটা বড় চাপা ছিল বলে রাতে পা টিপে টিপে দুজনে তেতলার ছাতে উঠে
যেতাম?

   রবিঠাকুরের নতুন বৌঠান নাকি রুপোর রেকাবিতে বেলফুলের গোড়েমালা
রাখতেন তাঁদের তেতলার বারান্দার সান্ধ্য আড্ডায় ।


Premer Golpo

Loading...
  আমিও মনু ঠাকুরপোকে দিয়ে চুপিচুপি দুটো বেল বা জুঁইয়ের গোড়ে মালা আনিয়ে
লুকিয়ে রাখতাম আমার ঘরে।
তোমার মা তেতলার ঠাকুরঘরে সন্ধে দিয়ে নেমে আসার পরে আমি গা ধুয়ে ছাতে উঠতাম।
মাদুর পেতে চিনেমাটির রেকাবিতে মালাদুটো রেখে ভেজা কাপড় চাপা দিয়ে আসতাম।
 রাতে খাওয়াদাওয়া হয়ে গেলে দুজনে ছাতে চলে যেতাম ।
বেলফুলের গন্ধে তখন গোটা ছাত ম ম করছে ।
একটা মালা তুলে তুমি জড়িয়ে দিতে আমার খোঁপায়।
 আবৃত্তি করতে ,’তুমি যেমন আছ তেমনি এস নাই বা হল সাজ!’
তোমার গলায় রবি ঠাকুরের কবিতা আলাদা প্রাণ পেত।
তোমার পীড়াপীড়িতে চাপা গলায় কতবার গেয়েছি,’আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে ।’
গলা ছেড়ে গাওয়ার উপায় ছিল না।
তোমার মায়ের কানে গেলে রক্ষা থাকবে না যে!
 আকাশের চাঁদ মুখ টিপে হাসত আমাদের প্রেম দেখে।
তুমি নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নিতে আমাকে বুকের কাছে।
চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বলতে,’আকাশের চাঁদের চেয়েও আমার চাঁদ বেশি সুন্দর।’
চাঁদ বলেই তো ডাকতে আমায় আদর করে।
 তোমার আর আমার কত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে আছে আকাশের ঐ চাঁদ আর
তারা।
  অনেক রাতে দুজনে বিড়াল পায়ে নেমে আসতাম শোবার ঘরে।
কোথায় যে হারিয়ে গেল আমাদের সেই সোনালী 
দিনগুলো ! 

Onno Premer Golpo

   মধুচন্দ্রিমা আমাদের ছাতেই হয়েছিল।
দীঘার বাসের টিকিট কেটেও যে আমাদের হনিমুনে যাওয়া হল না।
প্রথম থেকেই তোমার মায়ের আপত্তি ছিল।
আমাদের যাবার কথা শুনেই তাঁর মুখভার হয়ে গিয়েছিল।
ঠেস দিয়ে বলেছিলেন,’আমাদেরতো বাপু এসব হনিমুন টনিমুন হয়নি,তাতে কিই বা
ক্ষতিবৃদ্ধি হয়েছে?’
তোমার বাবা বলে উঠেছিলেন,’আমরা যাইনি বলে ওরাও যাবে না,এ কেমন কথা?’
‘তুমি থামো তো বাপু!’
ঝংকার দিয়ে উঠেছিলেন তোমার মা।
তুমি লুকিয়ে একটা সালোয়ার কামিজ কিনে এনেছিলে।
সব গুছিয়েও যাওয়া হল না।
বেরোবার ঠিক আগে তোমার মায়ের শরীর হঠাৎ  খারাপ হল, পেটের অসুখ,সাথে বমি!
বাবা বললেন ‘তুই চলে যা খোকা বৌমাকে নিয়ে,আমি তোর মাকে দেখে রাখব ।’
তোমার পিসিমা এসেছিলেন সেদিন।
পরম বিস্ময়ে বলে ওঠেন,
–‘কি যে বলিস দাদা,বৌদির এই অবস্থা দেখেও ওরা চলে যাবে?’
এরপরেও কি আর যাওয়া যায়!
মা অবশ্য পরদিনই ভাল হয়ে ওঠেন।
মায়ের জন্য খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকতে গিয়ে শুনেছিলাম বাবা বলছেন 
–,’জোলাপ খেয়ে এই নাটকটা না করলেই পারতে সুলতা!’
আর ঢুকিনি ঘরে।
কাউকে বুঝতেও  দিইনি আমি সব শুনেছি।
 তোমাকেও না।
জানো,আমার মনে কিন্তু কোনো ক্ষোভ দানা বাঁধেনি।তোমাকে পেয়েই আমি সুখী ছিলাম।
নাইবা হল দূরে কোথাও যাওয়া!
তোমার মা তোমার জন্য তাঁর বন্ধুর মেয়েকে মনোনীত করে রেখেছিলেন।
আমাকে বিয়ে করতে চাওয়ায় খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন তিনি।
 মনে মনে ভাবতেন আমার বাবামা আমাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে তোমার মত
সুপাত্রকে গেঁথে তুলেছেন।বহুবার বলেছেন সেকথা!
তুমি যে পড়াতে যেতে আমাকে,তাই ওনার এরকম ধারণা হয়েছিল।
  কিন্তু তুমি তো জানো আমাদের বাড়িতে কেউ চায়নি তোমার আমার বিয়ে হোক!
বাবা প্রথমবার তোমাদের বাড়িতে এসে তোমার মা ,পিসির ব্যবহারে খুব আহত হয়েছিলেন।
তোমার কথামত বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যখন বাবা আসেন তোমার পিসি জিজ্ঞাসা করেছিলেন,
-‘এত মেয়েবন্ধুতো ছিল অমুর, আপনাদের মেয়ের মধ্যে এমন কি আছে যে আমার ভাইপো ওকেই
বিয়ে করবে বলে ক্ষেপে উঠল?’
শুধু কি তাই? 
বাবাকে কাগজের ডিসে খেতে দিয়েছিলেন তোমার মা,যেন আমার বাবা অচ্ছুৎ!
বাবা মা দুজনেই বলেছিলেন,
–‘ তুই আরেকবার  ভেবে দেখ মা,ওখানে কিন্তু তোকে কেউ ভালভাবে মেনে নেবে
না!’
শুনিনি তাদের কথা।প্রথম প্রেমের তীব্র আবেগে ভেসে গিয়েছিলাম যে ।
   
    তোমার একমাত্র পিসিমাও তার ভাইপোর জন্য মনে মনে নিজের ভাসুরঝিকে
ঠিক করে রেখেছিলেন।আমার এই উড়ে এসে জুড়ে বসা তাঁরও একেবারেই পছন্দ হয় নি।
আশা করি এখন তিনি খুব খুশী,তার ভাসুরঝি এখন তার ভাইপোবৌ।
  তবে আজ দশ বছরেও নাতি নাতনির মুখ দেখতে না পেয়ে তোমার মা খুব অশান্তিতে
আছেন!
ভাবছ এত কথা আমি জানলাম কি করে?   
   তোমার এক দূর সম্পর্কের বৌদি আমার দিদির বন্ধু,জানোইতো!
   আমরা দুজনতো ভালই ছিলাম।কিন্তু তোমার মায়ের প্রতিদিন আমার
বিরুদ্ধে বলা কথাগুলো আস্তে আস্তে তোমাকে আমার প্রতি বিষিয়ে তুলছিল।
  বিয়ের পরেও আমার চাকরি করা,আমার রিটায়ার্ড বাবা মাকে সাহায্য করাটা,
তোমার মায়ের বিলকুল নাপসন্দ ছিল।
তার সাথে তোমার পিসিমার মাঝেমাঝেই তার ঐ সুন্দরী ভাসুরঝিকে নিয়ে এ বাড়িতে থাকার
মেয়াদও বাড়তে লাগল।
তোমাদের হাসিঠাট্টায়  প্রথম দিকে আমিও যোগ দিতাম।পরে দেখলাম আমার
উপস্থিতিটা গৌণ হয়ে যাচ্ছে!
কষ্ট হতো,সরে যেতাম তোমাদের আসর থেকে।রাতে আমাকে আদর করার সময়ও ঘরের আলো
জ্বালতে দিতে না।মনে হতো অন্য কাউকে ভেবে আমাকে আদর করছো ।খুব খারাপ লাগত জানো!
  সেদিনটার কথা খুব মনে পড়ে,যেদিন আমাদের তিনজনের সিনেমা দেখতে যাবার কথা
ছিলো।অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে দেখি তোমরা চলে গেছ।তোমার মা বললেন,
–‘ও মা তুমি এসে গেছো,আমি আরো খোকাকে বললুম বৌমার দেরি হচ্ছে,তোরা চলে যা।তা
বাছা যাবে যদি যাও এখন।’
উনি ভাল করেই জানতেন আমার আত্মাভিমান কতখানি!
   খুব কষ্ট হল,গেলামই না।
  সেদিন রাতে তোমার জামায় দীপার পারফিউমের গন্ধ পেলাম।মনটা মানতে চাইছিল
না।
কিন্তু একদিন ফাঁকা বাড়িতে তোমাদের 
ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেললাম যে ।


Bangla Premer Golpo Love Story

আমার সেদিন অফিসফেরত বাপেরবাড়িতেই থেকে যাবার কথা ছিল,কিন্তু তোমার কথা ভেবে
মনটা খারাপ লাগছিল,তাই ফিরে আসি।
আর হ্যাঁ,সেই খবরটাও যে দেওয়ার ছিল!
এসে দেখি আমারই শোবার ঘরে,আমার বিয়ের খাটে তোমরা দুজন আদিম খেলায় মত্ত।
তোমার বাবা সেদিন ব্যবসার কাজে কলকাতার বাইরে।
মা পিসিমা তোমাদের একা হবার সুযোগ করে দিতেই বোধহয় পাশের বাড়ি গিয়েছিলেন।
সদর দরজাটা ভেজানো ছিল,ঢুকে পড়েছিলাম।
তোমরা এত নিশ্চিন্ত ছিলে দরজাটাও বন্ধ করনি।
আমাকে দেখে তুমি রাগে ফেটে পড়লে!
কথাতেই বলে আক্রমণ আত্মরক্ষার প্রধান হাতিয়ার!
আর দেরী করিনি,এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম ।তোমাদের দেওয়া এক কণা সোনাও
আনিনি,লোহাবাঁধানোটাও খুলে রেখে এসেছিলাম ড্রেসিংটেবিলের ওপর ।
তোমার মা অবশ্য আমার ব্যাগ খুলে দেখে তবে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।
কোর্টে দাঁড়িয়ে পরে উনি বলেছিলেন,আমি নাকি চরিত্রহীন।
মনুঠাকুরপোর গায়ে কাদা ছেটাতেও ওনার বিবেকে বাঁধেনি।
সেই মনু ঠাকুরপো,যাকে আমি ভাইফোঁটা দিতাম!
তুমিও ডিভোর্স পাওয়ার জন্য তোমার মায়ের কথাতেই সায় দিয়েছিলে।
একমাত্র তোমার বাবা গোপনে আমার পক্ষে ছিলেন ।
ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরেও একবার এসেছিলেন উনি আমাদের বাড়িতে।হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে
গেছেন অন্যায়ের প্রতিবাদ না করতে পারার জন্য।
তোমার মাকে উনি ভয় পান,কেন কে জানে!
 যাকগে সেসব পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে আর কি লাভ!
তুমি হয়ত ভাবছ ,আজ হঠাৎ এতদিন পরে তোমায় কেন চিঠি লিখছি।
  একটা কথা স্বীকার করার জন্যই এই চিঠির অবতারণা।
আমি তোমাদের বারবার বলেছিলাম,তোমাদের বাড়ি থেকে আমি কিচ্ছু আনিনি,সেটা কিন্তু
ভুল! 
  এনেছিলাম তো,তোমার বীজ এনেছিলাম আমার গর্ভে।সেই খবরটা দেব বলেই তো সেদিন
রাতে বাপেরবাড়ি থেকে ফিরেছিলাম।
সুযোগই পেলাম না বলার।
  সেই বীজ এখন অঙ্কুর।হ্যাঁ ওটাই তোমার ছেলের নাম।এতদিন বলিনি,আজ সব
জানালাম ।
তোমাদের বংশের ধারা অনুযায়ী ওর নামও অ দিয়েই রেখেছি।
তবে ওর ওপর তোমার কোন অধিকার নেই যদিও ওর চেহারায় তোমার স্পষ্ট আদল।
  আর তুমি আমাদের নাগাল পাবে না।
চলে যাচ্ছি অনেক দূর,ঠিকানা দেব না।
  তোমার মা তার সন্তানকে একদিন আমার থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন ,আজ আমি তোমার
থেকে তোমার সন্তানকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রতিশোধ নিলাম।
ভালো থেকো,ভুলতে বোধ হয় আর পারবে না,বিশেষত এই অঙ্কুরের কথা!
আজ এখানেই সব সম্পর্কের ইতি টানলাম।
   ইতি 
      একদা তোমার চাঁদনী।

Share This Article