100+ Swami Vivekananda Bani In Bengali (স্বামী বিবেকানন্দ)
Swami Vivekananda Bani In Bengali
Swami Vivekananda (পিতৃদত্ত নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত) ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী এবং উনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু ধর্মগুরু পরমহংসের প্রধান শিষ্য। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ১২ জানুয়ারি মকরক্রান্তি উৎসবের দিন উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলে ৩ নং গৌরমহন মুখোপাধ্যায় স্ট্রিটে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা বিশ্বনাথ দত্ত কলকাতা উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবি ছিলেন। বিবেকানন্দ কলকাতার একটি প্রথাগত উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি কায়স্থ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যেখানে তার নয় জন ভাই-বোন ছিল।
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে,নরেন্দ্রনাথ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে তার পরিবার সাময়িকভাবে রায়পুরে (অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ছত্তিসগড় রাজ্যে) স্থানান্তরিত হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে দত্ত পরিবার আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। নরেন্দ্রনাথ প্রেসিডেন্সি কলেজের (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা) প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনিই ছিলেন সেইবছর উক্ত পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ একমাত্র ছাত্র। তিনি প্রচুর বই পড়তেন। দর্শন,ধর্ম,ইতিহাস,সমাজবিজ্ঞান,শিল্পকলা ও সাহিত্য বিষয়ে বই পড়ায় তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। বেদ, উপনিষদ, ভাগবদ্গীতা, রামায়ন, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠেও তার আগ্রহ ছিল। এছাড়া তিনি হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতেন এবং নিয়মিত অনুশীলন,খেলাধুলো ও সমাজসেবামূলক কাজকর্মে অংশ নিতেন। জেনেরাল অ্যাসেম্বলি’জ ইনস্টিটিউশনে (অধুনা স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা) পড়ার সময় নরেন্দ্রনাথ পাশ্চাত্য যুক্তিবিদ্যা, পাশ্চাত্য দর্শন ও ইউরোপীয় ইতিহাস অধ্যয়ন করেছিলেন। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি চারুকলা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছেলেবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার দিকে নরেন্দ্রনাথের আগ্রহ ফুটে ওঠে। এই সময় শিব, রাম, সীতা ও মহাবীর হনুমানের মূর্তির সামনে তিনি প্রায়শই ধ্যানে বসতেন। সাধুসন্ন্যাসীদের প্রতিও তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। ছেলেবেলায় বিবেকানন্দ অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন। তার পিতামাতার পক্ষে তাকে সামলানো মাঝে মাঝেই দুঃসাধ্য হয়ে উঠত। তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন,সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ;তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ক্লাস নিয়েছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও গায়ক। তাঁর রচিত দুটি বিখ্যাত গান হল “খন্ডন-ভব-বন্ধন” (শ্রীরামকৃষ্ণ আরাত্রিক ভজন) ও “নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি”। এছাড়া “নাচুক তাহাতে শ্যামা”, “৪ জুলাইয়ের প্রতি”, সন্যাসীর গীতি ও “সখার প্রতি” তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা। “সখার প্রতি” কবিতার অন্তিম দুইটি চরণ– “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?/জীবে প্রেম করে যেই জন,সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” –বিবেকানন্দের সর্বাধিক উদ্ধৃত একটি উক্তি।
পাশ্চাত্য জগতে ভারতের বেদান্ত ও যোগ দর্শনকে পরিচিত করে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে একে অপরের ধর্ম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মের মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। বিবেকানন্দ ছিলেন ভারতে হিন্দু নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃত এবং ব্রিটিশ ভারতে জাতীয়তাবাদী ধারণার অন্যতম প্রবক্তা। তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতে বিবেকানন্দকে “বীর সন্যাসী” নামে অভিহিত করা হয় এবং তার জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়।
মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই এমন সমাজবাদী,মানবপ্রেমিক,মহাসন্ন্যাসীর জীবনাবসান হয়।
Swami Vivekananda Bani
অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে। তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।
অর্থাৎ যারা আর কারও ওপর নির্ভর না ক’রে কেবল আমার ওপর নির্ভর ক’রে থাকে,তাদের যা কিছু দরকার,সব আমি যুগিয়ে দিই। ভগবানের এ কথাটা তো আর স্বপ্ন বা কবিকল্পনা নয়।
জনৈক সংস্কৃত কবি বলিয়াছেন-‘ন গৃহং গৃহমিত্যাহুর্গৃহিণী গৃহমুচ্যতে’—গৃহকে গৃহ বলে না,গৃহিণীকেই গৃহ বলা হয়,ইহা কত সত্য! যে গৃহছাদ তোমায় শীত গ্রীষ্ম বর্ষা হইতে রক্ষা করিয়া থাকে,তাহার দোষগুণ বিচার করিতে হইলে উহা যে স্তম্ভগুলির উপর দাঁড়াইয়া আছে,তাহা দেখিলে চলিবে না—হউক না সেগুলি অতি মনোহর কারুকার্যময় ‘করিন্থিয়ান’স্তম্ভ।
বহুরূপে সম্মুখে তোমার,ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর ?
জীবে প্রেম করে যেইজন,সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।
বড় হইতে গেলে কোন জাতির বা ব্যক্তির পক্ষে তিনটি বস্তুর প্রয়োজনঃ
(১) সাধুতার শক্তিতে প্রগাঢ় বিশ্বাস।
(২) হিংসা ও সন্দিগ্ধভাবের একান্ত অভাব।
(৩) যাহারা সৎ হইতে কিংবা সৎ করিতে সচেষ্ট,তাহাদিগের সহায়তা।
হে যুবকবৃন্দ,দরিদ্র অজ্ঞ ও নিপীড়িত জনগণের ব্যথা তোমরা প্রাণে প্রাণে অনুভব কর,সেই অনুভবের বেদনায় তোমাদের হৃদয়ে রুদ্ধ হউক,মষ্তিষ্ক ঘুরিতে থাকুক,তোমাদের পাগল হইয়া যাইবার উপক্রম হউক। তখন গিয়া ভগবানের পাদপদ্মে তোমাদের অন্তরের বেদনা জানাও। তবেই তাহার নিকট হইতে শক্তিও সাহায্য আসিবে—অদম্য উৎসাহ,অনন্ত শক্তি আসিবে।
অন্ন! অন্ন! যে ভগবান এখানে আমাকে অন্ন দিতে পারেন না তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত সুখে রাখিবেন—ইহা আমি বিশ্বাস করি না।
আমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি,মানুষকে বিশ্বাস করি;দুঃখী দরিদ্রকে সাহায্য করা,পরের সেবার জন্য নরকে যাইতে প্রস্তুত হওয়া—আমি খুব বড় কাজ বলিয়া বিশ্বাস করি।
জতিভেদ থাকুক বা নাই থাকুক,কোন মতবাদ প্রচলিত থাকুক বা নাই থাকুক,যে-কোন ব্যক্তি,শ্রেণী,বর্ণ,জাতি বা সম্প্রদায় যদি অপর কোন ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তার ও কার্যের শক্তিতে বাধা দেয় (অবশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ শক্তি কাহারও অনিষ্ট না করে) তাহা অতি অন্যায়,এবং যে ঐরূপ করে—তাহার পতন অবশ্যম্ভাবী।
তোমরা সকলে ভাবো—‘আমরা অনন্ত বলশালী আত্মা;দেখ দিকি কি বল বেরোয়। ‘দীনহীনা!’কিসের ‘দীনহীনা’? আমি ব্রহ্মময়ীর বেটা! কিসের রোগ,কিসের ভয়,কিসের অভাব? ‘দীনহীনা’ভাবকে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদেয় কর দিকি।
তোমাদের কি মন মুখ এক হয়েছে? তোমরা কি মৃত্যুভয় পর্যন্ত তুচ্ছ ক’রে নিঃস্বার্থভাবে থাকতে পার? তোমাদের হৃদয়ে প্রেম আছে তো? যদি এইগুলি তোমাদের থাকে তবে তোমাদের কোন কিছুকে,এমন কি মৃত্যুকে পর্যন্ত ভয় করবার দরকার নেই। এগিয়ে যাও,বৎসগণ। সমগ্র জগৎ জ্ঞানালোক চাইছে—উৎসুক নয়নে তার জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আমি দৃঢ়ভাবে বলিতেছি,হিন্দুসমাজের উন্নতির জন্য ধর্মকে নষ্ট করিবার কোন প্রয়োজন নাই এবং ধর্মের জন্যেই যে সমাজের এই অবস্থা তাহা নহে,বরং ধর্মকে সামাজিক ব্যাপারে যেভাবে কাজে লাগানো উচিত,তাহা হয় নাই বলিয়াই সমাজের এই অবস্থা।
কেউ তোমাকে বলবে সাধু,কেউ বলবে চণ্ডাল,কেউ বলবে উন্মাদ,কেউ বলবে দানব,কোনদিকে না তাকিয়ে নিজের পথে চলে যাও,’—এই কথা বলেছিলেন বার্ধক্যে সন্ন্যাসগ্রহণকারী রাজা ভর্তৃহরি—ভারতের একজন প্রাচীন সম্রাট ও মহান্ সন্ন্যাসী।
কোন ধর্মকে ফলপ্রসূ করতে হ’লে তাই নিয়ে একেবারে মেতে যাওযা দরকার;অথচ যাতে সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক ভাব না আসে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
জগতে যদি কিছু পাপ থাকে,তবে দুর্বলতাই সেই পাপ। সর্বপ্রকার দুর্বলতা ত্যাগ কর—দুর্বলতাই মৃত্যু,দুর্বলতাই পাপ।
হে মহাপ্রাণ,ওঠ জাগো ! জগৎ দুঃখে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে—তোমার কি নিদ্রা সাজে?
হিন্দু যেন কখন তাহার ধর্ম ত্যাগ না করে। তবে ধর্মকে উহার নির্দিষ্ট সীমার ভিতর রাখিতে হইবে,আর সমাজকে উন্নতির স্বাধীনতা দিতে হইবে।
যে দেশে কোটি কোটি মানুষ মহুয়ার ফুল খেয়ে থাকে,আর দশবিশ লাখ সাধু আর ক্রোর দশেক ব্রাহ্মণ ঐ গরীবদের রক্ত চুষে খায়,আর তাদের উন্নতির কোনও চেষ্টা করে না,সে কি দেশ না নরক! সে ধর্ম,না পৈশাচ নৃত্য! দাদা,এটি তলিয়ে বোঝ—ভারতবর্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেছি। এ দেশ দেখেছি। কারণ বিনা কার্য হয় কি? পাপ বিনা সাজা মিলে কি?
যে ধর্ম বা যে ঈশ্বর বিধবার অশ্রুমোচন করিতে পারে না অথবা অনাথ শিশুর মুখে একমুঠো খাবার দিতে পারে না,আমি সে ধর্মে বা সে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। যত উচ্চ মতবাদ হউক,যত সুবিন্যস্ত দার্শনিক তত্ত্বই উহাতে থাকুক,যতক্ষণ উহা মত বা পুস্তকেই আবদ্ধ,ততক্ষণ উহাকে আমি ধর্ম নাম দিই না। চক্ষু আমাদের পৃষ্ঠের দিকে নয়,সামনের দিকে-অতএব সম্মুখে অগ্রসর হও,আর যে ধর্মকে তোমরা নিজের ধর্ম বলিয়া গৌরব কর,তাহার উপদেশগুলিু কার্যে পরিণত কর-ঈশ্বর তোমাদিগের সাহায্য করুন।
একটি কথা—মহাপুরুষেরা বিশেষ শিক্ষা দিতে আসেন,নামের জন্যে নহে,কিন্তু চেলারা তাঁদের উপদেশ বানের জ্বলে ভাসাইয়া নামের জন্য মারামারি করে—এই তো পৃথিবীর ইতিহাস।
জীবনটা ক্ষণস্থায়ী স্বপ্নমাত্র,যৌবন ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়;দিবারাত্র বল,’তুমি আমার পিতা,মাতা,স্বামী,দয়িত,প্রভু, ঈশ্বর—আমি তোমা ছাড়া আর কিছু চাই না,আর কিছুই চাই না,আর কিছুই না। তুমি আমাতে,আমি তোমাতে—আমি তুমি,তুমি আমি।’ধন চলে যায়,সৌন্দর্য বিলীন হয়ে যায়,জীবন দ্রুতগতিতে চলে যায়,শক্তি লোপ পেয়ে যায়,কিন্তু প্রভু চিরদিনই থাকেন—প্রেম চিরদিনই থাকে।
ইচ্ছা শক্তিই জগতকে পরিচালিত করিয়া থাকে।
ঈশ্বরই তাঁহার সন্তানগণকে সমুদ্রগর্ভে রক্ষা করিয়া থাকেন!
তোর দুয়ারে স্বয়ং নারায়ন কাঙ্গালবেশে এসে অনাহারে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে রয়েছেন,তাঁকে না দিয়ে খালি নিজে ও নিজের স্ত্রী পুত্রদেরই নানাপ্রকার চর্ব-চূষ্য দিয়ে পূর্তি করা-সে তো পশুর কাজ।
আপানার ভাল কেবল পরের ভালয় হয়,আপনার মুক্তি এবং ভক্তিও পরের মুক্তি ও ভক্তিতে হয়—তাইতে লেগে যাও,মেতে যাও,উন্মাদ হয়ে যাও। ঠাকুর যেমন তোমাদের ভালবাসতেন,আমি যেমন তোমাদের ভালোবাসি,তোমারা তেমনি জগৎকে ভালবাস দেখি ।
এস,মানুষ হও। নিজেদের সংকীর্ণ গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে গিয়ে দেখ,সব জাতি কেমন উন্নতির পথে চলেছে। তোমরা কি মানুষকে ভালবাসো? তোমরা কি দেশকে ভালবাসো? তাহলে এস,আমরা ভাল হবার জন্য—উন্নত হবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করি।
ধৈর্য,পবিত্রতা ও অধ্যবসায়ের জয় হবে।
নিরাশ হইও না। স্মরণ রাখিও,ভগবান গীতায় বলিতেছেন,‘কর্মে তোমার অধিকার,ফলে নয়।’
দৃঢ়ভাবে কার্য করিয়া যাও,অবিচলিত অধ্যবসায়শীল হও এবং প্রভুর উপর বিশ্বাস রাখো।
Swami Vivekananda Bani In Bengali Language
ধীর,নিস্তব্ধ অথচ দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে। খবরের কাগজে হুজুক করা নয়। সর্বদা মনে রাখবে,নামযশ আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
পবিত্রতা,সহিষ্ণুতা ও অধ্যবসায়—এই তিনটি,সর্বোপরি প্রেম সিদ্ধিলাভের জন্য একান্ত আবশ্যক।
ভগবান যদিও সর্বত্র আছে বটে,কিন্তু তাঁকে আমরা জানতে পারি কেবল মানবচরিত্রের মধ্য দিয়ে।
কারও ওপর হুকুম চালাবার চেষ্টা ক’রো না—যে অপরের সেবা করতে পারে,সেই যথার্থ সর্দার হ’তে পারে।
কার্যক্ষেত্রে অবতরণ কর। কুড়েমির কাজ নয়। ঈর্ষা অহমিকাভাব গঙ্গার জলে জন্মের মতো বিসর্জন দাও ও মহাবলে কাজে লাগিয়া যাও। বাকি প্রভু সব পথ দেখাইয়া দিবেন। মহা বন্যায় সমস্ত পৃথিবী ভাসিয়া যাইবে।
তিনি সকলেরই হৃদয়ে বিরাজ করিতেছেন। যদি দর্পণের উপর ধূলি ও ময়লা থাকে,তবে তাহাতে আমরা
তুমি তোমার কাজ ক’রে যাও,আর মনে রেখো—‘ন হি কল্যাণকৃৎ কশ্চিত দুর্গতিং তাত গচ্ছতি।’
দাদা,এ সব লিখিবার নহে,বলিবার নহে। আমার পত্র অন্য কেউ যেন না পড়ে,তোমরা ছাড়া। হাল ছেড় না,টিপে ধরে থেক—পাকড় ঠিক বটে,তাতে আর ভুল নাই—তবে পারে যাওয়া আজ আর কাল—এই মাত্র। দাদা, leader (নেতা) কি বানাতে পারা যায়?Leader জন্মায়। বুঝতে পারলে কিনা? লিডারি করা আবার বড় শক্ত—দিসস্য দাসঃ,হাজারো লোকের মন যোগানো। Jealousy, selfishness(ঈর্ষা,স্বার্থপরতা ) আদপে থাকবে না—তবে leader.প্রথম by birth (জন্মগত),দ্বিতীয় unselfish(নিঃস্বার্থ ),তবে leader. সব ঠিক হচ্ছে,সদ ঠিক আসবে,তিনি ঠিক জাল ফেলছেন,ঠিক জাল গুটাচ্ছেন—বয়মনুসরামঃ,বয়মনুসরামঃ,প্রীতিঃ পরমসাধনম্ বুঝলে কি না? Love conquers in the long run, দিক্ হলে চলবে না—wait, wait (অপেক্ষা কর,অপেক্ষা কর);সবুরে মেওয়া ফলবেই ফলবে। যোগেনের কথা কিছুই লেখ নাই। রাখাল-রাজা ঘুরে ফিরে পুনর্বৃন্দাবনং গচ্ছেদিতি।…
হে বীরহৃদয় যুবকগণ,তোমরা বিশ্বাস কর যে,তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাকে ভয় পেও না—এমন কি আকাশ থেকে প্রবল বজ্রাঘাত হলেও ভয় পেও না—খাড়া হয়ে ওঠ,ওঠ,কাজ কর।
হে ভ্রাতৃবৃন্দ,আমাদের সকলকেই এখন কঠোর পরিশ্রম করিতে হইবে,এখন ঘুমাইবার সময় নহে। আমাদের কার্যকলাপের উপরই ভারতের ভবিষ্যত নির্ভর করিতেছে ঐ দেখ,ভারতমাতা ধীরে ধীরে নয়ন উন্মীলন করিতেছেন। তিনি কিছুকাল নিদ্রিত ছিলেন মাত্র। উঠ,তাহাকে জাগাও—আর নূতন জাগরনে নূতন প্রাণে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর গৌরবমণ্ডিতা করিয়া ভক্তিভাবে তাঁহাকে তাঁহার শাশ্বত সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত কর।
আমার ধারণা,বেদান্ত —কেবল বেদান্তই সার্বভৌম ধর্ম হইতে পারে,আর কোন ধর্মই নয়।
আমাদের বিশ্বাস—সব প্রাণীই ব্রহ্মস্বরূপ। প্রত্যেক আত্মাই যেন মেঘে ঢাকা সূর্যের মতো;একজনের সঙ্গে আর একজনের তফাত কেবল এই—কোথাও সূর্যের উপর মেঘের আবরণ ঘন,কোথাও এই আবরণ একটু পাতলা;আমাদের বিশ্বাস-জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ইহা সকল ধর্মেরই ভিত্তিস্বরূপ;আর শারীরিক,মানসিক বা আধ্যাত্মিক স্তরে মানবের উন্নতির সমগ্র ইতিহাসের সার কথাটাই এই-এক আত্মাই বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে আপনাকে প্রকাশ করছেন।
আমাদের দেশের শতকরা নব্বই জনই অশিক্ষিত,অথচ কে তাহাদের বিষয় চিন্তা করে?এইসকল বাবুর দল কিংবা তথাকথিত দেশহিতৈষীর দল কি?
আজকাল লোকে ‘যোগ্যতমের উদবর্তন'(Survival of the fittest)—রূপ নূতন মতবাদ লইয়া অনেক কথা বলিয়া থাকে। তাহারা মনে করে—যাহার গায়ের জোর যত বেশী,সেই তত অধিক দিন জীবিত থাকিবে। যদি তাহাই সত্য হইত,তবে প্রাচীনকালের যে-সকল জাতি কেবল অন্যান্য জাতির সহিত যুদ্ধ—বিগ্রহে কাটাইয়াছে,তাহারাই মহাগৌরবের সহিত আজও জীবিত থাকিত এবং এই হিন্দুজাতি,যাহারা অপর একটি জাতিকে জয় করে নাই,তাহারাই এতদিন বিনষ্ট হইয়া যাইত। জনৈকা ইংরেজ মহিলা আমাকে এক সময় বলেন,হিন্দুরা কি করিয়াছে? তাহারা কোন একটা জাতিকেও জয় করিতে পারে নাই! পরন্তু এই জাতি এখনও ত্রিশকোটি প্রাণী লইয়া সদর্পে জীবিত রহিয়াছে! আর ইহা সত্য নহে যে,উহার সমুদয় শক্তি নিঃশেষিত হইয়াছে;ইহাও কখনো সত্য নহে যে,এই জাতির শরীর পুষ্টির অভাবে ক্ষয় পাইতেছে। এই জাতির এখনও যথেষ্ট শক্তি রহিয়াছে। যখনই উপযুক্ত সময় আসে,যখনই প্রয়োজন হয়,তখনই এই জীবনীশক্তি মহাবন্যার মতো প্রবাহিত হইয়া থাকে।
ঈশ্বরের অন্বেষণে কোথায় যাইতেছ? দরিদ্র,দুঃখী,দুর্বল—সকলেই কি তোমার ঈশ্বর নহে? অগ্রে তাহাদের উপাসনা কর না কেন? গঙ্গাতীরে বাস করিয়া কূপ খনন করিতেছ কেন? প্রেমের সর্বশক্তিমত্তায় বিশ্বাস কর।
এই কথা মনে রেখো—দুটো চোখ,দুটো কান,কিন্তু একটা মুখ। উপেক্ষা উপেক্ষা,উপেক্ষা। ‘ন হি কল্যাণকৃৎ কশ্চিৎ দুর্গাতিং তাত গচ্ছতি’।
এই জগতে ধনের সন্ধান করিতে গিয়া তোমাকেই শ্রেষ্ঠ রত্নরূপে পাইয়াছি;হে প্রভু,তোমারই নিকট আমি নিজেকে বলি দিলাম ।’‘ভালবাসার পাত্র খুঁজিতে গিয়া একমাত্র তোমাকেই ভালবাসার পাত্র পাইয়াছি। আমি তোমারই নিকট আমি নিজেকে বলি দিলাম’। (যজুর্বেদ সংহিতা )
সাধুতাই শ্রেষ্ঠ নীতি,এবং পরিণামে ধার্মিক লোকের জয় হইবেই। …বংস,সর্বদা মনে রাখিও আমি যতই ব্যস্ত,যতই দূরে অথবা যত উচ্চপদস্থ লোকের সঙ্গেই থাকি না কেন, আমি সর্বদাই আমার বন্ধুবর্গের প্রত্যেকের, সর্বাপেক্ষা সামান্যপদস্থ ব্যক্তির জন্যও প্রার্থনা করিতেছি এবং তাহাকে স্মরণ রাখিতেছি।
সাবধান! আমাদের মধ্যে যাহাতে কিছুমাত্র অসত্য প্রবেশ না করে। সত্যকে ধরিয়া থাকো,আমার নিশ্চয় কৃতকার্য হইবে। হইতে পারে বিলম্বে,কিন্তু নিশ্চিত কৃতকার্য হইব,এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই। কাজ করিয়া যাও। মনে কর,আমি জীবিত নাই। এই মনে করিয়া কাজে লাগো যেন তোমাদের প্রত্যেকের উপর সমুদয় কাজের ভার। ভাবী পঞ্চাশ শতাব্দী তোমাদের দিকে চাহিয়া আছে। ভারতের ভবিষ্যৎ তোমাদের উপর নির্ভর করিতেছে। কাজ করিয়া যাও ।
কার্যসিদ্ধর জন্য আমার ছেলেদের আগুনে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এখন কেবল কাজ,কাজ,কাজ-বছর কতক বাদে স্থির হয়ে কে কতদূর করলে মিলিয়ে তুলনা ক’রে দেখা যাবে। ধৈর্য’অধ্যবসায় ও পবিত্রতা চাই ।
কি কারণে হিন্দুজাতি তাহার অদ্ভুত বুদ্ধি এবং অন্যান্য গুণাবলী সত্ত্বেও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল? আমি বলি,হিংসা। এই দুর্ভাগা হিন্দুজাতি পরস্পরের প্রতি যেরূপ জঘন্যভাবে ঈর্ষান্বিত এবং পরস্পরের যশখ্যাতিতে যেভাবে হিংসাপরায়ণ,তাহা কোন কালে কোথাও দেখা যায় নাই।
আমার লক্ষ্য কেবল ভেতরের আত্মতত্ত্বের দিকে;সেইটি যদি ঠিক হয়ে যায়,তবে আর সবই ঠিক হয়ে যাবে—এই আমার মত।
আমি চাই,যেন আমাদের মধ্যে কোনরূপ কপটতা,কোনরূপ লুকোচুরি ভাব,কোনরূপ দুষ্টামি না থাকে। আমি বরাবরই প্রভুর উপর নির্ভর করিয়াছি,দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল সত্যের উপর নির্ভর করিয়াছি। আমার বিবেকের উপর এই কলঙ্ক লইয়া যেন মরিতে না হয় যে,আমি নামের জন্য,এমন কি,পরের উপকার করিবার জন্য লোকোচুরি খেলিয়াছি। এক বিন্দু দুর্নীতি,বদ মতলবের একবিন্দু দাগ পর্যন্ত যেন না থাকে ।
কাজ চিরকালই ধীরে ধীরে হয়ে এসেছে,চিরকালই ধীরে হবে;এখন ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ ক’রে শুধু কাজ করেই খুশী থাকো; সর্বোপরি,পবিত্র ও দৃঢ়-চিত্ত হও এবং মনে প্রাণে অকপট হও—ভাবের ঘরে যেন এতটুকু চুরি না থাকে,তা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
পাহাড় যদি মহম্মদের নিকট না যায়,মহম্মদ পাহাড়ের নিকট যাবেন। অর্থাৎ গরীবের ছেলেরা যদি স্কুলে লেখাপড়া শিখতে না পারে,বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের শিখাতে হবে।
পূর্ণত্বলাভের পথ এই যে,নিজে ঐরূপ চেষ্টা করতে হবে এবং অন্যান্য স্ত্রী-পুরুষ যারা সচেষ্ট তাদের যথাশক্তি সাহায্য করতে হবে।
প্রত্যেক দাসজাতির মূল পাপ হচ্ছে ঈর্ষা। আবার এই ঈর্ষা দ্বেষ ও সহযোগিতার অভাবই এই দাসত্বকে চিরস্থায়ী ক’রে রাখে। ভারতের বাইরে না এলে আমার এ মন্তব্যের মর্ম বুঝবে না।
বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণী
প্রত্যেকের আদর্শ ভিন্ন ভিন্ন। ভারতের আদর্শ ধর্মমুখী বা অন্তর্মুখী,পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক বা বহির্মুখী। পাশ্চাত্য এতটুকু আধ্যাত্মিক উন্নতিও সমাজের উন্নতির ভিতর দিয়া করিতে চায়,আর প্রাচ্য এতটুকু সামাজিক শক্তিও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে দিয়া লাভ করিতে চায়।
ভায়া,সব যায়,ওই পোড়া হিংসেটা যায় না। আমাদের ভিতরও খুব আছে। আমাদের জাতের ঐটে দোষ,খালি পরনিন্দা আর পরশ্রীকাতরতা। হাম্বড়া,আর কেউ বড় হবে না।
ভায়া,শক্তি বিনা জগতের উদ্ধার হবে না। আমাদের দেশ সকলের অধম কেন,শক্তিহীন কেন?—শক্তির অবমাননা সেখানে ব’লে।
মন যখন জীবনের উচ্চতম তত্ত্বগুলি সম্বন্ধে চিন্তা করিতে অসমর্থ হয়,তখন ইহা মস্তিস্কের দুর্বলতার নিশ্চিত লক্ষণ বলিয়া জানিতে হইবে।
বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়’নিঃস্বার্থভাবে ভক্তিপূর্ণহৃদয়ে এই সকল প্রশ্নের মীমাংসার জন্য ‘উদ্বোধন’সহৃদয় প্রেমিক বুধমণ্ডলীকে আহ্বান করিতেছে এবং দ্বেষ-বুদ্ধিবিরহিত ও ব্যক্তিগত বা সমাজগত বা সম্প্রদায়গত কুবাক্যপ্রয়োগে বিমুখ হইয়া সকল সম্প্রদায়ের সেবার জন্যই আপনার শরীর অর্পণ করিতেছে।
কার্যে আমাদের অধিকার,ফল প্রভুর হস্তে;আমরা কেবল বলি—হে ওজঃস্বরূপ আমাদিগকে ওজস্বী কর;হে বীর্যস্বরূপ! আমাদিগকে বীর্যবান কর;হে বলস্বরূপ! আমাদিগকে বলবান কর ।
জগতের ইতিহাস হইল –পবিত্র,গম্ভীর,চরিত্রবান্ এবং শ্রদ্ধাসম্পন্ন কয়েকঠ মানুষের ইতিহাস। আমাদের তিনটি বস্তুর প্রয়োজন – অনুভব করিবার হৃদয়,ধরণা করিবার মস্তষ্ক এবং কাজ করিবার হাত।
প্রিয় বাছারা,পিতামাতার চেয়েও তিনি তোমাদের নিকটতর। তোমরা ফুলের মতো পবিত্র ও নির্মল। সেভাবেই থাকো। তাহলেই তিনি নিজেকে প্রকাশ করবেন তোমাদের কাছে।
প্রিয় বৎস! জানিবে,কোন বড় কাজই গুরুতর পরিশ্রম ও কষ্টস্বীকার ব্যতীত হয় নাই।
প্রেমই জীবন—উহাই জীবনের একমাত্র গতিনিয়ামক;স্বার্থপরতাই মৃত্যু,জীবন থাকিতেও ইহা মৃত্যু,আর দেহাবসানেও এই স্বার্থপরতাই প্রকৃত মৃত্যুস্বরূপ।
মানুষ যত প্রকার জ্ঞানলাভ করিয়াছে,সবই মন হইতে। জগতের অনন্ত পুস্তকাগার তোমারই মনে। বহির্জগৎ কেবল তোমার নিজ মনকে অধ্যয়ন করিবার উত্তেজক কারণ-উপলক্ষ্য মাত্র।
মেয়ে-মদ্দ দুই চাই,আত্মাতে মেয়েপুরুষের ভেদ নাই। তাঁকে অবতার বললেই হয় না-শক্তি বাকাশ চাই। হাজার হাজার পুরুষ চাই,স্ত্রী চাই—যারা আগুনের মতো হিমাচল থেকে কন্যাকুমারী—উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু,দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়বে। ছেলেখেলার কাজ নেই—ছেলেখেলার সময় নেই—যারা ছেলেখেলা করতে চায়,তফাত হও এই বেলা;নইলে মহা আপদ তাদের। Organization (সংঘ) চাই—কুড়েমি দূর ক’রে দাও,ছড়াও,ছড়াও;আগুনের মতো যাও সব জায়গায়। আমার উপর ভরসা রেখো না,আমি মরি বাঁচি,তোমরা ছড়াও,ছড়াও।
যে সন্ন্যাসীর অন্তরে অপরের কল্যাণ-সাধন-স্পৃহা বর্তমান নাই,সে সন্ন্যাসীই নহে—সে তো পশুমাত্র!
যেখানে কোন বোধ চেতনা বা অনুভূতি আছে,সেখানে শব্দ নিশ্চয়ই আছে।
শতকরা নব্বই জন নরপশুই মৃত,প্রেততুল্য;কারণ হে যুবকবৃন্দ,যাহার হৃদয়ে প্রেম নাই,সে মৃত ছাড়া আর কি?
সমগ্র জগতের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখতে পাবে,মহাপুরুষগণ চিরকাল বড় বড় স্বার্থত্যাগ করেছেন,আর সাধারণ লোক তার সুফল ভোগ করেছে।
সহিষ্ণুতা অবলম্বন কর এবং কাজ করিয়া যাও। ‘উদ্ধরেদাত্মনাত্মানম্’।
স্বাধীনতাই উন্নতির প্রথম শর্ত। যেমন মানুষের চিন্তা করিবার ও কথা বলিবার স্বাধীনতা থাকা আবশ্যক,তেমনি তাহার আহার পোশাক বিবাহ ও অন্যান্য সকল বিষয়েই স্বাধীনতা প্রয়োজন—তবে এই স্বাধীনতা। যেন অপর কাহারও অনিষ্ঠ না করে।
হামবড়া বা দলাদলি বা ঈর্ষা একেবারে জন্মের মতো বিদায় করিতে হইবে। পৃথিবীর ন্যায় সর্বংসহ হইতে হইবে;এইটি যদি পারো,দুনিয়া তোমাদের পায়ের তলায় আসিবে।
স্বামী বিবেকানন্দ বাণী বাংলা
হে বৎস,যথার্থ ভালবাসা কখনও বিফল হয় না। আজই হউক,কালই হউক,শত শত যুগ পরেই হউক,সত্যের জয় হইবেই, প্রেমের জয় হইবেই।
তোমরা যদি আমার সন্তান হও,তবে তোমার কিছুই ভয় করবে না,কিছুতেই তোমাদের গতিরোধ করতে পারবে না। তোমারা সিংহতুল্য হবে। ভারতকে—সমগ্র জগৎকে জাগাতে হবে। এ না করলে চলবে না,কাপুরুষতা চলবে না—বুঝলে? মৃত্যু পর্যন্ত অবিচলিতভাবে লেগে পড়ে থেকে আমি যেমন দেখাচ্ছি,ক’রে যেতে হবে—তবে তোমার সিদ্ধি নিশ্চিত ।
ভগবানে বিশ্বাস রাখো। কোন চালাকির প্রয়োজন নাই;চালাকি দ্বারা কিছুই হয় না।
যদি তুমি পবিত্র হও,যদি তুমি বলবান্ হও,তাহা হইলে তুমি একাই সমগ্র জগতের সমকক্ষ হইতে পারিবে।
যে অপরকে স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়,সে কোনমতেই স্বাধীনতা পাইবার যোগ্য নহে। দাসেরা শক্তি চায় অপরকে দাস করিয়া রাখিবার জন্য।
অলৌকিক ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করতে পারলেই তো আর ধর্মের সত্যতা প্রমাণিত হয় না—জড়ের দ্বারা তো আর চৈতন্যের প্রমাণ হয় না। ঈশ্বর বা আত্মার অস্তিত্ব বা অমরত্বের সঙ্গে অলৌকিক ক্রিয়ার কি সম্বন্ধ?
আপনারা ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্য হয়তো একটি মূর্তির অবতারণা করতে পারেন । কিন্তু জেনে রাখুন,তাঁহাকে উপাসনা করার জন্য এর চেয়ে ভাল মূর্তি যা আগে থেকেই রয়েছে,তা হল জীবন্ত মানুষ ।
এই জগতে একজন ঈশ্বর আছেন। ইহা সত্য নয় যে, জগৎ স্রোতে ভাসিয়া চলিয়াছে এবং তোমার বা আমার সাহায্যের অপেক্ষায় রহিয়াছে। ঈশ্বর জগতে সর্বদাই বর্তমান। তিনি অবিনাশী,নিয়ত-ক্রিয়াশীল। জীবনে-মরণে,সুখে-দুঃখে-সকল অবস্থাতেই সমুদয় জগৎ ঈশ্বরপূর্ণঃ কেবল নয়ন উন্মীলন করিয়া তাঁহাকে দর্শন কর।
পরোপকারই ধর্ম,পরপীড়নই পাপ। শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম,দুর্বলতা ও কাপুরুষতাই পাপ। অপরকে ভালোবাসাই ধর্ম, অপরকে ঘৃণা করাই পাপ। ঈশ্বর ও নিজ আত্মাতে বিশ্বাসই ধর্ম,সন্দেহই পাপ।
আদান-প্রদানই প্রকৃতির নিয়ম;ভারতের যদি আবার উঠিতে হয়,তবে তাহাকে নিজ ঐশ্বর্য-ভান্ডার উন্মুক্ত করিয়া পৃথিবীর সমুদয় জাতির ভিতর ছড়াইয়া দিতে হইবে এবং পরিবর্তে অপরে যাহা কিছু দেয়,তাহাই গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে ।
আমাদিগকে বড়বড় কাজ করিতে হইবে,অদ্ভুত শক্তির বিকাশ দেখাইতে হইবে,অপর জাতিকে অনেক বিষয় শিখাইতে হইবে। দর্শন ধর্ম বা নীতিবিজ্ঞানই বলুন অথবা মধুরতা কোমলতা বা মানবজাতির প্রতি অকপট প্রীতিরূপ সদ্গুনরাজিই বলুন, আমাদের মাতৃভূমি এ-সব কিছুরই প্রসূতি। এখনও ভারতে এইগুলি বিদ্যমান আছে আর পৃথিবী সম্বন্ধে যতটুকু অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি, তাহাতে আমি এখন দৃঢ়ভাবে সাহসের সহিত বলিতে পারি,এখনও ভারত এই সকল বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই আশ্চর্য ব্যাপারটি লক্ষ্য করিয়া দেখুন।
আমাদের জাতীয় জীবন অতীতকালে মহৎ ছিল,তাহাতে সন্দেহ নাই,কিন্তু আমি অকপটভাবে বিশ্বাস করি যে,আমাদের ভবিষ্যত আরও গৌরবান্বিত।
আমাদের দেশের লোকের না আছে ভাব,না আছে সমাদর করিবার ক্ষমতা। পরন্তু সহস্র বৎসরের পরাধীনতার ফলে উৎকট পরশ্রীকাতরতা ও সন্দিগ্ধ প্রকৃতির বশে ইহারা যে-কোন নূতন ভাবধারারই বিরোধী হইয়া উঠে।
আমাদের মতো কূপমণ্ডক তো দুনিয়ায় নাই। কোন একটা নূতন জিনিস কোন দেশ থেকে আসুক দিকি,আমেরিকা সকলের আগে নেবে। আর আমরা? ‘আমাদের মতো দুনিয়ায় কেউ নেই,‘আর্য’বংশ!!!’কোথায় বংশ তা জানি না!…এক লাখ লোকের দাবানিতে ৩০০ মিলিয়ান (ত্রিশ কোটি) কুকুরের মত ঘোরে,আর তারা ‘আর্যবংশ’!!!
একটা পুরানো গল্প শোন। একটা লোক রাস্তা চলতে চলতে একটা বুড়োকে তার দরজার গোড়ায় বসে থাকতে দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে—‘ভাই,অমুক গ্রামটা এখান থেকে কতদূর? ‘বুড়োটা কোন জবাব দিলে না। তখন পথিক বার বার জিজ্ঞাসা করেত লাগলো,কিক্ত বুড়ো তবু চুপ ক’রে রইল। পথিক তখন বিরক্ত হয়ে আবার রাস্তায় গিয়ে চলবার উদ্যেগ করলে। তখন বুড়ো দাঁড়িয়ে উঠে পথিককে সম্বোধন ক’রে বললে,‘আপনি অমুক গ্রামটার কথা জিজ্ঞাসা করছিলেন—সেটা এই মাইল-খানেক হবে।’তখন পথিক তাকে বললে,’তোমাকে এই একটু আগে কতবার ধরে জিজ্ঞাসা করলাম,তখন তো তুমি একটা কথাও কইলে না—এখন যে ব’লছ,ব্যাপারখানা কি ?’তখন বুড়ো বললে,’ঠিক কথা। কিন্তু প্রথম যখন জিজ্ঞাসা করছিলেন,তখন চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলেন,আপনার যে যাবার ইচ্ছে আছে,ভাব দেখে তা বোধ হচ্ছিল না—এখন হাঁটতে আরম্ভ করেছেন,তাই আপনাকে বললাম।’
হে বৎস,এই গল্পটা মনে রেখো। কাজ আরম্ভ ক’রে দাও,বাকি সব আপনা-আপনি হয়ে যাবে।
এদেশে (আমেরিকা) কেহ যদি উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে থাকে তবে সকলের তাহার সহায়তা করিতে প্রস্তুত। আর ভারতবর্ষে কাল যদি কোন একটি পএিকায় আপনি আমার প্রশংসা করিয়া এক ছাত্র লেখেন,তবে পরদিন দেশসুদ্ধ সকলে আমার বিপক্ষে দাঁড়াইবে । ইহার হেতু কি ? হেতু-দাসসুলভ মনোবৃত্তি । নিজেদের মধ্যে কেহ সাধারণ স্তর হইতে একটু মাথা উঁচু করিয়া দাঁড়াইবে,ইহা তাহাদের পক্ষে অসহ্য ।
আমরা মানব জাতিকে সেই স্থানে লইয়া যাইতে চাই;যেখানে বেদ বাইবেল কোরআন নাই;অথচ বেদ বাইবেল কোরআন সমন্বয়ে গঠিত।
শিক্ষা সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী
মানুষ যত প্রকার জ্ঞানলাভ করিয়াছে,সবই মন হইতে। জগতের অনন্ত পুস্তকাগার তোমারই মনে। বহির্জগৎ কেবল তোমার নিজ মনকে অধ্যয়ন করিবার উত্তেজক কারণ-উপলক্ষ্য মাত্র।
চরিত্র গঠনের জন্য ধীর ও অবিচলিত যত্ন,এবং সত্যোপব্ধির জন্য তীব্র প্রচেষ্টাই কেবল মানব জাতির ভবিষৎ জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করিতে পারে।
-স্বামী বিবেকানন্দ
নিজেদের বিপদ থেকে টেনে তোলো! তোমার উদ্ধার-সাধন তোমাকেই করতে হবে।…ভীত হয়ো না। বারবার বিফল হয়েছো বলো নিরাশ হয়ো না। কাল সীমাহীন,অগ্রসর হতে থাকো,বারবার তোমার শক্তি প্রকাশ করতে থাকো,আলোক আসবেই।
দর্শনবর্জিত ধর্ম কুসংস্কারে গিয়ে দাঁড়ায়,আবার ধর্মবর্জিত দর্শন শুধু নাস্তিকতায় পরিণত হয়। আমাদের নিম্নশ্রেণীর জন্য কর্তব্য এই,কেবল তাহাদিগকে শিক্ষা দেওয়া এবং তাহাদের বিনষ্টপ্রায় ব্যক্তিত্ববোধ জাগাইয়া তোলা।
স্বামী বিবেকানন্দ
অসংযত ও উচ্ছৃঙ্খল মন আামাদের নিয়ত নিম্ন থেকে নিম্নতর স্তরে নিয়ে যাবে এবং চরমে আমাদের বিধ্বস্ত করবে,ধ্বংস করবে। আর সংযত ও সুনিয়ন্ত্রিত মন আমাদের রক্ষা করবে,মুক্তিদান করবে।
মানুষ মূর্খের মত মনে করে,স্বার্থপর উপায়ে সে নিজেকে সুখী করিতে পারে। বহুকাল চেষ্টার পর অবশেষে বুঝিতে পারে-প্রকৃত সুখ স্বার্থরতার নাশে এবং সে নিজে ব্যতীত অপর কেহই তাহাকে সুখী করিতে পারে না।
আপানার ভাল কেবল পরের ভালয় হয়,আপনার মুক্তি এবং ভক্তিও পরের মুক্তি ও ভক্তিতে হয় -তাইতে লেগে যাও,মেতে যাও,উন্মাদ হয়ে যাও। ঠাকুর যেমন তোমাদের ভালোবাসতেন,আমি যেমন তোমাদের ভালোবাসি,তোমারা তেমনি জগৎকে ভালোবাস দেখি।
মনে করিও না,তোমরা দরিদ্র। অর্থই বল নহে;সাধুতাই-পবিত্রতাই বল। আসিয়া দেখ,সমগ্র জগতে ইহাই প্রকৃত বল কি না।
যদি শাসন করতে চাও,সকলের গোলাম হয়ে যাও। এই হ’ল আসল রহস্য। কথাগুলি রুক্ষ হলেও ভালবাসায় ফল হবেই। যে-কোন ভাষার আবরণেই থাকুক না কেন,ভালবাসা মানুষ আপনা হতেই বুঝতে পারে ।
যতদিন তোমরা পরস্পরের উপর ভেদবুদ্ধি না করিবে,ততদিন প্রভুর কৃপায়’রণে বনে র্পবত-মস্তকে বা’তোমাদের কোনও ভয় নাই। ‘শ্রেয়াংসি বহুবিঘ্নানি’,ইহা তো হইবেই। অতি গম্ভীর বুদ্ধি ধারণ কর। বালবুদ্ধি জীবে কে বা কি বলিতেছে,তাহার খবরমাত্রও লইবে না । উপেক্ষা,উপেক্ষা,উপেক্ষা ইতি।
যদি ভাল চাও তো ঘণ্টাফণ্টাগুলোকে গঙ্গার জলে সঁপে দিয়ে সাক্ষাৎ ভগবান নর-নারায়ণের—মানবদেহধারী হরেক মানুষের পূজো করগে—বিরাট আর স্বরাট। বিরাট রূপ এই জগৎ,তার পূজো মানে তার সেবা—এর নাম কর্ম;ঘণ্টার উপর চামর চড়ানো নয়,আর ভাতের থালা সামনে ধরে দশ মিনিট ব’সব কি আধ ঘণ্টা ব’সব—এ বিচারের নাম ‘কর্ম নয়,ওর নাম পাগলা-গারদ। ক্রোর টাকা খরচ ক’রে কাশী বৃন্দাবনের ঠাকুরঘরের দরজা খুলছে আর পড়ছে। এই ঠাকুর কাপড় ছাড়ছেন, তো এই ঠাকুর ভাত খাচ্ছেন,তো এই ঠাকুর আঁটকুড়ির বেটাদের গুষ্টির পিণ্ডি করছেন;এদিকে জ্যান্ত ঠাকুর অন্ন বিনা,বিদ্যা বিনা,মরে যাচ্ছে। বোম্বায়ের বেনেগুলো ছারপোকার হাসপাতাল বানাচ্ছে—মানুষগুলো মরে যাক। তোমাদের বুদ্ধি নাই যে, এ কথা বুঝিস—আমাদের দেশের মহা ব্যারাম—পাগলা-গারদ দেশ-ময়।….
স্বামী বিবেকানন্দের এই মহা মূল্যবান বাণীগুলি আপনার নিশ্চই ভালো লেগেছে ? ভালো লাগলে প্রিয়জন আর বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।
ভালো থাকুন …
Thank you, Visit Again…
Tags – Bangla Bani, Swami Vivekananda, Bengali Bani