– নীল, এই নীল দাড়া।
.
মেয়েলী কণ্ঠে নিজের নামটা শুনে পিছন ফিরে তাকালাম। একটা অপরিচিত মেয়ে এগিয়ে আসছে
আমারই দিকে। বয়স আনুমানিক ২৬-২৭ হবে। পরনে শাড়ি, রঙটা ঠিক আন্দাজ করতে পারলাম না।
এই বিষয়ে আমি বরাবরই অজ্ঞতার পরিচয় দিই।
.
– কি রে কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোকে, শুনতে পাস না নাকি?
.
কাছে এসেই হাফাতে হাফাতে বললো মেয়েটা। আমি একবার ভালো করে পরখ করে নিলাম। নাহ্
চেনা পরিচিত বলে তো মনে হচ্ছে না। আগে যে কখনো দেখেছি তেমনটাও মনে হচ্ছে না। বেশ
খানিকটা আমতা আমতা করেই বললাম,
.
– আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।
.
– সে কী রে, এর মধ্যেই ভুলে গেলি? আমি…….
.
কথাটা শেষ না করেই আটকে গেল মেয়েটা। তারপর আমার দিকে কড়া নজরে একবার তাকিয়ে
বললো,
.
– সত্যিই চিনতে পারছিস না? নাকি আমাকে এড়িয়ে চলছিস, কোনটা?
.
– এড়িয়ে চলবো কেন? সত্যিই চিনতে পারছি না।
.
– ওহ, আমি মৌমিতা। এবার চিনতে পারছিস নাকি তবুও পারিসনি?
.
– মৌমিতা! একি হাল তোর? রোগা পটকা চেহারার বদলে তো ছোট খাটো একটা হাতিতে পরিনত
হয়েছিস। তারপর বল দিন কাল কেমন কাটছে?
.
– ভালো, তোর কী খবর?
.
– আমার চলে যাচ্ছে।
.
– কলেজ থেকে চলে যাওয়ার পর কারও সাথেই যোগাযোগ রাখা হয়নি। মাঝখানে দেশের বাইরে
ছিলাম। আর বিয়ের খবর তো জানিসই তোরা।
.
– হুমম সে তো কলেজে থাকতেই হয়েছে। তা এইদিকে? কাজে নাকি?
.
– ঠিক কাজে না আবার কাজও বলতে পারিস, ঢাকা শহরে আর মন টিকে না বুঝলি, তাই সেজুর
আব্বু চাচ্ছিলো ঢাকা শহরের মধ্যেই কোনো নিরিবিলি জায়গায় বাসা নিতে। সে জন্যই
এসেছিলাম। হঠাৎ তোকে দেখতে পেলাম। তাই ডাক দিলাম।
.
– বাব্বাহ এর মধ্যে মেয়েও হয়েছে দেখছি? তা তোর স্বামীকে দেখছি না তো। চলে গেছে
নাকি?
.
– নাহ্, যায়নি।
তারপর পিছনে তাকালো মৌমিতা, তারপর এতটা লোককে দেখিয়ে বললো,
.
– ঐ তো আসছে।
আরো পড়ুন,
যদিও ইচ্ছে ছিলো কিন্তু তবুও বললাম,
.
– আজ থাক না, তোরা তো এখানেই উঠবি বললি, তখন না হয় হবে।
.
– এই মৌমিতা ধরো তো, যেন পালাতে না পারে। আজকে আমাদের সাথে আড্ডা দিবে তারপর
একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে তবেই ছুটি।
.
মিজান সাহেব কথাটা বলতেই মৌমিতা খপ করে আমার হাতটা চেপে ধরলো, তারপর টানতে টানতে
একটা বেঞ্চের কাছে নিয়ে গিয়ে বসলো। প্রথমে ভেবেছিলাম মৌমিতার এমন অাচরণে মিজান
সাহেব হয়তো আপত্তি করবে, কিন্তু ওনার মুখের দিকে তাকাতেই সে কথা মন থেকে মুছে
গেল। দেখলাম তিনিই এতে বেশি আনন্দ পেয়েছে। আসলেই এমন স্বামী পাওয়া খুব বড় ভাগ্যের
ব্যাপার। সম্পর্কে থাকা চাই বিশ্বাস, সন্দেহ প্রবণ হলে সে সম্পর্ক খুব বেশি দিন
টিকে না।
.
বেঞ্চে বসতেই মিজান সাহেব কোলের মেয়েটাকে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
.
– কেমন বন্ধু আপনি হু? বান্ধবীর মেয়েটাকে একবার কোলেও নিলেন না।
.
– বাদ দেও তো, ও আগের থেকেই এমন। বাদর একটা।
.
মৌমিতা বাচ্চাটাকে আমার কোল থেকে নিতে নিতে বললো,
.
– এই কয় বছরে কত কিছু বদলে গেছে তাই না?
.
– কী কী বদলে গেছে তা তো বলতে পারি না তবে তুই রোগা পটকা থেকে হাতিতে পরিনত
হয়েছিস। শুধু আমি কেন আমাদের ব্যাচের কেউই তোকে চিনতে পারবে বলে তো মনে হয় না।
.
আমার কথাটা শুনে মিজান সাহেব হো হো করে হাসলেন। তারপর হাসতে হাসতে বললেন,
.
– আর বলবেন না, আমি যখন বিয়ের ফটোগুলো বের করে দেখি তখন ভাবি এই মেয়েটাকেই বিয়ে
করেছিলাম? নাকি সে অন্য কেউ ছিলো।
.
– খুব শখ না? তো যাও না আরেকটা বিয়ে করো গিয়ে। যত্তসব।
.
– এই যে দেখছেন? কিছু যেন বলায় যাবে না, বললেই ফুলে উঠবে। আচ্ছা আপনারা একে সহ্য
করতেন কীভাবে বলেন তো?
.
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক সেই সময়ই মৌমিতা খেকিয়ে উঠলো। তারপর বললো,
.
– ও তাই না? এখন তো আমাকে সহ্য হবেই না, পুরোনো হয়ে গেছি তো।
.
তারপর নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ চললো মৌখিক যুদ্ধ। এটাও যেন ভালোবাসারই একটা
অংশ। ওদের কথার মধ্যে আমি আর কিছু বললাম না। এক দৃষ্টিতে মৌমিতার কোলের বাচ্চাটার
দিকে তাকিয়ে আছি। বাচ্চাটাও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অাছে।
.
– কী শুরু করলে বলো তো? এতদিন পর বন্ধুকে কাছে পেয়েছো। কোথায় একটু খোজ খবর নিবে
তা নয় আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলে?
.
ওদের কথারর এক পর্যায়ে মিজান সাহেব বললেন কথাটা।
.
– তা হ্যাঁ রে নীল, বউ কেমন আছে? আর থাকিস কোথায়? কিছুই তো বলছিস না।
.
-থাকি এখানেই, আর বিয়ে এখনো করা হয়নি, বাসা থেকে মেয়ে দেখছে।
.
– তা কবে বিয়ে করবি শুনি? বুড়ো হলে?
.
উত্তর না দিয়ে একটু হাসলাম। তারপর মৌমিতা আর আমি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু
করলাম। কথা তেমন কিছুই নয়। সবই পুরোনো দিনের কথা। কলেজের বন্ধুরা কে কী করছে,
তারা এখন কোথায়। আমার সাথে দেখা সক্ষাৎ হয় নাকি। ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে মিজান
সাহেব বললেন,
.
– আপনারা কথা বলুন, আমার একটা কল এসেছে। জরুরি না হলে ধরতাম না। এখনই আসছি।
.
কথাটা বলেই কানে ফোন ধরে একটু দুরে সরে গেলেন মিজান সাহেব। তারপর আরও বেশ
কিছুক্ষণ আমার আর মৌমিতার কথা চললো। এর মধ্যে মিজান সাহেবও ফিরে এসেছেন। ঠিক হলো
কোনো হোটেলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করবো। আপত্তি করে লাভ নেই, কারণ মৌমিতার থেকে মিজান
সাহেবই ধরে বসলো বেশি। তাই বাধ্যে হয়ে একটা হোটেলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া সারতে
হলো।
.
হোটেল থেকে বের হওয়ার একটু পর বললাম,
.
-আজ তাহলে আসি রে। আবার দেখা হবে। আর হ্যাঁ, কোথায় উঠলি সেটা জানাস। সব বন্ধু
বান্ধব মিলে যাবো একদিন।
.
– সে কী? এখনই চলে যাবি? আর গেলে আবার তোকে পাবো কোথায়? তুই এক কাজ কর, বাসায়
চল।
.
– না রে আজ আর না, অন্যদিন হবে।
.
– উহু এমনটা বললে তো হবে না। আজকে কথা দিতে হবে যে আপনি আসবেনই। না হলে আপনাকে
ছাড়া যাবে না। কি বলো মৌমিতা?
.
– হ্যাঁ, একদম।।
.
মিজান সাহেবের কথায় একমত পোষণ করলো মৌমিতা। তাই বাধ্য হয়ে কথা দিতেই হলো। তারপর
মিজান সাহেব বললেন,
.
– আপনার ফোন নাম্বারটা দেন। না হলে যোগাযোগ করবো কীভাবে?
.
নাম্বার আদান প্রদান শেষে, বিদায় নিলাম। সত্যিই মৌমিতা খুবই ভাগ্যবান। তা না হলে
এমন একজন স্বামী কী সহজে জোটে?
.
বাসায় এসে ফ্রেস হতে যাবো ঠিক তখনই মোবাইলটা বেজে উঠলো। মিজান সাহেবের নামটা
স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপার থেকে ভেসে আসলো।
.
– বাসায় কী পৌছে গেছেন? মৌমিতা খোজ নিতে বললো।
.
কথাটা শুনেই অবাক হয়ে গেলাম। এ কণ্ঠ তো কিছুক্ষণ আগের কণ্ঠ না। এই কণ্ঠে যেন বিষে
ধরা। কেউ যদি রাগে গজগজ করতে করতে কিছু বলে ঠিক তেমনটা।
.
– হ্যাঁ মাত্রই আসলাম।
.
– ভালো। আর হ্যাঁ, এটাই যেন আপনাদের শেষ দেখা হয়। এবার থেকে দেখা হলেও কথা বলবেন
না। কথাটা যেন মনে থাকে। আর মৌমিতাও যেন কিছু জানতে না পারে। তখন মৌমিতা ছিলো বলে
কিছু বলতে পারিনি।
.
রাগী কণ্ঠটা চেপে ধরে কথাগুলো বললেন মিজান সাহেব। তারপর ফোনটা কেটে গেল ওপাশ
থেকে।
.
মোবাইলটা বিছানার উপর রেখে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক চিরে। আসলেই মানুষ
বড়ই অদ্ভুত জীব। আর তার থেকেও বেশি অদ্ভুত মুখোশধারী লোকজন। তাদের বোঝার কোনো
উপায়ই নেই।
আরো পড়ুন
,
বয়ফ্রেন্ড টু বিয়ের পিঁড়ি</a ></span ></span >
Tags –
Bengali New Story 2021</a >,</b >
Bangla Golpo</a ></b >