আদরটা শেষ হয়ে যাবে এতো তাড়াতাড়ি ভাবতে পারেনি ইতালীয় ওই দম্পতি । বুকে ছিলো তাদের দ্য ভিঞ্চিয় প্রেম । কিন্তু করোনার বোল্ড লেটার যে ইতালিকসকে এত সহজে নুইয়ে দেবে তা কে জানতো ?
লরেঞ্জো লুসিয়ার প্রেমে পড়েছিলো মেডিক্যাল কলেজে পড়াকালীন । মিলানের মেয়ে লুসিয়া লিখতো অসাধারণ কবিতা । লুসিয়া আঁকতে ভালোবাসতো । শবচ্ছেদ করতে করতে গা গুলিয়ে একদিন লুসিয়া বাথরুম এগোয় ।
বেরোনোর পর প্যাসেজে বসে থাকা লরেঞ্জোকে দেখলো লুসিয়া । একটা এ ফোর কাগজে একটা ছবি আঁকছে । ভালো করে দেখতে দেখতে লুসিয়া বোঝে ছবিটা মিলানের ওই ইউনিভার্সিটিরই ছবি ।
” ওয়াও লরেঞ্জো , ওয়াট এ বিউটিফুল স্কেচ ! ইউ হ্যাভ ব্রট আওয়ার ইউনিভার্সিটি টু লাইফ ইন ইওর স্কেচ । “
” ও লুসিয়া ! নো নো আ টাইমপাস ওনলি । ডোনট হ্যাভ এ ক্লাস নাও হেন্স … বাট ইউ হিয়ার … ? “
” ও লরেঞ্জো ! ওয়াট এ পিকিউলিয়ার এক্সপিরিয়েন্স ইট ওয়াজ টু টেস্ট আ কর্পস ! ইউ হ্যাভ ক্রসড দিস লাইনস বাট ইটস ওনলি দি স্টার্ট ফর মি ! “
” মি টু ওয়াজ টু মাচ ফ্রাইটেন্ড টু টেস্ট দ্য সেম । ইউ উইল বি স্লোলি অ্যাকাস্টমড টু ইট । “
ব্যস ওই শুরু । ক্রমে অন্তিম বর্ষের এম্.বি.বি.এস স্টুডেন্ট লরেঞ্জো ও লুসিয়ার প্রেম এগোতে থাকে । উচ্চশিক্ষায় থাকাকালীন একদা দুজনের চার্চসম্মত বিবাহ সম্পন্ন হলো ।
লুসিয়া পিডিয়াট্রিশান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে । আর পালমোনোলজিস্ট হিসেবে খ্যাতি বেড়েছে লরেঞ্জোর ।
২০২০ সাল ১০ই মার্চ :
একের পর এক করোনা রোগী আসতে চলেছে নার্সিংহোমে । হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন মিলানের এই প্রসিদ্ধ নার্সিংহোমে । থার্ড স্টেজ এসে গেছে , লোকে শোনেনি সতর্কবাণী ।
আই.সি.ইউয়ের এপার ওপার মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো এক দুবার লরেঞ্জো ও লুসিয়া । ফের লেগে পড়লো সেবায় ।
১৬ ই মার্চ :
যমরাজ রুদ্ধশ্বাসে তাঁর রথ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন ইতালি জুড়ে । হাজারে হাজারে মারা যাচ্ছে লোক ।
থার্ড স্টেজের মারণকোপ ভয়ঙ্কর হবে অনেক বিশেষজ্ঞ সাবধান করেছিলেন কিন্তু শোনেনি কেউ ।
১৮ ই মার্চ :
সেবা করাকালীন লুসিয়া একনাগাড়ে কাশতে লাগলেন । অসম্ভব জ্বরে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন । লরেঞ্জো দ্রুত সেদিকে গিয়ে লুসিয়াকে এমার্জেন্সীতে নিয়ে যায় । ধরা পরে করোনা । ওই রাত্রি থেকেই নিঃশ্বাসের কষ্ট ও জ্বরে পড়লো লরেঞ্জো । দুটোদিন চিকিৎসায় ছিলো ।
এদিকে গণকবর খোঁড়া শুরু হয়েছে । জানলা , বারান্দা থেকে হাত বাড়িয়ে কাঁদছেন মা , বউ , বাচ্চা ।
২০ শে মার্চ :
জীবনের দিক দিয়ে যখন আশা বলতে কিছু বাকি নেই তখন লরেঞ্জো ধুঁকতে ধুঁকতে বিছানা থেকে উঠে লুসিয়াকে টেনে তুললো । গোটা হল ভর্তি করোনা আক্রান্ত । মাস্ক খুলে একে অপরের ঠোঁট স্পর্শ করলো লুসিয়া ও লরেঞ্জো । জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । ঘর জুড়ে হাততালি । পাঁচ মিনিট পর সব স্তব্ধ । দুজনে ঘরের মধ্যেই লুটিয়ে পড়লো ।
আর ১ টি ঘন্টা কাতরাতে কাতরাতে , হাতে হাত রেখে পাশাপাশি বিছানায় গণকবরে যেতে প্রস্তুত হলো দুই করোনা আক্রান্ত ।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে হারিয়ে গেল ভালোবাসার দুটো প্রাণ । এই লেখাটি আসলে কোন গল্প নয় , ইটালির দুজন ডাক্তার যারা নিজেদের শেষদিন অব্দি রোগীদের চিকিৎসা করেছেন , তাদের ভালোবাসার বাস্তব গল্প কথা ….