.
স্বানন্দলোক পত্রিকার পুরানো সংস্করণখানি যত্ন সহকারে পড়ছিলেন শ্রেয়সী চক্রবর্তী..
সাত নম্বর পাতার একটি ছবিতে,আটকে গেলো নিমজ্জিত দৃষ্টি…
হার্টথ্রব প্রীতম ব্যানার্জির বোতাম খোলা বুকে হটফেভারিট শ্রেয়সীর উষ্ণ চুম্বনের একটি পাগলকরা ছবি…
ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র,”অন্তরতম’ থেকে নেওয়া একটি রোম্যান্টিক সিনের ক্লিক…ছবিটিকে আশ্রয় করে,পত্রিকার সাংবাদিক তুলে ধরেছেন তৎকালীন জুটির কিছু অজানা রসায়ণ,সাথে রয়েছে তাদের রীল ও রিয়েল লাইফের কিছু চমকপ্রদ তথ্য..
বড়পর্দার বাইরেও তাদের বাস্তব জীবনের একে অন্যের প্রতি দুর্বলতা,অত্যন্ত নিপুণতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে প্রচ্ছদে ..
মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠলো শ্রেয়সী চক্রবর্তীর ঠোঁটে…
গরম কফিতে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে,ওল্টালেন পরের পাতা..
জনপ্রিয় মেগাহিট ছবি “তোর সাথে”থেকে নেওয়া একটি বোল্ড দৃশ্যের ক্লিক..
বৃষ্টি ভেজা খোলা চুলে সিজলিং শ্রেয়সী’কে কোলে তুলে, ধারালো দৃষ্টি’তে নায়ক প্রীতম..
এই পাতায় তুলে ধরা হয়েছে,তাদের স্বাবলীল, ন্যাচারাল অভিনয় শৈলীর বৈশিষ্ট ..
তৎকালীন দর্শকের গুরুভাগ নাকি এই জুটি ছাড়া সিনেমার কথা ভাবতেই পারতেননা !..
****************************************************
—“ম্যাডাম ! আপনি রেডি’তো ? হিরোর এন্ট্রি’র সিন’টা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে,”..
সহকারী পরিচালক মহাশয়ের উচ্চস্বরে ছন্দপতন ঘটলো যেনো অনেকটা..
অভিনেত্রী শ্রেয়সী,একগাল অভিনীত হাসি, ঠোঁটে সাজিয়ে বললেন :
–” হ্যাঁ ভাই ! “
নাজানি কেন, ম্যাগাজিন’খানি পড়তে ভীষণ ভালো লাগছিলো শ্রেয়সীর,,মনের ওজন হঠাৎ করে বোধয় অনেকটাই হালকা হয়ে গিয়েছিলো তার..
চোখের চশমা’টা নাকের উপর জায়গামতো সরিয়ে,চটপট পাল্টালেন পত্রিকার পরবর্তী পাতা..
লেখাগুলি পড়তে গিয়ে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাডাম শ্রেয়সী,,
এই পাতায় বর্ণিত রয়েছে একে অন্য’কে ছাড়া প্রীতম-শ্রেয়সীর একদা জনপ্রিয় জুটি কিভাবে অসম্পূর্ন ছিল .
কোনো এক অজ্ঞাত কারণে স্বল্প সময়ের জন্য ভেঙে গিয়েছিলো এই জুটি..
মুম্বাইয়ের লাস্যময়ী নায়িকা অনিমা’র সাথে জোট বেঁধে,প্রীতমের বড়ো বাজেটের ছায়াছবি
‘আমরা প্রেমী’ মুক্তি পেলো,,
এদিকে রেষারেষি’তে শ্রেয়সী-করণের রোম্যান্টিক থ্রিলার “কাতিলানা”ও মুক্তি পেলো তার কিছু মাস পর’ই..
পাবলিক মিডিয়াতে বিস্তর জল্পনা ডানা মেলেছিল এই’দুটি প্রজেক্ট’কে নিয়ে..
আশ্চর্যের বিষয়বস্তু: ‘দুটি ছবি’ই মুখ থুবড়ে পড়েছিল বক্স-অফিসে..কপালের ভাঁজ পড়েছিল প্রযোজক’দের’..
পরের বছর আর কোনো ছবিতে সাক্ষর করেনি কেউ’ই.. তবে ঠিক তার দু’বছর পর, একটি মধ্যম বাজেটের মার্ডার মিস্ট্রি সিনেমা ” অপমৃত্যু”তে শেষ’বারের মতো দেখা গিয়েছিলো প্রীতম-শ্রেয়সী জুটি’কে মূল চরিত্রে..
অসম্ভব ভালো ফল করেছিল সিনেমাটি..
****************************************************
–“ম্যাডাম ! প্রীতম’দা এসে গিয়েছেন…তাড়াহুড়ো করছেন… প্লিস চলে আসুন !”
ঘোর কাটলো যেনো শ্রেয়সীর..
মেকাপ করাই ছিল, চটপট শাল’টি গায়ে জড়িয়ে উঠে এলেন ক্যামেরার সামনে…
স্পট’বয় থেকে শুরু করে পরিচালক,ক্যামেরাম্যান তথা অন্যান্য কলাকুশলী’রা একদম তৈরী..
নিস্ত্বব্ধ গোটা হল’ঘর..
অদূরে দাঁড়িয়ে নায়ক প্রীতম..
বয়সের ছাপ পড়েছে তার মধ্যে,তবে সংযমী মানুষটি এই বয়সেও বেশ আকর্ষণীয় করে রেখেছেন নিজেকে..
ডাই করা,প্রায় মাথা ভর্তি চুল,উজ্জ্বল ত্বক, সুঠাম চেহারা..
আজ’ও কোনো অষ্টাদশী কে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট তার প্রদর্শন ..
শ্রেয়সী দুচোখ ভরে দেখছিলো মানুষটিকে..
শব্দ এলো :
–” সাইলেন্স !…..টেক ওয়ান,সিন্ টোয়েন্টিটু “এলাম ফিরে” …রোল …..ক্যামেরা …..একশন !!! “
****************************************************
দৃশ্যের সিচুয়েশন অনুযায়ী :এগিয়ে আসছে প্রীতম ধীর পদক্ষেপে….
মন ও শরীরের ভারী ওজনটি বহন করে এগিয়ে যাচ্ছে শ্রেয়সী..
ঘুড়ছে ক্যামেরা …
শান্ত পরিবেশ …..
আলো পড়লো !……
মুখোমুখি দুজন …
শ্রেয়সীর কাঁধে হাত রাখলো প্রীতম…
হৃদস্পন্দন দ্রুত হলো শ্রেয়সীর….
শুরু হলো ডায়লগ :
প্রীতম : ” আমি সূর্য ! আপনার সাথেই আমার ফোনে কথা হয়েছিল..আপনি কিছু চিন্তা করবেন’না মাসীমা .. নন্দিনী’কে আমি ফিরিয়ে আনবই ! ও যেখানেই থাক,,শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ওকে আপনার কাছে ফিরিয়ে আনবো.”.
শ্রেয়সী : (কম্পমান স্বরে ) :”কথা দিচ্ছো তো ?”
প্রীতম : “শুধু কথা নয় মাসীমা,প্রতিশ্রুতি দিলাম !
শ্রেয়সী : প্রতিশ্রুতি দিওনা প্রীতম ! প্রতিশ্রুতি ভাঙলে বুকটা যে ফেটে যায় !
পরিচালক চেঁচিয়ে উঠলেন :
—— “কাআআট !!!.”
চমকে উঠলেন শ্রেয়সী চক্রবর্তী …
—“দিদি !! প্রীতমদার চরিত্রের নাম সূর্য..একটু দেখে প্লিজঃ !
বুকটা যেনো চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো শ্রেয়সীর..
চোখ দুটো নোনা জলে ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলো তার…
ওদিকে চরম অপ্রস্তুতে,দৃষ্টি পরিবর্তন করে ফিরে এসে,চেয়ারে বসে পড়লেন নায়ক প্রীতম….
ক্লান্ত শ্রেয়সী নিজেকে সামলিয়ে ফিরে এলেন নিজের জায়গায়…
ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে নিলেন, উপস্থিত হয়েছে উঠতি নায়িকা শালিনী…প্রীতমের বিপরীতে এই ছবিতে
সে’ই আছে মূল চরিত্রে …
কানে এলো পরবর্তী সিনে,নায়ক-নায়িকার কয়েকটা নিবিড়, ঐকান্তিক দৃশ্য শুট হবে…
****************************************************
পরিচালক মহাশয়’কে ইশারা করে কাছে ডেকে,ইতস্তত করে ফিসফিসিয়ে কুশল অভিনেত্রী শ্রেয়সী চক্রবর্তী বললেন :
–“কিছু মনে করোনা কুমারেশ ! আজ আমার শরীরটা একদম ভালো নেই”.
বিনয়ের সাথে কুমারেশ’বাবু বললেন :
–“ইট্স ওকে দিদি..আপনি আজ আসুন,আজ বরং আমরা সূর্য-নন্দিনীর পার্ট’টা শুট করি..আপনি বিশ্রাম নিন..তেমন হলে আগামী’পরশু দিনের স্লটে আপনার সিনটা রাখবো”.
সম্মতি জানিয়ে শাড়ির খুঁট দিয়ে চোখের বারি’কণা মুছতে মুছতে ধীর পায়ে সেট ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন স্বনামধন্যা অভিনেত্রী শ্রেয়সী চক্রবর্তী…
****************************************************