–“এক্সকিউজ মি !”
আবেদন মাখানো নরম কণ্ঠস্বর’খানি কানে প্রবেশ করতেই,মুখ তুললো সিদ্ধার্থ ..
–“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড,আমি কি কিছুক্ষণের জন্য এই চেয়ার’টিতে বসতে পারি?”
–“ওঃ ইয়েস ! হোয়াই নট?”
এককথায় সম্মতি প্রকাশ করলো সিদ্ধার্থ..
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পাখনাবিহীন পরী’টি আবার জিজ্ঞেস করলো :
–“আপনি কি কারুর অপেক্ষায় ? তাহলে ইট্স ওকে দেন..আমি অন্য চেয়ারে…..”
মুহূর্তের মধ্যে নির্ভরতার সাথে উত্তর দিলো সিদ্ধার্থ:
–“নানা ! প্লিস আপনি বসুন, আমি একাই এসেছি..”
কানের ধার ঘেঁষে, খোলা নুইয়ে পড়া রেডিশ ব্ল্যাক ঘন কেশলতিকা’টি , স্বল্প পরিপাটি করে নিয়ে হাসি মুখে,আসন গ্রহণ করলো অচেনা মোহময়ী মেয়েটি.
****************************************************
মাইল্ড শ্যাডো করা দীঘল চোখ,দুষ্টুমিতে ভরা চাহনি,ঠোঁটের হালকা লিপস্টিক,দৃষ্টিসুলভ দেহের ওঠানামা ..
সিদ্ধার্থ যেন নূতন করে দিশাহারা হয়ে যাচ্ছিলো..
নিজেকে একটু স্থির রেখে,এক পেয়ালা কফিতে মেয়েটির সঙ্গ চেয়ে বসলো সিদ্ধার্থ..
এক’কথায় রাজী হলো অচেনা মেয়েটি.
গরম কফিতে চুমুক দিতে গিয়ে সিদ্ধার্থ, দুচোখ ভরে দেখছিলো সম্মুখে বসে থাকা ললনা’টিকে.
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে যেন উপছে পড়ছে সৌন্দর্য..
সুযোগ বুঝে সিদ্ধার্থ নিজের মোবাইল থেকে টেক্সট বার্তা পাঠালো তার দুই বন্ধু’কে,যারা আপাতত ওই ক্যাফের ওয়াশরুমে স্বল্পসময়ের জন্য ব্যস্ত ছিল..
বার্তার ভাষা ঠিক এইরূপ ছিল :
–“নূতন মাছ এসেছে, ভেজে খাবো,আপাতত তোরা অন্য জায়গায় বস !”
কথামতো কাজ হলো .
****************************************************
একদেখাতেই মেয়েটিকে দেখে সিদ্ধার্থের মনে হচ্ছিলো যেনো,তাকে আগেও কোথাও দেখেছে সে …
কঠোর ভাবে কাছে পেতে চাওয়া কোনো মানুষ’কে বোধয় পরিচিত মনে হয়,অবচেতনে..
চোখে চোখ পড়তেই গালে টোল ধরানো হাসিতে অভিবাদন জানালো মেয়েটি.. তাল মেলালো সিদ্ধার্থ’ও..
কথা এগোতে লাগলো…..
.
–“ইওর গুড’নেম ? মাইসেল্ফ সিড “
–“কমলিকা”…..ইউ ক্যান কল’মি..কিম “
সিড..মানে সিদ্ধার্থ প্রশ্ন করলো..
–“আপনার সাথে কেউ আছে? নাকি একাই…. !”
কমলিকার অভিনব উত্তর :
–“যার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, বোধয় সে আজ আসবেনা .”
আস্কারার ইঙ্গিত বুঝে যথাযত উত্তর তৈরী করে নিলো সিদ্ধার্থ..
–“ওহ ইট্স ফাইন দেন,,আই প্রে টু গড- যেনো উনি আজ না আসেন.”
কিম..মানে কমলিকার আহ্বান মাখানো উত্তর এলো :
–ওহঃ ইউ নটি ..!
সিদ্ধার্থের ধারণা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক’ঠাক এগোচ্ছিল…হাল্কা হাসি-ঠাট্টায় উভয় কফির পেয়ালা শূন্য হয়ে এলো..
নির্ভয়ে ছেলেটি কমলিকা’কে অন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানালো,,
রাজী হয়ে গেলো কিম..মানে কমলিকা ..
****************************************************
বিল মিটিয়ে,নিজের প্রাইভেট গাড়িতে কিম’কে নিয়ে রওনা দিলো সিদ্ধার্থ..
যাত্রাকালীন, ছেলেটি শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করেছিল মেয়েটির উদ্দেশ্যে :
–“একটু সময় কাটাতে চাই একান্তে,,খুব কাছে থেকে আপনাকে চিনতে চাই একান্তে “
কিম বলেছিলো :
–“ইউ আর টু বোল্ড..এই বোল্ডনেস’টা ভালো লাগে খুব..!”
এক্সেলারেটর বাড়লো,গাড়ি এগোলো দ্রুত গতিতে.
গাড়ি থামলো সিদ্ধার্থের পরিচিত নাইটিঙ্গল রিসোর্টের সামনে…..
গাড়ি থেকে নেমে এগোতে লাগলো প্রেমাসিক্ত যুগল..
শর্ট মেরুন টিশার্ট ও টাইট জিন্সের অভ্যন্তরে, কমলিকার আকর্ষণীয় শরীরটা উন্মুক্ত নির্বিঘ্নে উপভোগ করার জন্য ছটফট করছিলো সিদ্ধার্থ ,,
অগ্রিম উষ্ণতার উন্মাদনায় ভেসে যাচ্ছিলো সে..
–“সিদ্ধার্থ বাবু !”
সহসা ডাক শুনে থমকে দাঁড়ালো সিদ্ধার্থ…
কিমের মুখের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ অবাক হলো সে.
মেয়েটির শরীরী’ভাষা গিয়েছে পাল্টিয়ে..
চোখে যেন তার ধিকিধিকি আগুন .
কোনোকিছু প্রশ্ন করার আগেই…..কমলিকা নামের মেয়েটি প্রশ্ন ছুড়লো :
–“আপনি দেবপ্রিয়া ব্যানার্জি নামে কাউকে
চেনেন ?”
অবাক হয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল ছেলেটি..
হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো তার..
আধো গলায় মিথ্যেটা, সত্যির মতো বলার ব্যার্থ চেষ্টা করছিলো সিদ্ধার্থ..
****************************************************
দেবপ্রিয়া..
শিক্ষিতা,সুদর্শনা,,
তবে খুব’ই সাধারণ মনোবৃত্তির মেয়েটি,
সরল ঘরোয়া,তার নেই কোনো চাকচিক্য,নেই কোনো লালিত্যের আবেশ..
তবে ভীষণ বন্ধুত্ত্বপূর্ণ তার ব্যবহার,স্বভাব মার্জিত..
যে কারণে এককথায় সিদ্ধার্থের মা-বাবা তাকে সম্বন্ধ করে,পছন্দ করেছিলো..
মনস্থির করেছিল তাকেই বৌমা করে ঘরে আনবে..রাজি হয়েছিল সিদ্ধার্থ’ও..
সাক্ষাৎ হয়েছে কম’ই.. ফোনের মাধ্যমে দুজনার মধ্যে বার্তালাপ’ হয় স্বল্পবিস্তর.
মাবাবার পছন্দ করা মেয়েকে সময় দেওয়া ছাড়াও, ভোগবিলাস’প্রিয় সিদ্ধার্থের অনেক কাজ.
মাসখানেক পর’ই এক শুভদিনে সমাজ’ ও আইন’কে সাক্ষী রেখে এক হতে চলেছে দুটি মানুষ..
****************************************************
কমলিকার প্রশ্ন শুনে কণ্ঠ দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারিত হতে চাইছিলনা সিদ্ধার্থের..
মেয়েটির ঠোঁটে ঢেউ খেলানো বিদ্রুপের হাসি শোভা পাচ্ছিলো.
–“আমি দেবপ্রিয়া ব্যানার্জি..আমার পক্ষে বোধয় আপনার সাথে বিবাহ করা অসম্ভব ! “
“ভালো থাকবেন,নুতন বছরের অগ্রিম শুভেচ্ছা নেবেন .”
সিদ্ধার্থের যেন সবকিছু ওলোট পালট হয়ে যাচ্ছিলো,,তার কোনো ধারণাই ছিলোনা একটি সাধারণ মেয়ে সারাজীবনের জন্য, নিজের সর্বস্ব সমর্পন করার আগে,এরকম অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে !..
প্রস্তরমূর্তির ন্যায় ছেলেটি নতমস্তক দাঁড়িয়ে ছিল..
প্রস্থানরত দেবপ্রিয়ার,জুতোর শক্ত বক্সহিলের খট’খট শব্দে ভেঙে পড়ছিলো সিদ্ধার্থের বিবেক.
****************************************************