লিখেছেন – অনিন্দিতা মুখার্জী সাহা
ক্লাস নাইন , সেকশন সি
স্কুল ছুটির পর চার রাস্তার মোড়,
বন্ধুরা সব জোড়ায় জোড়ায়, কেউ আঙুলের ফাঁক বোজাতে ব্যস্ত
কাওর আবার ঠোঁটের প্রস্থে ধরা পড়েছে আনন্দের উচ্ছাসটুকু
আমারও প্রেম করার ইচ্ছে ছিল ভীষন,
কিন্তু রূপে আমায় ভুলবে এমন লক্ষীমন্ত রূপ তো ছিল না কখনো !
আর ছিল না তেমন বিদ্যা বুদ্ধির বহরও ।
হুম নাচটা ভালো লাগতো
মা বলতো ‘গ্রামে এসব ধিরিঙিপনা চলবে না ‘
সুতরাং এটাকেও আর গুণ বলা গেল না ।
কতজনকে যে ভালো লাগতো ,মনেও ধরেছিল বেশ কয়েকজন,
এক দুবার যে বলিনি সেটা বললে মিথ্যাই বলা হবে কিছুটা
প্রত্যুত্তর টুকু এসেছিল – “এক্ষুনি কিছু ভাবছিনা আসলে !”
ঘরে বাইরের এই অবহেলাতে নিজেকে প্রায় ঘরবন্দি করে ফেলেছিলাম ।
হঠাৎই উড়ো এক চিঠির নিখাঁদ আদেশ টুকু চোখে পড়েছিল সেদিন –
“খুব জরুরি কাজের সন্ধান আছে কলকাতায় ”
পরিচয়টিতেও বেশ অবাক হয়েছিলাম বৈকি?
সেই ছেলেটি ? যে কিনা ফাংশানের সময় স্টেজ সাজাতো !
তবে মনে পড়ে আমার নাচের সময় ওর চোখের মুগ্ধতাটুকু !
সেই পেটরোগা , বোকা বোকা ছেলেটা !
মনে আসতেই একরাশ বিরক্তি ভিড় করে এসে মনে।
আচ্ছা কালোদের কি রুচিটুকুও থাকতে নেই?
মাসখানেক পর, পাশের বকুল পিসির বাড়িতে ফোনও এসেছিলো
“গ্রামেই আছি , একবারটি দেখা করা হোক “
সম্ভব নয় বলতেই ওপাশ থেকে –
“তা সে যতই কালো হোক , দেখেছিলাম তার কালো হরিণ চোখ ।”
দিনদুয়েকের ব্যবধানে দেখা হয়েছিল, জানিয়েছিল –
সিনেমা বানায় কলকাতায় আজ সে ।
এবছরের রবীন্দ্রজয়ন্তীতে তার উপস্থাপনা “কৃষ্ণকলি ”
নায়িকার সন্মান টুকু দিতে চায় আমাকে।
বিশ্বাস করে ঘর ছেড়েছিলাম সেদিন….. ….
সেদিন আর আজের কি বিস্তর ফারাক!
সে এখন ,মস্ত পরিচালক
আর আমি তার পরিচালনা।
নামটুকু ভালোই কিনছি আজকাল ।
সাথে চিনতে পেরেছি অধরা প্রথম প্রেমকে,
না সেই পেট রোগ বোকা বোকা পরিচালক তো আমার জন্মদাতা , আমার জীবন দান করেছে —সে অন্য স্বাদ
আর প্রেম তো সে ,যে কালোর মধ্যেও এত রূপ দেখেছে
আর কালো চোখে দেখেছে এত মায়া !
সে কালো নিয়ে “কৃষ্ণকলি” লিখেছিল বলেই না আজ আমার জয়।
সেইতো আমার প্রথম প্রেম ,
আমার নাচের ছন্দ আর আমার গানের সুর।
বলতে দ্বিধা নেই
সে আর কেউ না -আমার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।